Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বকাপের চমকে দেওয়া সব উদ্বোধনী ম্যাচ

আর কিছুক্ষণ পরই পর্দা উঠতে যাচ্ছে রাশিয়া বিশ্বকাপের। ৩২টি দল, অগণিত দর্শক আর টিভি সেটের সামনে বসে থাকা হাজার হাজার মানুষ পরবর্তী এক মাস বুঁদ হয়ে থাকবে এই ক্রীড়াযজ্ঞে। রাশিয়া–সৌদি আরব ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠতে যাচ্ছে ২১তম বিশ্বকাপের আসর। চলুন দেখে আসা যাক এই ম্যাচ সহ বিশ্বকাপের কিছু চমকে দেওয়া উদ্বোধনী ম্যাচ সমূহ।

ফ্রান্স – সেনেগাল (২০০২ বিশ্বকাপ)

পেটিট, অঁরি, থুরামের ফ্রান্স ছিলো ২০০২ বিশ্বকাপের হট ফেভারিট। অন্যদিকে সেনেগাল প্রথমবারের মতো এই আসরে খেলার সুযোগ পায়। উদ্বোধনী ম্যাচে ধারে ভারে অনেক এগিয়ে থেকেই সিউল স্টেডিয়ামে সেনেগালের মুখোমুখি হয় লা ব্লুজরা। তবে মাঠে বসে থাকা প্রায় ৬৩ হাজার দর্শককে হতভম্ব করে দিয়ে ৩০ মিনিটেই সেনেগালকে এগিয়ে দেন পাপা দিউপ। বাকিটা সময় মাথা কুটে মরেও আর গোলের দেখা পায়নি তৎকালীন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। অঘটন ঘটিয়ে প্রথম ম্যাচেই সেনেগাল জয় তুলে নেয়। তবে সেটা যে ফ্লুক ছিলো না তা আফ্রিকান দেশটি প্রমাণ করে বাকি ম্যাচগুলোতেও। কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত গিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয় প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে আসা সেনেগাল। আর হট ফেভারিট হিসেবে টুর্নামেন্ট শুরু করা ফ্রান্স প্রথম ম্যাচের ধাক্কা আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বিদায় নেয় প্রথম রাউন্ডেই।

ফ্রান্সের সাথে সেনেগালের গোল

কলম্বিয়া – রোমানিয়া (১৯৯৪ বিশ্বকাপ)

যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ১৫তম আসরে দুটি উদ্বোধনী ম্যাচের একটিতে মুখোমুখি হয় কলম্বিয়া আর রোমানিয়া। ভালদেরামার কলম্বিয়া জর্জিও হাগির রোমানিয়ার মধ্যে ফেভারিট ছিলো দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়াই। তবে পাসাডেনা স্টেডিয়ামে উপস্থিত ৯২ হাজার দর্শকের সামনে পাশার দান উল্টে দেয় রোমানিয়া। প্রথম আধাঘন্টার মধ্যেই হাগি আর ফ্লোরিনের গোলে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় রোমানিয়া। ৪৩ মিনিটে ভ্যালেন্সিয়ার গোলে ব্যবধান কমালেও শেষ রক্ষা হয়নি কলম্বিয়ার। ৮৯ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোল করে কলম্বিয়ার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন ফ্লোরিন। ৩-১ এ ম্যাচ হেরে বিশ্বকাপ শুরু করে ভালদেরামার দল।

কলম্বিয়া – রোমানিয়া ম্যাচের একটি মূহুর্ত

সেবার গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই পরের রাউন্ডে উত্তীর্ণ হয় রোমানিয়া। অন্যদিকে কলম্বিয়ার বিশ্বকাপ যাত্রা শেষ হয় গ্রুপ পর্বেই।

বুলগেরিয়া – ইতালি (১৯৮৬ বিশ্বকাপ)

১৯৮২ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ইতালির সাথে প্রথম ম্যাচেই মুখোমুখি হয় বিশ্বকাপের নবাগত দল বুলগেরিয়া। মেক্সিকো সিটির এজটেক স্টেডিয়ামে ৯৬ হাজার দর্শকের সামনে উদ্বোধনী ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। শুরু থেকে একের পর এক আক্রমণ করেও বুলগেরিয়ার প্রাচীর ভাঙ্গতে পারেনি ইতালি। অবশেষে প্রথমার্ধের অন্তিম মুহূর্তে আলতোবেল্লির গোলে ৪৪ মিনিটে এগিয়ে যায় আজ্জুরিরা।

ইতালির সাথে গোলের পর বুলগেরিয়ার উল্লাস

দ্বিতীয়ার্ধেও একই খেলা উপহার দেয় ইতালি। তবে গোল আদায় করে নিতে পারেনি চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নেরা। বরং ৮৫ মিনিটে ধারার বিপরীতে গোল করে বসেন বুলগেরিয়ার সিরাকভ। শেষপর্যন্ত ১-১ গোলে ড্র নিয়েই মাঠ ছাড়ে ইতালি বাহিনী। সেই ড্র এর সুবাদেই তৃতীয় স্থানে থেকেও পরের রাউন্ডের টিকেট কাটতে সক্ষম হয় বুলগেরিয়া। আর অন্যদিকে এই ম্যাচে পূর্ণ পয়েন্ট না পাওয়াতে গ্রুপ রানার্স আপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় আজ্জুরিদের। 

ফ্রান্স – মেক্সিকো (১৯৩০ বিশ্বকাপ)

প্রথম বিশ্বকাপের প্রথম উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ পায় ফ্রান্স ও মেক্সিকো। আয়োজক উরুগুয়ের রাজধানী মন্টিভিডিওর এস্তাদিও পসিতোসে একে অপরের মোকাবিলা করে ফ্রান্স ও মেক্সিকো। মাত্র ৪,৪৪৪ জন দর্শক এই বিরল মুহূর্তটি অবলোকনের সুযোগ পায়। স্থানীয় সময় তিনটা ত্রিশে গড়ায় এই ঐতিহাসিক ম্যাচটি। প্রথম বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। ম্যাচের ১৯ মিনিটেই ফ্রান্সের হয়ে গোল করেন লরাঁ। পরবর্তীতে ল্যাঙ্গিয়ার ও ম্যাশিঁনটের গোলে প্রথমার্ধেই ৩-০ গোলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। পরবর্তীতে মেক্সিকো ১টি গোল শোধ করলেও ম্যাশিনটের শেষ মিনিটের আরেক গোলে ৪-১ এর বড় জয় তুলে নেয়। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম জয় তুলে নিয়ে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখে ফ্রান্স।

প্রথম ম্যাচের আগে দুই অধিনায়ক

যদিও সেই বিশ্বকাপে সরাসরি সেমিফাইনাল হওয়ায় শুধুমাত্র গ্রুপ চ্যাম্পিয়নরাই পরের রাউন্ডে যায়। তাই আর্জেন্টিনার পেছনে থাকায় ফ্রান্স, মেক্সিকো দু’দলই বাদ পড়ে গ্রুপ পর্বে।

সৌদি আরব – রাশিয়া উদ্বোধনী ম্যাচ

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের গোলরক্ষক স্তানিস্লাভ চেরচেসোভ রাশিয়ার দায়িত্ব পান ২০১৬ ইউরোর পর পরই। তবে দলকে গুছিয়ে উঠতে তাকে কম গলদঘর্ম হতে হয়নি। একে তো কিছু সিনিয়র খেলোয়াড়দের অবসর, সাথে ইনজুরির আঘাতের জন্য ঢেলে দল সাজাতে হয়েছে এই কোচকে। ৪-১-২-১-১ ফর্মেশনে খেলতে দেখা যেতে পারে স্বাগতিকদের। মিডফিল্ডে এলান জাগোভ সহ গোলবারের নিচে থাকা ইগোর আকিনফেভ রাশিয়ার ভরসার নাম।

তবে দলের কয়েকজন সিনিয়র খেলোয়াড়ের অভাব ঠিকই বোধ করবে রাশিয়া। বিশেষ করে তরুণ ডিফেন্সকে দিতে হবে বড় পরীক্ষা। ১৯৬৬ বিশ্বকাপে চতুর্থ হওয়া সাফল্যকে হয়তো ছাড়িয়ে যেতে পারবে না বর্তমানের এই রাশিয়া দলটি, তবে স্বাগতিক হিসেবে কমপক্ষে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়াটা অতীব প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে প্রথম ম্যাচেই তুলনামূলক কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে রাশিয়াকে।

রাশিয়া টিম

অন্যদিকে সৌদি আরবের ক্ষেত্রে কোচ মানেই যাযাবর। গত ত্রিশ বছরে ৪০ বার কোচ বদলানো এই দলের বর্তমান কোচ হুয়ান এন্তনিও পিজ্জি। চিলিকে শতবর্ষী কোপা আমেরিকা জেতানো এই আর্জেন্টাইন নভেম্বরে পান সৌদি আরবের দায়িত্ব। চিলিকে বিশ্বকাপে তুলতে না পারার দায় নিয়ে সরে দাঁড়ানো এই কোচ ঠিকই থাকছেন বিশ্বকাপের ডাগ আউটে। সৌদি আরবকে পিজ্জি খেলাবেন ৪-৩-৩ ফর্মেশনে।

দলে ভরসার নাম রাইট উইঙ্গার ফাহাদ আল মুয়াল্লাদ। ছয় বছর বয়সেই বার্সেলোনার বিখ্যাত লা মাসিয়ায় যাওয়ার সুযোগ ছিলো মুয়াল্লাদের সামনে। তবে নিজ দেশের ক্লাব আল ইত্তিহাদে যোগ দেন তিনি। তাই পিজ্জির ভরসা দ্রুতগতির এই উইঙ্গারই। তবে এই অল্প কয়দিনে পিজ্জি দলটিকে তেমন গুছিয়ে তুলতে পারেননি। ফন উইকের বিদায়ের পর দায়িত্ব নিয়েছিলেন এদ্গার্দো বাউজা। কিছুদিনের মধ্যে তিনিও বরখাস্ত হওয়ায় তিন মাসে তৃতীয় কোচ হিসেবে আসেন হুয়ান এন্তনিও পিজ্জি। দল গোছানোর পর্যাপ্ত সময় তো পাননিই সাথে গোল স্কোরারের অভাবে ভালোই ভুগবে এশিয়ান পরাশক্তি সৌদি আরব। প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে ১৯৯৪ সালে দ্বিতীয় রাউন্ডে পৌঁছায় সৌদি আরব। এরপরের তিনটি আসরেই গ্রুপ পর্বে বাদ পড়তে হয় এশিয়ান পরাশক্তিদের। এবার তুলনামূলক সহজ গ্রুপে পড়লেও দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার জন্য তাদের লড়াই করতে হবে রাশিয়া ও মিশরের সাথে।

সৌদি আরব ফুটবল দল

স্বাগতিক হিসেবে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়াটাকেই পাখির চোখ করেছে রাশিয়া। দ্বিতীয় রাউন্ডে না যাওয়াটাই স্বাগতিকদের জন্য ব্যর্থতা হিসেবে গণ্য হবে। একমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকাই স্বাগতিক হিসেবে প্রথম রাউন্ডে বাদ পড়ে। রাশিয়া নিশ্চয়ই সেই রেকর্ডের ভাগিদার হতে চাইবে না। সেজন্য সৌদি আরবের বিপক্ষে জয় ছাড়া কোনো বিকল্প নেই রাশিয়ার। তুলনামূলক সহজ গ্রুপ থেকে একই সুবিধা নিতে চাইবে সৌদি আরবও। তাই বলাই যায়, আক্রমণাত্মক এক জমজমাট ম্যাচ অপেক্ষা করছে বিশ্বকাপের প্রথম দিনেই। ৮১ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার লুঝনিকি স্টেডিয়ামের সেই মহারণের অপেক্ষায় পুরো ফুটবল বিশ্ব।

This Bangla article is about the first match of the world cup where favourites were beaten. Necessary sources are hyperlinked in the article.

Feature Image: Getty Image

Related Articles