২০০৯/২০১০ মৌসুমের সুইস সুপার লিগের শেষ দিনে সকলে চোখ ছিলো একজন খেলোয়াড়ের উপর, সেইদৌ দৌমবিয়া। শেষ দিনের সেই ম্যাচে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকা বাসেল খেলতে গিয়েছিলো তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইয়ং বয়েজের মাঠে। গোল ব্যবধানে এগিয়ে ছিলো বাসেল। ইয়ং বয়েজের সাথে ম্যাচটি ড্র করতে পারলেই তারা পেয়ে যেত কাক্ষিত লিগ শিরোপা। আর ইয়ং বয়েজের জন্য ২৪ বছর পর সুযোগ এসেছিলো লিগ শিরোপায় চুমু দেবার, তাই তাদের জয় ছাড়া বিকল্প কোনো রাস্তা খোলা ছিলো না।
সে বছর লিগে সর্বোচ্চ ৩০টি গোল করেছিলেন দৌমবিয়া, যা সুইস সুপার লিগের ইতিহাসে ১৯৮৮ সালে পর এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল দেবার রেকর্ড। বাসেলের বিপক্ষে ম্যাচের আগে দৌমবিয়া ১০ ম্যাচে করেছিলেন ১১ গোল। তাই কেউ যদি ইয়ং বয়েজের হয়ে জ্বলে উঠতো, তিনি অবশ্যই সেইদৌ দৌমবিয়া হতেন। কিন্তু দৌমবিয়া সেই ম্যাচে ছিলেন চূড়ান্ত পর্যায়ের ফ্লপ। যদিও ফ্লপ বললে ভুল হবে, বাসেলের ১৮ বছর বয়সী তরুণ এক লেফট-ব্যাক তাকে থামিয়ে রেখেছিলো পুরো ম্যাচ জুড়ে। মৌসুমের শেষের দিকে দলে প্রথম সুযোগ পাওয়া সেই অখ্যাত তরুণ ফুটবলারের জন্য দৌমবিয়া ঠিকমতো শট পর্যন্ত নিতে পারেননি।
ইয়ং বয়েজের মাঠে ২-০ গোলের ব্যবধানে জয়ে লিগ শিরোপা জেতে এফসি বাসেল। আর ইয়ং বয়েজের সবথেকে ভয়ঙ্কর খেলোয়াড়কে আটকে রাখা সেই তরুণ লেফট-ব্যাকে নাম জারদান শাকিরি।
এ ম্যাচের পর বাসেল কোচ থ্রসটেন ফিনক শাকিরি সম্পর্কে বলেন,
শাকিরি সুইস লিগের সবথেকে সেরা খেলোয়াড়ের বিপক্ষে খেলেছে। ইয়ং বয়েজের বিপক্ষে ম্যাচটি আমাদের জন্য অঘোষিত ফাইনাল ছিলো। এবং সে দৌমবিয়ার বিপক্ষে লেফট-ব্যাক পজিশনে নেমেছিলো। দৌমবিয়া সেই মৌসুমে ৩০ গোল করেছিলেন, কিন্তু বাসেলের বিপক্ষে ম্যাচে তাকে মাঠে খুঁজেই পাওয়া যায়নি।
শাকিরি প্রতিটা পজিশনে খেলতে পারে। আমি যখন তাকে লেফট-ব্যাকে খেলিয়েছি, সে ভালো করেছে। যখন আমি রাইট-উইংগার হিসেবে তাকে ব্যবহার করেছি, তখনও সে আমাকে হতাশ করেনি। এমনকি সে ১০ নম্বর খেলোয়াড়ের পজিশনেও দারুণ মানিয়ে নিতে পারে। শুরুতে, আমি ভেবেছিলাম শাকিরি লেফট-ব্যাক পজিশনেই সবথেকে বেশি ভালো করবে। কিন্তু সে আক্রমণ অঞ্চলে বেশি খেলতে পছন্দ করতো।
তবে লেফট-ব্যাক পজিশনে শাকিরি বেশিদিন মাঠে নামেননি। বাসেলের হয়ে প্রথম বছর ও একই কোচের অধীনে পরবর্তী বছরে, সুইস ফুটবলের অন্যতম সেরা তরুণ প্রতিভা পরিচয় পেয়ে যান। খাটো, গাট্টাগোট্টা ধরনের, বাম পায়ের প্রচন্ড জোরের মানুষটার কারণে বাসেল আবারও ২০১১ সালের সুইস লিগ জেতে। পরের বছর সুইস লিগের পাশাপাশি লিগ কাপও জিতে নেয় এফসি বাসেল।
ক্যারিয়ারের শুরুতে শাকিরি ছিলে একজন প্রতিভাবান তরুণ ফুটবলার যিনি তার প্রতিভার সবটুকু ঢেলে দিতে প্রস্তুত। বাসেল কোচ ফিনকও তা বুঝতে পেরে তাকে সর্বোত্তম সহায়তা করেছিলেন। শাকিরির শারিরীক গঠন দেখে ফিনক তার পজিশন থেকে খেলার ধরনে আমূল পরিবর্তন এনেছিলেন। ফিনক তার সম্পর্কে বলেছিলেন,
শাকিরির এমন একজন কোচকে প্রয়োজন যে তাকে বিশ্বাস করবে। অনেক খেলোয়াড় আছে যাকে আপনি মোটিভেট করার চেষ্টা করবেন, কিন্তু কাজে দেবে না। কিন্তু আপনি যদি শাকিরিকে সাহস দেন, সে আপনাকে কখনই হতাশ করবে না।
২০১১/২০১২ মৌসুমের পর শাকিরির ক্যারিয়ার নতুন পথের দিকে মোড় নিতে থাকে। সে বছর চ্যাম্পিয়নস লিগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে নিজ মাঠে ২-১ গোলে হারিয়ে দেয় বাসেল। শাকিরি প্রথম থেকেই ম্যাচে ছিলেন। দুটি গোলও তার বানিয়ে দেয়া। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ স্যার আলেক্স ফার্গুসন সে ম্যাচেই তার খেলা দেখে মুগ্ধ হন। কিন্তু ততদিনে শাকিরি বায়ার্ন মিউনিখের সাথে চুক্তি করে ফেলেছেন। ২০১২ সাল শেষে পূর্ব চুক্তি অনুযায়ী জারদান শাকিরি পাড়ি জমান তার ক্যারিয়ারের নতুন অধ্যায়ের দিকে।
সে সময়ে বায়ার্ন মিউনিখের কোচ ছিলেন ইয়ুপ হেইঙ্কেস। শাকিরি ততদিনে পুরোদমে উইং পজিশনে খেলা খেলোয়াড়। তাই বায়ার্ন কোচ তাকে এনেছিলেন আরিয়েন রোবেন ও ফ্রাঙ্ক রিবেরির বদলি খেলোয়াড় হিসেবে। লেফট উইং হোক বা রাইট উইং, উভয় পজিশনে শাকিরি ছিলেন দুর্দান্ত। তাই হেইংঙ্কেসের বায়ার্নে নিয়মিত সুযোগ পেতেন তিনি। বায়ার্ন যে বছর ট্রেবল জয় করে, সে বছর বেঞ্চ থেকে নিয়মিত নেমে শাকিরি করেছিলেন ৮ গোল ও ১৩ অ্যাসিস্ট। শাকিরির মাত্রাতিরিক্ত গতি ও শারিরীকভাবে শক্তিশালী হবার কারণে হেইঙ্কেস তাকে এমন সময়ে নামাতেন, ততক্ষণে প্রতিপক্ষের রক্ষণ রোবেন ও রিবেরির হামলা রুখতে গিয়ে হাঁপিয়ে গেছে। আর তখন শাকিরি নেমে নতুন করে খেলায় গতি এনে দিতেন। আর মাত্র নামা শাকিরিকে রুখে দেওয়া সবসময় হাঁপিয়ে যাওয়া রক্ষণের জন্য সম্ভব হতো না।
ইয়ুপ হেইঙ্কেসের এ ট্যাকটিস সম্পর্কে জামার্ন সিদদশ্চ জাইতুং সংবাদ প্রত্রিকার সাংবাদিক বেনেদিক্ত ওয়ামবার্ন বলেছেন,
আমার মনে হয় হেইঙ্কেস তাকে বেশি ব্যবহার করতেন, কারণ তিনি বুঝেছিলেন শাকিরি বদলি খেলোয়াড় হিসেবে দারুণ হবে। আর সে কয়েকটা পজিশনে খেলতে পারে। আর ৬০ বা ৭০ মিনিট পর এমন একজনকে মাঠে নামানো উচিত যার জোর খাটানোর সামর্থ আছে। আর শাকিরি ঠিক এমনই ছিলেন। বায়ার্ন সমর্থকেরা তাকে পছন্দ করতো, কারণ শাকিরির স্বভাব খুবই বন্ধুসুলভ ছিলো। সবসময় তার মুখে যেন হাসি লেগেই থাকতো। মিউনিখে প্রথম মৌসুম তার সেরা মৌসুম ছিলো।
তার দুর্দান্ত প্রথম মৌসুমের পর দলে সমস্যা শুরু হতে থাকলো পরের বছরই, যখন ২০১৩ সালে পেপ গার্দিওল বায়ার্ন মিউনিখের কোচের দায়িত্ব নিলেন।
সাধারণত পেপ গার্দিওলা তার দলের আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের খুবই সর্তক কিন্তু দ্রুতগতিতে আক্রমণ করার নির্দেশ দেন। আর তার ট্যাকটিসের অন্যতম দিক হলো, দলগত খেলা। কিন্তু শাকিরি বরাবরই এককভাবে খেলতে পছন্দ করতেন। একজনকে পাস দিয়ে তার পাসের অপেক্ষায় থেকে নিজের স্থান পরিবর্তন করা খেলার ধরন তার ছিলো না। কিন্তু রোবেন বা রিবেরির এ ধরনের সমস্যা হয়নি। তাই শাকিরি প্রথমেই দলে তার গড়া স্থানটি হারিয়ে বসলেন। প্রথম একাদশে খেলার সম্ভবনা কমতে থাকলো বায়ার্ন মিউনিখের নতুন সাইনিং থিয়াগো আলকানতারা, মারিও গোটৎশে ও টমাস মুলার আসার পর। পাশাপাশি যুক্ত হলো মাংসপেশীর ইনজুরি সমস্যা। তাই সে বছর পেপ গার্দিওয়ালার দলে মাত্র ১০ ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছিলো এই সুইস উইংগারের।
২০১৪ সালের নভেম্বর। গার্দিওলা একরকম বলেই দিলেন, শাকিরি তার পরামর্শ মেনে চলেন না। এবং তাকে যতটা প্রতিভাবান ভাবা হয় তিনি আসলে ততটা নয়। সে বছরের গ্রীষ্মকালীন দল-বদলের সময় লিভারপুল শাকিরিকে কেনার আগ্রহ দেখায়। কিন্তু না বলে দেয় বায়ার্ন মিউনিখ। কিন্তু পরের জানুয়ারিতেই ইন্টার মিলানে লোনে পাঠানো হয় তাকে। মাত্র অর্ধেক মৌসুম মিলানে কাটানোর পর, ২০১৫ সালের আগস্টে অবশেষে শাকিরিকে স্টোক সিটির কাছে বিক্রি করে দেয় বায়ার্ন। স্টোক সিটি ততদিনে প্রিমিয়ার লিগে ধুঁকছে। তাই এমন একটি দলে যাওয়ার অর্থই বলে দেয় শাকিরির অবনতির মাত্রা। যদিও এ অবনতির জন্য সম্পূর্ণ দায়ী তিনি নন। আর ইনজুরির পর ২০১৪ থেকে ২০১৫ সালে আগস্ট পর্যন্ত তিনি নিয়মিত মাঠেই নামতে পারেননি।
যদিও সবকিছু ছাপিয়ে রোবেন, রিবেরি, মুলার বা গোৎজেদের বেঞ্চে পাঠিয়ে একাদশে জায়গা করে নেবার সুযোগ ছিলো না শাকিরির জন্য। তাই তিনি বলেছিলেন,
বায়ার্নের হয়ে যদি আমি প্রতি ম্যাচে গোল ও অ্যাসিস্ট করি। তারপরও আমি নিশ্চয়তা দিতে পারবো না, পরের ম্যাচে আমি থাকবো কি না!
বায়ার্নে তার এ অবনতি নিয়ে বেনেডিক্ট বলেছেন,
বায়ার্নে শাকিরির প্রথম মৌসুম ছিলো হেইঙ্কেসের অধীনে। তিনি এমন একজন কোচ ছিলেন, যিনি খেলোয়াড়দের সাথে মিশে যেতেন, তাদের মতামত শুনতেন। বিশেষ করে তরুণ খেলোয়াড়দের। এবং এ জন্য শাকিরি নিয়মিত মাঠে নামতেন। তারপর কোচের বদল হলো। শাকিরির উচিত ছিলো পেপকে বিশ্বাস করা। এবং সেটাই করা যেমনটা গার্দিওয়ালা তাকে বলছে। কিন্তু সে তা করেনি। গার্দিওলার অধীনে, সে জানতই না সে আছে কোথায়!
জারদান শাকিরির ছোটবেলার গল্প খুবই বিষাদময়। তার পরিবার কসোভো ত্যাগ করেছিলো যুদ্ধ শুরুর আগে, যখন তার বয়স মাত্র ৪ বছর। সুইজারল্যান্ডে এসেও তাদের জীবন সহজ ছিলো না। এমনিতে সুইজারল্যান্ডে থাকা যথেষ্ট ব্যায়বহুল। জমানো অর্থ ছাড়া আর পর্যাপ্ত রোজগারের উপায় না থাকলে সেখানে বসবাস করাটা খুবই দুর্বিষহ। শাকিরিরা ছিলেন তিন ভাই। তাদের বাবা সুইস জার্মান ভাষা জানতেন না। তাই নতুন দেশে এসে হুট করে একটি চাকরি যোগাড় করা তার পক্ষে জটিল ছিলো। আর কিছুদিন পর একটা আয়ের উৎস যোগাড় হলেও সেখান থেকে বেশ কিছু অর্থ শাকিরির বাবা কসোভোতে তাদের আত্মীয়ের কাছে পাঠাতেন। ছোট্ট একটা পুরনো ফার্মহাউজে থাকতো তারা। সীমিত অর্থ, কোনো সুযোগ সুবিধা ছাড়া, নতুন পরিবেশে শাকিরিকে জীবনের সাথে প্রতি মুহূর্তে লড়তে হয়েছে। তাই দারুণ একটি ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করে এভাবে পতনের মুখে পড়ে তিনি মোটেও বিচলিত হননি। হয়তো হতাশ হয়েছেন, তা-ও সীমিত সময়ের জন্য। কিন্তু স্টোক সিটির মতো মধ্যমানের ক্লাবের হয়েই আবার নিজেকে প্রমাণ করবেন বলে সংকল্প করলেন।
স্টোক সিটির হয়ে তিনি ৩ মৌসুমে ৯২ ম্যাচ খেলেছেন। ৯২ ম্যাচে তার আছে ১৫ গোল ও ১৫ অ্যাসিস্ট। কিন্তু কেন যেন স্টোক সিটির হয়ে তিনি সুখী ছিলেন না। হয়তো এমন দলে তার খেলাটা ঠিক মানায় না, তবে তিন মৌসুমে তিনি সেভাবে উন্নতিও করতে পারেননি। কেন পারেননি, সেটা তার ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে তৎকালীন বাসেল কোচ বলে দিয়েছিলেন। শাকিরির উপর বিশ্বাস রাখতে হয়, তার প্রতি যত্নও নিতে হয়। কিন্তু সে বিশ্বাসটা স্টোক সিটির হয়ে জন্মায়নি। এমনকি হুট করে লিভারপুলে চলে আসার পর স্টোক সিটির সাথে তার সম্পর্ক আরও নষ্ট হয়েছে।
কিন্তু, লিভারপুলে তিনি আরও একবার ফিরে পেয়েছেন তার জন্য যথাযথ সমাহার। পেয়েছেন একটি উচ্চভিলাষী দল, যারা মাঠের পারফর্মেন্স চমক জাগিয়ে দেয় আর একজন পাগলাটে কোচ যার উপর বিশ্বাস রাখা যায়। বায়ার্নে থাকতে ইয়ুপ হেইঙ্কেস শাকিরিকে বানিয়েছিলেন দ্বিতীয়ার্ধের খেলোয়াড়। ইয়ুর্গেন ক্লপ আবার সেই শাকিরিকে ফেরত আনলেন। ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে লিভারপুল মাঠে নামলে দলে শাকিরি থাকেন, নাহলে তার সুযোগ আসে ৬০ মিনিট পরে। আর সে সময়ে গোল করে আবারও শাকিরি তার পুরনো সময়কে ফেরত আনছেন।
ইয়ুর্গেন ক্লপ নিজেই বলেছেন,
শাকিরির সাথে আমি স্বস্তি বোধ করি। আমি এমন খোলামেলা মনের মানুষকে ভীষণ পছন্দের। আরেকটা ভালো দিক হচ্ছে, আমরা নিজেদের ভেতর জার্মান ভাষায় কথা বলতে পারি, যেটা আমাদের দুজনের জন্যই স্বস্তিদায়ক।
এ মৌসুমে লিভারপুলে এসে ২৫ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন শাকিরি। করেছেন ৬ গোল ও ৩ অ্যাসিস্ট, যার অধিকাংশ বেঞ্চ থেকে নেমে। যদিও সম্প্রতি ক্লপ তাকে নিয়মিত ব্যবহার করছেন। তাকে দেখা যাচ্ছে রাইট উইংগার হিসেবে, কখনও সেকেন্ড স্ট্রাইকার হিসেবে, আবার কখনও অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে। ইয়ুর্গেন ক্লপ তো বলেছেনই,
অন্তত শাকিরির জন্য আমি লিগ শিরোপা জিততে চাই।
হয়তো লিভারপুলের হয়ে আবার শাকিরি প্রমাণ করবেন, পৃথিবীর অন্যতম কঠিন লিগে খেলে গোল করে ম্যাচ জেতানোর নায়ক হবার যোগ্য তিনি।
This article is in Bangla language. It is about Liverpool winger Xherdan Shaqiri and his beyond controversy carrer. Please click on the hyperlinks to look for references
Feature Image Source: Alex Livesey/Getty Images
Feature Source:
1. Handle with Care: What Makes Xherdan Shaqiri Tick? - Bleacher Report
2. Now I Got My Own Army Guy? - The Players Tribune