Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রোহিত শর্মা: রঙিন পোশাকের পর্দার আড়ালের রাজা

এখন পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বল মোকাবেলা করা ব্যাটসম্যান ভারতের রাহুল দ্রাবিড়। তবুও তিনি তার সময়ে দলের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান ছিলেন না। সেরা হিসেবে একজনকে বেছে নিতে বললে বেশিরভাগ মানুষ শচীন টেন্ডুলকারকেই বাছাই করতো।

ঠিক তেমনি বর্তমানে ওয়ানডেতে ভারত ও বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু বিরাট কোহলি যদি অতিমানবীয় ফর্মে না থাকতেন, তাহলে বিশ্বসেরা ওয়ানডে ব্যাটসম্যান হিসেবে রোহিত শর্মার নামই উচ্চারিত হতো। এই দুই ঘটনার মধ্যে মিল হলো, একজনের অতিমানবীয় নৈপুণ্যের কারণে আরেকজন ছায়া হয়ে ছিলেন।

বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মা, আধুনিক দুই ব্যাটিং কিংবদন্তি; Image Source: BCCI

২০১৩ সালে নিয়মিত ওপেনার হিসেবে যখন রোহিত শর্মার আবির্ভাব ঘটে, তখন থেকেই অসাধারণ ব্যাট করে আসছেন তিনি। তার বড় ইনিংস খেলার ক্ষমতা এবং ধারাবাহিকতা তাকে অন্যান্য ওপেনারদের থেকে বড় ব্যবধানে এগিয়ে রেখেছে। টেস্ট ক্রিকেটে নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে না পারলেও গত পাঁচ বছরে তার ওয়ানডে পরিসংখ্যান বলে, তিনি সর্বকালের সেরা ওয়ানডে ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একজন। আধুনিক ওয়ানডে ক্রিকেটের সংজ্ঞা বদলে দেওয়া এই গ্রেট ওপেনারের উল্লেখযোগ্য দিকগুলো সম্পর্কে জেনে আসা যাক।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ রদবদল

২০০৭ সালে মাত্র ২০বছর বয়সে ভারতের হয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছিল রোহিত শর্মার। ক্যারিয়ারের প্রথম ছয় বছর মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করেছিলেন তিনি। এরপর মহেন্দ্র সিং ধোনির পরামর্শে ২০১৩ সালে ওপেনিং করেন। ওপেনার হিসেবে ব্যাট করার পর থেকে অন্য এক রোহিত শর্মাকে দেখে ক্রিকেট বিশ্ব।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম ১০০ ম্যাচে মাত্র ৩১.৭৯ ব্যাটিং গড়ে ২,৪৮০ রান সংগ্রহ করেছিলেন রোহিত। শতক হাঁকিয়েছিলেন মাত্র দুটি। এরপর থেকে তিনি কতটা দুর্দান্ত ব্যাটিং করছেন সেটা ভারতের কিংবদন্তী ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকারের সাথে তুলনা করলেই বোঝা যাবে।শচীন তার প্রথম ১০০টি ওয়ানডে ম্যাচে চার শতকের সাহায্যে ৩৬.৫৮ ব্যাটিং গড়ে ৩,১৪৬ রান করেছিলেন।

নিজের প্রথম ১০০ ম্যাচে মিডল-অর্ডারে ব্যাটিংয়ে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি রোহিত শর্মা; Image Source: Associated Press

রোহিত শর্মা বর্তমানে ১৯৩ ম্যাচে ২১টি শতকের সাহায্যে ৭,৪৫৪ রান করেছেন। ক্যারিয়ারের প্রথম ১০০ ম্যাচে তার ব্যাটিং গড় যেখানে ছিলো মাত্র ৩১.৭৯, তা বেড়ে এখন ৪৭.৭৮ এ দাঁড়িয়েছে। টেন্ডুলকার ১৯৩ ম্যাচ শেষে ৪০.৭৩ ব্যাটিং গড়ে ৪,৯২৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন, শতক হাঁকিয়েছিলেন ১৬টি।

রোহিত ১০০তম ওয়ানডে ম্যাচের পর এখন পর্যন্ত ৯৩ ম্যাচ খেলেছেন। এই ৯৩ ম্যাচে তিনি ৬৩.৭৬ ব্যাটিং গড় এবং ৯৬.৮৮ স্ট্রাইক রেটে ৪,৯৭৪ রান সংগ্রহ করেছেন; শতক হাঁকিয়েছেন ১৯টি ও অর্ধশতক ২০টি। এ সময়ে তার চেয়ে বেশি রান করেছেন শুধুমাত্র বিরাট কোহলি। রোহিতের চেয়ে ১৩ ম্যাচ বেশি খেলে তিনি ৭২.৪৬ ব্যাটিং গড় ও ৯৮.৩০ স্ট্রাইক রেটে ৫,৭২৫ রান সংগ্রহ করেছেন। ২৫টি অর্ধশতকের বিপরীতে ২৩টি শতক হাঁকিয়েছেন।

রোহিত শর্মা ১৮৭ ইনিংসে ব্যাটিং করে ২১টি শতক হাঁকিয়েছেন। ওয়ানডে ক্রিকেটে ক্যারিয়ারের প্রথম ১৮৭ ইনিংসের মধ্যে তার চেয়ে বেশি শতক হাঁকিয়েছেন শুধুমাত্র তিনজন- হাশিম আমলা, বিরাট কোহলি এবং এবিডি ভিলিয়ার্স। হাশিম আমলা ১৫৪ ইনিংসে ২৬টি এবং কোহলি ও ভিলিয়ার্স নিজেদের প্রথম ১৮৭ ইনিংসে যথাক্রমে ৩০টি ও ২২টি করে শতক হাঁকিয়েছেন।

গত পাঁচ বছরে ১৯টি শতক হাঁকিয়েছেন রোহিত শর্মা; Image Source: AFP

এই সময়ের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নিজের ব্যাটিং প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন রোহিত শর্মা। চাপের মুখে এবং প্রতিকূল অবস্থায়ও তিনি দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন। ভারত বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নামলে তিনিই উদ্বোধনী উইকেটে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন, যাতে করে অন্যান্য ব্যাটসম্যানদের জন্য কাজটা সহজ হয়ে পড়ে। এই সময়ে তার ১৯টি শতকের মধ্যে ভারত পনেরটিতেই জয়লাভ করে। বর্তমানে ভারতের সাফল্যে কোহলির পাশাপাশি রোহিতের অবদানও অনস্বীকার্য।

টু গুড টু বি সেকেন্ড

রোহিত শর্মার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট হলো ২০১৩ সালে যখন তাকে ইনিংস উদ্বোধন করার জন্য পাঠানো হয়। এরপর থেকে তিনি অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন। এই সময়ে ৯২ ম্যাচে ইনিংস উদ্বোধন করে ৬৩.৫৩ ব্যাটিং গড়ে ৪,৯৫৬ রান করেন তিনি। ওপেনার হিসেবে সবচেয়ে বেশি রান তুলেছেন তিনি। ওপেনার হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করেছেন তার স্বদেশী শিখর ধাওয়ান। তিনি ৪৬.০৩ ব্যাটিং গড়ে ৪,২৩৫ রান করেছেন। এছাড়া হাশিম আমলা ৪৬.১৯ ব্যাটিং গড়ে ৪,১১১ রান করেছেন।

শতক হাঁকানোর দিক থেকেও তিনি অন্য ওপেনারদের চেয়ে বড় ব্যবধানে এগিয়ে আছেন। ২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তিনি ১৯টি শতক হাঁকিয়েছেন। এই সময়ে ওপেনারদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪টি করে শতক হাঁকিয়েছেন ধাওয়ান এবং আমলা।

২০১৭ এবং ২০১৮ সালে ওয়ানডেতে রোহিত শর্মার ব্যাটিং গড় সত্তরের উপরে; Image Source: AFP

রোহিত শর্মা গত তিন পঞ্জিকাবর্ষের প্রতি বছরে ষাটের উপর ব্যাটিং গড়ে রান তুলেছেন। ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে তিনি সত্তরোর্ধ্ব ব্যাটিং গড়ে রান করেছেন, স্ট্রাইক রেটও একশো ছুঁইছুঁই। ২০১৭ সালে ১,৩০০ বলে ১,২৯৩ রান এবং ২০১৮ সালে এখন পর্যন্ত ১,০২৯ বলে ১,০৩০ রান সংগ্রহ করেছেন।

২০১৭ এবং ২০১৮ সালে তিনি মাত্র ৪০ ম্যাচে ১১টি শতক হাঁকিয়েছেন। এই সময়ে তার চেয়ে বেশি শতক হাঁকিয়েছেন শুধুমাত্র কোহলি। তিনি ১২টি শতক হাঁকান। রোহিত ৪০ ম্যাচে ৭২.৫৯ ব্যাটিং গড়ে এবং ৯৯.৭৪ স্ট্রাইক রেটে ২,৩২৩ রান সংগ্রহ করেছেন। ১১টি শতকের পাশাপাশি আটটি অর্ধশত রানের ইনিংসও খেলেছেন। এই সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়া সব কন্ডিশনেই দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন তিনি। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে একটি শতক হাঁকালেও সবমিলিয়ে ছন্দে ছিলেন না রোহিত।

কোহলির যুগ বাদ দিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটের যেকোনো যুগে জন্মালে রোহির সেসময়কার বিশ্বসেরা ওয়ানডে ব্যাটসম্যানের খেতাব পেতেন। কিন্তু ভারতীয় অধিনায়ক দুর্দান্ত পারফর্ম করে রোহিতকে দ্বিতীয় সেরা ব্যাটসম্যানে পরিণত করেছেন। এতে করে অবশ্য রোহিতের দুঃখ থাকার কথা না। কারণ কোহলি যেভাবে রান করছেন, তাতে অকল্পনীয় কিছু না করলে তাকে ছোঁয়া সম্ভব নয়।

বিরাট কোহলির অসাধারণ নৈপুণ্যে দ্বিতীয় হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে রোহিতকে; Image Source: Associated Press

প্রায় সবকিছুতে কোহলির চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও ছয়ের দিক দিয়ে তার দ্বিগুণ বেশি ছয় হাঁকিয়েছেন রোহিত। ২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত রোহিত ১৭৪টি ছয় মেরেছেন। এই সময়ে তার চেয়ে বেশি ছয় কেউ হাঁকাতে পারেননি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১০টি ছয় হাঁকানো ভিলিয়ার্সের চেয়ে তার ছয়ের সংখ্যা ৬৪টি বেশি। কোহলি ছয় মেরেছেন ৮২টি, যা রোহিতের চেয়ে ৯২টি কম। এদিক দিয়েই রোহিত এগিয়ে আছেন।

বড় ইনিংস খেলার পারদর্শিতা

ওয়ানডেতে রোহিত শর্মার সফলতা পাওয়ার অন্যতম কারণ হলো, তিনি পরিস্থিতি বিচার করে খেলেন। ইনিংসের শুরুতে উইকেটের আচরণ বিচার করে ব্যাট করেন। টপ-অর্ডারে তার ভূমিকা হলো, প্রথম ১০-১৫ ওভার দেখে-শুনে খেলা। এরপর ক্রিজে থিতু হয়ে গেলে তিনি নিজের মতো করে বোলারদের উপর রাজত্ব চালান। শুরুতে ধীরগতিতে ব্যাট করলেও দলকে চাপে ফেলেন না তিনি। তার অসাধারণ বল-স্ট্রাইকিং ক্ষমতা দ্বারা তিনি দ্রুত রান তুলতে পারেন।

Image Source: Associated Press

ক্রিকেট বিশ্বে ফিনিশার হিসেবে অনেক হার্ড-হিটার ব্যাটসম্যানের নাম উল্লেখ করা হয়। ধোনি, ডি ভিলিয়ার্স, আন্দ্রে রাসেল, পান্ডিয়ার মতো ব্যাটসম্যানকে ডেথ ওভার স্পেশালিষ্ট বলা হয়। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে ভিন্ন কথা। গত পাঁচ বছরে ওয়ানডেতে ডেথ ওভারে কমপক্ষে ৩০ বল মোকাবেলা করা ব্যাটসম্যানদের মাঝে সবচেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেট (২০৯.৩) রোহিতের।

বড় ইনিংস খেলার ক্ষেত্রেও অতুলনীয় তিনি। এখন পর্যন্ত ওয়ানডেতে তিনটি দ্বি-শতক সহ মোট সাতবার দেড়শো রানের অধিক ইনিংস খেলেছেন তিনি। ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশিবার দেড়শো রানের ইনিংস খেলার রেকর্ডটি তার দখলে। এর পরের স্থানে থাকা ডেভিড ওয়ার্নার এবং শচীন টেন্ডুলকার পাঁচবার করে দেড়শো রানের ইনিংস খেলেছেন। গত পাঁচ বছরের প্রত্যেকটিতে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলার রেকর্ড তার দখলে।

বর্তমানে ভারতের ওয়ানডে ব্যাটিং লাইনআপের শীর্ষ পাঁচ ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং গড় পঞ্চাশের আশেপাশে। এর মধ্যে রোহিত এবং কোহলি দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন। এছাড়া শিখর ধাওয়ান, আম্বাতি রাইডু এবং মহেন্দ্র সিং ধোনিরও গর্ব করার মতো পরিসংখ্যান রয়েছে। রোহিত আশা করতেই পারেন, তার দুর্দান্ত এই ব্যাটিং ফর্ম আসন্ন বিশ্বকাপ পর্যন্ত থাকবে এবং সাদা পোশাকেও এর প্রভাব পড়বে।

This article is in Bangla language. It is about rohit sharma's odi performance in recent years. Please click on the hyperlinks to look for references.  

Featured Image : Reuters

Related Articles