Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

পাকিস্তান ক্রিকেটের সমস্যাটা ঠিক কোথায়?

এবারের বিশ্বকাপ শুরুর আগে হতশ্রী ফর্মের কারণে পাকিস্তানকে নিয়ে নানা ধরনের আশঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত পাঁচ নম্বরে থেকে আসর শেষ করে একটা সম্মানজনক বিদায় পেয়েছিল তারা। এই ধরনের সম্মানজনক বিদায়ে একটা নেতিবাচক দিক আছে, নিজেদের ভুলত্রুটি ভুলে গিয়ে ক্রিকেট বোর্ড আর নতুন কোনো কিছু শুরু করার কথা ভাবে না। তবে পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সেরকমটা দেখা যাচ্ছে না, বিশ্বকাপের পরই ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ কিছু কাঠামোগত পরিবর্তন আনার ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির ক্রিকেট বোর্ড। মিসবাহ-উল-হককে কোচ ও প্রধান নির্বাচকের আসনে জায়গা দেওয়াটাও হয়তো নতুন কিছুরই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

প্রায় দুই দশক ধরে পাকিস্তানের ক্রিকেটে ধারাবাহিকতার যে অভাব পরিলক্ষিত হয়ে আসছিল, তা থেকে উত্তরণ পেতে এমন কিছু পরিবর্তনের দরকার ছিল। যদিও এই সময়ের মাঝে পাকিস্তান দুটি আইসিসি আয়োজিত টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছে, কিন্তু সার্বিকভাবে তাদের পারফরম্যান্স মোটেও সন্তোষজনক ছিল না। গত দুই দশকে পাকিস্তানের টেস্ট ও ওয়ানডে রেকর্ডের দিকে একটু নজর দিলেই ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। 

প্রতিভাবান সব খেলোয়াড় উঠে আসা সত্ত্বেও পাকিস্তানের পারফরম্যান্স ছক বড্ড অধারাবাহিক; Image Source: REUTERS

পাকিস্তানের টেস্ট রেকর্ড

শুরুর দিকে মোটামুটি সব দেশকেই কিছুটা কঠিন সময় পার করতে হয়, সেদিক থেকে ব্যতিক্রম পাকিস্তান। অবিভক্ত ভারতবর্ষের অধীনে থাকাকালীন রঞ্জি ট্রফিতে পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স বেশ ভালো ছিল। দেশভাগের ঠিক আগের মৌসুমে রঞ্জি ট্রফির সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন পাকিস্তানের গুল মোহাম্মদ, অন্যদিকে পাকিস্তানি বোলার আমির এলাহী ছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক। রঞ্জি ট্রফিতে খেলা এমন সব অসাধারণ খেলোয়াড়ের কল্যাণে পঞ্চাশের দশকে পাকিস্তানের পারফরম্যান্স ছক বেশ ঊর্ধ্বমুখী ছিল। 

এই শতাব্দীতে পাকিস্তানের পারফরম্যান্স ছক শুধু নিচের দিকেই গেছে; Image Source: espncricinfo.com

কিন্তু এরপর যখন নিজেদের ঘরোয়া লিগ থেকে খেলোয়াড় উঠে আসা শুরু করল, তখন থেকে পাকিস্তানের পারফরম্যান্সে বেশ বড় রকমের ভাটার টান চলে আসে। তবে আশির দশকের পর থেকে ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, সেলিম মালিক, জাভেদ মিঁয়াদাদের মতো প্রতিভাবান সব খেলোয়াড় পাওয়ায় টেস্ট ক্রিকেটে তাদের পারফরম্যান্স ছক আবারও ঊর্ধ্বমুখী হয়। কিন্তু শেষ দুই দশকে পাকিস্তান যেন শুধু পিছনের দিকেই হেঁটেছে, শেষ ২৩ বছরে পাকিস্তান ৭৫ জয়ের বিপরীতে হেরেছে ৭৫টি টেস্টে! অথচ ১৯৭৩-১৯৯৬ সালের হিসাব নিলে ৫২টি জয়ের বিপরীতে হার ছিল ৩৩টি! জয়-পরাজয়ের অনুপাতে এই বিশাল পার্থক্য পাকিস্তান ক্রিকেটের ক্রমাগত অবনতির রূপই তুলে ধরেছে।

পাকিস্তানের ওয়ানডে রেকর্ড

এই শতাব্দীতে ওয়ানডে ক্রিকেটে জয়-পরাজয়ের অনুপাত হিসাব করলে পাকিস্তানের অবস্থান চার নম্বরে, তাদের আগে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ভারত। শুধু এই তথ্য বিবেচনা করলে রেকর্ডটা বেশ সম্মানজনক বলেই মনে হবে। কিন্তু একটু ভিতরে গেলেই চোখে পড়বে বেশ কিছু ফাটল। 

বড় দলগুলোর বিপক্ষে পাকিস্তানের জয়-পরাজয়ের অনুপাত; Image Source: espncricinfo.com

এই তালিকায় পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে যথাক্রমে ইংল্যান্ড এবং নিউ জিল্যান্ড। এখন এই পাঁচটি দলকে এক ভাগে রেখে বাকি দলগুলোকে অন্য ভাগে রেখে যদি ম্যাচ জয়ের পরিসংখ্যান সাজানো হয়, তাহলে দেখা যাবে যে, নিচের সারির দলগুলোর বিপক্ষে পাওয়া জয়ই পাকিস্তানের এই চতুর্থ স্থানে থাকার মূল কারণ। ২০০১ সালের পর থেকে প্রতি বছরের আলাদা পরিসংখ্যানে যদি আমরা নজর দিই, তবে দেখতে পাওয়া যায়, প্রতি বছরেই এই শীর্ষ পাঁচ দলের বিপক্ষে পাকিস্তান যতগুলো ম্যাচ জিতেছে, তার চেয়ে ঢের বেশি ম্যাচ তারা হেরেছে। শেষ ১৭ বছরে বড় দলগুলোর বিপক্ষে এই পরিসংখ্যানই পাকিস্তান ক্রিকেটের দৈন্যদশার প্রমাণ দেয়।

তবে এখানে একটা কথা বলা প্রয়োজন, বড় দলগুলোর বিপক্ষে এমন হতশ্রী পারফরম্যান্স সত্ত্বেও এই শতাব্দীতে অনুষ্ঠিত আইসিসি টুর্নামেন্টগুলোতে পাকিস্তানের পারফরম্যান্স কিন্তু বেশ ভালো। ২০০৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত নয়টি আইসিসি টুর্নামেন্টে খেলে সেমিফাইনাল খেলেছে তিনবার, আর শিরোপা জিতেছে একবার (২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি)। নিচের ছকটা দেখলেই এই বিষয়টা পরিষ্কার হবে। 

সবাইকে অবাক করে দিয়ে বড় আসরগুলোতে ঠিকই জ্বলে ওঠে পাকিস্তান; Image Source: espncricinfo.com

২০০৯ সাল থেকে পাকিস্তান ছয়টি টুর্নামেন্টে খেলছে। এর মধ্যে পাঁচবারই তারা তাদের সেই সময়ের র‍্যাংকিংয়ের চেয়ে ভালো অবস্থানে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করেছে। সবসময় কোণঠাসা অবস্থায় থাকা দলটি হয়তো বড় কোনো আসর শুরুর আগে সামর্থ্যের প্রমাণ দেওয়ার জন্য নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দেওয়ার চেষ্টা করে, আর সেজন্যই হয়তো বড় আসরগুলোতে তারা তুলনামূলক ভালো পারফরম্যান্স উপহার দিতে পারে।

তবে কথা হচ্ছে, গত শতকে দারুণ ধারাবাহিক এই দলটি কেন এই শতাব্দীতে এসে ধারাবাহিকতার অভাবে ভুগছে? মূল সমস্যার জায়গা খুঁজতে গিয়ে সামনে চলে এসেছে বেশ কিছু কারণ।

বিশ্বমানের বোলার উঠে না আসা

নব্বইয়ের দশকে পাকিস্তানের পেস বোলিং লাইনআপ দেখলে যেকোনো দল ঈর্ষাণ্বিত হবে। ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, শোয়েব আখতার, আজহার মেহমুদ, আব্দুল রাজ্জাক – পাঁচজন অসাধারণ পেসার একই সময়ে খেলে গেছেন। সেই সময়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এতটাই বেশি ছিল যে, বেশ কিছু ম্যাচে ওয়াকারের মতো কালজয়ী বোলারকে বেঞ্চে বসতে হয়েছে!

কিন্তু এই ধারাটা আর বজায় থাকেনি। এই শতাব্দীতেও উমর গুল, মোহাম্মদ আসিফ, মোহাম্মদ আমির, মোহাম্মদ সামিরা অমিয় সম্ভাবনা নিয়ে এলেও সেই সম্ভাবনার কলি আর পরিপূর্ণ ফুল হয়ে পরিস্ফুটিত হয়নি।

কিন্তু এমনটা হওয়ার কারণ কী? নিচের ছকের দিকে লক্ষ্য করলে এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। 

শুরুটা দারুণ করলেও পরের দিকে খেই হারিয়ে ফেলছে পাকিস্তানের পেসাররা; Image Source: espncricinfo.com

ছকটি দেখলে একটা ব্যাপার স্পষ্ট, ২০০৩ সালের পর অভিষেক ঘটা পেসারদের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুটা ছিল দারুণ। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দীর্ঘমেয়াদে ভালো করার মূল শর্ত হচ্ছে সময়ের সাথে সাথে নিজেকে আরো ক্ষুরধার করে তোলা, আর এই জায়গাটাতেই পাকিস্তানের এখনকার পেসাররা মার খেয়ে যাচ্ছে। দারুণ শুরুর পরও এভাবে একের পর এক পেসারের হারিয়ে যাওয়ার পিছনে পিসিবির দায় অনেকখানি। বোর্ড যদি এসব বোলারদের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও নিয়মিত ফিটনেস ক্যাম্প আয়োজন করতো, তবে অবস্থার এতটা অবনতি হতো না।

আরেকটা বড় কারণ হচ্ছে, এসব তরুণ পেসারদের দিকে ওয়াসিম কিংবা ওয়াকারদের পরামর্শের হাত বাড়িয়ে না দেওয়া। নব্বইয়ের দশকে পাকিস্তানে এতগুলো দারুণ সব পেসার উঠে আসার অন্যতম মূল কারণ ছিল ইমরান খানের মতো একজন একজন অভিভাবক থাকা। সেই সময়ের সব পেসারদেরকে ইমরান নিজেই দিক নির্দেশনা দিয়ে তাদের বড় হওয়ার পথটা সুগম করে দিয়েছিলেন। তবে দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে, ওয়াসিম কিংবা ওয়াকার পরবর্তীতে সেই দায়িত্বটা পালন করতে পারেননি। ওয়াকার নিজে পাকিস্তান দলের কোচের দায়িত্ব পেয়েও ইমরানের মতো অভিভাবক হতে পারেননি। 

ব্যাটিং লাইনআপের দুর্বলতা

পেস বিভাগে তাও বিশ্বমানের কিছু খেলোয়াড় আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকেন, কিন্তু পাকিস্তানের ব্যাটিং বিভাগের অবস্থা তো ভয়াবহ নাজুক! সাঈদ আনোয়ার, ইনজামাম-উল-হক কিংবা মোহাম্মদ ইউসুফের মতো বিশ্বমানের সব ব্যাটসম্যান যে দলে ছিল, সেই দলে গত এক যুগে বলার মতো তেমন কোনো ব্যাটসম্যানই উঠে আসেনি। হালের এক বাবর আজম বাদে বিশ্বসেরা হওয়ার জন্য ন্যূনতম লড়ার করার মতো কোনো ব্যাটসম্যানও দলটিতে পাওয়া যায়নি। 

একই কথা পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের জন্যেও প্রযোজ্য; Image Source: espncricinfo.com

অথচ দারুণ সম্ভাবনা নিয়ে অনেক ব্যাটসম্যানই এই সময়ের মাঝে এসেছেন। সালমান বাট, আহমাদ শেহজাদ, উমর আকমল, ফখর জামানরা ঘরোয়া লিগে রানের ফোয়ারা ছুটিয়েই জাতীয় দলে এসেছিলেন। তাদের প্রত্যেকের শুরুটাও দারুণ ছিল। কিন্তু যখনই তাদের বিভিন্ন দুর্বলতা সবার সামনে দৃশ্যমান হয়েছে, তখনই তাদের পারফরম্যান্স আস্তে আস্তে ম্লান হতে শুরু করেছে। টেকনিকের এসব দুর্বলতা কাটাতে তাদের আবারও ঘরোয়া লিগে ফেরত পাঠানো হয়েছে, কিন্ত পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে পিচের এমনই বেহাল দশা যে, এই দুর্বল টেকনিক নিয়ে তারা ঠিকই রানের ফোয়ারা ছুটিয়েছে। ফলতঃ লাভের লাভ কিছুই হয়নি।

ঘরের মাঠ থেকে নির্বাসিত হওয়া

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবগুলো দলেরই ভালো করার অন্যতম মূল অস্ত্র স্বাগতিক হওয়ার সুবিধা। ক্রিকেটবিশ্বে মোটামুটি সব দলেরই ঘরের বাইরের তুলনায় ঘরের মাঠে রেকর্ড বেশ সমৃদ্ধ। কিন্তু ২০০৯ সালে লাহোরে সফরকারী শ্রীলঙ্কার উপর হওয়া সন্ত্রাসী হামলার জের ধরে পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অলিখিত নিষিদ্ধ হওয়ায় সেই চিরায়ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। দীর্ঘদিন ধরে ঘরের মাঠে ম্যাচ খেলতে না পারায় দেশটির ক্রিকেটেও একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

যদিও আরব আমিরাতকে নিজেদের হোমগ্রাউন্ড বানিয়ে অনেকদিন ধরেই খেলে যাচ্ছে দলটি, কিন্ত মরুর উদ্যানে দর্শকের সমাগমটা সেই অনুপাতে হয় না। ফলে পিসিবির লভ্যাংশের পরিমাণও আর আগের অনুপাতে হচ্ছে না। তাছাড়া নিজের দেশের দর্শকদের সামনে খেলতে না পারায় খেলোয়াড়দের মনের মাঝেও এক ধরনের অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে।

পিএসএলের সৌজন্যেই যা এমন কিছু দৃশ্য দেখা যায় পাকিস্তানে; Image Credit: PCB

 

আরো ছোটখাটো কিছু কারণ থাকলেও মূলত এই তিনটি কারণই পাকিস্তান ক্রিকেটের পিছনে দিকে হাঁটার মূল কারণ। সম্প্রতি কোচ এবং প্রধান নির্বাচক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া মিসবাহ-উল হক যদি সত্যিই পাকিস্তানের ক্রিকেটের এই দুর্দশা ঘোচাতে চান, তবে সবার আগে এই তিনটি বিষয়ের দিকে নজর দিতে হবে। বিশেষ করে ঘরোয়া লিগের উন্নতির ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতেই হবে। একদম প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরোয়া ক্রিকেটের পিচ থেকে শুরু করে সব কিছুর দিকে বাড়তি নজর দেওয়ার সাথে সাথে উঠতি খেলোয়াড়দের উন্নতির দিকে যদি আলাদা নজর দেওয়া হয়, তবেই হয়তো পাকিস্তানের ক্রিকেটে আবারও সেই নব্বইয়ের স্বর্ণযুগ ফিরে আসতে পারে।

This article is in Bangla language. It's an analysis about all of the downfall of Pakistan Cricket team, and how to get over it. It is based on an article, previously published in espncricinfo. For references, please check the hyperlinks inside the article.

Featured Image: Associated Press

Related Articles