Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ভুতুড়ে ব্যাটিং স্টাইলেও সফল তাঁরা

ক্রিকেট সুন্দর খেলা। ‘একটা কভার ড্রাইভ’ আর ‘দুর্দান্ত একটা কভার ড্রাইভ’-এর পার্থক্য করতে আসলে পোড় খাওয়া ক্রিকেট ভক্ত হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। ক্রিকেটের আদি বুড়ো ডব্লিউ জি গ্রেস কিংবা সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান স্যার ডন ব্র্যাডম্যান, বা সেখান থেকে সুনীল গাভাস্কার, অথবা একালের শচীন টেন্ডুলকার বা বিরাট কোহলি- সবাই কমবেশি নিখুঁত টেকনিকের জন্য পরিচিত ছিলেন।

দারুণ টেকনিক আর চোখ ধাঁধানো ব্যাটিং স্টাইল দিয়েই দিনের পর দিন খেলাটিকে শাসন করেছেন ইতিহাস কাঁপানো ব্যাটসম্যানরা। তবে, তাঁদের ভিড়েও ভুতুড়ে সব টেকনিক দিয়ে সফলতা পাওয়া ব্যাটিং দানবদেরও বিস্তর নজীর পাওয়া যায় ক্রিকেট বিশ্বে। তাঁদের ব্যাটিং নিয়ে আলোচনা যেমন হয়েছে, তেমনি হয়েছে সমালোচনা। কেউ কেউ তো স্টাইলগুলোকে ‘কুৎসিত’ও বলেছেন। তবে, এত কিছুর পরও ক্রিকেট ইতিহাসে ঠাঁই পেয়েছেন এই ক্রিকেটাররা।

শিবনারায়ন চন্দরপল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

চন্দরপল হলেন সাদা পোশাকে আধুনিক কালে ক্যারিবিয়ানদের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন। তিনিই দলটির হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলার নজীর স্থাপন করেছেন। ভুতুড়ে দর্শন ব্যাটিং স্ট্যান্টস-এর জন্য তার নাম ডাক ছিল।

শিবনারায়ন চন্দরপল © Getty Images

তার বুক আর দৃষ্টি থাকতো বোলারের দিকে। সামনের পায়ের ওপর ব্যাটের ভর দিতেন। সাধারণ ব্যাটিং পজিশনের নব্বই ডিগ্রি কোণে দাঁড়াতেন তিনি। যদিও, এই স্ট্যান্টস নিয়ে ক্যারিয়ারে কখনোই কোনো সমস্যায় ভোগেননি চন্দরপল। লম্বা টেস্ট ক্যারিয়ারে ৫০-এর ওপর গড় নিয়ে ব্যাট করে করেছেন ৩০ সেঞ্চুরি।

২০ হাজারের ওপর আন্তর্জাতিক রান নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করেছেন শিবনারায়ন চন্দরপল। তার কাছাকাছি ব্যাটিং স্ট্যান্টস ছিল পাকিস্তানের ফাওয়াদ আলমের। কিন্তু, যোগ্যতা বা অর্জন- কোনো দিক থেকেই চন্দরপলের সমকক্ষ হতে পারেননি তিনি।

স্টিভেন স্মিথ (অস্ট্রেলিয়া)

স্টিভেন স্মিথের ক্যারিয়ারটা ‍শুরু হয়েছিল লেগ স্পিনার হিসেবে। লোকে তার মধ্যে শেন ওয়ার্নের উত্তরসুরী খুঁজতো। যদিও, সেই আশায় গুড়েবালি। স্মিথ এখন সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন। সে কারণেই কি না অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এই অধিনায়কের ব্যাটিংয়ের ধরনও বেশ অন্যরকম।

দু’পায়ের মধ্যে বিশাল ফাঁক রেখে তিনি ব্যাট করেন। হাঁটতে হাঁটতে বোলিংয়ের লাইনে গিয়ে শট করেন। ভাগ্য ভাল যে, তার ব্যক লিফটটা দারুণ।  স্মিথের ফুটওয়ার্ক এতটাই কার্যকর যে সেটা বাকিদের চেয়ে আলাদা হওয়ার পরও রোজই বিশ্বমানের সব বোলার তাতে বোকা বনে যান।

অনন্য ব্যাটিং স্টাইলই তাকে বিশ্বের অন্যতম সেরায় পরিণত করেছে। গেল অ্যাশেজেই যে স্মিথ ৭৭৪ রান করে দারুণ এক প্রত্যাবর্তন করলেন টেস্ট ক্রিকেটে, তাতে এই স্টাইলের অবদানও কিন্তু কম নয়।

জাভেদ মিয়াঁদাদ (পাকিস্তান)

মিয়াঁদাদ স্বরূপে থাকলে বাকিরা হতেন স্রেফ নীরব দর্শক © Getty Images

আশির দশকে ভুতুড়ে দর্শনের ব্যাটিংয়ের দিক থেকে ওপরের দিকেই থাকবে জাভেদ মিয়াঁদাদের নাম। তাঁর ব্যাটিংয়ের মূলমন্ত্র ছিল রান তোলা, কীভাবে রানটা এলো সেটা খুব একটা আলোচ্য বিষয় নয়। উইকেটে তিনি ছিলেন ব্যস্ততম ক্রিকেটার। গ্রিল ছাড়া হেলমেট পরে নামতেন, ব্যাটটা একদম পা ঘেষে রেখে ব্যাট করতেন। বাজে বলের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন চূড়ান্ত কঠোর। ভাল বলকে সমীহ করতেন। কিন্তু, সিঙ্গেল নিতে ভুল করতেন না।

বলা হয়, পাকিস্তানের ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হলেন জাভেদ মিয়াঁদাদ। আর এই তকমাট অবশ্যই তিনি তার টেকনিকের জন্য পাননি। পেয়েছেন লড়াকু ও আক্রমণাত্মক মানসিকতার জন্য। ১৯৯২ বিশ্বকাপের ইনিংসগুলোতে তিনি এমন সব আনঅর্থোডক্স শট খেলেছেন যার কথা আজও লোকে স্মরণ করে।

মহেন্দ্র সিং ধোনি (ভারত)

আধুনিক ক্রিকেটে সবচেয়ে ভুতুড়ে দর্শন ব্যাটিং কার? অবশ্যই তিনি হলেন হলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। ধোনির ব্যাপারটা ব্যাটিং স্ট্যান্টস এতটাই উদ্ভট ছিল যে, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা শুরুতে অনেক সময় লাগে নির্বাচকদের তাকে মেনে নিতে।

বিখ্যাত সেই হেলিকপ্টার শট © Getty Images

যেকোনো ফরম্যাটেই তিনি যখন ব্যাট করতে নামেন, মনে হয় একজন কুস্তিগীর সদ্য আসলেন ক্রিজে। শরীর ঝাঁকুনি দিচ্ছেন, ঝাপটাচ্ছেন- যেন ব্যাটিং নয় তিনি নেমেছেন বক্সিং করতে। তবে, এই করেই ‘ফিনিশার’ বা ‘ক্যাপ্টেন কুল’ ইত্যাদি তকমায় নিজের নাম তিনি আজীবনের জন্য বসিয়ে নিয়েছেন। দারুণ সব ইনিংস খেলে ম্যাচ জিতিয়েছেন, ভারতকে এনে দিয়েছেন ক্রিকেটের সেরা তিনটি ট্রফি। হেলিকপ্টার শটকে তো তিনি প্রায় তাঁর মতোই বিখ্যাত বানিয়ে ফেলেছেন।

অ্যালান বোর্ডার (অস্ট্রেলিয়া)

অ্যালান বোর্ডারের ব্যাপারে, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট সাংবাদিক ও লেখক ম্যালকম নক্সের কথাটাই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য, ‘ওর বয়স যত বাড়তে থাকে, ততই ওর মধ্যে আকর্ষণ কমতে থাকে। কেবলই ঘুসি চলবে, কোনো ক্ষমা নেই।’ হ্যাঁ, আশির দশকে এতটাই কুৎসিৎ ছিল বোর্ডারের ব্যাটিং।

মার্ক ওয়াহর মতো সুদর্শন ছিল না তাঁর ব্যাটিং © Getty Images

তারপরও তিনি ১৫৬ টি টেস্টে ৫০.৫৬ গড়ে রান তুলেছেন। ওয়ানডেতে তুলনামূলক ‘দুর্বল’ ছিলেন। তারপরও ২৭৩টি ওয়ানডে খেলেছেন। রান করেছেন ৩০.৬২ গড়ে। তারপরও লোকে বলে, বোর্ডারের মতো কুৎসিৎ দর্শন ব্যাটিংয়ের কিংবদন্তি এর আগে দেখেনি ক্রিকেট বিশ্ব।

অনেকটা বেসবলের স্ট্যান্টসে ব্যাটিং করতেন বোর্ডার। অন্য অস্ট্রেলিয়ানদের মতো কাট আর পুলটা ভালই খেলতেন। ব্যস, আর কিচ্ছু ছিল না তাঁর ব্যাটিংয়ে!

ল্যান্স ক্লুজনার (দক্ষিণ আফ্রিকা)

ওয়ানডে ক্রিকেটে ‘ফিনিশার’ হিসেবে ল্যান্স ‘জুলু’ ক্লুজনারের বেশ নামডাক ছিল। তার ব্যাটিং স্ট্যান্টসও কিন্তু কম ভুতুড়ে নয়। অনেকটা বেসবলের ঢঙে ব্যাট করতে দাঁড়াতেন জুলু। এর ফলে ব্যাটটা উঁচুতে থাকতো আর দ্রুতই তার ব্যাট ছুঁয়ে ফেলতো বলকে। হাই ব্যাক লিফটের কারণে তিনি হাত খুলে খেলতে পারতেন। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে এই কায়দায় বিস্তর রান করেছেন ক্লুজনার।

১৯৯৯ বিশ্বকাপ কাঁপিয়ে দেওয়া সেই জুলু © Getty Images

যদিও, বোলাররাও দ্রুতই ক্লুজনারের দুর্বলতার জায়গাগুলো ধরে ফেলতে পেরেছিলেন। ফলে, সেই অতিমানবীয় বিশ্বকাপের পর ক্যারিয়ারের গ্রাফটা কেবল নিম্নগামীই হয়েছে। কালক্রমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে হারিয়েই যান ল্যান্স ক্লুজনার।

কেভিন পিটারসেন (ইংল্যান্ড)

আধুনিক ক্রিকেটের আরেক ব্যাটিং গ্রেট কেভিন পিটারসেনেরও ব্যাটিং স্ট্যান্টস ও টেকনিক অন্যরকম ছিল। যখনই তিনি ব্যাটিং করতে আসতেন, দু’পায়ের মধ্যে অনেক ফাঁক রেখে দাঁড়াতেন, খেলতেন হাই ব্যাক লিফটে।

দুই পায়ের মধ্যে ফাঁকটা এতই বেশি থাকতো যে, ছোটখাট যানবাহন যেন সহজেই তার ভেতর দিয়ে চলে যেতে পারে। পিচের মধ্যে তার পা সব সময়ই চলতো, ফলে বোলারদের জন্য বুঝে ওঠাটা শক্ত ছিল।

কেভিন পিটারসেন © thecricketer.com

হাশিম আমলা (দক্ষিণ আফ্রিকা)

রান মেশিনখ্যাত হাশিম আমলার ব্যাটিং স্ট্যান্টসটাও বেশ বেখাপ্পা। যদিও, তাঁর জন্য এটা যথেষ্ট কার্যকর বলেই প্রমাণিত হয়েছে। হাই ব্যাক লিফট ঘরানার ব্যাটিংয়ে হাশিম আলমার ব্যাটটা ধরা থাকে গালি অঞ্চলের দিকে। যদিও, ভিন্নধর্মী এই স্টাইলেও সব ফরম্যাটেই ক্যারিয়ারজুড়ে অজস্র রান করেছেন আমলা।

গ্রাহাম গুচ (ইংল্যান্ড)

বেঢপ ব্যাটিংয়ের গুরু বলা হয় ইংলিশ কিংবদন্তি গ্রাহাম গুচকে। হাই ব্যাক লিফটের কারণে তার ব্যাটিং স্ট্যান্টসটা খুবই সাদামাটা মনে হলেও আদতে ছিল আনর্থোডক্স। বিশাল দানবীয় আকারের গুচ বল ডেলিভারির সাথে সাথে হেঁটে গিয়ে বলের লাইনে পৌঁছাতেন।  হাই ব্যাক লিফট ব্যাটিং স্ট্যান্টসের শুরুটা করে দিয়ে যান গুচ। এরপর যারাই এটা করেছেন, তারা কেবল গুচের দেখানো রাস্তায় হেঁটেই কিছু পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করেছেন।

গ্রাহাম গুচ © lords.org

ইজাজ আহমেদ (পাকিস্তান)

সাবেক এই পাকিস্তানী ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং স্ট্যান্টসটা খুবই মজাদার ছিল। আর এজন্য ক্রিকেট সার্কেলে তিনি ‘দ্য এক্স ম্যান’ বা কুড়াল মানব ডাক নামে বেশ খ্যাতি পেয়েছিলেন। কারণ, তিনি নাকি ব্যাটটাকে কুড়ালের মতো ব্যবহার করতেন। সেটা কীভাবে? দু’পায়ের মাঝে এমনভাবে ব্যাটটাকে রাখতেন, যেন দেখে মনে হয় তিনি কুড়াল দিয়ে কাঠ কাটছেন। যদিও, এই স্ট্যান্টসে ক্যারিয়ারজুড়ে অনেক রান করেছেন ইজাজ।

This Bangla article is based on unusual but effective batting stances in cricket history. References are hyperlinked inside.

Featured Image © Getty Images

Related Articles