Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

২৮ বছরের বাস্তেন সত্যিই রোনালদো থেকেও ভালো ছিলেন?

১৯৯২ সালের মধ্যরাত। মার্কো ভ্যান বাস্তেনের ঘুমটা ভেঙে গেছে, বাথরুমে যাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু ব্যথায় কুঁকড়ে যাচ্ছেন তিনি। গোড়ালির ব্যথাটা ভয়ংকরভাবে বেড়েছে।

সেই ২০ বছর বয়স থেকেই এই চোট তার সঙ্গী। আজ ব্যথা প্রচণ্ড বেড়েছে, কোনোভাবেই মনোযোগ অন্যদিকে সরাতে পারছেন না তিনি। মাত্র দুই বছর আগেই মতো ব্যালন ডি’অর জিতেছেন। ছিলেন ফিফার বর্ষসেরা একাদশেও। মাত্র ২৬ বছর বয়সে তার ব্যালন ডি’অরের সংখ্যা তিন। ভ্যান বাস্তেন ফুটবলের হিরো থেকে ক্রমশ লিজেন্ডারি ফুটবলার হবার পথে হাঁটছেন।

কিন্তু পথচলা থেমে গেল মাত্র ২৮ বছর বয়সে। ১৯৯৩ সালে মিউনিখের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে নিজের শেষ ম্যাচ খেললেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে সেদিন এসি মিলান মার্শেইয়ের কাছে হেরে গেল। এরপর দুটো বছর কেটে গেল ইনজুরি সাথে লড়তেই। টানা দুই বছর কোনো ফুটবল না খেলা ভ্যান বাস্তেন গোড়ালির ইনজুরির কাছে হার মেনে অবসর নিতে বাধ্য হলেন।

ভ্যান বাস্তেনের ক্যারিয়ার শেষ হয় মাত্র ২৮ বছর বয়সে; Image Source: Getty Images

তবে ভ্যান বাস্তেনের ইনজুরি প্রসঙ্গের দিকে যাবো না। আমরা এগোবো সম্প্রতি তার বলা একটি কথা নিয়ে। তিনি বলেছেন,

“ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ক্যারিয়ার আর আমার ক্যারিয়ার যদি তুলনা করা হয়, আমার ধারণা আমি ওর অর্জনের বেশ কাছাকাছিই থাকবো। হয়তো আমি এগিয়েও থাকতে পারি। কিন্তু ক্রমাগত ইনজুরির জন্য আমি ক্যারিয়ারই সামনে এগোতে পারিনি।”

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর বর্তমান বয়স ৩৮ বছর। ভ্যান বাস্তেনের চেয়ে আরও দশ বছর বেশি ফুটবল খেলছেন তিনি। যদিও বর্তমানে ইউরোপের মঞ্চে তিনি নেই। কিন্তু এখনও টানা খেলে যাচ্ছেন সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আল-নাসেরে। তবে ভ্যান বাস্তেনের কথা কতটা যুক্তিগত? ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যান নিয়ে পর্যালোচনার সাহায্যে প্রথমে দু’জনের ক্যারিয়ারের ২৮ বছরের হিসাবটা দেখা যাক। তবে ইউরোপিয়ান ফুটবল যেহেতু এক বছরে শুধু হয়ে পরের বছরের মাঝামাঝি সময়ে শেষ হয়, তাই মৌসুমের সাথে বয়স মেলানোটা একটু কষ্টকর। আবার কোনো নির্দিষ্ট বছরে ব্যালন ডি’অর বা ফিফা বেস্টের পুরস্কারগুলো দেওয়া হয় পূর্বের মৌসুমের পারফরম্যান্স ভিত্তিতে। তাই বয়সের সাথে ব্যক্তিগত এবং দলগত অর্জন পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করা বেশ জটিল। 

ভ্যান বাস্তেন ছিলেন বেশ অন্যরকম ফুটবলার। জাতে ডাচ, কিন্তু ইতালিয়ান লেজেন্ডারি ফুটবলারদের সাথেই তাকে তুলনা বেশি করা হয়। ক্যারিয়ারের শুরু আয়াক্সে, এরপর মিলানে চলে আসেন ‘৮৭-‘৮৮ মৌসুমে। খেলতেন একদম প্রথাগত ফুটবলার হিসেবে। লম্বায় ছিলেন ১৮৮ সেন্টিমিটার, একজন স্ট্রাইকার হিসেবে তার বল কন্ট্রোল আর টেকনিক ছিল একেবারে ভিন্ন। এই বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে তাকে রোনালদো লিমার চেয়েও এগিয়ে রাখা হয়। ১৯৮৭ থেকে ১৯৮৯ এই তিন বছর তার কাছে ছিল স্বপ্নের মতো। মাত্র তিন বছরের মাঝে ভ্যান বাস্তেন তার অর্জনের ঝুলি প্রায় ভরে ফেলেছিলেন। ১৯৮৮ সালে ডাচ দলের হয়ে ইউরো জয়, যেখানে ভ্যান বাস্তেন নিজেই করেছিলেন ৫ গোল। সেবারের টুর্নামেন্টের ফাইনালে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে গোল করে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত তৈরি করেছিলেন তিনি। ‘৮৮-‘৮৯ মৌসুমে ক্যারিয়ারের প্রথম (ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশীপ লিগ) চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়, ৮৭/৮৮ মৌসুমে ইতালিয়ান লিগ এবং ১৯৮৮ সালে ব্যালন ডি’অর। ক্লাব এবং দলগত দিক দিয়ে জিততে কিছু বাকি রাখেনি তিনি। ইতালিয়ান লিগে এসেছিলেন ১৯৮৭ সালে, যখন তার বয়স মাত্র ২২ বছর দশ মাস। ২৫ বছর বয়সের মধ্যেই ভ্যান বাস্তেনের দেশ ও ক্লাবের হয়ে বড় শিরোপাগুলো জেতা হয়ে গিয়েছিল।

ডাচদের হয়ে জিতেছিলেন ইউরো; Image Source: Twitter

তবে অর্জনের খাতা এখানেই শেষ নয়। ইনজুরির সাথে যুদ্ধটা চলছিল। তবুও ভ্যান বাস্তেন ইনজুরি জয় করে পুনরায় নিজেকে প্রমাণ করতেন ফুটবলের মাঠে। রোজান্নেরিদের হয়ে আট মৌসুম খেললেও শেষ দুই মৌসুম মাঠের বাইরে থেকেই কেটে গেছে। তবুও তার অর্জনের খাতায় চারটা স্কুদেত্তো, চারটা সুপারকোপা ইতালিয়া, তিনটা ইউরোপিয়ান কাপ, দুটো উয়েফা সুপার কাপ এবং দুটো ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ। ২৮ বছর বয়সে যখন ক্যারিয়ারের ইতি টানতে হয় তখন তার ব্যক্তিগত অর্জনের পাশে তিনটি ব্যালন ডি’অর, একবার ফুটবলার অফ দ্য ইয়ারের পুরস্কার, একটা ইউরো, দুটো চ্যাম্পিয়নস লিগ, নয়বার বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় টপ স্কোরার হবার পাশাপাশি আয়াক্স এবং মিলানের হয়ে মোট ৩৫২ গোল। 

ফুটবলের এসব পরিসংখ্যান মতে, ভ্যান বাস্তেন অবসর নিয়েছেন ২৮ বছরে কিন্তু তার ক্যারিয়ার পরিপূর্ণ করে ফেলেছিলেন আরও কয়েক বছর আগেই। তবে ফুটবলে অনেক কিছু পাওয়ার পরও আক্ষেপ থেকেই যায়। ১৯৯০ বিশ্বকাপে যেমন তিনি কোনো গোলই করতে পারেননি। ‘৯২ এর ইউরোতে ডেনমার্কের সাথে তার পেনাল্টি মিসের জন্য সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে যায় নেদারল্যান্ডস। 

এবার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর প্রসঙ্গে আসা যাক।

রোনালদোর বয়স যখন ২৮ বছর স্পোর্টিং সিপি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ঘুরে তিনি তখন রিয়াল মাদ্রিদে। ততদিনে গোল করেছেন ৩৩৯টি, একবার উয়েফার সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন, ব্যালন ডি’অর জিতেছেন দুটো, চ্যাম্পিয়নস লিগও রয়েছে দুটো। রিয়াল মাদ্রিদ এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে মোট লিগ জিতেছেন চারবার, প্লেয়ার অফ দ্য সিজন হয়েছেন পাঁচবার। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় টপ স্কোরার হিসেবে নিজের নাম লিখিয়েছেন মোট আটবার। 

ত্রিশের পরই রোনালদো সবচেয়ে বেশি সাফল্য পেয়েছিলেন; Image Source: Gretty Image

২৮ বছরের হিসেবে রোনালদো এবং ভ্যান বাস্তেনের ক্যারিয়ারের অর্জন বেশ কাছাকাছি। তবে ভ্যান বাস্তেন এখানে এগিয়ে থাকবেন তার ইউরোর ট্রফি থাকার জন্য। কারণ ততদিনে রোনালদোর দেশের হয়ে কোনো শিরোপা স্পর্শ করা বাকি। এছাড়াও মোট লিগ, গোলসংখ্যা, ব্যালন ডি’অরের দিক থেকেও ২৮ বছর বয়সী রোনালদো থেকে ২৮ বছর বয়সী ভ্যান বাস্তেন বেশ এগিয়ে। কিন্তু পার্থক্য আসলে গড়ে দিয়েছে এর পরের বছরগুলো। ভ্যান বাস্তেনের ফুটবল ক্যারিয়ার যেখানে শেষ হয়েছে, উলটে রোনালদোর ক্যারিয়ারে নতুন মোড়ই এসেছে এই বয়সের পরে। 

ফিফা বেস্ট, ব্যালন ডি’অর, উয়েফা বেস্ট, চ্যাম্পিয়নস লিগ, ইউরো, নেশনস লিগ, লা লিগা, সিরি-আ — রোনালদো জিততে বাকি রাখেননি কিছুই। আজ ৩৮ বছর বয়সে এসে রোনালদোর মোট গোলের সংখ্যা ৭১৫টি। যে বয়সে খেলোয়াড়দের অবসরের সময় চলে আসে সেই বয়সে রোনালদো করেছেন তিনশোর বেশি গোল। রোনালদো আজ নিজেকে ক্যারিয়ারের যে শীর্ষে তুলেছেন তার সিংহভাগ অর্জন ত্রিশের পরে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, ক্যারিয়ারের পথচলা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো হলেও ভ্যান বাস্তেন থেমে গিয়েছিলেন ঐ ২৮ বছরেই। ইনজুরির সমস্যা না থাকলে ত্রিশের পরে তিনি ফর্ম ধরে রাখতে পারতেন নাকি পারতেন না সেই আলোচনা অনেক পরের বিষয়। সেখানে তিনি বুড়ো হাড়ের ভেল্কি দেখানোর সুযোগই পাননি। 

ভ্যান বাস্তেনের মতো রোনালদোও জিতেছেন ইউরো; Image Source: SkySports

যদি ভ্যান বাস্তেন এসি মিলানে থেকে ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত ফুটবলটা খেলে যেতে পারতেন তাহলে তার নামের পাশে আরও তিনটি ইতালিয়ান শিরোপা থাকত। যোগ হতো একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। ৯৪’ এর বিশ্বকাপে ওভারমাস, ডি বোর, কোম্যান, রাইকার্ড, বার্গক্যাম্পদের সাথে যুক্ত হতো তার নামও। হয়তো সবকিছু মিলিয়ে ভ্যান বাস্তেন ক্যারিয়ারে যোগ হতো আরও শখানেক গোল, পেয়ে যেতে পারতেন আরও একটি ব্যালন ডি’অর। তখন মেসি এবং রোনালদোর আগে ইতিহাসে প্রথম চারটি ব্যালন ডি’অর জেতার রেকর্ড থাকতো তার নামে।

একবার দুঃখ করেই ভ্যান বাস্তেন বলেছিলেন,

“এখনও আমি ফুটবল খেলতে পারি না। আমার গোড়ালি এখন সুস্থ আছে। কিন্তু বলে শটই নিতে পারি না আমি। পা দিয়ে আসলে কিছুই করতে পারি না। একটা সময় ফুটবল ছিল আমার জীবনের অংশ, ফুটবল স্পর্শ ছাড়া আমার দিন পার হতো না। এরপর একদিন হুট করে সবকিছু শেষ হয়ে গেল।”

ক্যারিয়ারটা হাসপাতালের বিছানাতেই কেটে গেছে তার; Image Credit: futbolretro

এই ক্ষণিকের ক্যারিয়ারেই ভ্যান বাস্তেন ইতিহাসের পাতায় নিজেকে তুলে ফেলেছেন। ডাচ ফুটবলের ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় বলা হয় তাকে। কে জানে, ক্যারিয়ারটা আরও দীর্ঘ করতে পারলে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকেই ছাড়িয়ে যেতেন কি না!

This article is in Bangla language. It is a comparative study on the 28-year-old Marco Van Basten and 28-year-old Cristiano Ronaldo.

Featured Image: Getty Images

Related Articles