Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মেসির হ্যাটট্রিক, ইন্টার ও লিভারপুলের শ্বাসরুদ্ধকর জয় দিয়ে শুরু ইউসিএল

মঙ্গলবার বি গ্রুপের ম্যাচের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে ২০১৮-১৯ মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আসর। ইউরোপের ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর আসরের শুরুর দিনে জয় পেয়েছে কাঙ্ক্ষিত দলগুলোই। পিছিয়ে থেকেও ম্যাচের শেষ পাঁচ মিনিটে পরপর দুই গোল করে ইন্টারের জয় তুলে নেওয়া, মেসির হ্যাটট্রিক এবং ফিরমিনোর একেবারে শেষ মুহূর্তের গোলে লিভারপুলের জয় ছিল প্রথমদিনের চার গ্রুপের আট ম্যাচের মধ্যে অন্যতম আলোচিত। তবে কম-বেশি সবার নজর ছিল লিভারপুল বনাম পিএসজি ম্যাচের দিকে, এবং সত্যি বলতে ফুটবল ভক্তদের সামান্যতম হতাশ করেনি এই ম্যাচটি। ফুটবলের উত্তেজনার পারদ চূড়ান্ত করতে যত রকমের রসদের প্রয়োজন ছিল, প্রায় সবই ছিল এই ম্যাচটিতে। 

যা-ই হোক, গ্রুপ-এ, বি, সি ও ডি- এই চার গ্রুপের ম্যাচগুলোর বিভিন্ন দিক সংক্ষেপে তুলে ধরতেই আজকের এই আয়োজন। 

গ্রুপ এ

এ গ্রুপে দুটি ম্যাচেই নিজেদের মাঠে পরাজিত হয়েছে স্বাগতিকরা। মোনাকোকে ১-২ গোলে অ্যাটলেটিকো এবং বেলজিয়ান ক্লাব ব্রুখকে ০-১ গোলে পরাজিত করেছে ডর্টমুন্ড। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নিজের প্রথম ম্যাচেই গোল করে মোনাকোকে লিড এনে দেন স্যামুয়েল। ম্যাচের মাত্র ১৮ মিনিট সময়ে গোল পেয়ে এগিয়ে গেলেও তা ধরে রাখতে পারেনি স্বাগতিক দলটি। অসাধারণ দ্রুত পাসিং ফুটবল থেকে ৩১ মিনিটে ম্যাচে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের প্রথম গোলটি করেন কস্তা। প্রথমার্ধে নির্ধারিত সময়ের পর যোগকৃত অতিরিক্ত সময়ে কর্নার থেকে পাওয়া বল থেকে হেডে দ্বিতীয় ও জয়সূচক গোলটি করেন হিমেনেজ। এই পরজয়ের ফলে ইউসিএলে মোনাকোর টানা জয়হীন ম্যাচের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ালো ৯-এ। 

মোনাকো ১-২ অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ; Image Source: myt.mu

গ্রুপের অন্য ম্যাচে অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী দলের বিপক্ষে জয় তুলে নিতে বেশ কষ্ট হয়েছে জার্মান ক্লাব ডর্টমুন্ডের। ২০১৭ সালের পর ইউসিএলে এটি তাদের প্রথম জয়। ঘরের মাঠে ব্রুখ শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে গোলশূন্য ড্রতে আটকে রাখতে পেরেছিল ম্যাচের ৮৫ মিনিট পর্যন্ত। ডর্টমুন্ডের গোলমুখে ১১টি শট নিলেও একটিতেও লক্ষ্যভেদ করতে পারেনি। বেশ কিছু গোলের সুযোগ কাজে লাগাতেও ব্যর্থ হয়েছে বেলজিয়ান ক্লাবটি। তাছাড়া, ডর্টমুন্ডের হয়ে পুলিসিচের একমাত্র জয়সূচক গোলটিও ছিল ব্রুখের জন্য অনেকটা দুর্ভাগ্যের মতো। এই ম্যাচ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গ্রুপ পর্বে টানা সাত ম্যাচ পরাজয় বরণ করতে হলো ব্রুখকে। 

ব্রুখ ০-১ ডর্টমুন্ড; Image Source: espn.com

এই গ্রুপ থেকে পরবর্তী নক আউট পর্বে যাওয়ার দৌড়ে ডর্টমুন্ড, অ্যাটলেটিকো ও মোনাকোই এগিয়ে থাকবে। বড় কোনো অঘটন না ঘটলে এই তিন ক্লাব থেকে যেকোনো দুই ক্লাবই যাচ্ছে পরবর্তী পর্বে। মাত্র শুরু হওয়া গ্রুপ পর্বে বাকি রয়েছে আরও অনেকগুলো ম্যাচ, তাই নিশ্চিত করে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। 

গ্রুপ বি

ইংলিশ ক্লাব টটেনহ্যামের বিপক্ষে ইন্টার মিলানের ম্যাচটি ছিল ফুটবলের শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্তের দারুণ একটি উদাহরণ। সান সিরোতে প্রথমার্ধে তেমন সুবিধা করতে পারেনি কোনো দলই। গোলশূন্য ড্র নিয়ে শুরু হয় ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধ।

২০১১ সালের পর এই প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অংশগ্রহণ করার সুযোগ হয়েছে ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলানের। তাই ঘরের মাঠে ভক্তদের আশা একটু বেশিই ছিল। কিন্তু সেই আশা হতাশায় রুপান্তরিত হতে বেশি সময় লাগেনি। ৫৩ মিনিটে এরিকসনের শট মিরান্ডার পায়ে লেগে ইন্টারের জালে জড়ালে নিশ্চুপ হয়ে যায় গোটা সান সিরো। ম্যাচ শেষ হতে নির্ধারিত সময়ের মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি, তখনও স্বাগতিক দল সমতায় ফিরতে পারেনি। বক্সের বাইরে থেকে ইকার্দির বুলেট গতির ভলি ম্যাচের ৮৬ মিনিটে ইন্টারকে সমতায় ফেরায়। ১-১ গোলের ড্রতেও হয়তো সন্তুষ্ট থাকতো ইন্টার সমর্থকেরা, কিন্তু তখনও নাটকের ঢের বাকি। ম্যাচের অতিরিক্ত সময়েরও প্রায় শেষ মুহূর্তে ভেকিনোর হেড থেকে করা গোল বাঁধভাঙা উল্লাসের জয় এনে দেয় ইন্টার মিলানের সমর্থকদের জন্য, যারা দীর্ঘ একটা সময় ধরে অপেক্ষা করেছিল। 

ইন্টার মিলান ২-১ টটেনহ্যাম; Image Source: standard.co.uk

ন্যু ক্যাম্পে ডাচ ক্লাব পিএসভি আইন্দহোভেনের বিপক্ষে বার্সেলোনার জয়টা ছিল খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। তবে ৪-০ গোলের এই ম্যাচে মেসির হ্যাটট্রিক বার্সেলোনা সমর্থকদের আনন্দকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। এই টুর্নামেন্টে এটি ছিল মেসির ৮ম হ্যাটট্রিক। অপর গোলটি করেছেন ডেম্বেলে, বক্সের বাইরে থেকে করা গোলটি ছিল অসাধারণ। তাছাড়া, ৩২ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে মেসির করা প্রথম গোলটি ছিল এককথায় অনবদ্য।

বার্সেলোনা ৪-০ পিএসভি; mirror.co.uk

১-০ গোলে পিছিয়ে পড়ার পর পিএসভি রক্ষণ সামাল দিয়ে খানিকটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও, তাদের সব প্রচেষ্টা ম্যাচের শেষ ২০ মিনিটে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে। ৭৯ মিনিটে উমতিতি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লেও বার্সেলোনার উপর শেষ সময়ে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। 

গ্রুপ সি

অ্যানফিল্ডে স্বাগতিক লিভারপুলের বিপক্ষে পিএসজির ম্যাচটি নিয়ে উত্তেজনার কোনো কমতি ছিল না। ম্যাচের শুরু থেকেই ক্লপের লিভারপুল ক্রমাগত আক্রমণের মাধ্যমে একরকম ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিপক্ষ পিএসজির উপর। লিভারপুলের ‘ফ্লুইড’ আক্রমণের মুখে পিএসজির ভেঙে পড়তেও সময় লাগেনি। ম্যাচের ৩০ মিনিটে হেড থেকে গোল করে লিড এনে দেন স্টারিজ। এরপর মাত্র ৬ মিনিটের মধ্যে পেনাল্টি থেকে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মিলনার। ম্যাচে যদিও লিভারপুলের আধিপত্য ছিল স্পষ্ট, তবে পিএসজিও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় কোনো কমতি রাখেনি। প্রথমার্ধের ৪০ মিনিটে মুনিয়ের ভলি থেকে গোল করলে ব্যবধান কমে ফলাফল দাঁড়ায় ২-১। দ্বিতীয়ার্ধের ৮৩ মিনিটে এমবাপ্পের গোলে সমতায় ফেরে অতিথি দল।

লিভারপুল ৩-২ পিএসজি; wdtimes.com

শেষ পর্যন্ত বদলি হিসেবে নামা ফিরমিনো ৯২ মিনিটে গোল করলে ৩-২ গোলের রোমাঞ্চকর জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে লিভারপুল। অন্যদিকে পিএসজি দলের ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমার ম্যাচে আশানুরূপ পারফরম্যান্স করতে পারেননি। তাছাড়া পিএসজি কোচ টুশেলের একাদশ নির্বাচন নিয়েও অনেকেই খুশি ছিলেন না। তিনি উইঙ্গার ডি মারিয়াকে খেলিয়েছেন মাঝমাঠে, সেন্টার ব্যাক মার্কুইনোস সামলেছেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের দায়িত্ব।

রেড স্টার বেলগ্রেড ০-০ নাপোলি; Image Source: california.nris.com

গ্রুপের অপর ম্যাচে সার্বিয়ান ক্লাব রেড স্টার বেলগ্রেডের বিপক্ষে অতিথি নাপোলি গোলশূন্য ড্র করেছে। নাপোলি স্বাগতিক দলের গোলমুখে শট নিয়েছে মোট ২০টি, এর ৭টিই ছিল লক্ষ্যে। তাছাড়া ভাগ্যও নাপোলির সহায় ছিল না। ইনসিনিয়ের লং শট ক্রসবারে লেগে ফিরে না আসলে কিংবা ক্যালেহনের শট গোল লাইন থেকে রডিচ ক্লিয়ার না করলে হয়তো ফলাফল নাপোলির পক্ষে যেতে পারত। 

গ্রুপ ডি

ঘরের মাঠে তুরস্কের ক্লাব গ্যালাতাসারে রাশিয়ান প্রতিপক্ষ লোকোমোটিভ মস্কোর বিপক্ষে ৩-০ গোলের বড় জয় তুলে নিয়ে গ্রুপে শীর্ষে অবস্থান করছে। ম্যাচের ৯ মিনিটেই রদ্রিগেজের গোলে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। ম্যাচে ফেরার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে রাশিয়ার এই ক্লাবটি, কিন্তু ৬৭ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে এরেন দেরদিয়ক গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করলে জয় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায় গ্যালাতাসারের। দুটি হলুদ কার্ডের কারণে শেষ পর্যন্ত ৮৭ মিনিটে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিক দলের বাদুও এনদিয়ায়ে। ম্যাচের ৯৪ মিনিটে পেনাল্টি থেকে স্বাগতিকদের হয়ে শেষ গোলটি করেন ইনান। 

গ্যালাতাসারে ৩-০ লোকোমোটিভ মস্কো; Image Source: dailysabah.com

জার্মানির মাঠে প্রতিপক্ষ শালকের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করে মূল্যবান ১ পয়েন্ট নিজেদের করে নিতে পেরেছে পোর্তো। ম্যাচের ১৩ মিনিটেই পেনাল্টি উপহার পেলেও অ্যালেক্স তেল্লেসের শটটি শালকে গোলরক্ষক ফারমান ফিরিয়ে দিলে গোলশূন্য ড্রতে শেষ হয় প্রথমার্ধ। দ্বিতীয়ার্ধের ৬৪ মিনিটে স্বাগতিক শালকের হয়ে নিখুঁত ফিনিশের মাধ্যমে গোল করেন এমবোলো। কিন্তু এই গোলের ১০ মিনিটের মাথায় আবারও পেনাল্টি পায় পর্তুগিজ ক্লাবটি। এবারে আর তারা সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়নি, ৭৫ মিনিটে তিনি সমতাসূচক গোলটি আসে। 

শালকে ১-১ পোর্তো; Image Source: epochtimes.de

গ্রুপগুলোতে মাত্র একটি করে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ায় নক আউট পর্বে কোন দল পা রাখতে যাচ্ছে তা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। হোম-অ্যাওয়ে নিয়মে প্রতিটি দলের জন্য রয়েছে নিজেদের মাঠে ও প্রতিপক্ষের মাঠে খেলার সমান সুযোগ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মহারণের মাত্র শুরু, সময়ের সাথে এই আসরের উত্তেজনা যে বাড়তেই থাকবে, তা বলা বাহুল্য। 

ফিচার ইমেজ- cbssports.com

Related Articles