Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

উয়েফা ইউরোপা লিগ: সেমিফাইনাল বৃত্তান্ত

ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে সম্মানের দিক থেকে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের পরের স্থান উয়েফা ইউরোপা লিগের। কিন্তু কিছুদিন আগে এই লিগের কথা শুনলে অনেকেই নাক সিটকাতেন। কারণ চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে না পারা দলগুলো এ লিগে খেলে। অনেকেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, লিভারপুল বা এসি মিলানের মতো দলের এ লিগে খেলাটা অপমানসূচক চোখে দেখে। ২০১৪ সাল থেকে নিয়ম পরিবর্তনের ফলে সম্প্রতি এ লিগের গুরুত্ব বেড়ে গেছে। বর্তমানে ইউরোপা লিগ জেতা দল সরাসরি চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার সুযোগ পায়, যার সর্বশেষ উদাহরণ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। তাই লিগে পিছিয়ে পড়া দলগুলোর জন্য এ লিগটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আবার অনেক সময় দেখা যায়, চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা দল কয়েক সিজন পরে ইউরোপা লিগ শিরোপা জিততে।

ইউরোপা লিগে যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই কম হয়, সেটাও কিন্তু সত্য নয়। এসি মিলান বনাম আর্সেনালের দুটো ম্যাচ যথেষ্ট উত্তেজনাপূর্ণ ছিলো। রেডবুল সালজবার্গ অবিশ্বাস্যভাবে ফিরে এসে বিদায় করে দিয়েছে ইতালির ক্লাব লাৎসিওকে। সেমিফাইনালেও আক্রমণাত্মক ফুটবল দেখা যেতে পারে আর্সেনাল ও অ্যাটলেটিকোর দুটো ম্যাচে। তাই গুরুত্ব বিবেচনা নয়, এবারের ইউরোপা লিগের অবস্থা ও ভবিষ্যতটা একটু পর্যালোচনা করা যাক।

আর্সেনাল বনাম অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ

ফাইনালের রোমাঞ্চ সেমিফাইনালে। কারণ সেমি ফাইনাল নিশ্চিত করার পর প্রায় সকল ফুটবল বোদ্ধাদের ধারণা ছিলো আর্সেনাল ও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ হতে যাচ্ছে এবারের ইউরোপা লিগের ফাইনালিস্ট। তবে ফাইনাল নয়, আর্সেন ওয়েঙ্গার ও ডিয়েগো সিমিওনের দেখা হয়ে যাবে সেমি ফাইনালেই। তাই শিরোপা প্রত্যাশী এ দুই দলের যেকোনো এক দল ফাইনাল খেলার সুযোগ পাবে।

আর্সেনাল কি পারবে সিমিওনের বাহিনীকে রুখতে? Source: Getty Images

প্রথমে আর্সেনালের কাছে আসা যাক। ২০০০ সালের পর প্রথমবার উয়েফা ইউরোপা কাপে খেলছে আর্সেনাল। কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গার এবারো এফএ কাপ হারিয়েছেন, প্রিমিয়ার লিগ জেতা অনেক দূরের কথা, চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা করে নেওয়া এবার আর্সেনালের জন্য বেশ কষ্টকর। ইউরোপা লিগ জিতলে তিনি একইসাথে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার ফ্রি টিকেট জিতে যাবেন। সবকিছু হারানোর পর এমন মহামূল্যবান সুযোগ হাতছাড়া করার মানুষ নন তিনি। তাই আর্সেনাল ম্যানেজার ইউরোপা লিগকে স্বাভাবিকভাবে বেশি গুরুত্ব দেবেন।

আর্সেন ওয়েঙ্গার ও ডিয়েগো সিমিওনে; Source: Getty Images

গ্রুপ পর্ব কোনোরকম অঘটন ছাড়াই উতরে গেছে আর্সেনাল। খেলোয়াড়দের পারফর্মেন্সও ছিলো আকর্ষণীয়। শেষ ১৬-তে অখ্যাত ক্লাব ওস্তারসুনদোস এফসি-কে ঘরের মাঠে ০-৩ গোলে হারালেও অ্যাওয়ে ম্যাচ হেরে আসে তারা। নকআউট পর্বে নতুনভাবে জেগে ওঠা ইতালিয়ান পরাশক্তি এসি মিলান বাধা সহজভাবে পার করে আসলেও সিএসকে মস্কোকে হারাতে কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে আর্সেনালকে। এমিরেটস স্টেডিয়ামের প্রথম লেগ ৪-১ গোলে জিতে সেমিফাইনালে এক পা দিয়ে রেখেছিল আর্সেনাল। কিন্তু নিজেদের মাঠে সিএসকে মস্কো ৫০ মিনিটে দুই গোল শোধ করে ম্যাচ জমিয়ে দেয়।৭৫ মিনিটে ড্যানি ওয়েলব্যাক ও ইনজুরি টাইমে অ্যারন রামসে গোল করে এ যাত্রায় বাঁচিয়ে দিয়েছে আর্সেনালকে। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সাথে তাই দুটো ম্যাচ আর্সেনালের জন্য সহজ হবে না।

আর্সেনালের যেন নিজেদের মাঠে জিতে প্রতিপক্ষের মাঠে গিয়ে হেরে আসার প্রবণতা একটু বেশি। তাছাড়াও চলতি সময়ে দল ফর্মেও নেই। কাগজে-কলমে ভালো দল দেখালেও আর্সেনালের দলগত ক্রুটি লক্ষ্যণীয়।তাই ওয়ান্দা মেট্রোপলিটনে আর্সেনালকে দিতে হতে পারে কঠিন পরীক্ষা। দুশ্চিন্তাকে সরিয়ে রেখে আর্সেনালকে হতে হবে আরো বেশি সতর্ক। তবে মেসুত অজিল, অ্যারন রামসে, হেনরিখ মিখিতারিয়ান বা ল্যাকাজেট স্বভাবত ভালো পারফর্মেন্স করতে পারলে অ্যাটলেটিকোর বিপক্ষে আর্সেনালই ফেভারিট।

মস্কোর বিপক্ষে গানার্সবাহিনী; Source: Getty Images.

লা লিগার ক্লাব অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ এবার তাদের ঘরোয়া লিগে আছে দ্বিতীয় অবস্থানে। লিগে এখন পর্যন্ত না হেরে সর্বোচ্চ পয়েন্ট নিয়ে শিরোপার অনেক কাছাকাছি চলে গিয়েছে বার্সেলোনা। তাই দ্বিতীয় পজিশনে থেকেও অ্যাটলেটিকোর লিগ জয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ। কোপা দেল রে থেকেও ছিটকে গেছে সিমিওনের দল। তবে পরের সিজনে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলা অনেকটা নিশ্চিত করা অ্যাটলেটিকোর জন্য তাই শুধু ইউরোপা লিগ জয়ের সম্ভাবনা বাকি আছে। ডিয়েগো সিমিওনের দল শেষ ষোলর পথ অতিক্রম করেছে কোনো হোঁচট ছাড়াই। তবে স্পোর্টিং সিপির মাঠে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে দিতে হয়েছে কঠিন পরীক্ষা। নিজেদের মাঠে প্রথম ম্যাচ ২-০ গোলে জিতে তারা বিপদমুক্ত ছিলো না, কারণ লিসবনে যেকোনো কিছু হবার সম্ভাবনা ছিলো। স্পোর্টিং লিসবনের সাথে ১-০ গোলে হেরে আসে তারা, তাই প্রথম লেগের জয়ের ফলে ২-১ অ্যাগ্রিগেটে সেমি ফাইনাল নিশ্চিত করে ডিয়েগো সিমিওনের দল।

অ্যাটলেটিকোর ভরসা কস্তা ও গ্রিজমান; Source: AFP

সম্প্রতি যদিও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ তাদের স্বাভাবিক ছন্দে নেই, মাঝমাঠের রসায়নটা ঠিক আগের মতো জমছে না। যদিও আনহেল কোরেয়া, সাউল নিগুয়েজ, ডিয়েগো কস্তা ও গ্রিজমানরা ছন্দে ফেরা যেকোনো দলের জন্যই বিপদজনক। এই মৌসুম শেষে ক্লাব ছাড়ছেন তোরেস। তাই ফার্নান্দো তোরেসের শেষ মৌসুমকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ইউরোপা লিগ জয় শেষ সুযোগ। যেহেতু আর্সেনাল ও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের আর কোনো শিরোপা লড়াইয়ের সুযোগ বাকি নেই, তাই উভয় দলই ইউরোপা লিগ শিরোপাকে করে রেখেছে পাখির চোখ। আর অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ও আর্সেনাল কখনো মুখোমুখি হয়নি। আশা করি ডিয়েগো সিমিওনে বনাম আর্সেন ওয়েঙ্গারের প্রথম মুখোমুখি লড়াই উপভোগ্য হবে।

অলিম্পিক মার্সেই বনাম রেড বুল সালজবার্গ

গত মৌসুমে আর বি লিপজিগের উত্থান ছিলো চমকপ্রদ। কয়েক সিজন আগে প্রথমবারের মতো বুন্দেসলিগায় এসে ধারাবাহিক ভালো পারফর্মেন্স করে আসা এ ক্লাবটি এবার খেলেছে চ্যাম্পিয়নস লিগ। অন্যদিকে, ফ্রেঞ্চ লিগে অলিম্পিক মার্সেই সবসময় পরিচিত নাম। মার্সেই ফ্রান্সের সবথেকে বৃহৎ ও সাফল্যধারী ক্লাবের নাম। এবারের ইউরোপা লিগের শুরুটা দারুণ ছিলো মার্সেই এর জন্য। শেষ আটে অ্যাটলেটিকো বিলবাওকে তারা ৫-২ গোলের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে নিশ্চিত করেছিলো কোয়ার্টার ফাইনাল। জার্মানিতে গিয়ে লিপজিগ মাঠে হেরে আসলেও স্বপ্নটা শেষ হতে দেয়নি রুডি গার্সিয়ার দলটি। দিমিত্রি পায়েত ও ফ্লোরেন্তিন থাউভিনের দৌলতে ইউরোপা জয়ের স্বপ্ন টিকিয়ে রেখেছে তারা।

রেড বুল বাধা পেরোলেই স্বপ্নের ফাইনাল; Source: Getty Images

অপরদিকে, অস্ট্রিয়ার এক সময়ের সেরা দলটি শেষ নয় মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কোয়ালিফাই করতে পারেনি একবারও। অনেকদিন পর বড় মঞ্চে খেলার সুযোগ পেয়ে অস্ট্রিয়ান ক্লাব রেড বুল পর পর দুটো অঘটন ঘটিয়ে সেমি ফাইনালের খেলার মর্যাদা অর্জন করেছে। শেষ আটে হারিয়েছে বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডকে। লাৎসিওর কাছে প্রথম লেগে ৪ গোল হজম করলেও ফিরতি লেগে ৪ গোল ফেরত দিয়ে অ্যাওয়ে গোলের সুবাদে প্রথমবারের মতো ইউরোপা লিগের সেমি ফাইনালে রেড বুল সালজবার্গ।

রেড বুল সালজবার্গ কি আবার চমক দেখাবে; Source: FreeTips

অলিম্পিক মার্সেইয়ের সাথে রেড বুল সালজবার্গের দেখা হয়েছে চলতি ইউরোপা লিগের গ্রুপ পর্বে। প্রথম লেগে ম্যাচ ড্র হলেও দ্বিতীয় লেগে একমাত্র গোলে জয়ের দেখা পায় রেড বুল। তাই সেমিফাইনালের আগে কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকবে রেড বুল। তবে শক্তিমত্তা ও অভিজ্ঞতার দিক থেকে ফেভারিট অলিম্পিক মার্সেই। থাওভিন, পায়েত, কনস্টান্টিনোস মিতগ্লু ও লুকাস অকোম্পাসদের নিয়ে সাজানো আক্রমণ সকল দলের বিপক্ষে ত্রাস সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট। যদিও বড় মঞ্চে এতদূর পথ অতিক্রম করে সহজে ছেড়ে দেবার পাত্র নয় রেড বুল। মার্সেইয়ের মতো তাদের খেলার ধরণও আক্রমণাত্মক। তাই একপেশে নয়, হাড্ডাহাড্ডি, রোমাঞ্চকর ফুটবলের সাক্ষী হতে প্রস্তুত থাকা উচিত সকল ফুটবলপ্রেমীর।

ইউরোপা লিগের প্রথম লেগের ম্যাচ আগামী ২৭ তারিখ। প্রথম লেগে রেড বুল খেলবে মার্সেইয়ের মাঠে, আর্সেনাল আথিত্য দেবে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে। ফিরতি লেগ অনুষ্ঠিত হবে মে মাসের ৪ তারিখে।

Featured photo: Getty images/AP (Combined)

Related Articles