Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

“হেরে যাবার ভয় কখনও আমাকে কাবু করতে পারেনি”- দ্য বিগ ভ্লাদ || পর্ব-১

ক্লাসিক্যাল দাবার ১৪তম বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভ্লাদিমির বরিসোভিচ ক্রামনিক ২০১৯ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্লাসিক্যাল দাবা থেকে অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। দুই দশক ধরে ফর্মের চূড়ায় থাকা অবস্থায় গ্যারি ক্যাসপারভ, পিটার লেকো, ভেসেলিন তোপালভ এবং বিশ্বনাথন আনন্দের সাথে বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে লড়েছেন ‘দ্য বিগ ভ্লাদ’। বিখ্যাত মিখাইল বতভিনিক দাবা স্কুলের ছাত্র ক্রামনিক ছিলেন এক প্রকৃত দাবা প্রডিজি। গ্যারি ক্যাসপারভের পনের বছরের চ্যাম্পিয়নশিপের রাজত্বকাল শেষ করেন এবং নিজে আট বছর ধরে সেই রাজমকুট ধরে রাখেন ভ্লাদ। তার বাবা ছিলেন একজন শিল্পী এবং সঙ্গীতের শিক্ষক, ছেলের মধ্যে সৃজনশীলতার বিকাশে যা হয়েছে সহায়ক। দাবার প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল বাকিদের তুলনায় আলাদা, ক্রামনিকের নিজস্ব ভাষ্যমতে যেটি তার জন্য উপকারীই হয়েছে।

৪৩ বছর বয়সে ২০১৯ সালে অবসর নেন ক্রামনিক; Image Courtesy: Tata Steel Chess

নিজের সেরা দিনগুলোতে ক্রামনিক ছিলেন প্রায় অজেয়, কিন্তু তার অর্জনগুলো বাকিদের থেকেও একটু বেশিই অনন্য। কেননা, তাকে লড়তে হয়েছে তার শারীরিক নানান জটিলতার সাথেও, মাসের পর মাস খাবার খেতে পারেননি এমন সময়ও কেটেছে এই বিশ্বচ্যাম্পিয়নের। নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত ছিল ভ্লাদের সময়কাল, কদর্য দাবা রাজনীতির ছোবলও সামাল দিতে হয়েছে তাকে। চেস ডট কমের ডেভিড কক্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ভ্লাদ এই সবকিছু নিয়েই কথা বলেছেন। 

ডেভিড কক্স: কালজয়ী সোভিয়েত চেস স্কুলগুলো সম্পর্কে অনেক কথা আলোচিত হয়েছে। আশির দশকে আপনি নিজেও তো সেখানে অংশ নিয়েছেন, সে সম্পর্কে কিছু বলুন। 

ভ্লাদিমির ক্রামনিক: আসলে সবকিছু নিয়েই মানুষের সবসময়ই একটু বাড়িয়ে বলা অভ্যেস, সোভিয়েত চেস স্কুলও তার বাইরের কিছু নয়। শুনে মনে হবে, এ যেন এক কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প – যেখানে পারলে দিনে ২৫ ঘণ্টা দাবায় খাটানো হতো বাচ্চাদের। কিন্তু আদতে এটা ছিল মাত্র দু’সপ্তাহের একটা সেশন, যা বছরে দু’বার করে করা হতো, আর সেই দুই সপ্তাহও অস্বাভাবিক চাপের ছিল না। 

তবে সোভিয়েত চেস স্কুলের সব থেকে দামী যে জিনিসটা ছিল, তা হলো তাদের প্রশিক্ষকগণ। ট্রেইনাররা অনেক সুযোগ্য এবং দক্ষ ছিলেন। ইন্টারনেটবিহীন একটা দুনিয়ায় সেকালে তথ্যের এক্সচেঞ্জ হতো খুবই কম। সেই সুযোগে দারুণ সব দাবার জ্ঞানগুলো আয়রন কার্টন-এর পিছনে শুধু এই সোভিয়েতদের কব্জাতেই থাকতো। কিন্তু দৃশ্যপটে পরিবর্তনটা ঘটে সোভিয়েত থেকে কিছু গ্র্যান্ডমাস্টারদের স্বেচ্ছা-অভিবাসনের পর। এতে পশ্চিমারা এবং চীনারা সোভিয়েত জ্ঞানের সংস্পর্শে আসে। 

কিন্তু দাবা এমনিতেই সোভিয়েত দুনিয়ায় অনেক জনপ্রিয় ছিল। যখন আমি ছোট ছিলাম, তখন বয়সভিত্তিক বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপগুলোতে কোয়ালিফাই করাই কষ্টকর ছিল। তবে সত্যি বলতে, এরপর চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা অতটা কঠিন ছিল না। কিন্তু সোভিয়েত চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে কোয়ালিফাই করাটাই অনেক কঠিন ছিল।

সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দাবাড়ু বলা হয় বিগ ভ্লাদকে; Image Courtesy: Maria Emelianova/Chess.com

কক্স: আপনার বয়স যখন মাত্র ১৪, তখন কোল্ড-ওয়ার শেষ হয় এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায়। দাবা ক্যারিয়ারে সেটি কি আপনাকে কোনোভাবে প্রভাবিত করেছে? 

ক্রামনিক: অবশ্যই আমার জন্য কিছু সমস্যার সৃষ্টি করেছে, তবে আমি তখন কেবল এক নবীন দাবাড়ু। সেজন্য পরিস্থিতি ততটা প্রতিকূল হয়নি আমার জন্য, যতটা হয়েছে প্রবীণ দাবাড়ুদের জন্য। সে সময়ের নিরিখে আমার জন্য প্লাস-মাইনাস দুই-ই ছিল। সুবিধার দিক হলো, আমি নিজের ইচ্ছায় বিদেশে গিয়ে যখন খুশি টুর্নামেন্ট খেলতে পারতাম। আর অসুবিধার দিক হলো, দাবার উপর সরকারি সব ভাতা-ভর্তুকি বন্ধ হয়ে গেল। 

১৯৯০-৯২ সালের সময়টা অর্থনৈতিকভাবে রাশিয়ার জন্য বেশ কঠিন যাচ্ছিল। অনেক উঠতি তারকা দাবাড়ু অর্থাভাবে ভালো কোচ রাখতে পারেনি। সে কারণে তাদের শক্তিমত্তা শুরুর লেভেলেই থেকে যাচ্ছিল, তাদের উন্নতি হচ্ছিল না। আমি সৌভাগ্যবান বলতে গেলে, ক্যারিয়ারের শুরুতে সরকার প্রদত্ত স্টেট সাপোর্ট ফর ইয়াং ট্যালেন্ট পেয়েছিলাম এবং টপ লেভেল দাবাড়ু পর্যন্ত গিয়েছিলাম দ্রুতই। তবে খোলাখুলিভাবে বলতে গেলে, টাকা-পয়সার দিকটা অনেক বড় একটা ব্যাপার, যতদিন না আপনি শীর্ষস্থানীয় দাবাড়ু হচ্ছেন।

আমার মনে আছে, ১৯৯২ সালের শুরুতে লন্ডনে একটা বড় টুর্নামেন্ট আয়োজিত হয়েছিল, সময়টা আমার দাবাজগতে উত্থানের। আমার রেটিং ২৬০০-এর আশেপাশে হবে। আমাকে তারা অ্যাপিয়ারেন্স ফি হিসেবে ১৫০০ পাউন্ড অফার করেছিল, কিন্তু সেটা আনতে হতো লন্ডন গিয়ে। কিন্তু লন্ডনের টিকেট সমপরিমাণ অর্থাৎ ৫০০ পাউন্ডও তখন আমার কাছে ছিল না। তারপর আমার বাবা তার ব্যবসায়ী বন্ধুর থেকে ৮০০ পাউন্ড ধার করেন দু’সপ্তাহর জন্য। এমন দিনও গেছে, বেশ ক’বার এরকম অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার জীবনে।

প্রজন্মের দাবাড়ুদের আইকন দ্য বিগ ভ্লাদ; Image Courtesy: David Llada

কক্স: সোভিয়েত-বাধা উঠে যাবার পর যখন বাইরে খেলার স্বাধীনতা পেলেন, তখনকার কথা কিছু বলুন। 

ক্রামনিক: সোভিয়েত আমল শেষ হবার পর শুধু দাবার দক্ষতা থাকলেই বিদেশে খেলতে যাওয়া যেত। সোভিয়েত আমলে অনেক নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হতো, যা আমার মতো মানুষের পক্ষে সহজ ছিল না। তবে লোকমুখে যতটা অতিরঞ্জিত গুজব প্রচলিত, ততটাও নয়। যেমন কথা চালু আছে যে, কমিউনিস্ট পার্টি করতেই হতো। এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা – স্পাস্কি, তাল, ব্রন্সতেইন একজনও পার্টির কেউ ছিলেন না, যদিও অন্য অনেকে ছিল। তবে এটা সত্য যে, স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করা যেত না। 

কক্স: এবার আপনার দাবা নিয়ে কিছু বলুন, অন্যভাবে বললে দাবার প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরুন। যেমন, ববি ফিশার তার ধাঁচ সম্পর্কে যেমনটা বলতেন, “ক্রাশ দ্য অপোনেন্টস’ মাইন্ড!” আমার মনে হয়, কিছুটা আলাদা আপনি।  

ক্রামনিক: আমার ক্ষেত্রে বোধ হয় বিষয়টা আলাদা। বেশিরভাগ দাবাড়ুর জন্যই জয়টাই মুখ্য বিষয়, কিন্তু শৈশব থেকে আমার দাবা বলতে গেলে আদৌ কম্পিটিটিভই ছিল না। এমনকি এখনও যখন টেনিস বা ফুটবল খেলি, হার আমার কাছে তেমন বড় কোনো ব্যাপার নয়। আমি শুধু প্রসেসটা উপভোগ করি। এবং আমার মনে হয়, ফলাফলের দিকে মনযোগ দেয়ার চেয়ে এটাই বেশি কার্যকর পদ্ধতি। যদি ক্রমাগত কোনো বিষয়ের পদ্ধতিগত দিকে মন দিতে পারা যায় ঠিকঠাক, তাহলে এটায় দক্ষতা আপনা-আপনি অর্জিত হয়ে যায় বলে আমি মনে করি।

কৈশোরকালে ক্রামনিক; Image Courtesy: Wikimedia Commons

কক্স: এই মাইন্ডসেট কি আপনার ক্যারিয়ারে সহায়ক হয়েছে বলে মনে করেন?  

ক্রামনিক: হ্যাঁ, আমার তো তাই মনে হয়। কোনো খেলোয়াড়ের বিপক্ষে খেলতেই আমার কখনও ভয় লাগেনি। এটার সুফল আমি বেশি পেয়েছি গ্যারির (গ্যারি ক্যাসপারভ) সাথের ম্যাচে। অন্যদের খেলায় দেখতাম ক্যাসপারভের সাথে খেলতে নামলেই চোখে-মুখে একধরনের ভীতি-উৎকণ্ঠা কাজ করত। কিন্তু আমার মত হলো, হাজার হোক, সে একজন খেলোয়াড়ের বেশি তো কিছু নয়। যখন খেলতে নামছি, খুব বেশি হলে তো আমি হারবো, এর থেকে খারাপ আর কী হবে! 

দু’জন মানুষের যেকোনো ধরনের সম্পর্কে আপনি যদি নিজে থেকে অন্যজনকে ভয় না পান, তবে বাহ্যিক প্রভাবক আপনাকে কোনোভাবেই ভয় দেখাতে পারবে না। পুরো ক্যারিয়ারের যতবারই আমি গ্যারিকে খেলেছি, আমার কাছে তা ছিল ভীতিকরের পরিবর্তে রোমাঞ্চকর এবং চ্যালেঞ্জে ভরপুর। তাই বরাবরই আমি নিজের সেরাটা দেয়ার জন্য মুখিয়ে থেকেছি। সর্বদাই কঠিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলতে আমার ভালো লাগতো, চ্যালেঞ্জটা উপভোগ করেছি ক্যারিয়ারজুড়েই। 

কক্স: দারুণ! ২০০০ সালে গ্যারি ক্যাসপারভের সাথে বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের সময় আপনিই ছিলেন হাতে-গোনা কয়েকজন দাবাড়ুর মধ্যে একজন, ক্লাসিক্যাল দাবায় যাদের প্লাস স্কোর ছিল গ্যারির বিপক্ষে, এ ব্যাপারেও কী বলবেন? 

ক্রামনিক: আসলে গ্যারির অসাধারণ খেলোয়াড়ি গুণের পাশাপাশি জয়ের অন্যতম সহায়ক ছিল মনঃস্তাত্ত্বিক সুবিধা। তার সাথে যে কেউ খেলতে নামলে এটা ধরেই নেয়া হতো, ‘কে বেটার প্লেয়ার আমরা জানি, এখন শুধু তা বোর্ডে প্রমাণ করা বাকি’। সম্ভবত আমার সাথের গেমেই তা হতো না; সঙ্গত কারণেই এটাকে শুধু একটা গেম ধরে আগাই আমি। ফলতঃ, প্রতিপক্ষের ব্যাপারে মাত্রাতিরিক্ত ভয় পাই না, হোক সেটা ক্যাসপারভ। আর এটা নিশ্চয়ই একটা অস্বস্তিকর অবস্থা ছিল তার (গ্যারি ক্যাসপারভ) জন্য, কেননা সে এমনভাবে খেলেই অভ্যস্ত যে অপোনেন্ট তাকে ভয় পাবে। আমার মনে হয় এটাই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। 

হাস্যোজ্জ্বল ক্রামনিক (২০১৮); Image Courtesy: Maria Emelianova/Chess.com

কক্স: ক্যাসপারভের সাথের ম্যাচটা নিয়ে অনেক কথা হয়, কিন্তু লেকোর সাথের ম্যাচটা পাদ-প্রদীপের আড়ালে চলে যায়। আপনার পুরো ক্যারিয়ারেরই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং কঠিন ছিল ২০০৪ সালে পিটার লেকোর সাথের বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচ। এই ম্যাচে আসলে কী এমন সমস্যায় পড়েছিলেন যে, একদম শেষ গেম জিতে জয় নিশ্চিত করতে হয়েছে?

ক্রামনিক: প্রকৃতপক্ষে তখন লেকো অবিশ্বাস্যরকম ভালো খেলছিল, এমনকি ক্যাসপারভ লেভেলেও পৌঁছে গেছিল বলা যায়। সে ছিল এই গ্রহের সেরা ডিফেন্সিভ খেলোয়াড়। আপনি এমন দাবাড়ুর মুখোমুখি কখনোই হতে চাইবেন না, বিশেষ করে একটা বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচে। একটা টুর্নামেন্ট আর একটা ম্যাচের মধ্যে পার্থক্য কী জানেন? দাঁড়ান বলছি। একটা রাউন্ড রবিন টুর্নামেন্ট খেলা আমার মতে সহজ, ফর্মুলা পরিষ্কার – যত বেশি সংখ্যক ম্যাচ জিততে হবে এবং পয়েন্ট তালিকার শুরুতে গেলেই হবে। কিন্তু একটা বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচে জাস্ট একটা গেম জিতলেই এসপার-ওসপার। মানে বাকিগুলোতে ড্র করলেও একটা গেম জিতে গেলেই কেল্লা ফতে – ট্রফি আপনার। এখানেই সমস্যাটা, বিশেষ করে ডিফেন্সিভ প্লেয়ারদের ট্যাকল করা মুশকিল। 

২০০৪ বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচে লেকোর বিপক্ষে হারতে হারতে শেষ মুহূর্তে জিতে যান ক্রামনিক; Image Courtesy: Wikimedia Commons

যদিও তখন ফর্মটা ভালো যাচ্ছিল আমার। ক্যাসপারভের সাথের ম্যাচের আগে আমার প্রায় ৮২ গেম অপরাজিত থাকার স্ট্রিক ছিল। লেকোর সাথে ম্যাচের আগেও সম্ভবত সংখ্যাটা ছিল তেমনই। তবে আমার প্রতিকূলে ছিল আরও অনেক কিছুই। শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না, অসুস্থতা জেঁকে বসেছিল। নোংরা দাবার রাজনীতির কারণে মানসিক দিক থেকেও নির্ভার থাকতে পারছিলাম না। রাজনৈতিক চক্রটি চাচ্ছিল দুই প্রতিষ্ঠানের বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ এক করতে (বিখ্যাত সেই রি-ইউনিফিকেশন), কিন্তু প্রক্রিয়াটা খুব একটা শোভন ছিল না মোটেও। শারীরিক-মানসিক-আত্মিক সবদিক থেকে ভেঙে পড়েছিলাম। তবে সৌভাগ্য আমার বলতে গেলে, কীভাবে কীভাবে যেন শেষ পর্যন্ত ঠিক থাকতে পেরেছিলাম এবং শেষ গেমটা জিতে ট্রফি ধরে রেখেছিলাম। 

(চলবে)

This article is the first part on a 2019 interview of Vladimir Kramnik about his world championship matches, his overall career and finally retirement. Necessary references have been hyperlinked inside.

Featured Image: David Llada

Background Image: AP

Related Articles