Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বার্সেলোনার স্বপ্নভঙ্গের রাতে রোমার অবিস্মরণীয় জয়!

উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের উত্তেজনাপূর্ণ, হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ম্যাচের দেখা মেলে এই নকআউট পর্ব থেকেই। শুধু লড়াই নয়, বড় ধরনের অঘটন বা খাদের কিনারা থেকে ম্যাচ বাঁচানোর মতো লোমহর্ষক ম্যাচের দেখা মেলে চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্ব শেষ হবার পর। গত বছর বার্সেলোনাই পিএসজিকে হারিয়েছে ৬ – ১ গোলের অবিশ্বাস্য এক ম্যাচে। প্রথম লেগের পর মঙ্গলবার দ্বিতীয় লেগে সেরকমই ফুটবলের দেখা মিলেছে। অঘটন আর লড়াইয়ে জমজমাট ছিল মঙ্গলবার রাতের ইউসিএল আয়োজন। ম্যানচেস্টার সিটি আর লিভারপুলের লড়াই ছিল সমানে সমানে। উড়তে থাকা বার্সেলোনাকে বিদায় করে দিয়ে রূপকথার গল্প লিখে ফেলেছে রোমা।

এক নজরে দ্বিতীয় লেগের ফলাফল

ম্যানচেস্টার সিটি ১ – ২ লিভারপুল

রোমা ৩ – ০ বার্সেলোনা

ম্যানচেস্টার সিটি বনাম লিভারপুল

অ্যানফিল্ডে গিয়ে পেপ গার্দিওয়ালার ম্যানচেস্টার সিটি হেরে এসেছিল ৩ গোলের বড় ব্যবধানে। গুরুত্বপূর্ণ ১টি অ্যাওয়ে গোলও করে আসতে পারেনি সিটিজেনরা। তাই চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমি ফাইনালে পৌঁছাতে ঘরের মাঠে ইতিহাস সৃষ্টি করে জিততে হতো তাদের। তবে জয় তো দূরের কথা দ্বিতীয় লেগেও হেরে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায় নিল ম্যানচেস্টার সিটি। ইতিহাদ স্টেডিয়ামে লিভারপুলের কাছে তারা হেরেছে ১-২ গোলে ব্যবধানে। দুই লেগ মিলিয়ে ৪-১ গোলের ব্যবধানে সেমি-ফাইনালে উঠল লিভারপুল।

গোল করাকে ডাল-ভাত বানিয়ে ফেলেছেন তিনি; Source: Milan Gjorgjevikj

প্রথম লেগে ম্যানচেস্টার সিটির বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ ছিল লিভারপুলের অাক্রমণাত্মক ফুটবলের বিপরীতে টিকতে না পারা। পেপ গার্দিওয়ালা সেকেন্ড লেগেও আগের ৩ – ৫ – ২ ফর্মেশন বজায় রাখলেন। যথারীতি কোনো লেফট-ব্যাক নেই। কাইল ওয়াকারকে সিটি কোচ আবারো নামালেন সেন্ট্রাল-ব্যাক পজিশনে। অন্যদিকে, জার্গেন ক্লপ ৪ – ৩ – ৩ ফর্মেশন নামালেও কাউন্টার অ্যাটার্ক করার মতো চিন্তাভাবনা ছিল না। লভরেন, মিলনার, ভ্যান ডাইক ছাড়া আর কোনো লম্বা খেলোয়াড় নেই লিভারপুল দলে। এই সুযোগ নিয়ে ডি বক্সের বাইরে থেকে লং বল পাঠানোর চেষ্টা করছিল ম্যান সিটি। প্রথম গোলটি আসলো দ্বিতীয় মিনিটেই। রহিম স্টার্লিংয়ের পাসে প্রথম গোল এনে দেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস। গোল হজম করে ম্যাচে আরো রক্ষণাত্মক হয় লিভারপুল। লিরয় সানের অফসাইড গোল আর সিটির অ্যাটাকিং ফুটবলের মধ্য দিয়েই শেষ হয় প্রথমার্ধ।

ফিরমিনোর জয়সূচক গোলের পর; Source: Daily Mail

প্রথম হাফে ফার্নানদিনহোকে বেশি জায়গা দিয়ে ফেলেছিল লিভারপুল। আর সিটিকে একতরফা আক্রমণের সুযোগ না দিয়ে ৪ – ৪ – ২ ফর্মেশনে ডায়মন্ড শেইপে সিটিকে যে ধরাশায়ী করা সম্ভব, জার্গেন ক্লপ তা বুঝতে পেরেছিলেন। সেজন্যই তিনি দ্বিতীয়ার্ধে খেলার মূলমন্ত্র বদলে দেন। পাল্টা আক্রমণের সাথে দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচে ফেরে অলরেডরা। ৫৬ মিনিটে সিটিজেনদের সকল আশা চুরমার করে দিয়ে গোল করেন মিসরীয় ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ সালাহ। যদিও সাদিও মানে’র অবদান আছে গোলটির পেছনে। দারুণভাবে সিটি ডিফেন্ডারদের বোকা বানিয়ে গোলমুখে শট নেবার সময় এডারসন তা প্রতিহত করেন। ফাঁকা বল পেয়ে জালে জড়ান মোহাম্মদ সালাহ। এ গোলের মাধ্যমে এক মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে ৮ গোল করার রেকর্ড করেন তিনি। ম্যাচের ৭৭ মিনিটে জয়সূচক গোল করেন রবার্তো ফিরমিনো।

ভাগ্যনির্ধারক এই ম্যাচ হেরে গেলেও, বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে ছিল ম্যানচেস্টার সিটি। তবে লিভারপুল ম্যাচে ফিরলে প্রথমার্ধের ফুটবলটা তারা আর খেলতে পারেনি। লিভারপুলের গতির সামনে নাকানিচুবানি খেয়েছে সিটিজেনদের ডিফেন্স। ম্যানমার্কিংয়ে তাদের ভুল ছিল। কোচ গার্দিওয়ালা লাপোর্তকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন সালাহকে চোখে চোখে রাখতে। তিনি সেটা করতে পারেননি। আনমার্কড থাকা সালাহ প্রথম গোল করে আরো বড় ব্যবধান তৈরি করে দেন।

উদযাপনটা তো এমনটাই করা সাজে; Source: Twitter

এ নিয়ে দশমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমি ফাইনালে উঠলো লিভারপুল। তাদের যেমন আত্মবিশ্বাস ও পারফর্মেন্স, লিভারপুল সমর্থক তাদের আরাধ্য চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার স্বপ্ন দেখতেই পারেন।

রোমা বনাম বার্সেলোনা

ঘরের মাঠে ৪ – ১ গোলের বড় জয়, ৩ গোলের লিড। রোমার মাঠে বার্সেলোনা কখনো হারেনি, তবে স্তাদিও অলিম্পিয়াকোতে বার্সেলোনার জন্য ম্যাচটা এতটা জটিল কিছু ছিলো না। অথচ সে ম্যাচটাই কঠিন করে তুলে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে যেন নিজেদের নিজে বাদ করে দিলো বার্সেলোনা। এডিন জেকো ক্যাম্প ন্যু-তে গুরুত্বপূর্ণ একটি অ্যাওয়ে গোল করে এসেছিলেন, ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারক হয়ে গেল সেই গোলটি। দুই লেগ মিলে ৪ – ৪ গোলের সমতা হলেও অ্যাওয়ে গোলের সুবাদে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমি ফাইনালে পৌঁছাল রোমা।

মেসির মতো পুরো বার্সেলোনাই কাল ছিলো নিস্প্রভ; Source: AFP

গত মঙ্গলবার রোমার মাঠে ৩ গোলের লিড নিয়ে ডিফেন্সিফ রোলে খেলানোর কোনো দরকার ছিল না কোচ ভালভার্দের। অথচ তিনি সেটাই করলেন। প্রথম থেকে তাল হারিয়ে বিরক্তিকর ফুটবল খেলছিল বার্সেলোনা, তার সুযোগ নিয়েই প্রথম থেকেই আক্রমণে মনোযোগ ছিল ইউসেবিও ডি ফ্রানসেস্কোর শিষ্যরা। বার্সেলোনার ডিফেন্সের ভুলে স্তাদিও অলিম্পিকোতে উপস্থিত প্রায় ৭০ হাজার রোমা সমর্থকদের সামনে ম্যাচের ৬ মিনিটে লিড এনে দেন এডিন জেকো। প্রথম গোল হজম করে বার্সেলোনার এলোমেলো ফুটবল খেলার প্রবণতা আরো বেড়ে যায়। ৭০ হাজার রোমা সমর্থকদের সামনে আর একেক পর এক রোমার অ্যাটার্ক সামলাতে বার্সেলোনার রক্ষণ ছিল ব্যতিব্যস্ত।

দুজনেই যেন প্রথম লেগে করা অাত্মঘাতী গোলের প্রায়শ্চিত্ত করলেন; Source: Marca

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে যেন প্রথমার্ধের খেলার ধরন পুনরাবৃত্তি করতে শুরু করলো বার্সেলোনা, ওদিকে রোমা আরো আগ্রাসী, আত্মবিশ্বাসী। বার্সেলোনার মাঝমাঠের খেলায় প্রাণ নেই, নেই ইনিয়েস্তা, মেসি, আলবার বোঝাপড়া। সুয়ারেজ ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। ৫৬ মিনিটে জেকোকে ডিবক্সের ভেতর ফাউল করে পেনাল্টি এনে দেন জেরার্ড পিকে। বার্সেলোনাকে স্তব্ধ করে পেনাল্টি থেকে দ্বিতীয় গোল করেন প্রথম লেগে অাত্মঘাতী গোল করা ড্যানিয়েল ডি রসি। দ্বিতীয় গোলের পর, আরো একটি গোল মানেই সেমিফাইনালের টিকেট। সেটা যেন আভাস দিচ্ছিল রোমা। ৮৩ মিনিটে কর্নার থেকে হেডে গোল করে জয়ের আভাসকে সত্য করে দেন রোমা ডিফেন্ডার কসতাস মানোলোনাস। বাকি সময়ে বার্সেলোনা এবং রোমা আর কোনো গোল করতে পারেনি।

৩ গোলে এগিয়ে থেকেও এমন লজ্জাজনক হারের দায় বর্তায় কোচ ভালভার্দের ঘাড়ে। টানা ম্যাচ খেলার কারনো স্কোয়াডের অনেক খেলোয়াড়ই ক্লান্ত ছিল, সেটা মাঠের পারফর্মেন্সেই প্রকাশ পায়। প্রতিটা সময়ে উমতিতি এবং পিকে ছিলেন খুবই অলস এবং ধীর মেজাজে। মাঝমাঠের সাথে আক্রমণের সেই নিঁখুত যোগাযোগ একদমই ছিল না। তাই কড়া মার্কিংয়ে থাকা মেসিও ছিলেন নিস্প্রভ। বার্সেলোনা তো আক্রমণে সেভাবে যেতেই পারেনি। স্নায়ুচাপে নুয়ে পড়া দলটি উল্টো রোমা প্লেয়ারদের কাছে ধারাবাহিকভাবে বল হারিয়েছে।

লিগ ও ইউসিএল-এ অপরাজিত থাকার পেছনে সবথেকে বেশি ভূমিকা ছিল কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দের। অথচ তিনিই কিনা আজকে তালগোল পাকিয়ে ফেললেন। বিবর্ণ মিডফিল্ডে প্রাণ আনতে চাইলেই ৮৩ মিনিটে আন্দ্রে গোমেজকে না নামিয়ে আরো আগে নামাতে পারতেন। যেহেতু গোল করা মূখ্য ছিল, তাই শেষ মূহুর্তে দেমবেলে না নামিয়ে আরো আগে নামালে দৃশ্যপটে ভিন্ন কিছুর আগমন ঘটলেও ঘটতে পারতো। কিন্ত বাস্তব হলো, নিজেদের করা ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে তাদেরই।

ম্যাচ জয়ের নায়ক, কসতাস মানোলোনাস; Source: Christian Aquino

গতবার  পিএসজিকে হারিয়ে রূপকথার গল্প সৃষ্টি করেছিল বার্সেলোনা, রোমা কিন্ত ঠিক তেমনই অবিস্মরণীয় জয় নিয়ে প্রথমবারের মতো উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমি ফাইনালে পা দিলো।

Featured Image: Dakotah Graham

Related Articles