বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এবং সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া ২০১৯ সালের বিশ্বকাপকে সামনে রেখে অ্যারন ফিঞ্চকে অধিনায়ক নির্বাচিত করে ১৫ সদস্যের বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করেছে। এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে বিশ্বকাপের স্কোয়াডে জায়গা করে নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপের দুই প্রাণভোমরা ডেভিড ওয়ার্নার এবং স্টিভেন স্মিথ। এছাড়া দুর্দান্ত ফর্মে থাকা উসমান খাজা এবং শন মার্শও স্কোয়াডে জায়গা করে নিয়েছেন। অলরাউন্ডার হিসাবে মার্কাস স্টোইনিস এবং গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের প্রতি আস্থা রেখেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া।
ইনজুরির সাথে লড়াই করে মিচেল স্টার্ক, নাথান কোল্টারনাইল এবং ঝাই রিচার্ডসনও স্কোয়াডে জায়গা করে নিয়েছেন। তাদের সাথে পেস আক্রমণ নেতৃত্ব দেবেন প্যাট কামিন্স এবং জেসন বেহরেনডর্ফ। স্পিন ডিপার্টমেন্ট সামলানোর দায়িত্ব পেয়েছেন অ্যাডাম জাম্পা ও নাথান লায়ন। স্কোয়াডে একমাত্র উইকেটরক্ষক হিসাবে জায়গা করে নিয়েছেন সাউথ অস্ট্রেলিয়ার অ্যালেক্স ক্যারি। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্কোয়াড থেকে বাদ পড়লেন পিটার হ্যান্ডসকম্ব এবং জস হ্যাজলউড।
অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ স্কোয়াড: অ্যারন ফিঞ্চ (অধিনায়ক), ডেভিড ওয়ার্নার, উসমান খাজা, স্টিভেন স্মিথ, শন মার্শ, মার্কাস স্টোইনিস, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, অ্যালেক্স ক্যারি, অ্যাডাম জাম্পা, প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, নাথান লায়ন, ঝাই রিচার্ডসন, নাথান কোল্টারনাইল এবং জেসন বেহরেনডর্ফ।
সাম্প্রতিক সময়ে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা পিটার হ্যান্ডসকম্ব বিশ্বকাপ স্কোয়াডে না থাকাতে অনেকেই অবাক হয়েছে। সেই সাথে কোনো ব্যাকআপ উইকেটরক্ষক ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার স্কোয়াড ঘোষণা করা দেখে অনেকেরই চোখ কপালে ওঠেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা না পাওয়া ক্রিকেটারদের সম্পর্কে জেনে আসা যাক।
পিটার হ্যান্ডসকম্ব
অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপের মূল স্তম্ভ ডেভিড ওয়ার্নার এবং স্টিভেন স্মিথের অনুপস্থিতিতে ওয়ানডে দলে সুযোগ পেয়েছিলেন পিটার হ্যান্ডসকম্ব। বছরের শুরুতে ওয়ানডে দলে সুযোগ পাওয়ার পর দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছিলেন তিনি। ভারতের বিপক্ষে চোখ ধাঁধানো শতক হাঁকানোসহ ১৩ ম্যাচে ৪৩.৫৪ ব্যাটিং গড়ে এবং ৯৮.১৫ স্ট্রাইকরেটে ৪৭৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন।
স্মিথ এবং ওয়ার্নারের নিষেধাজ্ঞার ফলে সুযোগ পাওয়া হ্যান্ডসকম্ব তাদের ফিরে আসার পর দল থেকে বাদ পড়লেন। অনেকেই ধরে নিয়েছিল, স্পেশালিষ্ট উইকেটরক্ষক হিসাবে অ্যালেক্স ক্যারির বদল কিংবা ব্যাকআপ উইকেটরক্ষক হিসাবে তাকে স্কোয়াডে রাখা হবে। কিন্তু পাঁচ পেসার এবং দুই স্পিনার স্কোয়াডে রাখার ফলে মিডল-অর্ডারে তার জায়গা হয়নি। তাছাড়া শন মার্শ এবং উসমান খাজাও দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। অভিজ্ঞ শন মার্শ বেশ কয়েক বছর ধরেই ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন। এই বছরেও ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ৪৮.৩৩ ব্যাটিং গড়ে ৪৩৫ রান করেছেন। অন্যদিকে, উসমান খাজা এই বছরে ৫৯.১৫ ব্যাটিং গড়ে ৭৬৯ রান করেছেন।
জস হ্যাজলউড
কয়েক মাস আগেও যদি বলা হতো, জস হ্যাজলউড বিশ্বকাপের স্কোয়াডে থাকবেন না, তা অনেকেরই বিশ্বাস হতো না। গত বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন তিনি। ওয়ানডেতে মিচেল স্টার্কের সাথে জুটি বেঁধে বহু সফলতা পেয়েছেন। কিন্তু ইনজুরির কারণে চলতি বছরে এখনও রঙিন পোশাক গায়ে দিতে পারেননি তিনি। বিশ্বকাপের আগে সম্পূর্ণ ফিট হওয়ার সম্ভাবনা ছিল তার। কিন্তু ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের পর অ্যাশেজের কথা মাথায় রেখে তাকে নিয়ে ঝুঁকি নেয়নি।
তার অনুপস্থিতি প্যাট কামিন্স, নাথান কোল্টারনাইল, ঝাই রিচার্ডসন এবং জেসন বেহরেনডর্ফ দুর্দান্ত বোলিং করে নিজেদের জায়গা পাকাপোক্ত করে নিয়েছেন। তাছাড়া একাদশে প্যাট কামিন্স এবং মিচেল স্টার্কের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত। সেই সাথে রিচার্ডসনও দুর্দান্ত ছন্দে আছেন। তাদের ব্যাকআপ হিসাবে রাখা হয়েছে বেহরেনডর্ফ এবং কোল্টারনাইলকে, যাতে করে কপাল পুড়েছে হ্যাজলউডের। বিশ্বকাপের স্কোয়াডে না থাকলেও অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলের হয়ে অ্যাশেজের প্রস্তুতি নিতে ইংল্যান্ডে অবস্থান করবেন তিনি।
অ্যাস্টন টার্নার
ভারতের বিপক্ষে মোহালিতে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে অপরাজিত ৮৪ রানের ইনিংস খেলে অস্ট্রেলিয়াকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দিয়েছিলেন অ্যাস্টন টার্নার। ডেথ ওভারে ভারতের সেরা দুই অস্ত্র জাসপ্রিত বুমরাহ এবং ভুবনেশ্বর কুমারকে কোণঠাসা করে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে মৌসুমের সেরা ইনিংসটি খেলেছিলেন তিনি। ভারতের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের মধ্যে তিন ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়ে ৬২.৫০ ব্যাটিং গড়ে এবং ১৪৫.৩৪ স্ট্রাইকরেটে ১২৫ রান করেছিলেন।
পিটার হ্যান্ডসকম্বের মতো অ্যাস্টন টার্নারও নিজের প্রথম বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ মিস করলেন মিডল-অর্ডারে জায়গা না থাকার কারণে। ভারতের বিপক্ষে দুর্দান্ত ব্যাটিং করার পরেও পাকিস্তানের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের সিরিজের একটি ম্যাচেও তাকে একাদশে সুযোগ দেওয়া হয়নি। এতেই অনুমান করা গিয়েছিল যে, অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ ভাবনায় টার্নার নেই। তার জায়গায় গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এবং মার্কাস স্টইনিসের মতো ফর্মে থাকা ক্রিকেটাররা সুযোগ পেয়েছেন।
কেন রিচার্ডসন
অস্ট্রেলিয়া হাতে বর্তমানে বেশ কিছু দুর্দান্ত পেসার রয়েছে। তাই জস হ্যাজলউডের মতো বিশ্বকাপের স্কোয়াড থেকে বাদ পড়লেন কেন রিচার্ডসনও। বিগ ব্যাশে এবং সাম্প্রতিক সময়ে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বেশ ভালো বোলিং করেছিলেন তিনি। ডেথ ওভার স্পেশালিষ্ট হিসাবেও তার নামডাক রয়েছে। কিন্তু পাঁচ পেসার স্কোয়াডে থাকার পর এই ডানহাতি পেসারের আর স্কোয়াডে জায়গা হয়নি।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এখন পর্যন্ত ২০টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ইনিংসে একবার পাঁচ উইকেটসহ মোট ২৯ উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি। হ্যাজলউড এবং স্টার্কের অনুপস্থিতিতে গত ১৮ মাসে বেশ ভালো বোলিং করেছিলেন তিনি। তবে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া শেষ পর্যন্ত তার ডেথ ওভারের বোলিংয়ের চেয়ে জেসন বেহরেনডর্ফ এবং নাথান কোল্টারনাইলের শুরুর স্পেলের উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছে স্কোয়াড ঘোষণার ক্ষেত্রে।
ম্যাথু ওয়েড
ম্যাথু ওয়েড এবং টিম পেইন ওয়ানডে দল থেকে বাদ পড়ার পর স্পেশালিষ্ট উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসাবে দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন সাউথ অস্ট্রেলিয়ার উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান অ্যালেক্স ক্যারি। কিন্তু ব্যাট হাতে তিনি নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। তাই অনেকেই পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, ম্যাথু ওয়েডকেই বিশ্বকাপের স্কোয়াডে রাখা হোক। ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ওয়েড জানান দিয়েছিলেন, তিনি প্রস্তুত।
ম্যাথু ওয়েড বিগ ব্যাশের সর্বশেষ আসরে ৫৯২ রান করে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন। শেফিল্ড শিল্ডেও দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছিলেন তিনি। তাসমানিয়ার হয়ে ৬০.০৫ ব্যাটিং গড়ে ১,০২১ রান সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া অ্যালেক্স ক্যারির উপর আস্থা রেখে ম্যাথু ওয়েডকে আর বিশ্বকাপের স্কোয়াডে রাখেননি। তবে তাকে অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলের হয়ে খেলার জন্য ইংল্যান্ডে পাঠাবে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া।
ডার্সি শর্ট
ডার্সি শর্ট সর্বশেষ বিগ ব্যাশে এবং ঘরোয়া ওয়ানডে ওয়ানডে কাপে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছিলেন। বিগ ব্যাশের ২০১৮-১৯ মৌসুমে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন তিনি। ১৫ ম্যাচে ছয়টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৫৩.০৮ ব্যাটিং গড়ে এবং ১৪০.৬১ স্ট্রাইকরেটে ৬৩৭ রান করেছিলেন। ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওয়ানডে ফরম্যাটে রেকর্ড গড়ে ২৫৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। টুর্নামেন্টে মোট পাঁচ ম্যাচে ৮০.৮০ ব্যাটিং গড়ে এবং ১৩৮.৩৫ স্ট্রাইকরেটে ৪০৪ রান করেছিলেন।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করলেও ওয়ানডেতে এখনও নিজের সামর্থ্যানুযায়ী খেলতে পারেননি শর্ট। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে শেষ মৌসুমে একটি ওয়ানডে খেলে শূন্য রানেই ফিরে গিয়েছিলেন তিনি। এখন পর্যন্ত চারটি ওয়ানডে খেলে ৮৩ রান করেছেন তিনি। তারপরও ডার্সি শর্টকে নিজের বিশ্বকাপের স্কোয়াডে রেখেছিলেন শেন ওয়ার্ন। গত বছরের নভেম্বরে শেষ ওয়ানডে ম্যাচ খেলা শর্টকে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের স্কোয়াডে রাখেনি। উসমান খাজা ভারত এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত ব্যাটিং না করলে এমন ফর্মের সুবাদে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা করে নিতে পারতেন শর্ট।
এমন সব খেলোয়াড়দেরকে ছাড়াই বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করেই বুঝিয়ে দিলো অস্ট্রেলিয়া, এই বিশ্বকাপে তারা কেন ফেভারিট। এখন দেখার বিষয়, সম্ভাবনার কতটুকু তারা পূর্ণতা দিতে পারেন।
This article is in Bangla language. It is about Australia’s world Cup squad And unlucky players to miss out on Australia's World Cup squad. Please click on the hyperlinks to check the references.
Featured Image: Getty Images