Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বকাপে রাজনীতির সোরগোল

সুইজারল্যান্ডের দুই ফুটবলার জাকা ও শাকিরি এবার বিশ্বকাপের মঞ্চে নিয়ে এসেছেন রাজনীতিকে। সার্বিয়ার গণহত্যার পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ শিকার এই দুই ফুটবলারের পরিবার। সেই সার্বিয়ার বিপক্ষেই সুইজারল্যান্ডের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন দেশ বদলে এখন সুইজারল্যান্ডের নাগরিক হয়ে যাওয়া এই দুই সাবেক কসভোর বাসিন্দা।

ফলে দুজনই গোল করে আলবেনিয়ান ঈগল তৈরি করে উদযাপন করেছিলেন। সেই প্রতীক সার্বিয়াকে রাজনৈতিকভাবে তাতিয়ে দিয়েছিলো।

এবারের বিশ্বকাপে রাজনীতির প্রবেশ শুধু এটুকুই নয়। শুরু থেকে রাশিয়ায় বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে রাজনীতি। তুরষ্ক ও মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে ইউরোপ ও আমেরিকার সাথে রাশিয়ার তুমুল টানাপোড়েন চলছে। এই সময়ে বিশ্বকাপটাকেই দেখা হচ্ছে এক রাজনৈতিক বিতর্কের আয়োজন হিসেবে। এর আগে এই আয়োজন স্বত্ত্ব পাওয়া নিয়ে ফিফার দুর্নীতির অভিযোগও কম রাজনীতির জন্ম দেয়নি।

সবকিছু মিলিয়ে বিশ্বকাপে রাজনীতির প্রভাব চরমে। এই সময়ে ফিরে দেখা যাক ইতিহাসের রাজনৈতিকভাবে উত্তপ্ত চারটি বিশ্বকাপ ম্যাচ।

ইতালির সেই ফ্যাসিস্ট স্যালুট; সোর্স: ডিপিএ

ইতালি-ফ্রান্স; ১৯৩৮

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর ঠিক এক বছর আগের ঘটনা। ১৯৩৮ সালে ফিফা বিশ্বকাপের আসর বসেছিলো ফ্রান্সে। কোয়ার্টার ফাইনালে স্বাগতিক ফ্রান্সের সাথেই দেখা হলো ইতালির।

ইতালি তখন বেনিতো মুসোলিনি নামে এক স্বৈরশাসকের শাসিত দেশ। ইতালিয়ান ফুটবল দল সারা পৃথিবীতে পরিচিত তাদের নীল জার্সির জন্য। কিন্তু সেই ম্যাচে ইতালি খেলতে নামলো কালো জার্সি পরে। আর ম্যাচ শুরুর আগে সব খেলোয়াড় মাথার ওপর এক হাত উচু করে ‘ফ্যাসিস্ট স্যালুট’ দিলো। সারা দুনিয়া এই ঘটনায় তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলো। বলা হয়ে থাকে, এই ম্যাচ শুরুর আগে মুসোলিনি খেলোয়াড়দের বার্তা পাঠিয়েছিলেন, জেতো, নয়তো মরো (উইন অর ডাই)।

খেলোয়াড়দের ভাগ্য ভালো, শেষ অবধি এই ম্যাচে ফ্রান্সের বিপক্ষে জিতেই মাঠ ছাড়তে পেরেছিলো ইতালি। অবশ্য ইতালি শেষ অবধি ফাইনালে হাঙ্গেরিকে হারিয়ে টুর্নামেন্টই জিতে ফিরেছিলো। ইতালির এই জয়ের পর থেকে ১৯৫০ সাল অবধি আর বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়নি। সারা দুনিয়া তখন জড়িয়ে পড়েছিলো ভয়ঙ্কর এক যুদ্ধে। যে যুদ্ধের নৃশংসতার ইঙ্গিত দিয়েছিলো ইতালি ও ফ্রান্সের সেই ম্যাচ।

ম্যাচের আগে দুই জার্মান অধিনায়ক; ছবি: ইউরো স্পোর্টস

পূর্ব জার্মানি-পশ্চিম জার্মানি; ১৯৭৪

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি হয়ে গেলো এক বিভক্ত রাষ্ট্র। তারা পূর্ব ও পশ্চিমে দুই ধরনের শাসন ব্যবস্থায় দুই রাষ্ট্রে পরিণত হলো। ১৯৮৯ সালে ভেঙে ফেলার আগ অবধি বার্লিন প্রাচীর হয়ে ছিলো এই দুই জার্মানির বিভক্তির প্রতীক।

১৯৭৪ বিশ্বকাপ আয়োজিত হয়েছিলো পশ্চিম জার্মানিতে। পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানি এই বিশ্বকাপে মুখোমুখি হলো গ্রুপপর্বে। এটা ছিলো ফিফার জন্য দারুণ এক পরীক্ষা। দুই জার্মানির মধ্যে তখন সবকিছু নিয়ে টানাপোড়েন। স্নায়ুযুদ্ধের প্রাক্কালে প্রবল দ্বন্দ্ব তখন এই দুই দলের মধ্যে। এই অবস্থায় দুই জার্মানি যখন মুখোমুখি, তখন একটা দাঙ্গা বেধে যাওয়ার আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছিলো।

শেষ অবধি সুখবর হলো, কোনো রকম সহিংসতা ছাড়াই এই ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। তবে মাঠের খেলায় ঘটেছিলো অঘটন। দুই জার্মানির খেলায় অবশ্যই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পশ্চিম জার্মানি ফেভারিট ছিলো। কিন্তু বিস্ময়করভাবে পূর্ব জার্মানি এই দ্বৈরথ জিতে যায় ১-০ গোলে।

অবশ্য শেষ অবধি পশ্চিম জার্মানি এই টুর্নামেন্ট জিতে নেয়। পশ্চিম জার্মানির ফুটবল আধিপত্য আরও দীর্ঘদিন চলতে থাকে। ১৯৯০ সালে তারা আবার চ্যাম্পিয়ন হয়। এর কিছুদিন পরই দুই জার্মানি একীভূত হয়। পরে জার্মানি নামে সম্মিলিত দলটি আবার শিরোপা জিতেছে গত আসরেও। এবারও তারা অন্যতম ফেভারিট হিসেবে এসেছিল রাশিয়াতে।

হ্যান্ড অব গড গোল; সোর্স: ইএসপিএন

আর্জেন্টিনা-ইংল্যান্ড; ১৯৮৬

১৯৮২ সালে ফকল্যান্ড দ্বীপ নিয়ে আর্জেন্টিনা ও ইংল্যান্ডের মধ্যে শুরু হয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। সে বছর ২ এপ্রিল আর্জেন্টিনা এই দ্বীপের দখল নিয়ে নেয়। এই দ্বীপটি তার আগে অবধি ছিলো ব্রিটিশ উপনিবেশ। অন্যদিকে আর্জেন্টিনা একে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে আসছিলো। ফকল্যান্ড যুদ্ধে ৬৫০ জন আর্জেন্টাইন ও ২৫৫ জন ব্রিটিশ সৈন্যের প্রাণ যায়। এছাড়া নিহত হন ফকল্যান্ডের স্থানীয় অনেক বাসিন্দা।

এই যুদ্ধের চার বছরের মাথায়, ১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয় এই দুই দল। ম্যাচের আগে থেকেই দুই দেশে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। যার যার পক্ষে রাজনৈতিক আলাপ ও খোঁচাখুচি তুঙ্গে পৌঁছায়। মাঠেও এই অস্থিরতার প্রভাব পড়ে। প্রথমার্ধ্ব জুড়ে দুই দলের খেলোয়াড়রা পরস্পরকে আক্রমণ এবং মৌখিকভাবে গালিগালাজ করতে থাকেন।

এই ম্যাচটি ইতিহাসে বেশি স্মরণীয় হয়ে আছে ম্যারাডোনার ঐতিহাসিক দুই গোলের কারণে। খেলার ৫১ মিনিটে ম্যারাডোনা লাফ দিয়ে উঠে এক গোল করেন। পরে যেটা দেখা যায়, তিনি গোলটা করেছেন হাত দিয়ে। পরবর্তীকালে ম্যারাডোনা নিজে এই গোলের কারণকে ‘ঈশ্বরের হাত’ বলে অভিহিত করেন। ওই গোলটি তাই হ্যান্ড অব গড নামেই পরিচিত হয়ে আছে। ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের প্রবল আপত্তির মুখেও ওই গোল টিকে যায়।

এর ৪ মিনিট পরই আরেকটি গোল করেন ম্যারাডোনা, যেটি আবার ফুটবল ইতিহাসে ‘সর্বকালের সেরা গোল’ বলে পরিচিত হয়ে আছে। নিজেদের অর্ধে বল পেয়ে একে একে ৬ জন ডিফেন্ডারকে পাশ কাটিয়ে প্রচন্ড গতির এক দৌড়ে প্রতিপক্ষের ডি বক্সে ঢুকে গোলটা করেন ম্যারাডোনা। গেটাফের বিপক্ষে বার্সেলোনার লিওনেল মেসি একইরকম একটি গোল করার আগ অবধি ম্যারাডোনার এই গোলটিকে ফুটবল ইতিহাসের অবিসংবাদিত সেরা মনে করা হতো।

এই দুই ঐতিহাসিক গোলের ফলে গ্যারি লিনেকারের শেষ মুহুর্তের গোলের পরও জয় পায় আর্জেন্টিনা। শেষ অবধি আর্জেন্টিনা এই টুর্নামেন্ট জিতেই বাড়ি ফেরে।

যুদ্ধং দেহে ম্যাচ শুরুর আগে দুই দল; সোর্স: ফোর ফোর টু

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান; ১৯৯৮

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে রাজনৈতিক খারাপ সম্পর্কের ইতিহাস ৫০ বছরেরও বেশি প্রাচীন। যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত ইরানের শাহ মোহাম্মদ রেজ পাহলভিকে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরিয়ে দেওয়া থেকে এই শীতলতার শুরু হয়। ১৯৭৯ সালের এই ইরান বিপ্লবের সাথে সাথে শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে এক জিম্মি সংকট, যা ৪৪৪ দিন ধরে চলেছিলো। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮১ সাল অবধি এই সংকট ছিলো।

এরপরও দুই দেশের সম্পর্ক আর কখনো ঠিক হয়নি। ফলে ১৯৯৮ বিশ্বকাপে এই দুই দল যখন একই গ্রুপে পড়লো, তখনই পন্ডিতেরা মনে করেছিলেন, একটা অগ্নিগর্ভ ম্যাচ হতে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট অ্যালান রোদেনবার্গ বলেছিলেন, এটা ‘মাদার অব অল গেমস’ হতে যাচ্ছে।

তর্কসাপেক্ষে এটা হয়ে ওঠে বিশ্বকাপ ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনাময় ম্যাচ। ম্যাচ জুড়ে দুই দল চরম অশোভন আচরণ থেকে শুরু করে সবকিছুই করেছে। শেষ অবধি অবশ্য ইরানের জয় দিয়ে শেষ হয় এই ম্যাচ।

এই ম্যাচ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পরবর্তীকালে যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্ডার জেফ অ্যাগোস বলেছিলেন, ‘রাজনীতিবিদরা ২০ বছর ধরে যা করেছেন, আমরা ৯০ মিনিটে তা-ই করে ফেলেছি।

অন্যরকম কথা

সবসময় খেলাধুলা যে এমন রাজনৈতিক অস্থিরতাই তৈরী করে, তা নয়। উল্টো ফুটবল বা অলিম্পিক রাজনৈতিক শান্তি বয়ে এনেছে, এমন উদাহরণও আছে। সর্বশেষ অলিম্পিকে বিবাদমান দুই কোরিয়া এক পতাকার নিচে উদ্বোধনী দিনে মার্চপাস্ট করেছিলো। সেটা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছিলো এক শান্তির বার্তা।

Featured image: Getty images 

Related Articles