Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বকাপে নিজেদের চেনাবেন যারা

ক্লাব ফুটবলের একনিষ্ঠ দর্শক হলে আপনি তাদের চেনেন নিঃসন্দেহে; অমনোযোগী দর্শক হলেও হয়তো তাঁদের নাম শুনে থাকবেন। যদি এর মধ্যে কোনটাই না হন, তবুও হয়তো বিশ্বকাপের এই মৌসুমে তাদের নামগুলো আপনার চোখে পড়েছে। মেসি-রোনালদোর মতো মহাতারকা হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না, তারা লাউতারো মার্টিনেজ বা ভিনিসিয়াস জুনিয়রের মতো তারকাও নন। তবে এই তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য কাতার বিশ্বকাপই হতে পারে পুরো ফুটবলবিশ্বের নজর কাড়ার প্রথম সুযোগ। কাতার বিশ্বকাপ দিয়ে দুনিয়ার সামনে নিজেদের উপস্থাপন করার অপেক্ষায় থাকা এই তরুণদের নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন।

১. এনজো ফার্নান্দেজ (আর্জেন্টিনা)

ইউরোপের সেরা পাঁচ লিগের বাইরে থাকায় বেনফিকা দলটা সাধারণত দর্শক, সমর্থক বা বোদ্ধাদের মনোযোগের কেন্দ্রে থাকার সুযোগ পায় না। কিন্তু সেই দলে সদ্য আগত একজন খেলোয়াড়ের নামের সাথে যখন ম্যানচেস্টার সিটি, রিয়াল মাদ্রিদ, লিভারপুল বা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো বড় দলগুলোকে জড়িয়ে দলবদলের গুঞ্জন ওঠে, এর অর্থ খুবই পরিষ্কার, ঐ খেলোয়াড়ের মধ্যে বিশেষ কিছু আছে। বেনফিকা কোচ রজার শ্মিট অবশ্য এসব গুঞ্জনে চিন্তিত নন, তিনি প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন এনজোকে।

“সে একজন অসাধারণ খেলোয়াড়, একজন অসাধারণ মানুষ। সে তার লক্ষ্য সম্পর্কে জানে, সে অত্যন্ত পেশাদার। আমি মনে করি সে বেনফিকাতে অনেক দিন থাকবে, মাত্র ছয় মাস কোনোভাবেই যথেষ্ট নয়।”

– রজার শ্মিট, কোচ, বেনফিকা
আর্জেন্টিনার জার্সিতে এনজো ফার্নান্দেজ; Image Source: Getty Images

এনজো ফার্নান্দেজ মূলত একজন ডিপ-লায়িং প্লেমেকার। পাশে রক্ষণে ভালো একজন মিডফিল্ডার পেলে তিনি খেলতে পারেন ডাবল পিভটে, বেনফিকাতে যে কাজটা করেন ফ্লোরেন্টিনো লুইস। পিভট ছাড়াও এনজো খেলতে পারেন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে, বাম পাশের হাফ স্পেসটাকে কাজে লাগাতে পারেন দারুণ নৈপুণ্যে। দ্রুত ছোট পাস, নিখুঁত লং পাস, প্লেমেকিং, আর মাঝেমধ্যে দূরপাল্লার শটে গোল করার সক্ষমতা, সব মিলিয়ে এনজো একটা ‘কমপ্লিট প্যাকেজ’। আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনিও তাই সর্বশেষ আন্তর্জাতিক বিরতিতে দলে ডেকেছিলেন এনজোকে, খেলিয়েছিলেন হন্ডুরাস ও জ্যামাইকার বিরুদ্ধে দুটো প্রীতি ম্যাচ। তাতে কোচের নজর কাড়তে পারার ফল হিসেবে বিশ্বকাপের দলেও ডাক পেয়ে গেছেন। এখন শুধু ফুটবলবিশ্বের সামনে নিজেকে চেনানোর অপেক্ষা, আর মাঝমাঠের বাঁ পাশের নিয়মিত মুখ জিওভান্নি লো সেলসোর ইনজুরিতে সেই সুযোগটা নিশ্চিতভাবেই পেতে যাচ্ছেন এনজো ফার্নান্দেজ!

২. গ্যাব্রিয়েল মার্টিনেল্লি (ব্রাজিল)

সাধারণত আক্রমণভাগের বাম দিকে খেলেন তিনি। বাম পাশের টাচলাইন ধরে এগিয়ে যান, অসাধারণ ড্রিবলিং করতে পারেন, সাথে ভালো ফিনিশিং তো আছেই। বৈচিত্র্যপূর্ণ এই উইঙ্গারের দারুণ ক্ষিপ্রতা আছে, সক্ষমতা আছে কার্যকর মুভমেন্টে প্রতিপক্ষের রক্ষণকে ছিঁড়ে ফেলার। যার কথা বলছি, তার নাম গ্যাব্রিয়েল মার্টিনেল্লি। আর্সেনালের হয়ে ধারাবাহিক পারফর্ম করে যাওয়ার পুরস্কার হিসেবে এই বছরের মার্চে প্রথমবারের মতো ডাক পেয়েছেন ব্রাজিল জাতীয় দলে। কোচ তিতের কথাতেও পরিষ্কার, তার সুনজরেই আছেন মার্টিনেল্লি।

“ওয়ান-ভার্সাস-ওয়ানে সে খুব ভালো। দ্রুত ট্রানজিশনেও সে দারুণ, আর সর্বোচ্চ পর্যায়ে সে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলে চলছে।”

– তিতে, কোচ, ব্রাজিল জাতীয় দল
আর্সেনালের ফর্মটা ব্রাজিলের টেনে জার্সিতে আনতে পারবেন মার্টিনেল্লি? Image Source: Getty Images

গানারদের আক্রমণভাগের বাম দিকটা নিয়মিত সামলে থাকেন মার্টিনেল্লি। চলতি মৌসুমে ইতোমধ্যে তার ব্যক্তিগত খাতায় যোগ হয়েছে ৫ গোল আর ২ অ্যাসিস্ট, আর দল হিসেবে আর্সেনাল তো প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষে আছেই। ব্রাজিলের হয়ে ৩ ম্যাচে অবশ্য এখনো গোল-অ্যাসিস্ট পাননি, নেইমার-ভিনিসিয়াসদের উপস্থিতির কারণে বিশ্বকাপেও সেই খাতাটা খোলার খুব বেশি সুযোগ তিনি পাবেন না হয়তো। কিন্তু যেটুকু সুযোগই আসুক, সেটাকেই কাজে লাগাতে না পারলে পৃথিবী কেন-ই বা তাকে মনে রাখবে!

৩. আনসু ফাতি (স্পেন)

বার্সেলোনার সেরা তরুণ খেলোয়াড় কে? ক্যাম্প ন্যুয়ের মাটিতে দাঁড়িয়ে এই প্রশ্নটা করলে কেউ উত্তর দেবেন ‘পেদ্রি’, কেউ বলবেন ‘গাবি’। দুয়েকজন আবার আলেহান্দ্রো বালদের নামও নিতে পারেন। কিন্তু এই একই প্রশ্নটা দুই মৌসুম আগে করলে উত্তরটা নিশ্চিতভাবেই আসতো ‘আনসু ফাতি’।

চোটের কারণে পরপর দুই মৌসুমের প্রায় পুরোটাই মাঠের বাইরে কাটানো, আর চোট থেকে ফেরার পরে চেনা রঙ হারানো – দুটো বিষয় মিলে ক্যারিয়ারের উড়ন্ত সূচনা করা ফাতিকে দেখতে হচ্ছে মুদ্রার উল্টো পিঠও। স্পেনের কোচ লুইস এনরিকে অবশ্য আস্থার হাতটা সরাচ্ছেন না ফাতির মাথার উপর থেকে, বিশ্বকাপগামী স্প্যানিশ বিমানে ঠিকই নিজের আসন বুঝে পেয়েছেন ফাতি।

“আনসুর সামর্থ্য প্রশ্নাতীত, তবে সে খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। তার ব্যাপারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সংশয় ছিল, তবে আমি তার ওপরই বাজি ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার মনে হয় এই দলে সে খুব ভালো সংযোজন হতে পারে।”

– লুইস এনরিকে, কোচ, স্পেন জাতীয় দল
আনসু ফাতির লড়াইটা নিজের সাথে; Image Source: Getty Images

বার্সেলোনার একাডেমি লা মাসিয়ায় বেড়ে ওঠা আনসু ফাতিকে একজন জাত ফিনিশার বললে ভুল হবে না। লেফট উইং, ফলস নাইন বা সেন্টার ফরোয়ার্ড – বৈচিত্র্যপূর্ণ এই ফরোয়ার্ড খেলতে পারেন যেকোনো জায়গায়ই। গতি আছে, সমন্বয় করতে পারেন অন্য খেলোয়াড়দের সাথে, ড্রিবলিংটাও সন্তোষজনক; তবে আনসু ফাতির শক্তির জায়গা তার ফিনিশিং। দুই পায়ে তো বটেই, মাত্র ৫ ফিট ১০ ইঞ্চি লম্বা ফাতি মাথা দিয়েও বলকে পাঠিয়ে দিতে পারেন জালের ঠিকানায়। সাম্প্রতিক ফর্মটাই যা একটু দুশ্চিন্তার, চলতি মৌসুমে মাত্র ৩ গোল আর ৩ অ্যাসিস্ট করেছেন ফাতি। সাথে খুঁজে ফিরছেন প্রতিপক্ষের পোস্টের সামনে আগের খুনে মেজাজটা, যেটা ফিরে পেলে কোচ এনরিকেকে আর আক্রমণভাগ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।

৪. কোডি গাকপো (নেদারল্যান্ড)

এই তালিকার সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় নামটা নিঃসন্দেহে কোডি গাকপো। ইউরোপের সেরা পাঁচ লিগের বাইরে খেলছেন এখনো, কিন্তু মৌসুমের অর্ধেক যেতে না যেতেই পড়ে গেছেন বড় দলগুলোর চোখে। আক্ষরিক অর্থেই যেন ‘আগুনঝরা’ পারফরম্যান্স উপহার দিচ্ছেন গাকপো। চলতি মৌসুমে নেদারল্যান্ডসের লিগ এরদেভিসিয়েতে পিএসভি আইন্দহোভেনের হয়ে ১৪ ম্যাচে করেছেন ৯ গোল, সাথে ১২টা অ্যাসিস্ট। ইউরোপা লিগসহ অন্যান্য প্রতিযোগিতা মিলিয়ে পরিসংখ্যানটা দাঁড়ায় ২৪ ম্যাচে ১৩ গোল আর ১৭ অ্যাসিস্টে। অবিশ্বাস্য সব সংখ্যা সাথে নিয়েই কাতারগামী ডাচ বিমান ধরছেন এই লেফট উইঙ্গার। কোচ লুইস ফন হালও তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

“আমার মতে, গাকপো একজন অসাধারণ প্রতিভা। সে খুব সহজে গোল করে, এটা সে জাতীয় দলেও দেখিয়েছে। তার বয়স খুব কম, তাই এখনো তার অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করা বাকি আছে।”

– লুইস ফন হাল, কোচ, নেদারল্যান্ডস জাতীয় দল
এই মৌসুমে দারুণ ফর্মে আছেন কোডি গাকপো; Image Source: Getty Images

আক্রমণভাগের বাঁ পাশ থেকে খেলা শুরু করলেও গাকপোর প্রবণতা থাকে কাট-ইন করে বক্সের ভেতরে ঢুকে ডান পায়ে শট নেওয়ার। দারুণ গতি আর ড্রিবলিংয়ে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের পরাস্ত করেন, এরপর গোল আদায় করে নেন চমৎকার সচেতনতায়, আর পুরো ব্যাপারটাই করেন অনায়াসে।

ক্লাবের এই দারুণ ফর্মটাই এবার জাতীয় দলের জার্সিতে টেনে আনার চ্যালেঞ্জ গাকপোর সামনে। গত ইউরোতেই কমলা জার্সিতে অভিষেক হয়েছিল কোডি গাকপোর, এরপর ৯ ম্যাচে করেছেন ৩ গোল। এই বিশ্বকাপেই সংখ্যাটাকে আরো বাড়িয়ে নিতে চাইবেন গাকপো, আর সাম্প্রতিক ফর্মে সেটা খুব কঠিন হওয়ার কথা না!

৫. চার্লস ডি কেটেলেইর (বেলজিয়াম)

 ক্লাব ব্রুজের হয়ে গত মৌসুমটা ছিল চার্লস ডি কেটেলেইরের জন্য ‘ব্রেকথ্রু’। তবে এই মৌসুমে এসি মিলানে যোগ দেওয়ার পর থেকে এখনো প্রথম একাদশে নিজের জায়গা পাকা করতে পারেননি তিনি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সুযোগ হচ্ছে বদলি হিসেবে ম্যাচের শেষ বিশ-পঁচিশ মিনিট খেলার। গোল-অ্যাসিস্টের হিসেবে এই মৌসুমটা খুব ভালো যাচ্ছে না তার; ১৮ ম্যাচে কোনো গোল নেই, সম্বল বলতে মাত্র ১টা অ্যাসিস্ট। পক্ষান্তরে, গত মৌসুমের ৪৯ ম্যাচে এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার করেছিলেন ১৮ গোল আর ১০ অ্যাসিস্ট। তবে এই মৌসুমে ভালো শুরু না পেলেও বেলজিয়ামের কোচ রবার্তো মার্টিনেজ তাতে দুশ্চিন্তার কিছু দেখছেন না।

“এসি মিলানে ডি কেটেলেইর যে শুরুটা পেয়েছে, সেটা প্রত্যাশার চেয়ে ভালো। এখন তাকে লড়তে হচ্ছে প্রথম একাদশে নিজের জায়গা পাকা করার জন্য, আর এই অভিজ্ঞতাটা সে বিশ্বকাপে নিয়ে যেতে পারবে। এটা তার জন্য ভালোই হলো। আর তার বিটুইন দ্য লাইনে খেলার সামর্থ্য আমাদের সাহায্য করবে।”

– রবার্তো মার্টিনেজ, কোচ, বেলজিয়াম জাতীয় দল
ডি কেটেলেইর হতে পারেন বেলজিয়ামের তুরুপের তাস; Image Source: Getty Images

সাধারণত ৩-৪-৩ ফরমেশনে খেলা বেলজিয়ামের মাঝমাঠের দুই প্রান্ত সামলান ইয়ানিক কারাস্কো আর টমাস মুনিয়ের, মাঝে থাকেন অ্যাক্সেল উইটসেল আর থরগান হ্যাজার্ড। আর তাদের সামনে থাকেন কেভিন ডি ব্রুইনা, এডেন আজার এবং রোমেলু লুকাকু। স্বাভাবিকভাবেই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ডি কেটেলেইরের প্রথম একাদশে সুযোগ পাওয়ার কথা নয়, বদলি হিসেবে মাঠে এলেও সেটা এডেন আজার বা কেভিন ডি ব্রুইনার জায়গায় হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আজার-ডি ব্রুইনার জুতোয় পা গলিয়ে নিজের সেরাটা ঢেলে দিতে পারবেন চার্লস ডি কেটেলেইর, তথা ‘বেলজিয়ামের মেসি’?

৬. কনর গ্যালাঘার (ইংল্যান্ড)

নাম্বার এইটের ভূমিকায় খেলতে পারদর্শী কনর গ্যালাঘার প্রতিনিয়ত মনে করিয়ে দেন পূর্বসূরী ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডকে। ল্যাম্পার্ডের মতোই সময়-সুযোগ বুঝে বক্সে রান নিতে পারেন এই একুশ বছর বয়সী তরুণ। তবে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে শুধুমাত্র গোলের চেষ্টাই করেন না তিনি, পায়ে বল না থাকা অবস্থাতেও তিনি রক্ষণে দারুণভাবে সাহায্য করতে পারেন। মাঠের নিচের দিকে বল কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা, বক্স-টু-বক্স খেলতে পারার সক্ষমতা, আর দলের প্রয়োজনে ‘নাম্বার টেন’-এর ভূমিকায় খেলতে পারার যোগ্যতা – সব মিলিয়ে গ্যালাঘারের মতো তরুণকে চাইবেন যেকোন কোচই।

“প্রেসিংয়ে সে অসাধারণ। বিভিন্ন ম্যাচের যেকোনো মুহূর্তে এমন ধরনের খেলোয়াড় আমাদের প্রয়োজন হতে পারে, আর গ্যালাঘারই হতে পারে সেই খেলোয়াড়। ম্যাচে সে দারুণ প্রভাব রাখতে পারে, গোলের সম্ভাবনা জাগাতেও সে পটু।”

– গ্যারেথ সাউথগেট, কোচ, ইংল্যান্ড জাতীয় দল
ইংল্যান্ডের মাঝমাঠে ভরসা জোগাবেন গ্যালাঘার? Image Source: Getty Images

চেলসির একাডেমিতে বেড়ে ওঠা এই তরুণ গত কয়েক মৌসুম ধারে কাটাচ্ছেন চেলসির বাইরে। প্রথমে চার্লটন, এরপর সোয়ানসি-ওয়েস্টব্রম; তবে গ্যালাঘারের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে গত মৌসুমে ক্রিস্টাল প্যালেসে তার কাটানো সর্বশেষ মৌসুমটা। ৩৪ ম্যাচে ৮ গোল আর ৩ অ্যাসিস্ট; পরিসংখ্যানও ব্যর্থ হবে মাঠে তার প্রভাবকে ফুটিয়ে তুলতে। এই মৌসুমে চেলসিতে ফিরে অবশ্য এখনো নিজের পায়ের তলার মাটি খুঁজে ফিরছেন, তবে ইংরেজ কোচ গ্যারেথ সাউথগেট ভরসা রাখছেন তার প্রতিভায়।

৭. রাফায়েল লিয়াও (পর্তুগাল)

দুই উইং, সেন্টার ফরোয়ার্ড, সেকেন্ড স্ট্রাইকার – মোট কথা, আক্রমণভাগে যেকোনো পজিশনে খেলতে পারেন, এমন একজন খেলোয়াড়কে কোন কোচ দলে চাইবে না! পর্তুগিজ উইঙ্গার রাফায়েল লিয়াও তেমনই একজন খেলোয়াড়। এসি মিলানের হয়ে গত মৌসুমে সবার নজর কাড়ার পর যিনি এখন পর্তুগালের জার্সিতে উঠে পড়েছেন কাতারগামী বিমানে। দারুণ ড্রিবলিং, অসাধারণ ভিশন আর চমৎকার শট নিতে দক্ষ এই বৈচিত্র্যপূর্ণ খেলোয়াড়কে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন তার শৈশবের ক্লাব স্পোর্টিং সিপির সাবেক কোচ তিয়াগো ফার্নান্দেজ। তুলনা করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, সঠিক পথেই আছেন লিয়াও।

“গতি, টেকনিক, আর চূড়ান্ত মুহূর্তে জ্বলে ওঠার ক্ষমতায় রাফায়েল লিয়াও মনে করিয়ে দেন রোনালদো নাজারিওকে। নিজের কোয়ালিটি দিয়ে মিলানকে দারুণ ফলাফল এনে দেন তিনি। আমি নিশ্চিত করতে পারি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ছাড়া এই বয়সে স্পোর্টিং সিপিতে এত প্রতিভাবান কেউ কখনো ছিল না।”

– তিয়াগো ফার্নান্দেজ, সাবেক কোচ, স্পোর্টিং সিপি
গত মৌসুম থেকে বেশ ভালো ফর্মে আছেন রাফায়েল লিয়াও; Image Source: Getty Images

চলতি মৌসুমে এসি মিলানের হয়ে ইতালিয়ান সিরি’আ-তে ১৪ ম্যাচে ৬ গোল আর ৫ অ্যাসিস্ট করেছেন রাফায়েল লিয়াও, গত মৌসুমে যা ছিল ৩৪ ম্যাচে ১১ গোল আর ১০ অ্যাসিস্ট। এই দারুণ ফর্মটা বিশ্বকাপেও ধরে রাখতে চাইবেন লিয়াও, পর্তুগালের অনন্তকালের শিরোপা-আক্ষেপও যদি তাতে কাটে!

৮. ইউসুফ ফোফানা (ফ্রান্স)

পল পগবা আর এনগোলো কান্তে – ২০১৮তে ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জেতার পেছনের অন্যতম কারিগর ছিলেন মাঝমাঠের এই দুই অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। চার বছর পর, ২০২২ সালে তারাই হয়তো ফ্রান্সের প্রথম পছন্দের মিডফিল্ডার ছিলেন, কিন্তু চোটের থাবায় বিশ্বকাপ দলে জায়গা হয়নি কারোরই। তাদের অনুপস্থিতিতে ফ্রান্সের তুলনামূলক অনভিজ্ঞ মধ্যমাঠ সামলানোর দায়িত্বে অরেলিয়েঁ শোয়ামেনি, এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা, আদ্রিয়ান রাবিওদের সাথে থাকবেন মোনাকোর ইউসুফ ফোফানাও। ফ্রান্সের জার্সিতে মাত্র দুটো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেললেও তার আত্মবিশ্বাসের অভাব নেই একদমই।

“দলে একজন নবাগত হিসেবে এই প্রতিযোগিতাটা উপভোগ করাই আমার প্রধান লক্ষ্য। আর আপনার বয়স ২৩ হোক বা ৩০, প্রথম বিশ্বকাপটা সবসময়েই গুরুত্বপূর্ণ। একজন প্রতিযোগী হিসেবে আমি অন্য সবার মতো সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো প্রথম একাদশে জায়গা করে নেওয়ার, তবে সতীর্থদের প্রতি আমার শ্রদ্ধাটা থাকবে সবসময়ে।”

– ইউসুফ ফোফানা, মিডফিল্ডার, ফ্রান্স জাতীয় দল
জাতীয় দলের জার্সিতে মাত্র দুটো ম্যাচ খেলেছেন ফোফানা; Image Source: Getty Images

৫ ফুট ৯ ইঞ্চির বক্স-টু-বক্স মিডফিল্ডার ইউসুফ ফোফানার বড় শক্তির জায়গা তার বৈচিত্র্য। নাম্বার এইট ভূমিকায় খেলতে পারেন, খেলতে পারেন হোল্ডিং মিডফিল্ডার হিসেবেও। প্রতিপক্ষের পাসিং লাইন আটকে দেওয়া, নিচে নেমে দলের রক্ষণে সাহায্য করা, অসাধারণ পজিশন সেন্স, দারুণ ভিশন আর লং বল দেওয়ার ক্ষমতা, সব মিলিয়ে পগবা-কান্তের অভাব ভুলিয়ে দেওয়ার সব রকম সামর্থ্যই আছে ফোফানার।

৯. ইউসুফা মৌকোকো (জার্মানি)

১৪ ম্যাচে ৬ গোল আর ৪ অ্যাসিস্ট, চোখ কপালে তোলার মতো পরিসংখ্যান নয় হয়তো। কিন্তু যখন জানবেন, এই পরিসংখ্যানের মালিকের বয়স মাত্র আঠারো, একটু অবাক হবেন নিশ্চয়ই। বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের জার্মান তরুণ ইউসুফা মৌকোকোর এই মৌসুমে বুন্দেসলিগার পরিসংখ্যান এটি, মাত্র ১৭ বছর বয়সে যিনি বুন্দেসলিগায় সবচেয়ে কম বয়সে দশ গোল করার রেকর্ড ছুঁয়েছেন। জার্মান জার্সি গায়ে চড়ানোর অভিজ্ঞতাও হয়ে গেছে দিনকতক আগে। ওমানের বিপক্ষে কোচ হ্যান্সি ফ্লিক তাকে সুযোগ দিয়েছিলেন প্রথম একাদশের হয়ে মাঠে নামার।

“সে যেভাবে ট্রেনিংয়ে নিজেকে উজাড় করে দেয়, তাতে আমি খুব খুশি। তবে সে মাত্র আঠারো বছর বয়সী, তাকে তার প্রয়োজন মতো আরো সময় দিতে হবে। আমরা চাই তাকে প্রতিনিয়ত সমর্থন দিয়ে যেতে।”

– হ্যান্সি ফ্লিক, কোচ, জার্মানি জাতীয় দল
এক ম্যাচের অভিজ্ঞতা নিয়ে বিশ্বকাপে যাচ্ছেন ইউসুফা মৌকোকো; Image Source: Getty Images

নিয়মিত সেন্টার ফরোয়ার্ড টিমো ভের্নারের চোটের কারণে সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলে গেছে মৌকোকোর, কাতার বিশ্বকাপে তিনি মাঠে নামার সুযোগ পাবেন নিশ্চিত। আর সেই সুযোগটাকে দুই হাতে গ্রহণ করতে পারলে স্পেন-জাপান-কোস্টারিকাকে পেরিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে আর বাধা থাকবে না জার্মানির।

১০. থিয়াগো আলমাদা (আর্জেন্টিনা)

কোন কোন সুযোগ জীবনে একবারই আসে। জীবন সবাইকে দ্বিতীয় সুযোগ দেয় না। তাই কেউ দ্বিতীয় সুযোগ পেলে, তাকে অনেক বেশি সৌভাগ্যবান বলে মেনে নিতেই হবে। লিওনেল স্কালোনির চার বছর ধরে তিল তিল করে গড়ে তোলা আর্জেন্টিনা দলের একদম শেষের দিকে খুব কম সময়ের জন্য যুক্ত হয়েছিলেন থিয়াগো আলমাদা, স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বকাপের দলে জায়গা পাননি তিনি। কিন্তু হোয়াকিন কোরেয়ার ইনজুরিটা তার কপাল খুলে দেয়, জরুরি ভিত্তিতে কাতারে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় আলমাদাকে। সেই আলমাদা, স্বয়ং লিওনেল মেসিও যাকে প্রশংসায় ভাসিয়েছিলেন।

“থিয়াগো খুবই তরুণ। সে অত্যন্ত দ্রুতগতিসম্পন্ন, সে জানে ওয়ান-অন-ওয়ানে কীভাবে খেলতে হয়। সে কোনো কিছু ভয় পায় না, পাশাপাশি বেশ বুদ্ধি ধারণ করে।”

– লিওনেল মেসি, অধিনায়ক, আর্জেন্টিনা জাতীয় দল
‘দ্বিতীয় সুযোগ’ পেলেন থিয়াগো আলমাদা; Image Source: Getty Images

আমাদের এই দশ তরুণের তালিকার প্রথম নয়জনই খেলেন ইউরোপের কোনো না কোনো ক্লাবে। থিয়াগো আলমাদা ব্যতিক্রম, তিনি খেলেন মেজর লিগ সকারে, আটলান্টা ইউনাইটেডের হয়ে। এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার চলতি মৌসুমের এমএলএসে করেছেন সাত গোল আর সাত অ্যাসিস্ট। মূল স্ট্রাইকারের পেছনে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে খেলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করা এই তরুণ খেলতে পারেন লেফট হাফ স্পেসেও, ডান পায়ে পোস্টে শট নিতেও দারুণ ভালোবাসেন তিনি। আর বিশ্বকাপে তেমন কয়েকটা লক্ষ্যভেদী শট নিতে পারলে নিজে ফুটবলবিশ্বের নজরে চলে আসবেন, আর্জেন্টিনার ছত্রিশ বছরের অপেক্ষারও অবসান ঘটে তাতে!

This article is in Bangla language. It is about the young players who can shine and take the spotlight in the FIFA World Cup 2022. All statistics are up to 20 November 2022.

Featured Image: Getty Images

Related Articles