Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

পারফর্ম করার চ্যালেঞ্জ নিতে জানি: তুষার ইমরান

বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে যত প্রতিভাবান ক্রিকেটার এসেছেন, তাদের মধ্যে ওপরের দিকেই থাকবে তুষার ইমরানের নাম। আর এদের মধ্যে যারা প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক ময়দানে সুনাম কুড়াতে পারেননি, সেই তালিকাতেও তিনি থাকবেন সামনের সারিতেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তুষার ইমরানের যাত্রাটা কখনোই বড় হয়নি ঘরোয়া ক্রিকেট ও ‘এ’ দলের পারফরম্যান্সগুলোকে ফিরিয়ে আনতে না পারায়।

তবে, ২০ বছর ধরে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে যাওয়া তুষার ঘরোয়া ক্রিকেটের ইতিহাসে রীতিমতো কিংবদন্তি। ১৭৭টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ, প্রায় ১২ হাজার ছুঁইছুই রান, ৩১টি সেঞ্চুরি – এমন রেকর্ড আর কোনো বাংলাদেশি ক্রিকেটারেরই নেই। সেই তুষার ইমরান নিজের ও বাংলাদেশ ক্রিকেটের নানা বিষয় নিয়ে বিশেষ সাক্ষাৎকারে মুখোমুখি হয়েছিলেন রোর বাংলার।

পারফরম্যান্স থাকার পরও বিসিএলে খেলতে পারলেন না। এটা আপনার মানের একজন ক্রিকেটারের জন্য কতটা হতাশাজনক?

বিপ টেস্টে ১০ ওঠানো যে কারো জন্যই কষ্টকর। সেটা ১৯ বছরের ক্রিকেটার বলেন, বা আমাদের মতো ৩৫-৩৬ বছর বয়সীদের জন্যই বলেন। কিন্তু, যারা পারফরমার, তাদের অন্তত খেলার সুযোগটা দেওয়া উচিৎ ছিল। যারা পারফরমার, তাদের বিবেচনা আলাদা হওয়া উচিৎ, কারণ পারফর্ম করার জন্যও তো একটা ন্যূনতম ফিটনেস থাকা উচিৎ, সেটা তো আমার ছিল।

২০০৩ সালে মুলতানে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডেতে © JEWEL SAMAD/AFP via Getty Images

ফিটনেস টেস্টের ব্যাপারে বিসিএল, বিসিবি আর খেলোয়াড়দের মধ্যে কোনো কমিউনিকেশনের গ্যাপ ছিল কি?

আমরা শুরুতে ফিটনেস টেস্টের ব্যাপারটা জানতাম না। তখন তো আসলে ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রিমিয়ার লিগ হওয়ার কথা ছিল। তখনই দলবদল হওয়ার কথা ছিল। ওই সময় তাই আমাদের বিপ টেস্ট দেওয়ার মতো কোনো প্রস্তুতি ছিল না। আর এই টেস্টের প্রস্তুতি হুট করে হয় না, অন্তত ১৫-১৬ দিন আগে থেকে শুরু করা লাগে। আর তখন মাত্রই জাতীয় লিগ শেষ হলো, ওই সময়ই আবার চারদিনের ক্রিকেট খেলতে হবে – এটা কারো মাথাতেও ছিল না। যারা তরুণ আছে, তারাই বিপ টেস্টে পাশ করেছে। যাদের বয়স ৩৫-৩৬, তারা শুরুতে পাশ করেনি। কোনোক্রমে দ্বিতীয়বার দিয়ে পাশ করেছে। আমি ৯.৮ পাই বিপ টেস্টে। এখানে ১০ পেয়ে অনেকেই বিসিএল খেলেছে।

একজন ব্যাটসম্যানের জন্য ফিটনেসটাই কি সব, নাকি পারফরম্যান্সেরও মূল্যায়ন থাকা উচিৎ? পারফরমারদের ক্ষেত্রে কি নিয়মটা একটু শিথিল হওয়া উচিৎ না?

আমিও মনে করি, পারফরম্যান্সেরই বেশি মূল্যায়ন থাকা ‍উচিৎ। হ্যাঁ, কোনো সন্দেহ ছাড়াই বলা যায় যে, ফিটনেস সবার জন্যই জরুরী। তবে, একই সাথে এটাও সত্যি যে, আপনি যদি রানই না করতে পারেন, তাহলে ফিটনেস দিয়ে কোনো লাভ নেই। তাই যারা পারফর্ম করে আসছিল, তাদের একটা ছাড় দেওয়া উচিৎ ছিল।

২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফতুল্লায় ©

একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। আপনি তো লম্বা সময় ধরে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলছেন, রান করছেন। প্রায় ২০ বছর হবে। আপনার সমসাময়িক অনেকেই এখন কোচ। আপনার এতদিন খেলা চালিয়ে যাওয়ার রহস্যটা আসলে কি?

আমি মনে করি, আপনি যখন খেলার জন্য ফিট থাকবেন আর পারফর্ম করবেন, তখন খেলাটা চালিয়ে যাওয়া উচিৎ। আমি আর রাজ্জাক এটাই মনে করি। আমরা পারফর্ম করা চ্যালেঞ্জটা নিই। আমাদের নিয়ে অনেকেই অনেকবার বলে যে, ‘এরা কেন খেলা ছাড়ে না!’ আমরা যতদিন পারফর্ম করব, খেলব। পারফর্ম না করলে অটোমেটিক সরে যেতে হবে। এই বয়সে পারফর্ম না করলে টিকে থাকা কঠিন। তাই, যখন যে লিগই খেলি, পারফর্ম করার চ্যালেঞ্জটা নিতে জানি। আমাদের এখানে সাকিব, তামিম, মুশফিকদের মতো সুপারস্টার কম। ফলে, পারফর্ম করার একটা চাপও থাকে আমাদের ওপর।

আপনি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১২ হাজার রানের মাইলফলক থেকে আর মাত্র ২৯৬ রান দূরে আছেন। তো আপনার সামনের পরিকল্পনা কী? কবে ফিরবেন?

আমার ইচ্ছা ছিল যে, বিসিএলে যদি সুযোগ পেতাম, তাহলে কিছু তো রান করতাম। ৩০০-এর মতো রান করতে পারলে আমি হয়তো খেলাও ছেড়ে দিতাম। কিন্তু, সেটা তো হয়নি। সামনে এখন পরিকল্পনা বলতে, জাতীয় ক্রিকেট লিগ (এনসিএল) আছে। ওখানে এখন চোখ রাখছি। চেষ্টা করব, যত দ্রুত সম্ভব মাইলফলকে পৌঁছে যাওয়া যায়।

ক্যারিয়ারের শেষে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?

আসলে আমি এভাবে ভাবি না। এই ব্যাপারটা অনেকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। পারফর্ম না করলে আপনাকে সরে যেতেই হবে। দুই বছর না কয় বছর খেলব, সেসবও বলা যায় না। শেষ মৌসুমটা আমার খারাপ গেছে। ১২টা ইনিংসের মধ্যে আটটা ইনিংস ব্যাট করতে পেরেছি। ৩০০ রানও করতে পারিনি, কোনো সেঞ্চুরি পাইনি। একটা মৌসুম খারাপ যেতেই পারে। হয়তো ১২টা ইনিংস খেললে রানটা ৪০০’র ওপর উঠত। এটা একটা আক্ষেপ থাকবে। জাতীয় লিগের শুরুতেই বড় ইনিংস করতে চাই, যত দ্রুত সম্ভব ১২ হাজার রানের মাইলফলকে যাওয়া যায়, সেটাই আমার লক্ষ্য।

ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত পারফরমার তিনি © BCB

ক্যারিয়ার যখন শুরু করেন ‘এ’ দল বা জাতীয় দলে, তখন তো আপনি সুপারস্টার। কিন্তু সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছেন খুব কম। নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

আমরা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলা শুরু করি ১৭-১৮ বছরে। সত্যি কথা হলো, তখন আমরা খেলাটা বুঝতাম না। হয়তো আমরা রান করতাম, সেটা নিজেদের অভিজ্ঞতা বা বোঝাপড়া দিয়ে করতাম না, করতাম প্রতিভা দিয়ে। হয়তো পরিশ্রম করতাম, তার ফলটা পেতাম। তখন মাথাটা এতটা খোলেনি। টেস্ট দল হিসেবেও তখন আমরা খুবই নতুন। ২০০০ সালে আমরা প্রথম টেস্ট খেললাম, ওর কাছাকাছি সময় থেকেই আমরা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলতাম। তখন অবশ্য ওয়ানডে ভাল খেলতাম, চারদিনের ম্যাচ বুঝতাম না। আস্তে আস্তে বয়স হওয়ার পর বুঝেছি।

যখন ওয়ানডেতে ভাল করলাম আন্তর্জাতিক ম্যাচে, তখন আমি টেস্টও খেলে ফেলেছি। অথচ, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেই বোঝাপড়া কম। এই ব্যাপারগুলো আমার ক্যারিয়ারকে প্রভাবিত করেছে। টেস্টের একটা মেজাজ থাকে, সেই মেজাজটা আমরা ধরতে পারিনি। এর জন্য আমাদের ক্ষতিও হয়েছে। খুব অসময়ে ক্যারিয়ারটা থেমে গেছে। আমি মনে করি, ওই সময় সুমন ভাই (হাবিবুল বাশার সুমন) আর বুলবুল ভাই (আমিনুল ইসলাম বুলবুল) বাদে আর কেউ টেস্ট ক্রিকেটটা বুঝতো না। ওনাদের বয়সটা বোঝার মতো ছিল, আমাদের বয়স ছিল অনেক কম। টেস্ট আমরা বুঝেছি ২৭-২৮ বছর বয়সে গিয়ে।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বছর দুয়েক আগে আপনি ক্যারিয়ারের সেরা সময় কাটান। তখন কি মনে হয়নি, অন্তত দেশের মাটিতে টেস্টে একটা সুযোগ পেতে পারতেন? নির্বাচক বা বিসিবির কোনো দায় দেখেন?

অবশ্যই একটা ‍সুযোগ পেতে পারতাম। দুই-এক মৌসুম আগে আমি সবচেয়ে ভাল ফর্মে ছিলাম। তখন আমার বয়স ৩৩-৩৪। ওই সময় জাতীয় দলে একটা সুযোগ পেতে পারতাম। আমি নিজেও আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। ওই সময় একটা সুযোগ পেলে হয়তো নিজের মধ্যে আরো ভাল করার চ্যালেঞ্জ কাজ করতো। সুযোগটা পেলে হয়তো বা বুঝতাম যে, আমি শুধু ঘরোয়া ক্রিকেটেই পারফর্ম করে যাব, নাকি আমার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও সুযোগ আছে। আমি টেস্টটা খেলতেই পারতাম। সেই সুযোগ চলে গেছে। এর তো আর প্রশ্নই আসে না।

২০০৭ সাল, জাতীয় দলে সেটাই তাঁর শেষ বছর © SANKA VIDANAGAMA/AFP via Getty Images

করোনা ভাইরাসের জন্য প্রিমিয়ার লিগটা হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে গেল। এটা ক্রিকেটারদের কিভাবে প্রভাবিত করলো?

এটা ক্রিকেটের জন্য বড় একটা ক্ষতি হয়ে গেল। প্রিমিয়ার লিগ ঘরোয়া ক্রিকেটারদের রুটি-রুজির জায়গা। প্রথমে সূচি ছিল যে, বিপিএলের পরেই প্রিমিয়ার লিগ হবে। সেটা হয়ে গেলে তো এতদিনে লিগটা শেষই হয়ে যায়। তাহলে এখন করোনা ভাইরাসের জন্য লিগ বন্ধ করতে হয় না। এখন বন্ধ আছে। সবার মধ্যেই একটা সন্দেহ আর সংশয় কাজ করছে যে, আদৌ আর এই লিগ শুরু হবে কি না। আশা করবো, দ্রুতই যেন করোনা ভাইরাসের প্রকোপ কমে আসে। যত দ্রুত আবার লিগ শুরু হবে, ততই সেটা আমাদের ক্রিকেটের জন্য মঙ্গলজনক।

জাতীয় দলের প্রসঙ্গে আসি। সদ্যই ওয়ানডে অধিনায়কত্ব ছাড়লেন মাশরাফি। তিনি তো আপনার সমসাময়িক ক্রিকেটার। তাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

মাশরাফি যখন দায়িত্বটা নিল ২০১৪ সালে, তখন তো আমাদের জাতীয় দলের অবস্থা খুব ভাল ছিল না। ওই কিন্তু দলটাকে একটা ভাল অবস্থানে নিয়ে আসে। ও আসার পরই আমাদের পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতা আসে। ও অনেকটা সুপারম্যানের মতো দায়িত্ব পালন করে। এখন ওর বিরুদ্ধে যেটা অভিযোগ, সেটা হলো গত বছর বা বিশ্বকাপে ওর পারফরম্যান্স ভালো ছিল না। এই পারফরম্যান্সের ওঠানামা একজন ক্রিকেটারের জীবনে তো থাকবেই। সেটা মেনে নেওয়া দরকার ছিল।

নতুন অধিনায়ক করা হলো তামিমকে। তিনি কি ব্যাটিংয়ের বড় দায়িত্বের পাশাপাশি অধিনায়কত্ব সামলানোর মতো যোগ্য?

আমি মনে করি, দলের সেরা ক্রিকেটারেরই অধিনায়ক হওয়া উচিৎ। আমাদের সেরা ক্রিকেটার কারা? সাকিব, তামিম, মুশফিক, এরপর হয়তো রিয়াদ আসবে। তো সাকিব তো এখন নিষেধাজ্ঞার জন্য নেই। তাহলে তামিমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মাশরাফির বিদায়ের পর আমাদের এমন একজনকে দরকার ছিল, যে আরো বছর দুয়েক অন্তত দলটাকে চালিয়ে নিতে পারবে। সেদিক থেকে আমার তামিমকে যোগ্য মনে হচ্ছে।

একালের তরুণদের সাথে পাল্লা দিয়ে ব্যাট করেন তুষার ইমরান © BCB

ক্রিকেট ক্যারিয়ারে আপনি মোটামুটি শেষের দিকে পৌছে গেছেন। খেলা ছাড়ার পর পরিকল্পনা কী?

আমরা যারা ক্রিকেটের মানুষ, মাঠের মানুষ, তারা সবসময় চাইব মাঠেই থাকতে। যেমন ধরেন, আপনি সাংবাদিক। আপনাকে হুট করে অন্য কোনো কাজ দিলে তো করতে পারবেন না। আমাদের জন্যও তাই। আমিও তাই ক্রিকেটের সাথেই থাকতে চাই। সেটা কোচিং হতে পারে। ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষে হয়তো কোচিংয়ে মন দিব। কিংবা বিসিবির যদি কোনো কাজে আসা যায়, বা তারা যদি আমাকে তাদের কোনো কিছুর জন্য যোগ্য বলে মনে করে, তাহলে আমি সবসময় ইতিবাচক থাকব।

This is an exclusive interview of Bangladeshi Cricketer Tushar Imran on his cricket career and Bangladesh Cricket, given in Bangla.

Featured Image © BCB

 

Related Articles