Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ইতিহাসের পাতায় লুকিয়ে থাকা বক্সিং ডে টেস্টের অজানা তথ্য

একটি নয়, তিনটি বক্সিং ডে টেস্ট চলছে। একদিকে মাঠে নেমেছে অস্ট্রেলিয়া – ভারত, অন্যদিকে শ্রীলঙ্কা- নিউজিল্যান্ড আর দক্ষিণ আফ্রিকা – পাকিস্তান। সব মিলিয়ে ক্রিকেট বিশ্ব পুড়ছে বক্সিং ডে টেস্টের উত্তাপে।

প্রাচীন এই বিশেষ টেস্ট নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের আগ্রহ শুরু থেকেই তুঙ্গে। বক্সিং ডে টেস্টের ইতিহাস আর পরিসংখ্যান প্রমাণ দেয়, সত্যিই ‘বিশেষ কিছু’ বক্সিং ডে টেস্ট। বক্সিং ডে টেস্ট নিয়ে মজার কিছু তথ্য দেওয়ার আগে জেনে নেওয়া যাক বক্সিং ডে’র শুরুর কথা।

ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার চলমান বক্সিং ডে টেস্টের একটি দৃশ্য; Image Source: AP

বক্সিং ডে টেস্ট হলো সেই টেস্ট ম্যাচ, যা কিনা শুরু হয় ক্রিসমাস অর্থাৎ, বড়দিনের একদিন পর। শুরুটা হয়েছিলো অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) দুই ক্লাব নিউ সাউথ ওয়েলস আর ভিক্টোরিয়ার মধ্যকার টেস্ট ম্যাচ দিয়ে। তারপর ১৯৫০ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক বক্সিং ডে টেস্ট অনুষ্ঠিত হয় একই ভেন্যুতে। সেই ম্যাচে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ ছিল ইংল্যান্ড। সেই সময়ে বক্সিং ডে টেস্ট শুরু হতো ২২ ডিসেম্বর, শেষ হতো ২৭ ডিসেম্বর। কিন্তু ১৯৮০ সাল থেকে নিয়ম করে ডিসেম্বরের ২৬ তারিখ থেকে অনুষ্ঠিত হওয়া সব টেস্টকে বক্সিং টেস্ট বলা হয়। চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক বক্সিং ডে টেস্টের অজানা কিছু তথ্য।

হাফসেঞ্চুরির মাইলফলক

প্রথমবারের মতো বক্সিং ডে টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়েছিলো মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে, ১৯৬৮ সালে। সেবার অস্ট্রেলিয়া ইনিংস ব্যবধানে পরাজিত করে উইন্ডিজকে। সেই ম্যাচের ৫০ বছর পূর্তি হলো চলমান অস্ট্রেলিয়া-ভারত বক্সিং ডে টেস্ট ম্যাচের মধ্যে দিয়ে।

দ্য এমসিজি

সাধারণত ‘বক্সিং ডে টেস্ট’ বলতে আমরা বুঝি, যে টেস্ট ডিসেম্বরের ২৬ তারিখ থেকে শুরু হয়। এমসিজি অস্ট্রেলিয়ার একমাত্র ভেন্যু, যা বক্সিং ডে টেস্টের আয়োজন করার ক্ষমতা রাখে। ১৯৮০ সালে মেলবোর্নের এই স্টেডিয়ামটি বক্সিং ডে টেস্ট আয়োজনের স্বত্ব নিয়ে নেয়। তারপর থেকে অস্ট্রেলিয়ার আর কোনো ভেন্যু এই টেস্ট আয়োজন করেনি।

এমসিজিতে  বক্সিং ডে টেস্ট; Image source: ABC

বক্সিং ডে টেস্টের একমাত্র আয়োজক হলেও মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড ১৯৮৪, ১৯৮৮, ১৯৮৯ এবং ১৯৯৪ সালে এই বিশেষ টেস্ট আয়োজনের সাক্ষী হতে পারেনি। তবে ১৯৮৯ সালে তারা একটি বক্সিং ডে ওয়ানডে ম্যাচের আয়োজন করে, যেখানে অস্ট্রেলিয়া শ্রীলঙ্কাকে হারায়।

ইতিহাস বলে, এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী আয়োজিত ৬৮ বক্সিং ডে টেস্টের মধ্যে এমসিজি একাই আয়োজন করেছে ৩৭ টেস্ট।

সন্দেহাতীত অপরাজিত!

অস্ট্রেলিয়াসহ মোট আটটি দল এমসিজিতে বক্সিং ডে টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। তাদের মধ্যে কেবল নিউ জিল্যান্ড, যারা কিনা বরাবরই অজিদের বিপক্ষে নিজেদের সেরা শক্তি প্রদর্শন করে, তারাই একমাত্র অপরাজিত। বক্সিং ডে আয়োজনের ‘একচ্ছত্র অধিকার’ পাওয়ার পর মোট দু’বার এমসিজিতে এই টেস্ট খেলেছে নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া, যেখানে দু’বারই ড্র হয়েছে। অথচ দু’টি টেস্টেই জয় পেতে পারতো ব্ল্যাক ক্যাপরা।

মেলবোর্নে আরও একটি টেস্ট খেলেছিলো দুই দল। ১৯৭৩ সালে সেই টেস্ট শুরু হয়েছিলো ডিসেম্বরের ২৯ তারিখে, যেখানে ইনিংস ব্যবধানে হেরেছিলো সফরকারীরা।

প্রথম বক্সিং ডে টেস্ট

ওল্ড ওয়ান্ডারার্স, জোহানেসবার্গে ১৯১৩ সালে প্রথম বক্সিং ডে টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়। এটা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগে শেষ টেস্ট সিরিজ। তারপর থেকে ম্যাচগুলো শুরু হয়েছে ডিসেম্বরের ২৩, ২৪, ২৯, ৩০ এবং ৩১ তারিখে।

জোহানেসবার্গের সেই টেস্ট পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিলেন ইংলিশ পেসার সিডনি বার্নস। দক্ষিণ আফ্রিকাকে দুই ইনিংসে যথাক্রমে ১৬০ ও ২৩১ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পথে নিয়েছিলেন যথাক্রমে ৫৬ রানে ৮ উইকেট এবং ১০৩ রানে ৯ উইকেট। জিম লেকারের পর সিডনিই একমাত্র বোলার ছিলেন, যার এক টেস্টে ১৭ উইকেট ছিল। ওই ম্যাচে ইংল্যান্ড ইনিংস ব্যবধানে জয় পায়।

সিডনি বার্নস; Image Source: Getty Image

ওই সিরিজের ৪ টেস্টে বার্নস নিয়েছিলেন ৪৯ উইকেট, যাতে আট ইনিংসের মধ্যে সাতটিতেই পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। তার দুটো কীর্তি এখনও পর্যন্ত বিশ্ব রেকর্ডের পাতায় অমলিন। টিম ম্যানেজমেন্ট তার স্ত্রী’র থাকার ব্যয় বহন করতে নারাজ হওয়ায় সিরিজের পঞ্চম টেস্ট খেলেননি সিডনি বার্নস।

কাকতালীয়ভাবে দ্বিতীয় বক্সিং ডে টেস্টও অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই ভেন্যুতে, ১৯৬১ সালে। সেখানে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ড্র করে দক্ষিণ আফ্রিকা।

দক্ষিণ গোলার্ধে বক্সিং ডে টেস্ট

এ বছরের ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার তিনটি বক্সিং ডে টেস্ট ভেন্যু ছিল। ওল্ড ওয়ান্ডারার্সের জোহানেসবার্গ, ডারবানের কিংসমিড এবং পোর্ট এলিজাবেথের সেইন্ট জর্জ পার্ক। পাকিস্তানের বিপক্ষে চলমান টেস্ট দিয়ে দেশটির চতুর্থ বক্সিং ডে টেস্ট ভেন্যু হিসেবে নাম লেখালো সেঞ্চুরিয়নের সুপার স্পোর্টস পার্ক। 

নিউ জিল্যান্ডে আয়োজিত ৬টি বক্সিং ডে টেস্টের মধ্যে পাঁচটির আয়োজক ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভ, একটির আয়োজক ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভাল। ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে হারারে স্পোর্টস ক্লাবে ইংল্যন্ডের বিপক্ষে একটি টেস্ট খেলে জিম্বাবুয়ে। সেটিই ছিল জিম্বাবুয়ের মাটিতে অনুষ্ঠিত হওয়া এখন পর্যন্ত একমাত্র বক্সিং ডে টেস্ট ম্যাচ।

পোর্ট এলিজাবেথ ক্রিকেট গ্রাউন্ড; Image Source: SportsF1

উত্তর গোলার্ধে বক্সিং ডে টেস্ট

দক্ষিণ গোলার্ধের একেবারে উল্টোপাশে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ। এখানে ক্রিকেট আরও বেশি জনপ্রিয়। তারপরও মাত্র দু’টি ভেন্যু এখন পর্যন্ত এই অঞ্চলে বক্সিং ডে টেস্টের আয়োজক হতে পেরেছে। একটি ভারতের কলকাতায় বিখ্যাত ইডেন গার্ডেন, ১৯৮৭ সালে। সেবার উইন্ডিজ ও ভারতের মধ্যকার বক্সিং ডে টেস্ট ম্যাচটি ড্র হয়েছিলো।

এরপর ২০০৮ সালে বাংলাদেশের ‘হোম অব ক্রিকেট’খ্যাত ঢাকার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় বক্সিং ডে টেস্ট। স্বাগতিক বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলঙ্কা। ম্যাচে ১০৭ রানে পরাজিত হয় স্বাগতিক বাংলাদেশ। তারপরও ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছিলেন বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান।

সাকিব আল হাসান (সাম্প্রতিক ছবি); Image Source: AFP

বক্সিং ডে টেস্টের মধ্যে এটাই একমাত্র টেস্ট ম্যাচ, যেখানে একদিন ‘রেস্ট ডে’ হিসেবে খেলা বন্ধ ছিল। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। বলে রাখা ভালো, ২০১৪-১৫ মৌসুমে ফিল হিউজের মৃত্যুর দিন ছাড়া মিরপুরের ওই ম্যাচেই টেস্টে শেষবার বিশ্রামের দিন রাখা হয়।

একটি বিলম্বিত বিপণন সুযোগ

আগেই বলা হয়েছে, মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড (এমসিজি) ১৯৮০ সালে অস্ট্রেলিয়ায় বক্সিং ডে টেস্ট আয়োজনের ক্ষমতা অর্জন করে। গত মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট (সিএ)-এর কাছ থেকে বক্সিং ডে টেস্টের সম্প্রচার স্বত্ব অর্জন করে কেরি প্যাকারের চ্যানেল নাইন।

সম্প্রতি একটি বিপণন সংস্থা বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে একটি পরিসংখ্যান চালায় যার মাধ্যমে বের হয়ে আসে, ২০১৩-১৪ মৌসুমের বক্সিং ডে অ্যাশেজ টেস্ট ম্যাচ পর্দায় দেখেছে ২ লক্ষ ৭১ হাজার ৮৬৫ জন দর্শক, যেখানে কেবল বক্সিং ডে টেস্টের প্রথম দিনই মাঠে এসেছিল ৯১ হাজার ১১২ জন দর্শক (এমসিজির মোট আসন সংখ্যা ৯৫ হাজার)!

এটা ছিল এখন পর্যন্ত যেকোনো টেস্টে সর্বোচ্চ দর্শকসমাগম। সেই সিরিজে ৩-০তে জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। যদিও বলা হয়, ১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে ভারত-পাকিস্তান টেস্টে একাধিক দিন মাঠে ফুল হাউস ছিল। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে সেই তথ্যের সত্যতা এখনও মেলেনি। ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিলো কলকাতার ইডেন গার্ডেনে, যেখানে মোট আসন সংখ্যা পুরোপুরি ১ লাখ।

বোঝাই যাচ্ছে, চ্যানেল নাইন কিংবা অন্য কোনো টিভি চ্যানেল যদি আগে টের পেতো ব্যাপারটা, তাহলে আগেভাগেই বিশাল লাভ করার এই সুযোগটা লুফে নিতো।

বড়দিনের সকালে বক্সিং ডে টেস্ট

ক্রিসমাসের দিন, অর্থাৎ বড়দিনেও বক্সিং ডে টেস্ট শুরুর ঘটনা আছে। ১৯৭৯ সালে ভারত বনাম পাকিস্তানের মধ্যকার একটি টেস্ট ম্যাচ বড়দিনে শুরু হয়। ম্যাচটি ড্র হয়।

আর্চি শিলার ও অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল

প্রথমবারের মতো বক্সিং ডে টেস্টে জায়গা করে নিয়েছে ৭ বছর বয়সী আর্চি শিলার। মেলবোর্নে চলমান অস্ট্রেলিয়া  ও ভারতের মধ্যকার বক্সিং ডে টেস্টে ১৫তম সদস্য হিসেবে নাম লেখা হয়েছে ছোট্ট আর্চি শিলারের। শুধু তাই নয়, তিনি অজি অধিনায়ক টিম পেইনের সঙ্গে যুগ্মভাবে অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন।

টিম  পেইনের সঙ্গে বিরাট কোহলির বিপক্ষে টসে আর্চি শিলার; Image Soource: DNA

জন্মের পর থেকে হৃৎপিণ্ডের অসুস্থতায় ভুগছেন ৭ বছর বয়সী আর্চি। ভীষণ রকমের এই ক্রিকেটপ্রেমীর স্বপ্ন ক্রিকেটার হওয়া, অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়ক হওয়া। সেই ইচ্ছেটা পূরণ করে দেয় ‘মেক আ উইশ’ নামের একটি দাতব্য ফাউন্ডেশন। তারই ধারাবাহিকতায় এমন ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটলো মেলবোর্নের বক্সিং ডে টেস্টে।

This article is in Bangla language. It is an article based on the Boxing day test match.  Necessary links have been hyperlinked. 

Feature photo: Stuff.co.nz

Related Articles