Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

এবারের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সেরা দশ মুহূর্ত

আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের উদ্বোধনী আসর প্রায় শেষের পথে। ১৮ জুন আসরের ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে ভারত ও নিউ জিল্যান্ড। চলমান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে বিশ্ব দেখেছে স্মরণকালের অন্যতম সেরা দুই টেস্ট সিরিজ – ২০১৯ অ্যাশেজ ও ২০২০-২১ বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি। এছাড়াও আরও অনেকগুলো স্মরণীয় মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছে আসরটি। 

চলুন, দেখে নেয়া যাক আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ২০১৯-২১ আসরের নির্বাচিত সেরা দশ মুহূর্ত। এশিয়ায় জো রুটের অতিমানবীয় পারফরম্যান্স, অভিষেকে প্রবীণ জয়াবিক্রমা, কাইল জেমিসনের অবিশ্বাস্য শুরু – এমন অনেকগুলো ব্যাপারই উঠে আসতে পারতো আরো। দারুণ ঘটনাবহুল এই আসর যে টেস্ট ক্রিকেটের ‘সঞ্জীবনী সুধা’ হয়ে কাজ করেছে, সেটা তো বলাই বাহুল্য! 

স্টিভেন স্মিথের রাজকীয় প্রত্যাবর্তন 

ফেরার ম্যাচেই এজবাস্টনে হাসলো স্মিথের ব্যাট; Image Source: Rui Vieira/Associated Press

২০১৮ মার্চে কেপটাউন টেস্টে কুখ্যাত ‘স্যান্ডপেপার কেলেঙ্কারি’র জন্ম দেয় অস্ট্রেলিয়া, যার নেপথ্যে ছিলেন অজি অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ, সহ-অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ও উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ক্যামেরন ব্যানক্রফট। অধিনায়ক হিসেবে দায়টা বেশি বর্তেছিল স্মিথের ঘাড়েই। এক বছর নিষিদ্ধ হবার পর অনুশোচনায় দগ্ধ স্মিথ কান্নাজড়িত কন্ঠে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি।

তাই পরের বছর মর্যাদার লড়াই অ্যাশেজে যখন ফিরলেন, তখন নিজেকে পুনরায় প্রমাণ করার তাগিদ ছিল স্মিথের মধ্যে। তাই তো ফেরার ইনিংসেই করলেন বাজিমাত, এজবাস্টনে খেললেন ১৪৪ রানের স্মরণীয় ইনিংস। ধারাভাষ্যকক্ষ থেকে ধ্বনিত নাসের হুসেইনের বিখ্যাত লাইন:

“Redemption is well and truly complete for Steven Smith.”

স্মিথের শতকে ভর করে ২০০১ সালের পর প্রথমবার এজবাস্টনে ইংল্যান্ডকে ধরাশায়ী করে অস্ট্রেলিয়া। চোটের কারণে তৃতীয় টেস্টটা খেলতে না পারলেও সফরে খেলা সাত ইনিংসে একটি দ্বিশতকসহ তিন শতক ও তিন অর্ধশতকের সাহায্যে ১১০.৫৭ গড়ে তার সংগ্রহ ছিল ৭৭৪ রান। একবিংশ শতাব্দীতে অনুষ্ঠিত কোনো টেস্ট সিরিজে ৭০০ রানের বেশি করার মাত্র ষষ্ঠ নজির ছিল এটি। স্মিথের খেলা চার টেস্টে অজিদের করা মোট রানের ৩৫.৫ শতাংশই এসেছিল স্মিথের ব্যাট থেকে।

মার্নাস ল্যাবুশেনের উত্থান 

কনকাশন-বদলি মার্নাস লাবুশেন; Image Source: Getty Images

২০১৯ অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্টে গতিতারকা জোফরা আর্চারের বাউন্সার স্টিভেন স্মিথের হেলমেটে আঘাত করলে ভাগ্য খুলে যায় দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মার্নাস ল্যাবুশেনের, আফ্রিকান ভাষায় যার নামের উচ্চারণ দাঁড়ায় ‘মার্নাস লাবুস্কাখনি’র কাছাকাছি। স্যান্ডপেপার কেলেঙ্কারির কারণে স্মিথ ও ওয়ার্নার যখন নির্বাসনে, তখন টপ অর্ডারের হাল ধরতে ডাক পড়ে ল্যাবুশেনের। ত্রিশের ঘরে প্রথম শ্রেণির গড় নিয়ে তিনি ছিলেন রীতিমতো ‘সারপ্রাইজ পিক’। স্মিথ নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরার পর তাই স্বাভাবিকভাবেই জায়গাটা ছেড়ে দিতে হয়েছিল।

তবে যেদিন পুরো ক্রিকেটবিশ্বের নজর কাড়লেন, তার একদিন আগেও কল্পনা করেননি এমন কিছু হতে পারে। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের প্রথম কনকাশন-বদলি হিসেবে ল্যাবুশেন ব্যাটিংয়ে নামলেন সেই স্মিথের জায়গায়ই। ১০০ বলে ৫৯ রান করে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বাঁচালেন টেস্টটা। তখনও বুঝে উঠতে পারেনি ক্রিকেট-বিশ্ব, কী ঘটতে চলেছে। তবে নিজেকে চেনাতে খুব বেশিদিন সময় নেননি তিনি।  

অপ্রত্যাশিত অ্যাশেজ অভিষেকের পর আর পেছন ফিরে তাকাননি ল্যাবুশেন, হয়ে উঠেছেন অজি মিডল অর্ডারের চালিকাশক্তি। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে করেছেন ৭৩ গড়ে ১,৬৭৫ রান, যা আসরে সর্বোচ্চ। ৬০.৮ গড় নিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ গড়ধারী ব্যাটসম্যানের তালিকায় ল্যাবুশেন এখন অবস্থান করছেন ছয় নম্বরে।

বেন স্টোকসের হেডিংলি বীরত্বগাঁথা

স্টোকসের হেডিংলি হিরোয়িকস; Image Source: Gareth Copley/Getty Images

নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৬৭ রানে অলআউট হবার পর হেডিংলি টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৫৯। ২৮৬ রানের মাথায় নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন স্টুয়ার্ট ব্রড প্যাভিলিয়নে ফেরেন, তখনও ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ৭৩ রান। তবে ইংল্যান্ডের সমর্থকরা তখনও আশা হারাননি, কারণ ক্রিজে যে ছিলেন বেঞ্জামিন অ্যান্ড্রু স্টোকস! 

এক উইকেট হাতে নিয়ে স্টোকস যা দেখালেন, তা বছরের পর বছর ধরে আলোচিত হতে থাকবে। অজি বোলারদের একহাত নিয়ে করলেন পাল্টা আক্রমণ। নাথান লায়নকে তিন ছক্কা ও জশ হ্যাজলউডকে এক চার ও দুই ছক্কা হাঁকিয়ে পেরোন ব্যক্তিগত শতরান।

জয় থেকে ইংল্যান্ড যখন ১৭ রান দূরে, তখন মার্কাস হ্যারিস ক্যাচ ছাড়েন স্টোকসের। পরের ওভারে স্বাগতিকদের যখন প্রয়োজন দুই রান, তখন নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তে সহজ রানআউটের সুযোগ হাতছাড়া করেন লায়ন। পরের বলেই অজিদের রিভিউ না থাকায় লেগ বিফোর থেকে বেঁচে যান স্টোকস। 

লায়নের ওভারের নাটকীয়তা শেষে প্যাট কামিন্সের করা পরের ওভারেই ইংল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করেন স্টোকস। শেষ ৬৭ বলে তার ব্যাট থেকে আসে ৮৪ রান। ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপ জেতানোর ছয় সপ্তাহ পর হেডিংলিতে টেস্ট ক্রিকেটে সর্বকালের অন্যতম সেরা ইনিংস খেলে ম্যাচ জেতালেন বেন স্টোকস। ২১৯ বলে অপরাজিত ১৩৫ রান করে ম্যাচ জিতিয়ে স্টোকস ফিরিয়ে আনেন স্যার ইয়ান বোথামের স্মৃতি। ৩৮ বছর আগে স্টোকসের মতোই একক নৈপুণ্যে একই ভেন্যুতে ইংল্যান্ডকে টেস্ট জিতিয়েছিলেন বোথাম৷

উপমহাদেশের প্রথম দিবারাত্রির টেস্ট

দিবারাত্রির টেস্টে ভারতের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান; Image Source: Associated Press

সন্ধ্যার শিশির, গোলাপি এসজি বলের চরিত্র, রিভার্স সুইংয়ের অভাব, বলের দৃশ্যমানতা নিয়ে খটকা – এসব কারণে শুরুতে দিবারাত্রির টেস্ট খেলতে বা আয়োজন করতে অনিচ্ছুক ছিল বিসিসিআই। ২০১৬ সালের দুলীপ ট্রফিতে গোলাপী বল পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হয় এবং খেলোয়াড়দের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আসে। নির্বাচকেরা এবং সৌরভ গাঙ্গুলীসহ অনেক সাবেক ক্রিকেটারের প্রস্তাব সত্ত্বেও গোলাপি বলে পরীক্ষা চালাতে সম্মত হয়নি বিসিসিআই।

২০১৯ সালে যখন সৌরভ গাঙ্গুলী বিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তখন গোলাপি বলের ক্রিকেটের প্রতি বোর্ডের অবস্থান নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়ে যায়। ২১ নভেম্বর কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে অনুষ্ঠিত হয় ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বপ্রথম গোলাপি বলের দিবারাত্রির টেস্ট ম্যাচ

ম্যাচটিতে ভার‍তের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি বাংলাদেশ। ইনিংস ব্যবধানে হেরে যায় মুমিনুল হকের দল। ভারতের পক্ষে দিবারাত্রির টেস্টে প্রথম শতরান করেন বিরাট কোহলি। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও চার উইকেট পান পেসার ইশান্ত শর্মা। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট পান উমেশ যাদব। বাংলাদেশের পক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন মুশফিকুর রহিম। তার ৭৪ রানের ইনিংসেও ইনিংস ব্যবধানে পরাজয় এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ।

সর্বকনিষ্ঠ বোলার হিসেবে নাসিম শাহর হ্যাটট্রিক

হ্যাটট্রিকের পর নাসিম শাহ; Image Source: Associated Press

নিজের অভিষেক সফরে নাসিম শাহ তখন অস্ট্রেলিয়ায়। ২০১৯ সালের নভেম্বরে পাকিস্তান যখন অস্ট্রেলিয়া-এ দলের বিপক্ষে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচ খেলছে, তখনই সুদূর খাইবার পাখতুনখোয়া থেকে মায়ের মৃত্যুসংবাদ পান তিনি৷ পিসিবি চেষ্টা করছিলো সদ্য কৈশোর পেরোনো নাসিমকে পাকিস্তানে পাঠাতে, কিন্তু তার বড় ভাইয়েরা চেয়েছিলেন যেন নাসিম অস্ট্রেলিয়া থেকে যান এবং দেশের হয়ে খেলেন। সেই সফরেই টেস্ট অভিষেক হয় নাসিমের। 

পরের বছর সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে অনন্য কীর্তি গড়েন ১৬ বছর এই বয়সী পাকিস্তানি পেসার। নাজমুল হোসেন শান্ত, তাইজুল ইসলাম ও মাহমুদউল্লাহকে পর পর তিন বলে আউট করে সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট হ্যাটট্রিকের স্বাদ পান নাসিম। প্রায় ১৭ বছর ধরে এই রেকর্ডটার মালিক ছিলেন বাংলাদেশের অলক কাপালি, তার হ্যাটট্রিকটা এসেছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধেই। 

২০০২ সালের পর এটিই ছিল কোনো পাকিস্তানি বোলারের করা প্রথম টেস্ট হ্যাটট্রিক৷ এর আগের বছরই অবশ্য শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাঁচ উইকেট লাভ করে নিজের আগমনী বার্তা ঘোষণা করেন নাসিম। তার চাইতে কম বয়সে টেস্টে পাঁচ উইকেট শিকার করতে পারেননি কোনো পেসারই।

প্রথম পেসার হিসেবে জেমস অ্যান্ডারসনের ৬০০ টেস্ট উইকেট প্রাপ্তি

উইকেট নম্বর সিক্স হান্ড্রেড; Image Source: Getty Images 

লর্ডসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকে প্রথম ওভারেই খরচ করলেন ১৭ রান। কে জানত, ১৭ বছর পরে এই জেমস মাইকেল অ্যান্ডারসন হবেন টেস্টে ৬০০ উইকেট নেয়া পৃথিবীর একমাত্র ফাস্ট বোলার!

২০২০ সালের আগস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে সাউদাম্পটন টেস্টের চতুর্থ দিনে ক্যারিয়ারের ৫৯৯তম টেস্ট উইকেট পান অ্যান্ডারসন। কিছুক্ষণ পর আলোকস্বল্পতার জন্য বন্ধ হয়ে যায় খেলা। 

সেই ম্যাচে অ্যান্ডারসনের বলে ক্যাচ পড়ে মোট চারবার। ফিল্ডাররা তো বটেই, ৬০০ উইকেট প্রাপ্তিতে বাধা হয়ে দাঁড়াল বৃষ্টিও। পাঁচ ঘন্টারও বেশি সময় পর শুরু হয় খেলা। পঞ্চম দিনের সাত বলের মধ্যে উইকেট শিকার করলে অ্যান্ডারসন হতে পারতেন বলের হিসেবে দ্রুততম ৬০০ উইকেট শিকারি। 

তবে এই রেকর্ডটা না হলেও ৬০০ উইকেটের জন্য খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি, মাইলফলকটা স্পর্শ করে ফেলেন পরের ওভারেই। আজহার আলীকে স্লিপে জো রুটের ক্যাচ বানিয়ে আনন্দে ভাসেন অ্যান্ডারসন। অ্যাজিয়াস বোলের বড় পর্দায় ভেসে ওঠে,

“James Anderson, 600 Test wickets.” 

সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের ১৬২তম টেস্ট খেলার মাধ্যমে ইংল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলার গৌরব অর্জন করেন ‘বার্নলি এক্সপ্রেস’।

ফাওয়াদ আলমের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান; Image Source: Getty Images 

২০০৯ সালের জুলাইয়ে প্রথম পাকিস্তানি ক্রিকেটার হিসেবে দেশের বাইরে টেস্ট অভিষেকে শতক হাঁকান অদ্ভুতুড়ে ব্যাটিং স্টান্সধারী ফাওয়াদ আলম। তবে অভিষেকে অমন কীর্তির পরও দুই টেস্ট পরেই বাদ পড়েন ফাওয়াদ। 

ঘরোয়া ক্রিকেটে এরপর রানের বন্যা বইয়ে দিলেও দীর্ঘদিন জাতীয় দলে উপেক্ষিতই থেকে যান ফাওয়াদ। অবশেষে দশ বছরেরও বেশি সময় পর ২০১৯ সালের শ্রীলঙ্কা সফরে টেস্ট দলে ফেরেন ফাওয়াদ। তবে টেস্ট খেলার অপেক্ষা আর ফুরোয় না।

২০২০ সালের জুনে ইংল্যান্ডগামী ২৯ জনের দলে জায়গা হয় ফাওয়াদের, সুযোগ মেলে ২০ জনের চূড়ান্ত স্কোয়াডেও। আগস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামার সুযোগ হয় শাদাব খানের চোটের সুবাদে। ১০ বছর ২৫৮ দিন পর টেস্ট খেলতে নামেন ফাওয়াদ। এর মাঝে পাকিস্তান খেলে ফেলেছিল ৮৮টি টেস্ট ম্যাচ। ইউনিস আহমেদের পর (১০৪ ম্যাচ) এত লম্বা বিরতি দিয়ে টেস্টে সুযোগ হয়নি কোনো পাকিস্তানি ক্রিকেটারের। 

প্রত্যাবর্তনটা সুখকর হয়নি ফাওয়াদের, কেবল চার বল স্থায়ী হওয়া ইনিংসে রানের খাতা খুলতে পারেননি। তবে ডিসেম্বরে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে করেন টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতক, প্রথম শতকের সঙ্গে যার ব্যবধান ছিল ৪,২১৮ দিনের। ২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল প্রথম চার ফিফটির সবগুলোকেই সেঞ্চুরিতে পরিণত করা প্রথম এশীয় ক্রিকেটার হন ফাওয়াদ আলম।

অ্যাডিলেইডে ভারতের ‘৩৬’ লজ্জা

দ্য অ্যাডিলেইড নাইটমেয়ার; Image Source: Getty Images 

২০২০-২১ বোর্ডার গাভাস্কার ট্রফিতে প্রথম টেস্টে প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে দিবারাত্রির টেস্ট খেলতে নামে ভারত। টেস্টটার অধিকাংশ সময় চালকের আসনে থাকলেও নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে নাটকীয়ভাবে ভেঙে পড়ে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ। জশ হ্যাজলউড ও প্যাট কামিন্সের বোলিং তোপে ৩৬ রানেই গুটিয়ে যায় ভারত, যা দলটির টেস্ট ইতিহাসের সর্বনিম্ন স্কোর। কেবল চারটি দলেরই এর চেয়ে কম রানে অলআউট হবার দৃষ্টান্ত আছে। 

কোনো ভারতীয় ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি, এমনকি অতিরিক্ত রানও ছিল দশের কম। এর টেস্ট ক্রিকেটে এমন নজির ছিল না একটিও৷ সেই ইনিংসে জশ হ্যাজলউড পাঁচ উইকেট শিকার করতে খরচ করেন ২৫ বল। টেস্ট ক্রিকেটে এর চাইতে কমসংখ্যক ডেলিভারিতে পাঁচ উইকেট নেয়ার রেকর্ড আছে শুধু আর্নি টোশাক ও স্টুয়ার্ট ব্রডের। দু’জনেই পাঁচ উইকেট নিতে খরচ করেন ১৯ বল। অস্ট্রেলিয়া আট উইকেটের ব্যবধানে জিতে নেয় ম্যাচটি।

ভারতের মহাকাব্যিক প্রত্যাবর্তন 

বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি জয়ের পর; Image Source: Associated Press

অ্যাডিলেইডে দুঃস্বপ্নের টেস্ট ম্যাচ শেষে পিতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে দেশে ফিরে যান নিয়মিত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। কবজির চোটে সিরিজ থেকে ছিটকে যান মোহাম্মদ শামিও। সিরিজ যত এগোতে থাকে, একে একে চোটাক্রান্ত হন উমেশ যাদব, রবীন্দ্র জাদেজা, লোকেশ রাহুল, হনুমা বিহারী, জাসপ্রিত বুমরাহ, রবিচন্দ্রন অশ্বিনরা। তাদের অনুপস্থিতিতে সুযোগ পেয়ে বাজিমাত করেন শুভমান গিল, মোহাম্মদ সিরাজ, ওয়াশিংটন সুন্দর, শার্দূল ঠাকুর, টি নটরাজনরা। 

দ্বিতীয় টেস্টে কোহলির অনুপস্থিতিতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন আজিঙ্কা রাহানে। দুর্দান্ত শতকে রাহানে হন ম্যাচসেরা, সিরিজ ১-১ এ সমতায় আনে ভারত। 

সিডনিতে তৃতীয় টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে ৪০৭ রানের জবাবে পঞ্চম দিন সকালে জয়ের আশা দেখাচ্ছিলেন ঋষভ পান্ত। ১১৮ বলে ৯৭ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংস খেলে পান্ত যখন সাজঘরে ফেরেন, জয় থেকে তখন ১৫৭ রান দূরে ভার‍ত। পূজারা আউট হবার পর হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট নিয়ে হনুমা বিহারী আর পিঠের ব্যথা নিয়ে রবিচন্দ্রন অশ্বিন ক্রিজে কাটিয়ে দেন ৪২.৪ ওভার। ১-১ সমতায় থেকে ব্রিসবেনের গ্যাবায় মুখোমুখি হয় দু’দল।

গ্যাবায় ফের ভারতের নায়ক ঋষভ পান্ত। এবার তার অপরাজিত ৮৯* রানের উপর ভর করে ৩২৮ রান তাড়া করে ১৯৮৮ সালের পর প্রথম দল হিসেবে গ্যাবাতে অজিদের হারায় ভারত। ১-০ তে পিছিয়ে থেকে শেষমেশ ২-১ এ সিরিজ ঘরে তোলে সফরকারীরা।

অভিষেকে কাইল মেয়ার্সের অবিস্মরণীয় পারফরম্যান্স 

অভিষেকে দ্বিশতকের পর কাইল মেয়ার্স; Image Source: Raton Gomes/BCB

তিন বছর আগে ডমিনিকাকে তছনছ করে দেয়া হারিকেনের কবলে পড়ে সেখান থেকে বেঁচে ফিরেছিলেন কাইল রিকো মেয়ার্স। যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজ মূল দলের বেশ ক’জন ক্রিকেটার বাংলাদেশ সফরে না আসতেন, তবে লড়াকু এই ক্রিকেটার হয়তো দলে জায়গাই পেতেন না। সুযোগ পেয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে টেস্ট অভিষেকে ব্যাট হাতে যা করলেন, তা ইতিহাসের পাতায় স্থান দিয়েছে মেয়ার্সকে।

বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ৩৯৫ রান তাড়া করতে নেমে অপরাজিত ২১০ রানের অবিস্মরণীয় ইনিংস খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বিখ্যাত এক জয় উপহার দেন। টেস্ট ইতিহাসের ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেকে দ্বিশতক হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন মেয়ার্স। এই ম্যাচে এশিয়ার মাটিতে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর মেয়ার্স খেলেন এশিয়ার মাটিতে চতুর্থ ইনিংসে এশিয়ার মাটিতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। এই ম্যাচে কাইল মেয়ার্সকে দারুণ সঙ্গ দেন এনক্রুমাহ বোনার। তাদের ২১৬ রানের জুটি ছিল টেস্ট ইতিহাসে দুই অভিষিক্ত ব্যাটসম্যানের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

মেয়ার্সের অপরাজিত ২১০ ছিল সফল রানতাড়ায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস, তার উপরে কেবল স্বদেশী লরেন্স রো। এর আগে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ইনিংস ঘোষণা করে ম্যাচ হারার নজির ছিল কেবল ১২টি। 

This is a Bengali article on the top 10 moments of the ICC World Test Championship 2019-21. Necessary sources are hyperlinked inside.

Feature Image Source: Getty Images

Background Image Source: Getty Images

Related Articles