Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

টমাস জেমস ম্যাথুজ: একজন সাধারণ বোলারের অমরত্বপ্রাপ্তির গল্প

আজ থেকে প্রায় একশ চল্লিশ বছর আগের কথা। ১৮৭৯ সালের ২রা জানুয়ারি।

মেলবোর্নে টেস্ট ম্যাচ হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডের মাঝে। ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায়, সে টেস্ট ছিল ইতিহাসের তিন নাম্বার টেস্ট। টেস্ট ক্রিকেটের জন্ম দুই বছর আগে হওয়ার পরেও টেস্ট সংখ্যা কেন মাত্র তিন, তা ভেবে বিস্ময় জাগতে পারে অনেকের মনে। আসলে তখন তো এখনকার মতো এতগুলো দল ছিল না, শুধু ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়াই টেস্ট খেলত। যাতায়াত ব্যবস্থাও ছিল অপ্রতুল। বিমান আবিষ্কার হতে তখনও প্রায় কুড়ি বছর বাকি। দলগুলো তখন এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাতায়াত করত জাহাজে চেপে। এখানেও সমস্যা ছিল। সি-সিকনেসের কারণে অনেকেই বাইরের দেশে খেলতে যেতে চাইতেন না। অনেক সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ার থেমে গেছে শুধুমাত্র এ কারণে।

যা হোক, আসল ঘটনায় ফেরা যাক। সেই টেস্টে টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক লর্ড হ্যারিস। ব্যাট করতে নেমেই ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়ল ইংল্যান্ড, ১৪ রানের মধ্যেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলল তারা। ফ্রেড স্পফোর্থ নামের এক ফাস্ট বোলার নিলেন দুই উইকেট।

বোলার হিসেবে স্পফোর্থ ছিলেন বুদ্ধিমান, বুদ্ধি খাটিয়ে বল করায় প্রায়ই ব্যাটসম্যানদের সমস্যায় ফেলতেন তিনি। ক্যারিয়ারে ১৮ ম্যাচে ৯৪ উইকেট সে সাক্ষ্যই দেয়। শারীরিকভাবে লম্বা ছিলেন বেশ, সাথে উইকেট নেয়ার এই গুণ যুক্ত হওয়ায় তাকে ডাকা হতো ‘দানব (দ্য ডেমন)’ নামে।

ফ্রেড ‘দ্য ডিমন’ স্পফোর্থ; Source: cricketcountry.com

ইংল্যান্ডের স্কোর তখন ২৬/৪। ব্যাট করছেন লর্ড হ্যারিস আর ভার্নন রয়্যাল। বোলিঙে এলেন স্পফোর্থ, এসেই বোল্ড করলেন রয়্যালকে। ৬ষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে নামলেন ফ্রান্সিস ম্যাককিনন, নামার সাথে সাথে বোল্ড। হন্তারক আবারও সেই স্পফোর্থ। টম এমেট এলেন ৭ম ব্যাটসম্যান হিসেবে, আগের দুই ব্যাটসম্যানের মতো তাকে বোল্ড করতে পারলেন না স্পফোর্থ। ব্যাট চালালেন এমেট, বল গিয়ে জমা পড়ল আরেক টম, টম হোরানের হাতে। পর পর তিন বলে তিন উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তো প্রথমবার তো বটেই, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই প্রথমবারের মতো হ্যাটট্রিক তুলে নিলেন স্পফোর্থ, প্রতিষ্ঠা করলেন ‘হ্যাটট্রিকম্যান’ নামের একটি ছোট কিন্তু অভিজাত ক্লাব। এই ক্লাবের সর্বশেষ সদস্য ইংল্যান্ডের মঈন আলী, ২০১৭ সালে ওভালে ডিন এলগার, কাগিসো রাবাদা আর মর্নে মরকেলকে আউট করে হ্যাটট্রিক করার এই কৃতিত্ব দেখান তিনি।

সেই হ্যাটট্রিকের পর; Source: dailymail.co.uk

একজন বোলারের কামনার বস্তু, চির আরাধ্য বস্তু এই হ্যাটট্রিক। চির আরাধ্য বলেই  হয়তো প্রাপ্তির সংখ্যাটা অনেক কম। টেস্ট ক্রিকেটের বয়স ১৪১ বছর হয়ে গেলেও হ্যাটট্রিক হয়েছে মাত্র ৪৩ বার, হ্যাটট্রিক করেছেন ৩৯ জন। তার মানে, কয়েকজন বোলারের নামের পাশে যে একাধিক হ্যাটট্রিক লেখা আছে, তা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। অভিজাত এই ক্লাবের মধ্যেও আরও ছোট একটা অভিজাত ক্লাব আছে, কারণ তাঁদের নামের পাশে লেখা ২টি করে হ্যাটট্রিক। সে ক্লাবের সদস্য সংখ্যা ৪ জন। তারা হলেন- হিউ ট্রাম্বল, ওয়াসিম আকরাম, স্টুয়ার্ট ব্রড এবং টমাস জেমস ম্যাথুজ।

হিউ ট্রাম্বল; Source: cricketcountry.com

হিউ ট্রাম্বল এবং ওয়াসিম আকরামকে নিয়ে বলার তেমন কিছু নেই। অস্ট্রেলিয়া এবং পাকিস্তানের ক্রিকেট কিংবদন্তীদের তালিকায় ট্রাম্বল এবং আকরামের নাম থাকবেই। ট্রাম্বল অনেক আগের ক্রিকেটার হওয়ায় তার সম্পর্কে হয়তো অনেকেই জানেন না, ৩২ টেস্ট খেলে এই অফস্পিনারের উইকেট সংখ্যা ১৪১। তার সম্পর্কে একটা কথা প্রচলিত ছিল যে তিনি যেকোনো ধরনের পিচে উইকেট নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। এরকম কথা প্রচলিত ছিল মুরালিধরন সম্পর্কেও। তার সম্পর্কে বলা হতো, কাঁচের উপরও তিনি বল ঘুরাতে পারবেন। ভিন্ন যুগের খেলোয়াড়দের খেলার তুলনা করা যায় না, করা উচিতও না। তারপরেও যদি ঐকিক নিয়ম মেনে একটা অঙ্ক করলে দেখা যায়, মুরালির সমান ২৩০ ইনিংসে বল করলে হিউ ট্রাম্বলের উইকেট সংখ্যা হতো প্রায় ৬০০’র কাছাকাছি। ট্রাম্বল সম্পর্কে আর কিছু বলার প্রয়োজন আছে কি? স্টুয়ার্ট ব্রডের ক্যারিয়ার যেহেতু এখনও শেষ হয়নি, তাই তিনি কিংবদন্তি কিনা, সে প্রশ্ন তোলা থাক আপাতত।

ওয়াসিম আকরাম;  Source: starsunfolded.com

বাকি থাকেন টমাস জেমস ম্যাথুজ। এই ভদ্রলোক কিংবদন্তি তো পরের কথা, তেমন পরিচিত নামও নন। যদিও হ্যাটট্রিক করতে কিংবদন্তি হওয়া জরুরি না। অনেক সাধারণ বোলারও হ্যাটট্রিক করেছেন। তবে দু’বার যিনি হ্যাটট্রিক করেছেন, কিছু বিশেষত্ব তো তার থাকা উচিত। পরিসংখ্যানও এমন আহামরি কিছু বলবে না তার সম্পর্কে। ৮ টেস্টে ১৮ উইকেট, সাথে ব্যাটিংয়ে ১৫৩ রান। কিন্তু যখন জানা যায়, সাধারণ এই স্পিনারের দুটো হ্যাটট্রিক একই টেস্টের একই দিনে, তখন বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।

বর্তমানে প্রচুর ওয়ানডে ম্যাচের কারণে ত্রিদেশীয় সিরিজ শব্দযুগল খুবই পরিচিত। সেরকমই অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড আর দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে ত্রিদেশীয় টেস্ট সিরিজ হচ্ছিল ইংল্যান্ডে, ১৯১২ সালের মে মাসে। ২৭ তারিখে প্রথম ম্যাচ ছিল ম্যানচেস্টারে, অস্ট্রেলিয়ার সাথে দক্ষিণ আফ্রিকার। সেই ম্যাচেই জোড়া হ্যাটট্রিক করেন ম্যাথুজ।

ম্যাথুজের সেই ম্যাচ; Source: icc-cricket.com

তিনদিনের সে টেস্টে অস্ট্রেলিয়া প্রথমে ব্যাট করে তুলেছিল ৪৪৮ রান। জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ  যখন ৭ উইকেটে ২৬৫, ঠিক তখনই বল করার জন্য ম্যাথুজের আগমন। রোলান্ড বিউমন্টকে বোল্ড করলেন প্রথম বলে, তার পরের বলেই এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে ফেললেন সিড পেগলারকে। পরের বলে টম ওয়ার্ডকে আউট করে তুলে নিলেন নিজের প্রথম হ্যাটট্রিক। সেই সাথে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস গুটিয়ে দিলেন ২৬৫ রানেই।

১৮৩ রানে পিছিয়ে থাকায় ফলোঅনে পড়ল দক্ষিণ আফ্রিকা। ফলোঅন করানো হয় সাধারণত ২০০ রান বা তার অধিক রানে পিছিয়ে থাকলে। কিন্তু তিন অথবা চারদিনের টেস্টে তা হয়ে যায় ১৫০ রান বা তার অধিক। ব্যাটিংয়ে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকার অবস্থা হলো শোচনীয়, ৭০ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলল তারা। ঠিক সেই মুহূর্তে ম্যাজিকের শেষ অংশ মঞ্চস্থ করার সিদ্ধান্ত নিলেন ম্যাথুজ। হার্বি টেলরকে বোল্ড করে শুরু করলেন, রেগি শোয়ার্যকে করলেন কট অ্যান্ড বোল্ড। প্রথম ইনিংসের মতো আবারও ম্যাথুজের হ্যাটট্রিকের মুখে ব্যাট করতে নামলেন টম ওয়ার্ড। তাকে কট অ্যান্ড বোল্ড করে একই দিনে দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক পূর্ণ করলেন ম্যাথুজ। মজার ব্যাপার হচ্ছে, জোড়া হ্যাটট্রিক করার পথে তিনি দুজনকে করেছেন বোল্ড, দুজনকে করেছেন এলবিডব্লিউ এবং দুজনকে করেছেন কট অ্যান্ড বোল্ড। অর্থাৎ, কোনো ফিল্ডারের সাহায্য ছাড়াই হ্যাটট্রিক করেছিলেন তিনি। চাইলে এটিকেও একটি রেকর্ড হিসেবে ধরা যায়।

এই কীর্তির পরে ম্যাথুজ কেমন খেলোয়াড় ছিলেন, তা বিচার করার আর কোনো প্রয়োজন নেই।, সেঞ্চুরি, জোড়া সেঞ্চুরি, ইনিংসে ৫ উইকেট, ম্যাচে ১০ উইকেট অনেক দেখেছে ক্রিকেট, হয়তো সামনে দেখা যাবে আরও। হ্যাটট্রিক অনেক না হলেও কম দেখা হয়নি।

কিন্তু এক টেস্টে দুই হ্যাটট্রিক!

অথবা, একদিনে দুই হ্যাটট্রিক!

টমাস জেমস ম্যাথুজ, ১০৬ বছর পরেও নিজের কীর্তিতে আপনি অমর হয়েই আছেন!

টমাস জেমস ম্যাথুজ; Source: espncricinfo.com

তথ্যসূত্র: Jimmy Matthews becomes first to take two hat-tricks in same Test, ভেজা উইকেটে/উৎপল শুভ্র

ফিচার ইমেজ- usercontent.com

Related Articles