Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ক্যারিয়ারে লাল কার্ড দেখেননি যে ফুটবলাররা

আধুনিক ফুটবলের নিত্যনতুন কলাকৌশল খেলাটিকে দিন দিন যেমন আকর্ষণীয় করে তুলছে, ঠিক তেমনি একে আরও দৃষ্টিনন্দন করে তোলার জন্য ফিফার নিয়মকানুন প্রতিনিয়ত কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। আর তাই বর্তমানে লাল কার্ড দেখা নামী-বেনামী সব ফুটবলারের জন্য একটি সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে লাল কার্ডের ব্যবহার ছাড়া কোনো ম্যাচই যেন কল্পনা করা যায় না। তা সে স্বনামধন্য খেলোয়াড় মেসি কিংবা রোনালদো যে-ই হোক না কেন, খেলার মাঠে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রেফারির লাল কার্ড দেখতে হয়েছে নামকরা অনেক ফুটবলারকেই। ২০০৬ এর বিশ্বকাপে ইতালি-ফ্রান্সের মধ্যকার বিশ্বকাপ ফাইনালে জিদানের মাথা দিয়ে বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়কে ঐতিহাসিক ঢুঁস মেরে লাল কার্ড পেয়ে খেলার মাঠ থেকে বিতাড়িত হওয়া, আর তার সাথে সাথে ফ্রান্সের বিশ্বকাপ হাতছাড়া হওয়ার গল্প আমরা সবাই জানি। আধুনিক ফুটবলে কারো পক্ষে ক্যারিয়ারে লাল কার্ড না পাওয়া যেন কল্পনাতীত।

কিন্তু ফুটবল মাঠে এমন কয়েকজন অসাধারণ ফুটবলারের জন্ম হয়েছে, যারা তাদের ক্যারিয়ারে কখনোই লাল কার্ড দেখেননি। এমনই কয়েকজন ফুটবলারকে চিনে নেওয়া যাক।

মিশেল প্লাতিনি

মিশেল প্লাতিনি; Source: YouTube

ফরাসি মিডফিল্ডার মিশেল প্লাতিনি তার সারা ফুটবল ক্যারিয়ারে ক্লাব এবং দেশের হয়ে মোট ৬৫৫টি ম্যাচ খেলেছেন। মূলত প্লেমেকার হিসেবে তার সুনাম থাকলেও, গোল করার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন দারুণ দক্ষ। ন্যান্সি, সেন্ট-এটেন এবং জুভেন্টাসের মতো নামীদামী দলে খেলেছেন তিনি। ১৯৮৪-৮৫ সালে ইউরোপীয় কাপ অভিযানের বিজয়ী জুভেন্টাসের হয়ে তিনি সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন। প্লাতিনি ফ্রান্সের জাতীয় দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ছিলেন। তার অসাধারণ নৈপুণ্যে ১৯৮৪ সালে ফ্রান্স ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ জেতে। তিনবার ব্যালন ডি’অর জেতা এই অসাধারণ খেলোয়াড় জীবনে কখনোই লাল কার্ড দেখেননি।

গ্যারি লিনেকার

গ্যারি লিনেকার; Source: fourfourtwo.com

ফুটবল ইতিহাসের নামীদামী সব ফুটবল ব্যক্তিত্বকে ছাপিয়ে যোজন যোজন এগিয়ে রয়েছেন ইংল্যান্ডের এই সাবেক দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোল স্কোরার। এই ইংলিশ স্ট্রাইকার তার ফুটবল ক্যারিয়ারে বার্সেলোনা, এভারটন, লিচেস্টার সিটি, টটেনহ্যাম হটস্পারের মতো বিশ্বসেরা ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। দেশের ও ক্লাবের হয়ে মোট ৫৬৭টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। কিন্তু অত্যন্ত আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, তিনি শুধু লাল কার্ডই নয়, জীবনে কখনো হলুদ কার্ডও দেখেননি! এটি সত্য যে, সত্তর এবং আশির দশকে ফুটবল মাঠে শারীরিক ট্যাকল করার প্রচলন ছিল এবং ফিফার নিয়ম-কানুনও ততো কড়া ছিল না। তারপরও লিনেকারের মতো মহান ফুটবলারের একেবারেই কোনো কার্ড না দেখাকে কোনো অংশেই খাটো করে দেখার অবকাশ নেই।

রাউল গঞ্জালেস

রাউল গঞ্জালেস; Source: sokkaa.com

স্পেনের জাতীয় দলের সাবেক এই নির্ভরযোগ্য স্ট্রাইকার তার ফুটবল ক্যারিয়ারে খুবই শৃঙ্খলাপরায়ণ ছিলেন। ফুটবলের রীতিনীতি মেনে চলার ক্ষেত্রে তার মতো কিংবদন্তী স্টাইকার খুব কমই দেখা যায়। ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি লস ব্ল্যাঙ্কস, শালকে, আল-স্যাড, নিউইয়র্ক কসমস ক্লাবের হয়ে খেললেও, ক্যারিয়ারের একটা দীর্ঘ সময় রিয়াল মাদ্রিদের মতো বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। ক্লাবের হয়ে ৯৩২ ম্যাচে ৩৮৮ গোল এবং স্পেনের জাতীয় দলের হয়ে ৪৪টি গোল করেছেন এই অনন্য ফুটবলার। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ১৯৯৮, ২০০০ ও ২০০২ সালে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা এবং ছয়টি স্প্যানিশ শিরোপা জেতা এই ফুটবলার ক্যারিয়ারে কখনোই লাল কার্ড পাননি।

আলসেন্দ্রো দেল পিয়েরো

আলসেন্দ্রো দেল পিয়েরো; Source: sokkaa.com

১৯৯১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দুই দশকের বেশি সময় ধরে ফুটবল খেলা চালিয়ে যাওয়া এক অসাধারণ ফুটবলার আলসেন্দ্রো দেল পিয়েরো। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপজয়ী ইতালি জাতীয় দলের সদস্য ছিলেন এই স্ট্রাইকার। ক্যারিয়ারের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন ইতালির জুভেন্টাসে। ক্লাবের হয়ে ৫৮৫ ম্যাচে গোল করেছেন ২৩৪টি এবং দেশের হয়ে ৯১ ম্যাচ খেলে ২৭টি গোল করেছেন তিনি। তার ফুটবল মাঠে ঠাণ্ডা মাথায় ট্যাকল করা, দ্রুত গতি এবং গোল করার আশ্চর্য দক্ষতা ফুটবল বোদ্ধাদের প্রতিনিয়ত মুগ্ধ করতো। আর এসব অসাধারণ গুণের জন্য কখনো লার্ল কার্ড না দেখার দুর্লভ সৌভাগ্য অর্জন করেন এই স্ট্রাইকার। 

রায়ান গিগস

রায়ান গিগস; Source: sokkaa.com

অনেক ফুটবল বোদ্ধার কাছে রায়ান গিগস ছিলেন একজন সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়। ওয়েলসের এই দুর্দান্ত ফুটবলার তার পুরো ক্যারিয়ারেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে খেলে গেছেন। ২০১৪ সালে অবসর নেয়ার আগে ১৯৯০ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে সফল খেলোয়াড়দের হিসেবে পরিচিতি পান। ২৪ বছরের ক্যারিয়ারে একবারেও লাল কার্ড দেখেননি তিনি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ৬৭২টি ম্যাচ খেলে লাল দাগ মুক্তই থেকে গেছেন ওয়েলসের এই তারকা। বর্তমানে তিনি ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের সহকারী ম্যানেজার।

জাভি হার্নান্দেজ

জাভি হার্নান্দেজ; Source: Goal.com

স্প্যানিশ ফুটবলার জাভি হার্নান্দেজ ইতিহাসের অন্যতম সেরা মাঝমাঠের খেলোয়াড়। স্পেনের হয়ে তার আন্তর্জাতিক অভিষেক ঘটে ২০০০ সালে। দেশের হয়ে ১৩৩টি ম্যাচে অংশগ্রহণ করে ২০০৮ ও ২০১২ সালে ইউরো কাপ, ২০১০ এর বিশ্বকাপজয়ী দলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি। ২০০৮ এর ইউরো কাপে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। জাভি বার্সেলোনার যুব প্রকল্প থেকে উঠে এসেছেন। আর তাই বার্সেলোনার একজন নির্ভরযোগ্য সদস্য হতে খুব বেশি দেরি হয়নি তার। ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটা কাটিয়েছেন বার্সেলোনায়। গোল করা এবং দলের সঙ্গীদের অবিশ্বাস্য পাস দেওয়ার ক্ষমতার কারণে তিনি ছিলেন তার সময়ের অন্য সব ফুটবলারের চেয়ে এগিয়ে। এই প্রতিভাবান ফুটবলার তার সারা ক্যারিয়ার জুড়ে রেফারির সাথে কোনো ঝামেলায় জড়াননি, দেখেননি কখনো লাল কার্ডও।

ফিলিপ লাম

ফিলিপ লাম; Source: sportskeeda.com

অনেক ফুটবল বোদ্ধাই জার্মান ফুটবলার ফিলিপ লামকে ফুটবলের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুল ব্যাক মনে করে থাকেন। গতি, ড্রিবলিং, নির্ভুল ট্যাকলিংয়ের জন্য তিনি প্রসিদ্ধ। ২০০৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জার্মানির হয়ে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ঘটে তার স্মরণীয় অভিষেক। অভিষেক ম্যাচেই পান ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার। বায়ার্ন মিউনিখ বি দলের হয়ে খেলার সুযোগ পান মাত্র ১৭ বছর বয়সে। বি দলের হয়ে অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য বায়ার্নের মূল দলে জায়গা পেতে খুব একটা দেরি হয়নি তার। বায়ার্নের হয়ে জিতেছেন আটটি বুন্দেসলিগা, ছয়টি জার্মান কাপ ও ইউরো ক্লাব চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে জার্মানির অধিনায়ক হিসেবে ২৪ বছর পর জার্মানিকে শিরোপা জিততে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ৩৩ বছর বয়সে অবসর নেয়ার মুহূর্তেও ১১ বছরের ক্যারিয়ারে একবারও লাল কার্ড দেখতে হয়নি এই অসাধারণ ফুটবলারকে।

ডেমিয়েন ডাফ

ডেমিয়েন ডাফ; Source: sokkaa.com

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনন্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন এই আইরিশ উইঙ্গার। ব্ল্যাকবার্ন, চেলসি, নিউক্যাসেল ও ফুলহ্যামের মতো ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের বড় দলগুলোতে তার ফুটবল ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় অতিবাহিত করলেও, রেফারির লাল কার্ডের সম্মুখীন হতে হয়নি কোনদিনও। অবসর নেয়ার আগে বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে খেলা ৬৩২ ম্যাচে এবং আয়ারল্যান্ডের জাতীয় দলের হয়ে খেলা ১০০ ম্যাচেও তাকে কখনোই লাল কার্ড পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয়নি। উইঙ্গার হিসেবে খেলা এই পরিশ্রমী ফুটবলার তার গতিময়তা, বুদ্ধিমত্তা আর ঠাণ্ডা মেজাজে কারণে প্রতিনিয়ত অল-আউট ফুটবল খেললেও বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়কে মারাত্মক কোনো ট্যাকেলে  যেতেন না, বরং বুদ্ধিদীপ্ত প্রতিরোধে প্রতিপক্ষের প্রতিরোধ ভেঙে দিয়ে বল কেড়ে নিতে পিছপা হতেন না।

লুক ইয়ং

লুক ইয়ং; Source: sokkaa.com

যেসব ফুটবলার ফুল ব্যাক পজিশনে খেলেন, তাদেরকে বিপক্ষ দলের ফরোয়ার্ডদের নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রায় সময় ভয়ঙ্কর ট্যাকল করতে হয়, আর তার জন্য রেফারির লাল কার্ড দেখা অনেকটা ডাল-ভাত খাওয়ার মতোই সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী এক নাম প্রাক্তন ইংলিশ ডিফেন্ডার লুক ইয়ং। ১৯৯৭ সালে টটেনহ্যাম হটস্পারের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন। ২০০১ সালে চার্লটন অ্যাথলেটিকাতে চলে যাওয়ার আগে চার মৌসুম এই হটস্পারেই কাটান। বেশিরভাগ সময় তার দলকে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে রেলিগেশনের ফাঁড়া কাটাতে। কিন্তু লুক ইয়ং এমনই এক মেধাসম্পন্ন ডিফেন্ডার ছিলেন যিনি তার ক্যারিয়ারে কখনোই লাল কার্ড দেখেননি। বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়ের ওপর তিনি এমন কোনো ট্যাকল করেননি যাতে করে রেফারির লাল কার্ড তাকে দেখতে হয়। ডিফেন্ডার হয়েও লাল কার্ড না দেখা অসমান্য এক ফুটবলারের স্বীকৃতি পান লুক ইয়ং।

আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা

আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা; Source: ESPN FC

যে ফুটবলারের এক অসাধারণ গোলের সুবাদে ২০১০ সালে স্পেন প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জেতে, তিনি আর কেউ নন, স্পেনের শৈল্পিক মিডফিল্ডার আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। ২০১২ ইউরোতে স্পেনের শিরোপা জয়ে যার ছিল গুরুত্বপূর্ণ অবদান। ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় জুড়ে খেলেছেন বার্সেলোনার হয়ে। মূলত প্লেমেকার হিসেবে তার জুড়ি মেলা ভার। স্পেনের ও বার্সেলোনার হয়ে ৭৫০টিরও বেশি ম্যাচ খেলা এই প্লেমেকার ক্যারিয়ারে কখনো লাল কার্ড দেখেননি।

ফিচার ইমেজ- youtube.com

Related Articles