Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বাবা-ছেলের বিশ্বকাপ

বিশ্বকাপে একই পরিবারের অনেককেই দেখা গেছে। দুই ভাই খেলেছেন। এমনকি ভিন্ন ভিন্ন দলের হয়েও দুই ভাই পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছেন। আবার এই বিশ্বকাপেই বাবার পর ছেলে খেলেছেন।

বিশ্বকাপে বাবা ও ছেলের পদচারণা কম নয়। এমন সব খ্যাতনামা বাবা ও ছেলেকে নিয়ে এই আয়োজন

হ্যাভিয়ের হার্নান্দেজ জুনিয়র ও সিনিয়র; সোর্স: স্পোর্টস ক্রীড়া

হ্যাভিয়ের হার্নান্দেজ গুতিয়েরেজ

ও হ্যাভিয়ের হার্নান্দেজ

(মেক্সিকো)

তাদের নামেই পরিচয়। বাবা-ছেলে দুজনেরই নাম হ্যাভিয়ের হার্নান্দেজ। আর ডাকনামে বোঝা যায়, কে কার ছেলে। সিনিয়র হার্নান্দেজের ডাক নাম চিচারো এবং জুনিয়র হার্নান্দেজের ডাক নাম চিচারিতো, মানে চিচারোর ছেলে।

চিচারো ছিলেন মিডফিল্ডার। ইউরোপের কোনো ক্লাবে কখনো খেলা না হলেও নিজের দেশের সেরা ফুটবলারদের একজন ছিলেন। জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন ২৮টি ম্যাচ। এর মধ্যে ১৯৮৬ বিশ্বকাপে খেলেছেন হ্যাভিয়ের হার্নান্দেজ সিনিয়র। ছিলেন ১৯৯০ বিশ্বকাপের দলেও। কিন্তু এই বিশ্বকাপে মেক্সিকোকে নিষিদ্ধ করে ফিফা। কারণ, তারা অনুর্ধ্ব-২০ দলে বেশি বয়সী খেলোয়াড় খেলিয়েছে।

বাবার দ্বিতীয় বিশ্বকাপ খেলা না হলেও সেই আফসোস দূর করেছেন ছেলে। একে একে তিনটি বিশ্বকাপ খেলে ফেললেন এবারেরটি নিয়ে। বাবার চেয়ে ছেলের ক্যারিয়ার অনেক সমৃদ্ধ। ইউরোপে রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো দলের হয়েও খেলেছেন।

দুই স্মাইকেল; সোর্স: জাপ স্পোর্টস

পিটার স্মাইকেল

ও ক্যাসপার স্মাইকেল

(ডেনমার্ক)

ক্যাসপার স্মাইকেল হলেন বিখ্যাত বাবার সন্তান। বাবা পিটার স্মাইকেল তার সময়ের বিশ্বসেরা গোলরক্ষকদের একজন ছিলেন। ১৯৯২ ও ১৯৯৩ সালে বিশ্বের সেরা গোলরক্ষক নির্বাচিত হয়েছিলেন পিটার। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের একজন কিংবদন্তী মনে করা যায় তাকে। দলটির সাথে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন, জিতেছেন ট্রেবলও; পাঁচটি লিগ শিরোপা জিতেছেন। ক্যারিয়ার শেষ করেছেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল ম্যানচেস্টার সিটিতে।

ডেনমার্কের হয়ে ১২৯টি ম্যাচ খেলেছেন পিটার। এর মধ্যে ১৯৯২ সালে ইউরো জিতেছেন জাতীয় দলের সাথে। খেলেছেন ১৯৯৮ বিশ্বকাপ।

ছেলে ক্যাসপার এখনও অতটা বিখ্যাত হয়ে ওঠেননি। যদিও ম্যানচেস্টার সিটিতে ক্যারিয়ার শুরু করেছেন। বিভিন্ন জায়গায় ধারে খেলার পর এখন লিস্টার সিটিতে খেলছেন। জাতীয় দলের হয়ে ৩৮টি ম্যাচ খেলেছেন। আছেন এবারের বিশ্বকাপে।

মাজিনো ও থিয়াগো; সোর্স: স্পোর্টস ক্রীড়া

মাজিনো (ব্রাজিল)

থিয়াগো আলকান্তারা (স্পেন)

মাজিনোকে নাম শুনে অনেকে হয়তো মনে করতে পারবেন না। তবে একটা ছবি নিশ্চয়ই মনে আছে। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে বাচ্চা কোলে দোলানোর ভঙ্গিতে একটা গোল উদযাপন করেছিলো ব্রাজিল। সেই ছবির তিনজন হলেন বেবেতো, রোমারিও এবং এই মাজিনো।

মাজিনোর পুরো নাম ইয়োমার দো নাসিমেন্তো। ব্রাজিলের হয়ে ৩৫টি ম্যাচ খেলেছেন। খুব বড় করে বলার মতো ক্যারিয়ার নয়। তবে এর মধ্যে ১৯৯৪ বিশ্বকাপটা খেলে ফেলায় একটা রেকর্ড হয়ে গেছে।

২০১৮ সালে এসে তারই ছিলে থিয়াগো আলকান্তারাও খেললেন বিশ্বকাপ। কিন্তু গোলটা লাগলো অন্য জায়গায়। আলকান্তারা বাবার দেশ নয়, বেছে নিলেন নতুন দেশ স্পেনকে। আলকান্তারা একজন বহুজাতিক মানুষ। তার বাবা-মা ব্রাজিলিয়ান। কিন্তু জন্ম হয়েছে ইতালিতে। বড় হয়ে উঠেছেন স্পেনের বার্সেলোনায়। বার্সেলোনার হয়েই নিজেকে চিনিয়েছেন। এখন খেলছেন বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে। আর জাতীয় দলের হয়ে খেলে ফেলেছেন ৩১ ম্যাচ।

দুই ফোরলান; সোর্স: আলচেতরন

পাবলো ফোরলান ও

দিয়েগো ফোরলান

(উরুগুয়ে)

কমপক্ষে দুটি করে বিশ্বকাপ খেলা একমাত্র বাবা ছেলে জুটি এই পাবলো ও দিয়েগো ফোরলান।

বাবা পাবলো ফোরলান সে সময় উরুগুয়ের অন্যতম সেরা ফুটবলার ছিলেন। এই ডিফেন্ডার উরুগুয়ের হয়ে খেলেছেন ১৯৬৬ ও ১৯৭৪ বিশ্বকাপ। ক্লাব ক্যারিয়ারে সারাটা জীবন লাতিন আমেরিকাতেই কাটিয়েছেন।

বাবার তুলনায় ছেলে দিয়েগো ফোরলানের ক্যারিয়ার অনেক বর্ণময়। আর্জেন্টিনা থেকে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। এরপর ইউরোপে পা রেখেছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে খেলা অবস্থায়ই মূলত বৈশ্বিক তারকা হয়ে ওঠেন। উরুগুয়ে জাতীয় দলের হয়ে ১১২ ম্যাচে ৩৬ গোল করেছেন। উরুগুয়ের হয়ে তিনটি বিশ্বকাপে খেলেছেন এই সেটপিস বিশেষজ্ঞ- ২০০২, ২০১০ ও ২০১৪।

মিগুয়েল ও জাবি; সোর্স: স্পোর্টস ক্রীড়া

মিগুয়েল অ্যাঞ্জেল অলোনসো

জাবি অলোনসো

(স্পেন)

বাবা-ছেলের সবচেয়ে বড় অমিল হলো, বাবা মিগুয়েল অ্যাঞ্জেল অলোনসো ছিলেন বার্সেলোনায়। আর ছেলে জাবি হয়ে উঠেছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের প্রতীক!

নিজের সময়ে মিগুয়েল স্পেনের যথেষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার ছিলেন। খেলেছেন বেশিরভাগ সময় রিয়াল সোসিয়েদাদের হয়ে। এছাড়া তিন বছর বার্সেলোনাতেও খেলেছেন। জাতীয় দলের হয়ে ২০টি ম্যাচ খেলেছেন। এর মধ্যে ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপও খেলে ফেলেন তিনি। খেলা ছেড়ে কোচিং করাচ্ছেন অনেকদিন হলো।

ছেলে জাবি খেলোয়াড়ি জীবন শুরু করেন বাবারই ক্লাব সোসিয়েদাদে। এরপর লিভারপুল, রিয়াল মাদ্রিদ ও বায়ার্ন মিউনিখে ক্যারিয়ারের উজ্জ্বল সময়টা কাটিয়েছেন। স্পেনের হয়ে ১১৪টি ম্যাচ খেলেছেন। এর মধ্যে ২টি ইউরো ও একটি বিশ্বকাপ জিতেছেন। জাতীয় দলের হয়ে বাবার দেখানো পথে বিশ্বকাপ খেলেছেন। তবে তিনটি- ২০০৬, ২০১০ ও ২০১৪।

পিতা-পুত্র ব্লাইন্ড; সোর্স: স্পোর্টস ক্রীড়া

ড্যানি ব্লাইন্ড ও

ডেলে ব্লাইন্ড

(নেদারল্যান্ডস)

বাবা ড্যানি ব্লাইন্ড ছিলেন আয়াক্সের লিজেন্ড। আয়াক্সের সাথে চ্যাম্পিয়নস লিগও জিতেছেন। জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন ঠিক এক দশক; ৪২টি ম্যাচ খেলেছেন এই সময়ে। অবসরের পর আয়াক্স এবং নেদারল্যান্ডস জাতীয় দলের কোচিং করিয়েছেন।

ছেলে ডেলে ব্লাইন্ড বাবার হাত ধরেই ফুটবলে এসেছেন। বাবার ক্লাব আয়াক্সেই খেলার শুরু। এরপর গেছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। বাবা ড্যানি যখন নেদারল্যান্ডসের কোচ, তখনই তার জাতীয় দলে অভিষেক।

ড্যানি ১৯৯০ ও ১৯৯৪ বিশ্বকাপ খেলেছেন জাতীয় দলের হয়ে। আর ডেলে ব্লাইন্ড খেলেছেন ২০১৪ বিশ্বকাপ।

মিগুয়েল ও পেপে; সোর্স: ইএসপিএন

মিগুয়েল রেইনা ও

পেপে রেইনা

(স্পেন)

বাবা-ছেলে দুজনেই স্পেনের গোলরক্ষক। তবে কেউই সেই অর্থে দলের প্রথম ভরসা হয়ে উঠতে পারেননি। দুর্ভাগ্য দুজনকেই সমানে তাড়া করেছে। সবসময় বেঞ্চ গরম করতে হয়েছে জাতীয় দলে।

বাবা মিগুয়েল রেইনা করডোবা থেকে শুরু করেছিলেন। এরপর বার্সেলোনা ও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে কেটেছে ক্যারিয়ারের সিংহভাগ সময়। ৭ বছর জাতীয় দলে খেলে মাত্র ৫টি ম্যাচে মাঠে নামার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। এর মধ্যে ১৯৬৬ বিশ্বকাপের স্কোয়াডে ছিলেন। কিন্তু ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি।

ছেলে পেপে রেইনা বার্সেলোনার সৃষ্টি। বার্সেলোনার সি ও বি দলে খেলার পর মূল দলেও খেলেছেন। ক্যারিয়ারের সোনালী সময়টা খেলেছেন লিভারপুলে। কিন্তু ইকার ক্যাসিয়াসদের দাপটে স্পেন দলের প্রথম একাদশে খুব একটা জায়গা হয়নি। ২০০৫ থেকে এই অবধি মাত্র ৩৬টি ম্যাচে গোলপোস্টের নিচে দাঁড়াতে পেরেছেন পেপে রেইনা। তবে এবারের বিশ্বকাপে এসেছেন নিজের চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলতে। যদিও মাঠে নামা হয়নি তারও।

দুই মালদিনি; সোর্স: স্পোর্টস ক্রীড়া

সিজার মালদিনি ও

পাওলো মালদিনি

(ইতালি)

সবচেয়ে বিখ্যাত বাবা-ছেলে জুটি। একসাথে বাবা কোচ, ছেলে অধিনায়ক; এমন লম্বা একটা সময় দেখেছে ইতালি জাতীয় দল।

বাবা-ছেলে দুই মালদিনিই মূলত এসি মিলানের কিংবদন্তী। সিজার মিলানের হয়ে খেলেছেন ৩৪৭ ম্যাচ। জাতীয় দলের হয়েও ১৪টি ম্যাচ খেলেছেন। এর মধ্যে ১৯৬২ সালের বিশ্বকাপও খেলেছেন তিনি। অবসরের পর এসি মিলান থেকে শুরু করে ইতালি জাতীয় দলে কোচিং করিয়েছেন।

বাবার হাত ধরেই ফুটবলে আসা পাওলো মালদিনি হয়ে উঠেছিলেন ইতালি ও এসি মিলানের প্রতীক। সর্বকালের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার মিলানের হয়ে ৬৪৭টি ম্যাচ খেলেছেন। ইতালিতে খেলেছেন ১২৬টি ম্যাচ।

পাওলো মালদিনি চারটি বিশ্বকাপ খেলেছেন। ১৯৯০, ১৯৯৪, ১৯৯৮ ও ২০০২ বিশ্বকাপে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি।

পিতা-পূত্র জোরকায়েফ; সোর্স: সকার নস্টালজিয়া

জাঁ জোরকায়েফ ও

ইউরি জোরকায়েফ

(ফ্রান্স)

বাবা জাঁ জোরকায়েফ লিও থেকে শুরু করেছিলেন। এরপর পিএসজিতেও খেলেছেন। জাতীয় দলের হয়ে ৪৮টি ম্যাচ খেলেছেন। এর মধ্যে ১৯৬৬ বিশ্বকাপে ফ্রান্স দলের সদস্য ছিলেন।

ছেলে ইউরি মোনাকো, পিএসজি, ইন্টার মিলানের হয়ে খেলেছেন। জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন ৮২টি ম্যাচ। ইউরি দুটি বিশ্বকাপ ও দুটি ইউরো খেলেছেন। এর মধ্যে ১৯৯৮ বিশ্বকাপ ও ২০০০ ইউরো জয়ী দলের সদস্য ছিলেন তিনি। এছাড়া ২০০২ বিশ্বকাপেও খেলেছেন ইউরি।

প্যাট্রিক অ্যান্ডারসন; সোর্স: স্পোর্টস লামুডা

রয় অ্যান্ডারসন ও

প্যাট্রিক অ্যান্ডারসন

(সুইডেন)

অ্যান্ডসরনদের পরিবারের তালিকাটা আরেকটু বড় হতে পারতো। রয়ের দুই ছেলে প্যাট্রিক ও ড্যানিয়েল জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন। প্যাট্রিক একটা বিশ্বকাপ খেললেও ড্যানিয়েল অল্পের জন্য মিস করেছেন।

ডিফেন্ডার রয় অ্যান্ডারসন সুইডেনের হয়ে ২০টি ম্যাচ খেলেছেন। এর মধ্যে ১৯৭৮ বিশ্বকাপে ৩টি ম্যাচে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। সেই তুলনায় প্যাট্রিকের ক্যারিয়ার অনেক সমৃদ্ধ। প্যাট্রিক বায়ার্ন মিউনিখ ও বার্সেলোনায় খেলেছেন একসময়। জাতীয় দলের হয়ে ৯৬টি ম্যাচ খেলেছেন। এর মধ্যে ১৯৯৪ ও ২০০২ বিশ্বকাপ খেলেছেন।

প্যাট্রিকের আরেক ভাই ড্যানিয়েল দুটি ইউরো খেলেছেন। কিন্তু বিশ্বকাপ খেলা হয়নি।

Related Articles