Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কিছু উদ্ভট ও অপ্রচলিত খেলাধুলা

নির্মল বিনোদন ও আনন্দের অন্যতম মাধ্যম খেলাধুলা। বিভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতির মাধ্যমে বিভিন্ন খেলাধুলার প্রচলন ঘটেছে সম্ভবত মানব সভ্যতা গড়ে ওঠার একদম গোড়ার সময় থেকে। নদীর পানির মতো সময় বয়ে চলেছে, সময়ের বিবর্তনে বিশ্বায়নের পৃথিবীতে অন্যসব কিছুর মতোই আদান-প্রদান হয়েছে খেলাধুলারও। কিছু খেলাধুলা পরিচিতি পেয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে এবং পরিণত হয়েছে প্রচলিত মূলধারার খেলায়। আবার কিছু থেকে গেছে পর্দার আড়ালে। প্রচলিত ধারার খেলার বাইরেও আবার এমন কিছু খেলাধুলা রয়েছে, যেগুলোকে হয়তো অনেকেই খেলাধুলার পর্যায়ে ফেলতেই চাইবে না কেউ এবং পুরো ব্যাপারটাই তাদের কাছে মনে হতে পারে খেলাধুলার নামে ভাঁড়ামি ও রসিকতা। যেমন, পায়ের আঙ্গুলের রেসলিং, উটের রেসলিং, কুইদিচ কিংবা বউ কাঁধে নিয়ে দৌড়ানোর প্রতিযোগিতা ইত্যাদি।

আপনি যা-ই ভাবুন না কেন, অদ্ভুত ও উদ্ভট বিভিন্ন খেলাধুলা মূলধারার খেলার মতো জনপ্রিয়তা না পেলেও এটি একটি বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর বিনোদনের উৎসে পরিণত হয়েছে। এমনকি এসব খেলাধুলার আন্তর্জাতিক কিংবা স্থানীয় পর্যায়ে নিজস্ব সংস্থাও রয়েছে। কিন্তু খেলাধুলার অন্যতম উদ্দেশ্য যেখানে বিনোদন সেখানে হয়তো একটি নির্দিষ্ট নিরাপদ সীমানায় সবকিছুই সম্ভব, যদিও কিছু প্রতিযোগিতা ভীষণ রকমের বিপদজনক ও ভয়াবহ। যা-ই হোক, এরকমই কিছু উদ্ভট ও অদ্ভুতুড়ে কিছু খেলাধুলার কথা নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।

ওয়াইফ ক্যারিয়িং

ফিনল্যান্ডে অভিনব এই খেলাটির উৎপত্তি ১৯৯২ সালে এবং প্রতিবছর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয় ইউরোপের এই দেশটিতেই। খেলাটি কিভাবে শুরু হলো সর্বপ্রথম, এই ইতিহাসের সাথে উনিশ শতকের ‘রনকাইনেন দ্য রবার’ লোককথার প্রচলন রয়েছে। একটি গল্পে বলা হয় যে, রনকাইন ও তার সঙ্গী চোরেরা গ্রাম থেকে খাবার ও নারীদের চুরি করে কাঁধে নিয়ে পালাতো। আরেকটি প্রচলিত গল্প রয়েছে, যেখানে বলা হয় যে রনকাইন ও তার চোরেরা আশেপাশের গ্রামে গিয়ে অন্য লোকদের বউ কাঁধে করে নিয়ে পালিয়ে আসতো এবং এরপর নিজেদের স্ত্রী হিসেবে পরিণত করতো।

ওয়াইফ ক্যারিয়িং বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে দৌড়াচ্ছে প্রতিযোগীরা; Source: bigodino.it

একজন পুরুষ ও নারী মিলে একটি দল গঠিত হয়। খেলাটির নাম শুনে আপনার মনে হতে পারে যে, শুধুমাত্র নিজের স্ত্রীকে কাঁধে নিয়েই দৌড়াতে হবে। আসলে ব্যাপারটি তা নয়, সহখেলোয়াড়দ্বয় বিবাহিত না হলেও চলবে। খেলাটির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে একজন পুরুষ তার পেছনে ঝুলিয়ে বা কাঁধে একজন নারীকে নিয়ে দৌড়ে ২৫৩.৫ মিটারের বালুময় একটি ট্র্যাক পাড়ি দিতে হবে। যতটা সহজ ভাবছেন আসলে ততটা নয়, ট্র্যাকের মাঝে আবার দুটি শুকনো বাধা এবং একটি পানির বাধা দেওয়া হয় যা প্রায় ১ মিটার অবধি গভীর।

নারী খেলোয়াড়ের বয়স কমপক্ষে ১৭ ও সর্বনিম্ন ওজন ৪৯ কেজি হতে হবে। ৪৯ কেজির কম হলে বাকি ওজন যুক্ত করে অংশগ্রহণ করতে হয়। সবচেয়ে কম সময়ে যে জুটি নির্ধারিত দূরত্ব পাড়ি দিতে পারে তারাই বিজয়ী হিসেবে ঘোষিত হয়। এই বছরের ৬-৭ জুলাইয়ে ফিনল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হবে খেলাটির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ, আপনিও যদি অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে ঘুরে আসুন প্রতিযোগিতার এই অফিসিয়াল সাইট থেকে!

চেজ বক্সিং

বুদ্ধি ও শক্তি। চেজ বক্সিং খেলাটির মূল মন্ত্রই এটি। মূলত এটি কোনো স্বতন্ত্র খেলা নয়, বরং দাবা ও বক্সিং খেলার মিশ্রণে সংকর একটি খেলা। বিশ্ব চেজ বক্সিং সংস্থার মতে, বুদ্ধি ও শক্তিতে সেরা হওয়ার লড়াইয়ে চেজ বক্সিং একটি চূড়ান্ত চ্যালেঞ্জ। চেজ বক্সিং শুরু হয় দাবা দিয়ে, যেটি চলবে তিন মিনিট পর্যন্ত। দাবা খেলার জন্য প্রতিটি চেজবক্সারকে দেওয়া হয় মোট নয় মিনিট। দাবা খেলার মাঝেই আবার শুরু হয় বক্সিং, পাঁচ রাউন্ডের বক্সিং ম্যাচের সময়কাল নির্ধারিত থাকে তিনি মিনিট। দাবায় চেকমেট করে, বক্সিং খেলায় নক আউটের মাধ্যমে, দাবায় নয় মিনিটের বেশি সময় অতিক্রম করলে কিংবা বিচারকের রায়ে একজন প্রতিযোগী বিজয়ী হয়।

বুদ্ধি ও শক্তির খেলা চেজবক্সিং ম্যাচের একটি মুহূর্ত; Source: chessmateok.com

২০০৩ সালে জার্মানির বার্লিনে প্রথম চেজ বক্সিং ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯২ সালে প্রকাশিত এনকি বিলালের একটি গ্রাফিক উপন্যাস ‘ফ ইকুয়েতা’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ২০০৩ সালে চেজ বক্সিং খেলার প্রচলন করেন ডাচ বংশোদ্ভূত ইয়েপে রুবিংঘ এবং চেজ বক্সিং ইতিহাসের প্রথম বিজয়ীও ইয়েপে, সম্ভবত এটিই স্বাভাবিক।

পায়ের আঙ্গুলের রেসলিং

পায়ের আঙ্গুলের রেসলিং, নাম শুনেই কিছুটা হয়তো আন্দাজ করতে পারছেন কেমন হতে পারে এই খেলাটি। পুরো খেলাটি পাঞ্জা লড়াইয়ের মতো, কিন্তু শুধুমাত্র মূল মাধ্যম হলো পা। দুজন প্রতিযোগীর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি একে অপরের সাথে আটকে দেওয়া হয়, লড়াই চলতে থাকে একে অপরের পা ‘পিন ডাউন’ বা ভূমিতে স্পর্শ করানোর।

বৃদ্ধাঙ্গুলির যুদ্ধের ‘কিংবদন্তি’ অ্যালান নাস; Source: womenshealthmag.nl

প্রতিবছর ইংল্যান্ডের ডার্বিশায়ারে অনুষ্ঠিত হয় এই খেলাটির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। এই চ্যাম্পিয়নশিপে তিন রাউন্ডে খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়, তিন রাউন্ডে সেরা প্রতিযোগীই বিজয়ী হিসেবে ঘোষিত হয়। সত্তরের দশকে এই চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ১৪ বার এই চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে খেলাটির কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছেন অ্যালান ‘ন্যাস্টি’ নাস। গত বছরের প্রতিযোগিতায়ও শিরোপা জিতেছেন নাস এবং মেয়েদের বিভাগে গত বছরের চ্যাম্পিয়ন রেবেকা বিচ।

পানির নিচের হকি

আন্ডারওয়াটার হকি বা পানির নিচে হকি মূলত শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ নেভির হাত ধরে ১৯৫০ সালের দিকে। পানির নিচে ডাইভারদের কাজের দক্ষতা ও শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে খেলাটি শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে এটি জনপ্রিয় হতে থাকে এবং বর্তমানে প্রায় বিশটিরও বেশি দেশে খেলাটি প্রচলিত। খেলাটি ক্লাব, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি দুই বছর পর পর এপ্রিল বা মে মাসে খেলাটির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয়।

পানির নিচে হকি খেলা; Source: h-i.su

পানির নিচে হকি খেলা হয় ২৫×১৫ মিটার পুলে যার দৈর্ঘ্য ২-৪ মিটার। প্রতিটি দলে ১২ জন করে খেলোয়াড় থাকে যাদের মধ্যে ১০ জন অংশগ্রহণ করতে পারে। এই ১০ জনের মধ্যে ৬ জন পানিতে থাকে এবং বাকি ৪ জন বদলি খেলোয়াড় হিসেবে পুলের বাইরে অবস্থান করে, যারা যেকোনো সময় বদলি হিসেবে নামতে পারবে। প্রতি অর্ধ ১৫ মিনিট করে এবং বিরতি মাত্র ৩ মিনিটের। যে পাকটি দিয়ে খেলা হয়, সেটি সীসার উপরে প্লাস্টিকের আবরণ দিয়ে তৈরি। পাকটির ওজন ১.৫ কেজি।

সেপাক টাকরাও

সেপাক টাকরাও অনেকটা ভলিবলের মতো খেলা, কিন্তু এখানে হাত ব্যতীত শরীর অন্য যেকোনো অংশ ব্যবহার করা যাবে। মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে দারুণ জনপ্রিয় এই খেলাটি প্রায় ৫০০ বছর পূর্বে মালয়েশিয়ার রাজকীয় পরিবারে আবিষ্কৃত হয়েছিলো। মালয় ভাষায় সেপাক অর্থ লাথি এবং টাকরাও অর্থ বল।

দৃষ্টিনন্দন সেপাক টাকরাও; Source: flickr.com

বলতে গেলে এটি সাধারণ কোনো খেলা নয়, এটিতে শারীরিক কসরতের পাশাপাশি খানিকটা’ মার্শাল আর্টে’ পারদর্শী হতে পারলে ভালো হয়। খেলাটির কোর্টের আকার ও নেটের উচ্চতা ব্যাডমিন্টনের মতো। প্রতিটি দল মাত্র ৩ জন খেলোয়াড় নিয়ে গঠিত। নিজেদের অর্ধে প্রতিবারে একজন খেলোয়াড় মাত্র একবার বল স্পর্শ করতে পারবেন। এশিয়ান ও আন্তর্জাতিক সেপাক টাকরাও লিগের সদর দপ্তর থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অবস্থিত। আন্তর্জাতিক সংস্থাটির সদস্য বর্তমানে ১৮টি দেশ।

উটের রেসলিং

প্রায় ২,৪০০ বছর পুরনো এই খেলাটি শুরু হয়েছিলো তুর্কি আদিবাসীদের মধ্যে, যারা আজও খেলাটি চালিয়ে যাচ্ছে নিজেদের আদিপুরুষদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে। কিন্তু বর্তমানে এটি পরিণত হয়েছে বিশাল এক বাণিজ্যে। তুরস্কে প্রায় দুই হাজারেরও বেশি উট রয়েছে, যাদের বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয় এই খেলায় অংশগ্রহণ করানোর জন্য। প্রতি বছর সাধারণত খেলাটি অনুষ্ঠিত হয় উটের প্রজনন মৌসুমে। খেলাটিতে একটি নারী উটকে লড়াইয়ের স্থানে রাখা হয়, যার জন্য লড়াইয়ে নামে দুটি পুরুষ উট। উটকে বিরক্ত ও রাগান্বিত করে লড়াইয়ের জন্য প্ররোচিত করে মালিকরা। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার পূর্বে মাসের পর মাস  উটকে না খাইয়ে রাখা হয়, এমনকি লাঠি দিয়ে আঘাতও করা হয় যেন রেগে গিয়ে লড়াই শুরু করে।

এসব উটদের মাসের পর মাস অনাহারে রাখা হয় অনেক সময়; Source: npr.org

উটের রেসলিং খেলার বিভিন্ন নিয়ম কানুন রয়েছে এবং প্রতিযোগিতা ভাগ করা হয় উটের বয়স ও ওজন অনুসারে। সাধারণত একটি লড়াই প্রায় ৫ মিনিট স্থায়ী হয়, কিন্তু অনেক সময় লড়াই প্রচণ্ড বিপদজনক হয়ে ওঠে। কোনো উট ভয়াবহ আঘাত পেলে বা আহত হওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হলে অবশ্য লড়াই থামিয়ে দেয় রেফারি।

কুইডিচ

হ্যারি পটার বই ও মুভির ভক্ত যারা আছেন তারা এই খেলাটির সাথে অবশ্যই পরিচিত। দুই পায়ের মাঝে জাদুর ঝাড়ু নিয়ে উড়ন্ত অবস্থায় অনুষ্ঠিত খেলাটি হ্যারি পটারের জাদুর দুনিয়া থেকে ২০০৫ সালে পৃথিবীর মাটিতে নেমে আসে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্মন্টের মিডলবারি কলেজের কিছু শিক্ষার্থীর মাধ্যমে। বাস্তব পৃথিবীর মানুষ সারাক্ষণ পায়ের মাঝে ঝাড়ু বা লম্বা দন্ড নিয়ে খেলায় অংশগ্রহণ করে ঠিক হ্যারি পটার মুভির মতো করে, শুধুমাত্র উড়ন্ত অবস্থায় খেলার ব্যবস্থা ব্যতীত।

খেলাটিতে প্রতিটি দলে সাতজন খেলোয়াড় থাকে, যেখানে একজন সিকার, তিনজন চেজার, দুইজন বিটার এবং একজন কিপার থাকে। একটি স্নিচ, ভলিবলের মতো একটি কোয়াফল এবং তিনটি ব্লাজার নামের বল থাকে। খেলার নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি বলের ভিন্ন ভিন্ন গুরুত্ব ও পয়েন্ট রয়েছে।

হ্যারি পটারের জাদুর জগৎ থেকে উঠে আসা মর্ত্যের কুইডিচ; Source: bostonmagazine.com

২০০৮ সালে ১২টি দল নিয়ে কুইডিচের প্রথম বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয় যুক্তরাষ্ট্রে, যেখানে কানাডার একটি দলও অংশগ্রহণ করে। কুইডিচকে একটি নিয়মতান্ত্রিক ও গঠনমূলক খেলায় পরিণত করতে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক কুইডিচ সংস্থা। ইউএস কুইডিচ ও আন্তর্জাতিক কুইডিচ সংস্থাটির সাথে প্রায় ২০০টির মতো দল  এবং প্রায় ৪০০০ কুইডিচ খেলোয়াড় যুক্ত রয়েছে।

ফিচার ইমেজ- The dailydot

Related Articles