Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ক্লাব অদলবদলের সবচেয়ে দামী পাঁচ গোলরক্ষক

ক্লাব ফুটবল মানেই টাকা পয়সার ঝনঝনানি। ট্রান্সফার মৌসুমে বড় বড় ক্লাবগুলো চড়া মূল্যেই তারকা খেলোয়াড়দের দলে টানার চেষ্টা করে। তবে বেশিরভাগ সময়েই দেখা যায় আক্রমণভাগ বা মাঝমাঠের খেলোয়াড়দের মূল্য কিংবা চাহিদা একটু বেশিই থাকে। সেদিক থেকে সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত থেকে যান গোলবারের নিচে থাকা খেলোয়াড়টি। তবে যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে এই বিষয়টিরও পরিবর্তন এসেছে। দলের কথা চিন্তা করে ম্যানেজমেন্ট কিংবা কোচ এখন চড়া দামে গোলকিপার কিনতেও পিছপা হন না। চলুন দেখে আসা যাক ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে দামী পাঁচ গোলকিপার কারা কারা।

বর্তমানের কিছু সেরা গোলকিপার; Image Source: Goal

৫. ম্যানুয়েল নয়্যার – ২১ মিলিয়ন ইউরো (শালকে – বায়ার্ন মিউনিখ)

বর্তমান ফুটবলের অন্যতম সেরা এই গোলরক্ষক কে বাভারিয়ানরা দলে ভেড়ায় সাত বছর আগে। সেই থেকে বায়ার্ন মিউনিখ এবং জার্মানির আস্থার প্রতীক হয়ে আছেন ৩২ বছর বয়সী এই গোলরক্ষক। শালকের হয়ে নজর কাড়া পারফরম্যান্সের পর ২০১১ সালে ২১ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ম্যানুয়েল নয়্যারকে দলে ভেড়ায় জার্মান ক্লাবটি। সেই সময় একজন গোলকিপারের পিছনে এত দাম খরচ করায় সবাই ভ্রু কুঁচকেছিলো। তবে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে সময় নেননি নয়্যার। প্রথম সিজন থেকেই আস্থার সাথে সামলিয়েছেন গোলবার। সাত সিজনে বুন্দেসলিগা জিতেছেন ছয়বার। সাথে ২০১৩ সালে জিতেছেন চ্যাম্পিয়ন্স লীগও। ২০১৪ বিশ্বকাপে জার্মানির হয়ে অসাধারণ পারফর্ম করে জিতে নেন টুর্নামেন্টের সেরা গোলরক্ষকের পুরষ্কার। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি দলের অন্যতম ভরসার প্রতীক ছিলেন এই গোলরক্ষক। গোলকিপার থেকে নিজেকে সুইপার কিপারে পরিণতে করে মুগ্ধ করেন ফুটবল দর্শকদের। অসাধারণ রিফ্লেক্স এর জন্য বিখ্যাত এই গোলকিপার সেরা গোলকিপারের পুরষ্কার পেয়েছেন চারবার। ২০১৩ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত টানা চারবার এই অ্যাওয়ার্ড ঘরে তুলেন নয়্যার। বর্তমানের তুলনায় ২১ মিলিয়ন ইউরোতে ম্যানুয়াল নয়্যারকে পাওয়া বলতে গেলে এক প্রকার পুকুরচুরিই। ৩২ বছর এই গোলকিপার বায়ার্নের হয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে পারবেন আরো ৩ থেকে ৪ বছর।

ম্যানুয়েল নয়্যার; Image Source: Getty Images

৪. জর্ডান পিকফোর্ড – ২৫ মিলিয়ন ইউরো (স্যান্ডারল্যান্ড – এভারটন)

২০১৭ সালে স্যান্ডারল্যান্ড থেকে ২৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে জর্ডার্ন পিকফোর্ডকে দলে ভেড়ায় এভারটন। সেই সময় এই ট্রান্সফারকে ঘিরে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় এভারটন ম্যানেজমেন্টের। তরুণ, আনকোরা এবং নিজেকে প্রমাণের আগেই এত দামে একজন গোলকিপারকে কেনায় সমালোচনার মুখে পড়ে টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে মোটামুটি একটি সিজন পার করার পর পিকফোর্ড তার প্রতিভার ঝলক দেখান রাশিয়া বিশ্বকাপে। গত মৌসুমের পারফরম্যান্সে সাউথগেটের দলে এক নাম্বার গোলকিপারের জায়গাটি পাকাপোক্ত করে নেন ২৪ বছর বয়সী এই গোলকিপার। আর সদ্য সমাপ্ত হওয়া বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের হয়ে করেন নজরকাড়া পারফরম্যান্স। বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে কলম্বিয়ার সাথে টাইব্রেকারে পিকফোর্ডের জাদুকরী সেভের কল্যাণেই প্রথমবারের মত বিশ্বকাপে টাইব্রেকার জুজু কাটায় ইংল্যান্ড। সামনের মৌসুমগুলোতে নিজেকে আরো প্রমাণ করতে পারলে ভবিষ্যতে বড় কোনো ক্লাবে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে এই ২৪ বছর বয়সী ব্রিটিশ গোলরক্ষকের।

জর্ডান পিকফোর্ড; Image Source: Youtube

৩. জিয়ানলুইজি বুফন – ৩২.৬ মিলিয়ন ইউরো (পার্মা – জুভেন্টাস)

২০০১ সালে যখন পার্মার তরুণ প্রডিজি গোলকিপার জিয়ানলুইজি বুফনকে তুরিনের ওল্ড লেডিরা প্রায় ৩৩ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে দলে ভেড়ায় তখন বুফনের সামর্থ্য নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন। সবাইকে চুপ করিয়ে দিয়ে সেই বুফন জুভেন্টাসের হয়ে খেলে যান টানা ১৭ বছর। মাঝে ফিক্সিং কেলেঙ্কারির জন্য জুভেন্টাসের দ্বিতীয় বিভাগে অবনমন হলেও বড় বড় ক্লাবগুলোর লোভনীয় অফার উপেক্ষা করে দলে থেকে যান তিনি। তার সময়ে সিরি আ তে জুভেন্টাস হয়ে ওঠে অপ্রতিরোধ্য। আর শেষ দিকে এসে অধিনায়ক হয়ে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন এই ইতালিয়ান গোলকিপার। ইতালির হয়েও গোলবার সামলিয়েছেন এক যুগের বেশি সময় ধরে। দলের হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছেন ২০০৬ বিশ্বকাপ। রিফ্লেক্স আর গোলবারের নীচে অসাধারন ক্ষীপ্রতার জন্য অনেকের মতে লেভ ইয়াসিনের পর বিশ্বের সেরা গোলকিপার বুফনই। ক্যারিয়ারে সেরা গোলকিপারের পুরষ্কার জিতেছেন ৫ বার। যা কিনা ইকার ক্যাসিয়াসের সাথে যৌথ ভাবে সর্বোচ্চ। ৪০ বছর বয়সে এসেও এতটুকু ধার কমেনি এই বর্ষীয়ান গোলরক্ষকের। তবে এই মৌসুমেই জুভেন্টাসকে বিদায় জানিয়েছেন তিনি। এই বয়সে এসেও যোগ দিয়েছেন ইউরোপের আরেক বিখ্যাত ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ে। তবে ১৭ বছর আগে পার্মা থেকে এক তরুণ গোলকিপারকে সেই সময়ের তুলনায় অনেক দাম দিয়ে কিনে যে জুভেন্টাস ভুল করেনি তা এতদিনে জেনে গেছে পুরো বিশ্বই।

জিয়ানলুইজি বুফন; Image Source: Pinterest

২. এডারসন মোরায়েস – ৩৫ মিলিয়ন ইউরো (বেনফিকা – ম্যানচেস্টার সিটি)

পেপ গার্দিওলা সিটির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নিজের খেলার ধরনের সাথে মানানসই গোলকিপার খুঁজছিলেন। প্রথম মৌসুমে বার্সেলোনা থেকে উড়িয়ে আনেন ক্লদিও ব্রাভোকে। কিন্তু তার হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর গত মৌসুমে গোলকিপারের ক্ষেত্রে রেকর্ড দল বদলের দামে ইতিহাদে আনেন ব্রাজিলিয়ান গোলকিপার এডারসন মোয়ারেসকে। এর আগে বেনফিকার হয়ে অসাধারন মৌসুম কাটানোর পর সবার চোখে পড়েন এডারসন। গোলকিপারের পাশাপাশি সুইপার গোলকিপার এবং লং পাসের জন্যও সুপরিচিত তিনি। প্রথম মৌসুমে এসেই এডারসন পেপ গার্দিওলার আস্থার প্রতিদান দেন ভালোভাবেই। গোলবারের নীচে তার নৈপুণ্যে প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে প্রথমবারের মত ১০০ পয়েন্ট তুলে নেয় ম্যানচেস্টার সিটি। সেই সাথে প্রিমিয়ার লিগের মেডেলও জিতে নেন এডারসন। পুরো মৌসুমে দ্বিতীয় সবচেয়ে কম গোল খাওয়া দলের প্রধান গোলকিপার ছিলেন এই ব্রাজিলিয়ান। তবে ৩৫ মিলিয়নের মূল্যের দাম দেওয়ার জন্য এই পারফরম্যান্স ধরে রাখতে হবে সামনের মৌসুমগুলোতেও। আর এডারসনকেই প্রথম গোলকিপার ধরে রেখে সামনের মৌসুমগুলোতেও যে গার্দিওলা তার দল সাজাবেন তা বলাই বাহুল্য।

এডারসন মোয়ারেস; Image Source: Squawka

১. অ্যালিসন বেকার – ৬৫ মিলিয়ন ইউরো (রোমা – লিভারপুল)

এডারসনের রেকর্ড ফি কিছুদিন আগেই ভেঙ্গে দেন তারই ব্রাজিলিয়ান সতীর্থ অ্যালিসন বেকার। তাও প্রায় এডারসনের মূল্যের প্রায় দ্বিগুন দামে তাকে দলে ভেড়ায় প্রিমিয়ার লিগের দল লিভারপুল। রেকর্ড দাম ৬৫ মিলিয়ন ইউরোতে রাশিয়া বিশ্বকাপের পরপর অ্যালিসন বেকারকে এনফিল্ডে নিয়ে আসেন ইয়ুর্গেন ক্লপ। রোমার গত মৌসুমের সাফল্যের পিছনে ২৫ বছর বয়সী এই গোলরক্ষকের অবদান ছিলো সবচেয়ে বেশি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রোমাকে সেমি ফাইনাল পর্যন্তও তুলতে সাহায্য করেন তিনি। অন্যদিকে ক্লপের অধীনে লিভারপুল দুর্দান্ত খেললেও তাদের মূল সমস্যা ছিলো গোলবার। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে লরিস ক্যারিউসের যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্সের পর গোলকিপার কেনাটা এক প্রকার প্রধান কাজই হয়ে দাঁড়িয়েছিলো লিভারপুলের জন্য। তারই ফলশ্রুতিতে রোমা থেকে এই মৌসুমে অ্যালিসন বেকারকে উড়িয়ে আনে মার্সিসাইড বাহিনী। রাশিয়া বিশ্বকাপেও ব্রাজিলের গোলবারের নিচে তিতের প্রথম পছন্দ ছিলেন তিনি। ব্রাজিল কোয়ার্টার ফাইনালে ছিটকে পড়লেও গোলবারের নিচে দেয়াল হয়েই দাঁড়িয়ে ছিলেন। তবে অ্যালিসন বেকারের মূল লক্ষ্য এখন এই বিশাল প্রাইস ট্যাগের যথার্থতা মাঠে রূপদান করা। অনেকের মতে গোলকিপারের পেছনে এত টাকা খরচ করাটা বোকামি। তবে নতুন মৌসুমে অ্যালিসনের সামর্থ্য রয়েছে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দেওয়ার। তা অ্যালিসন বেকার কতটুকু করতে পারবেন তা সময়ই বলে দেবে।

এলিসন বেকার; Image Source: The Football Image

This Bangla article is about the most valuable goalkeeper in transfer history. Necessary sources are hyperlinked in the article.

Feature Image: Youtube

Related Articles