Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আর্সেনাল ও ওয়েঙ্গারের আফসোস

আর্সেন ওয়েঙ্গার আর আর্সেনাল ছিলো গত দুই যুগ ধরে একে অন্যের সমার্থক শব্দ। ১৯৯৬ সাল থেকে শুরু করে টানা ২২ বছর এমিরেটসের ডাগ আউটে কাটিয়ে দিয়েছেন এই ফ্রেঞ্চম্যান। তার হাত ধরেই আর্সেনালে উঠে এসেছে বহু প্রতিভা। থিয়েরি অঁরি থেকে শুরু করে সেস্ক ফ্যাব্রিগাস কিংবা ভ্যান পার্সি- সবাই ক্যারিয়ারে আলোর মুখ দেখেছেন ওয়েঙ্গারের অধীনে খেলেই। তবে  গত ২২ বছর থাকাকালীন সময়ে ওয়েঙ্গার কিছু প্রতিভাবান খেলোয়াড় চিনতেও ভুল করেছেন, যার জন্য হয়তো এখনো আফসোসে পোড়েন তিনি। চলুন দেখে আসা যাক এমন কিছু তারকা খেলোয়াড়কে, যারা ক্যারিয়ার শুরু করতে পারতেন আর্সেনালে, ওয়েঙ্গারের অধীনে।

ইয়াইয়া তোরে – ২০ বছর

নিজের সময়ে প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম সেরা এই মিডফিল্ডার খেলতে পারতেন আর্সেনালের হয়ে। ১৫ বছর বয়স থেকেই তোরেকে পর্যবেক্ষণ করে এসেছেন ওয়েঙ্গার ও তার স্কাউট দল। ২০০৩ সালে আর্সেনালের জার্সি জড়িয়ে বার্নাটের সাথে একটি প্রীতি ম্যাচও খেলেন ইয়াইয়া তোরে। সেই সময় বড় ভাই কালু তোরেও ছিলেন ওয়েঙ্গারের সেরা একাদশের একজন নিয়মিত খেলোয়াড়। তাই ধরা হচ্ছিলো, লন্ডনের এই ক্লাবেই থিতু হতে যাচ্ছেন এই প্রতিভাবান খেলোয়াড়।

কিন্তু ইয়াইয়া তোরের কপাল পোড়ে ফাইনাল ট্রায়ালে এসে। সেই ট্রায়ালে এভারেজ মানের খেলা দেখানোয় তাকে বাতিলের খাতায় ফেলে দেন ওয়েঙ্গার। বাতিল হয়ে যাওয়া তোরে মোনাকো ও বার্সেলোনা ঘুরে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন সিটিজেনদের হয়ে। প্রিমিয়ার লিগে ম্যানসিটির হয়ে ২৩০ ম্যাচ খেলে ৫৯ গোল করেন তিনি। যদিও পরবর্তীতে তোরেকে সাইন না করানোর জন্য ওয়েঙ্গার দায়ী করেন পারমিট ইস্যুকে। তবে স্বীকার করতেই হবে, তোরের বেলায় নিজের জহুরি জাত চেনাতে পারেননি ওয়েঙ্গার। পরে এক সাক্ষাৎকারে এজন্য আফসোস করেছেন ওয়েঙ্গার।

আর্সেনালের হয়ে একটি প্রীতি ম্যাচও খেলেন ইয়াইয়া তোরে; Image Source: Arsenal.com

জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ – ১৬ বছর

১৬ বছর বয়সেই মালমো-তে নজরকাড়া পারফরম্যান্স দিয়ে ওয়েঙ্গারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সুইডিশ কিংবদন্তী জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ। আর্সেনালের জার্সি গায়ে জড়ানো ইব্রাহিমোভিচের জন্য সময়ের ব্যাপারই বলে মনে হচ্ছিলো। তবে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় ওয়েঙ্গারের গোয়ার্তুমি। ১৬ বছর বয়সেই নিজের সামর্থ্যের জানান দেওয়া ইব্রাহিমোভিচকে সিনিয়র দলের সাথে ট্রায়াল দেওয়ার কথা বলেন ওয়েঙ্গার। কিন্তু ঔদ্ধত্যপূর্ণ ইব্রাহিমোভিচের কাছে ব্যাপারটি পছন্দ হয়নি। সেই সময়ে ওয়েঙ্গারকে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, “জ্লাতান কোথাও ট্রায়াল দেয় না।“

ওয়েঙ্গারও নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। ট্রায়ালবিহীন ইব্রাহিমোভিচকে সাইন করানোর পক্ষপাতী ছিলেন না তিনি। আর সেই সিদ্ধান্তকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ইব্রাহিমোভিচ মালমো থেকে যোগ দেন আয়াক্সে। এরপরের ইতিহাস তো সবারই জানা। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন সময়ের অন্যতম ভয়ানক স্ট্রাইকার হিসেবে।

ইব্রাহিমোভিচের জার্সিও বিক্রি শুরু হয়ে গিয়েছিলো সেই সময়; Image Source: Getty Image

জিয়ানলুইজি বুফন – ২২ বছর

লেহমানের বিদায়ের পর থেকে আর্সেনালের গোলকিপারের সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছিলো। ফ্যানরাও চাইছিলো একজন ভালো মানের গোলকিপার। ২০০০ সালে আর্সেনাল ক্লাব কিংবদন্তী ডেভিড সিম্যানও ক্লাব ছাড়লে অনেক দিন ধরে ভালো সার্ভিস দেওয়ার মতো গোলকিপার খুঁজছিলেন ওয়েঙ্গার। তার প্রধান পছন্দ ছিলো তরুণ বুফন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০০ সালে বুফনের সাথে ওয়েঙ্গার একটি ডিনারের আয়োজন করেন। মূল লক্ষ্য ছিলো বুফনকে এমিরেটসে নিয়ে আসা। সেই সময়ে বুফন পার্মার হয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করে বড় বড় ক্লাবগুলোকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। তবে পার্মার চাওয়া ছিলো বড় অঙ্কের টাকা। তাতেই পিছিয়ে যান ওয়েঙ্গার। আর সেই সুযোগটাই লুফে নেয় জুভেন্টাস। সেই সময়ে একজন গোলকিপারের জন্য রেকর্ড ৩২.৬ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে বুফনকে দলে ভেড়ায় তুরিনের ওল্ড লেডিরা। আর্সেন ওয়েঙ্গার ফেরেন খালি হাতে।

বুফনকে ধরা হয় একবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ গোলরক্ষক হিসেবে; Image Source: Mirror

ভিনসেন্ট কোম্পানি – ২০ বছর

বেলজিয়ান ক্লাব আন্ডারলেখট এর হয়ে অসাধারণ এক সিজন কাটানোর পর ইউরোপের নামী ক্লাবগুলো কোম্পানিকে দলে ভেড়ানোতে উঠে-পড়ে লাগে। কোম্পানির এজেন্ট ইউরোপে এসে রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা এবং আর্সেনালের সাথে কথা বলেন। তবে তার এজেন্ট মনে করলেন, যথেষ্ট খেলার সময় পাওয়া যাবে এরকম ক্লাবে যাওয়াই ভিনসেন্টের জন্য যথার্থ হবে। বার্সেলোনা আর রিয়াল মাদ্রিদে তখন যথেষ্ট স্বনামধন্য ডিফেন্ডার থাকায় ভিনসেন্টের মূল একাদশে সুযোগ না পাওয়াটা অনুমেয়ই ছিলো।

অন্যদিকে আর্সেন ওয়েঙ্গারও প্রতিশ্রুতি দিতে পারেননি কোম্পানির নিয়মিত খেলানোতে। তাতে করেই পিছিয়ে আসেন কোম্পানি এবং তার এজেন্ট। কোম্পানি যোগ দেন জার্মান ক্লাব হামবুর্গে। এর ঠিক দুই বছর পরই ফেরেন প্রিমিয়ার লিগে। তবে আর্সেনাল নয়। ম্যানচেস্টার সিটির জার্সি গায়ে।

ভিনসেন্ট কোম্পানির সাথে ওয়েঙ্গার; Image Source: Daily Mail

পল পগবা – ১৬ ও ১৯ বছর

ওয়েঙ্গার ফরাসি হওয়ায় কোচিং ক্যারিয়ারে অনেক ফরাসি খেলোয়াড় সাইন করিয়েছেন নিজ দলে। প্যাট্রিস এভরা থেকে শুরু করে লরেন্ত কোশিয়েনলি, আনেলকা এবং অবশ্যই থিয়েরি অঁরি। তবে আরেক প্রতিভাবান ফরাসি খেলোয়াড় পল পগবাকে দুবারের চেষ্টায়ও দলে ভেড়াতে পারেননি ওয়েঙ্গার। লা হাভরে ইয়ুথ একাডেমিতে থাকাকালীন অবস্থায় পগবাকে পর্যবেক্ষণ করে আসছিলেন ওয়েঙ্গার। ২০০৯ সালে এই ফরাসি মিডফিল্ডারকে দলে ভেড়াতে চাইলে পগবা বেছে নেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।

তিন বছর ওল্ড ট্রাফোর্ডে টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে কাটানোর পর পগবা সিদ্ধান্ত নেন ক্লাব ছাড়ার। মাত্র ৫ লাখ পাউন্ডের বিনিময়ে তিনি যোগ দেন জুভেন্টাসে। সেখানে উত্থান হয় তরুণ পগবার। নিজেকে অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে আবার ফেরেন ওল্ড ট্রাফোর্ডে।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছাড়ার সময় আর্সেনালের সুযোগ ছিলো পগবাকে কিনে নেওয়ার। কিন্তু সেই সময় নিজের খামখেয়ালীপনায় পগবাকে হারান ওয়েঙ্গার। এই প্রসঙ্গে ওয়েঙ্গার বলেন, ম্যানচেস্টার থেকে জুভেন্টাসে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি এত দ্রুত হয়ে গেছে যে তার ক্লাব কোনোকিছু টেরই পায়নি।

সময়ের অন্যতম প্রতিভাবান মিডফিল্ডার পল পগবাকেও হারান ওয়েঙ্গার; Image Source: Sky Sports

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো – ১৮ বছর

২০০৩ সালে পাঁচবার ব্যালন ডি অর জয়ী রোনালদোর সাথে হল অফ হাইবারিতে দেখা করেন আর্সেন ওয়েঙ্গার। সেখানে তিনি আর্সেনালে ভূমিকা এবং খেলার ধরন নিয়ে ১৮ বছর বয়সী রোনালদোর সাথে আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে নিজের নাম সম্বলিত একটি আর্সেনালের জার্সি নিয়ে স্থান ত্যাগ করেন রোনালদো। স্পোর্টিং লিসবনও আর্সেনালের দেওয়া ৪ মিলিয়ন ইউরোতে রাজি হয়। শুধুমাত্র চুক্তিতে সাইন করানোর বাকি ছিলো।

তবে পাশার দান উল্টে যায় শেষ দিনে। ট্রান্সফার ডেডলাইনের দিন পর্তুগিজ কোচ কার্লোস কুইরোজ রোনালদোকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে চুক্তি করানোতে রাজি করান। সেই সময়ে কুইরোজ ছিলেন ফার্গুসনের অ্যাসিস্ট্যান্ট কোচ। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ১২ মিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাবে বেঁকে বসে লিসবন। যদিও ওয়েঙ্গারের সুযোগ ছিলো এর চেয়ে বেশি দাম দিয়ে রোনালদোকে এমিরেটসে নিয়ে আসার। কিন্তু ওয়েঙ্গার রোনালদোর পিছনে ১২ মিলিয়ন ইউরো খরচ করাটা বেশিই মনে করেছিলেন। শেষপর্যন্ত রোনালদো ওল্ড ট্রাফোর্ডে পাড়ি জমান এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে নিজের নামটি স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখেন। সেই আফসোস হয়তো আজও বয়ে বেড়ান ওয়েঙ্গার।

আর্সেনালের জার্সি গায়ে জড়িয়ে মাঠ মাতানোর কথা ছিলো রোনালদোর; Image Source: Arsenal.com

লিওনেল মেসি – ১৬ বছর

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে সাইন না করানোর যন্ত্রণা হয়তো আর্সেন ওয়েঙ্গার ভুলতে পারতেন সেই বছরেই মেসিকে সাইন করিয়ে। ২০০৩ সালে লা মাসিয়ার ট্রায়ো মেসি, পিকে ও সেস্ক ফ্যাব্রিগাসের দিকে হাত বাড়ান ওয়েঙ্গার। ওয়েঙ্গারের কথায় সায় দিয়ে অল্প বয়সেই বাড়ি ছেড়ে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান সেস্ক ফ্যাব্রিগাস।

মেসিকে সাইন করাতে হলে মেসির পরিবারের একটা ব্যবস্থা করতে হতো আর্সেনালের। কিন্তু পরিবারের দায়ভার নিতে অপারগতা প্রকাশ করে আর্সেনাল কর্তৃপক্ষ। আর এখানে ব্যর্থতার জন্যই মেসিকে চুক্তি করানোর মোক্ষম সুযোগ হেলায় হারান ওয়েঙ্গার ও আর্সেনাল। যদিও ওয়েঙ্গার দাবি করেছিলেন, মেসি নিজেই সদ্য বার্সেলোনায় থিতু হওয়াতে ইংল্যান্ডে আসতে চাননি। যা-ই হোক, মেসিকে এমিরেটসে আনতে পারলে ওয়েঙ্গারকে হয়তো এত ব্যর্থতার দায়ভার নিতে হতো না!

আর্সেনালের বিপক্ষে মেসি; Image Source: Sky Sports

This Bangla article is about Arsene Wenger who misssed the opportunity to sign world class footballer in early stage. Necessary sources are hyperlinked in the article.

Feature Image: Goal.com

Related Articles