প্রতিভাবান ক্রিকেটার উঠে আসার অন্যতম মাধ্যম হলো বয়সভিত্তিক ক্রিকেট। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকে ধাপে ধাপে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উঠে আসেন তরুণ ক্রিকেটাররা। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের শেষ ধাপ হলো অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট। আইসিসি প্রতি দুই বছর পরপর অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট আসর আয়োজন করে। এই টুর্নামেন্টেই তরুণ ক্রিকেটাররা নিজেদেরকে বড় মঞ্চে প্রমাণ করার সুযোগ পায়। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভালো করলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখতে খুব বেশি সময় প্রয়োজন হয় না তরুণ ক্রিকেটারদের।
ওয়ানডে ফরম্যাটে বিশ্বকাপ ক্রিকেট আয়োজন হয় প্রতি চার বছর পরপর। অন্যদিকে, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসর বসে প্রতি দুই বছর অন্তর অন্তর। ২০১৫ সালে সর্বশেষ বিশ্বকাপ ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পরবর্তী বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসর বসবে ২০১৯ সালে। এই চার বছর সময়ের মধ্যে দুইবার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের আসর বসেছে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে এবং ২০১৮ সালে নিউ জিল্যান্ডে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসর বসে। এই দুই আসরে অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করা বেশ কিছু ক্রিকেটার ইতিমধ্যে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলার অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফেলেছেন। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন প্রতিভাবান ক্রিকেটার ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সর্বশেষ দুই আসরে খেলা যেসব ক্রিকেটার ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছেন, চলুন তাদের সম্পর্কে জেনে আসা যাক।
মেহেদি হাসান মিরাজ
মেহেদি হাসান মিরাজ ২০১৬ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট ইতিহাসে নিজেদের সেরা সাফল্য তৃতীয় স্থান অর্জন করে। মিরাজ পুরো আসরে ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রদর্শন করে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার জেতেন। আসরে ছয় ম্যাচের মধ্যে পাঁচ ইনিংসে ব্যাট করে চারটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৬০.৫০ ব্যাটিং গড়ে ২৪২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। বল হাতেও বেশ সফল ছিলেন এই অফস্পিনার। ছয় ম্যাচে ১৭.৬৬ বোলিং গড়ে তার উইকেট সংখ্যা ১২টি।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলার পর জাতীয় দলে সুযোগ পেতে খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি মিরাজকে। ২০১৬ সালে অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ম্যাচ থেকেই দুর্দান্ত বোলিং করতে থাকেন তিনি। ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট জয়ে বড় অবদান রেখেছিলেন তিনি। টেস্ট ক্রিকেটের তুলনায় ওয়ানডে ক্রিকেটে কিছুটা নিষ্প্রভ তিনি। তবে খুব বেশি উইকেট শিকার করতে না পারলেও বেশ আঁটসাঁট বোলিং করেন তিনি।
শ্রীলঙ্কার মাটিতে ২০১৭ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে মিরাজের। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ২৫ ম্যাচে ৩৫.০৭ বোলিং গড়ে ২৬ উইকেট শিকার করেছেন। সেরা বোলিং বিশ্লেষণ ২৯ রানের বিনিময়ে চার উইকেট। দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতেও ভূমিকা রাখেন তিনি। ২০.৭৮ ব্যাটিং গড় তারই জানান দেয়। মেহেদি হাসান মিরাজ ২০১৬ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলার পর বাংলাদেশ দলের নিয়মিত সদস্যে পরিণত হয়েছেন। যার ফলে আসন্ন ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের স্কোয়াডে জায়গা করে নেন মিরাজ।
মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন
মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনও বাংলাদেশের হয়ে ২০১৬ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলেছেন। আসরে তিনি বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকার করেছেন। ছয় ম্যাচে ১৪.৯২ বোলিং গড়ে এবং ২১.৬ স্ট্রাইকরেটে তিনি ১৩ উইকেট শিকার করেছিলেন। সেরা বোলিং বিশ্লেষণ ১৭ রানের বিনিময়ে তিন উইকেট। উপমহাদেশে এমন নৈপুণ্যে একজন পেসার বেশ উৎফুল্লই হবেন।
বোলিংয়ের পাশাপাশি লোয়ার-অর্ডারেও ভালো ব্যাট চালান মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। বাংলাদেশ দলে একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারের অভাব অনেকদিন ধরে। সেই অভাব ঘোচাতে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনকে দলে নেয় বাংলাদেশ। ২০১৭ সালের এপ্রিলে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক ঘটার পর এখন পর্যন্ত নয় ম্যাচে পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন, ব্যাট হাতে ১৮.৮০ গড়ে ৯৪ রান সংগ্রহ করেছেন।
ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছে ২০১৭ সালে অক্টোবরে। এখন পর্যন্ত ১০ ম্যাচে ২৯.১৬ ব্যাটিং গড়ে ১৭৫ রান সংগ্রহ করার পাশাপাশি সাত উইকেট শিকার করেছেন। সেরা বোলিং বিশ্লেষণ ৪৫ রানের বিনিময়ে তিন উইকেট। দলে এখনও নিয়মিত না হলেও সাম্প্রতিক সময়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত বোলিং করে বিশ্বকাপের স্কোয়াডে জায়গা করে নেন। ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে দলে একজন বাড়তি পেসার খেলানোর পরিকল্পনা সব দলই করে রেখেছে। বাংলাদেশও পরিকল্পনা অনুযায়ী বোলিং অলরাউন্ডার সাইফুদ্দিনকে স্কোয়াডে রেখেছে।
শাদাব খান
টেস্ট ক্রিকেটে পাকিস্তানের নিয়মিত মুখ ইয়াসির শাহ। এই ফরম্যাটে তার সফলতাও আকাশচুম্বী। সেই তুলনায় ওয়ানডে ফরম্যাটে খুব একটা কার্যকরী নন তিনি। যার ফলে ২০১৭ সালের মার্চে পাকিস্তানের হয়ে লিমিটেড ওভারের ক্রিকেটে সুযোগ পান আরেক লেগস্পিনার শাদাব খান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকে এখন পর্যন্ত খেলেছেন পাঁচটি টেস্ট, ৩৪টি ওয়ানডে এবং ৩২টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।
লেগস্পিন বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও বেশ সফল তিনি। এখন পর্যন্ত পাঁচ টেস্টে ১২ উইকেট শিকার করার পাশাপাশি তিন অর্ধশতকের সাহায্যে ৩৪.২৮ ব্যাটিং গড়ে ২৪০ রান সংগ্রহ করেছেন। ওয়ানডেতে ৩৪ ম্যাচে তার উইকেট সংখ্যা ৪৭টি। লোয়ার-অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসাবেও বেশ সফল। এই ফরম্যাটেও তিনটি অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন। ব্যাটিং গড়ও বেশ সন্তোষজনক। ২৯.৪০ ব্যাটিং গড়ে ২৯৪ রান করেছেন।
লিমিটেড ওভারের ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করার সুবাদে ইয়াসির শাহকে টপকে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা করে নিয়েছেন এই তরুণ লেগস্পিনার। তিনি ২০১৬ সালে পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দলের সাথে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তখনই জানান দিয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে খুব বেশি দূরে নেই তিনি। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ছয় ম্যাচে ১৯.০০ বোলিং গড়ে ১১ উইকেট শিকার করেছিলেন। সেরা বোলিং বিশ্লেষণ ছিল নয় রানের বিনিময়ে চার উইকেট। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলার পর পাকিস্তান সুপার লিগেও দুর্দান্ত বোলিং করে নির্বাচকদের নজর কাড়েন তিনি। যার সুবাদে খুব দ্রুত পাকিস্তানের হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার সুযোগ পান শাদাব খান।
শাহীন শাহ আফ্রিদি
পাকিস্তানের অভিজ্ঞ এবং পরীক্ষিত পেসার মোহাম্মদ আমিরকে টপকে বিশ্বকাপের স্কোয়াডে জায়গা করে নেন তরুণ উদীয়মান পেসার শাহীন শাহ আফ্রিদি। আমির স্কোয়াডে থাকলেও তার জায়গা একপ্রকার নিশ্চিত ছিল। তিনি পাকিস্তানের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলেছেন ২০১৮ সালে। আসরে পাকিস্তানের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকার করেছেন। এক ইনিংসে ১৫ রানের বিনিময়ে ছয় উইকেটসহ পাঁচ ম্যাচে ১৪.৫৮ বোলিং গড়ে ১২ উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি।
একজন পেসারের মধ্যে প্রাথমিক যেসব গুণাগুণ থাকা প্রয়োজন, তার সবকিছুই বিদ্যমান ছিল তার মধ্যে। ছয় ফুট ছয় ইঞ্চি উচ্চতাসম্পন্ন এই বাঁহাতি পেসার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট এবং পাকিস্তানের হয়ে ডোমেস্টিক ক্রিকেট খেলার আগেই বিপিএলে দল পান। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি তার। পাকিস্তানের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের অভিষেক ম্যাচেই ৩৯ রানের বিনিময়ে আট উইকেট শিকার করেছিলেন, যা অভিষেক ম্যাচে কোনো পাকিস্তানির সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড।
ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত বোলিং করে ২০১৮ সালের এপ্রিলেই পাকিস্তানের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে শাহিন শাহ আফ্রিদির। ইতঃমধ্যে খেলেছেন তিনটি টেস্ট, দশটি ওয়ানডে এবং নয়টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। তিন টেস্টে ১২ উইকেট, দশটি ওয়ানডেতে ১৯ উইকেট এবং নয়টি টি-টোয়েন্টিতে ১৩ উইকেট শিকার করে নিজের সামর্থ্যের জানান দিয়েছেন তিনি। এই বাঁহাতি পেসার আসন্ন বিশ্বকাপে পাকিস্তানের তুরুপের তাস হতে পারেন।
আভিষ্কা ফার্নান্ডো
শ্রীলঙ্কার ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে বেশ কয়েকজন নিয়মিত মুখ সুযোগ পাননি। দীনেশ চান্দিমাল, উপুল থারাঙ্গা, নিরোশান ডিকভেলার মতো পরীক্ষিত ব্যাটসম্যানরা স্কোয়াডে জায়গা করে নিতে পারেননি। মূলত গত বিশ্বকাপের পর থেকেই শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড একের পর এক রদবদল করে যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলার পরপরই জাতীয় দলে ডাক পেয়ে যান আভিষ্কা ফার্নান্ডো। তখনও তার বয়সভিত্তিক পর্যায়ে ছাড়া আর কোনো ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা হয়নি।
লিস্ট-এ অথবা ফার্স্টক্লাস অথবা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট, কোনো পর্যায়ে ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা ছাড়াই তিনি জাতীয় দলে ডাক পেয়ে যান অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত ব্যাটিং করার সুবাদে। কোয়ার্টার ফাইনালে তার ৯৬ বলে ৯৫ রানের ইনিংসের উপর ভর করে শ্রীলঙ্কা সেমিফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। এরপর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজেও দু'টি শতক হাঁকান তিনি। ২০১৬ সালের আগস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। অভিষেক ম্যাচে রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফিরে যান তিনি।
ফার্নান্ডো এখন পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার হয়ে পাঁচটি ওয়ানডেতে ১৪.২০ ব্যাটিং গড়ে মাত্র ৭১ রান করেছেন। টি-টোয়েন্টিতেও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। তিন ম্যাচে ৫.৬৬ ব্যাটিং গড়ে করেছেন মাত্র ১৭ রান। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এখনও বড় ইনিংস খেলতে না পারলেও লিস্ট-এ ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে রানের দেখা পাচ্ছেন তিনি। লিস্ট-এ ক্রিকেটে ২১ ইনিংসে ব্যাট করে চারটি শতক এবং পাঁচটি অর্ধশতকের সাহায্যে সহস্রাধিক রান করেছেন তিনি। এতে করে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার স্কোয়াডে জায়গা করে নেন ২০১৬ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা আভিষ্কা ফার্নান্ডো।
শিমরন হেটমায়ার
শিমরন হেটমায়ারের নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০১৬ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের শিরোপা জেতে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩৫ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেছিলেন উইন্ডিজ যুব দলের অধিনায়ক। এরপর আর সেভাবে পারফর্ম করতে পারেননি। তবে দলের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যাট করতে পেরেছিলেন তিনি, টুর্নামেন্টে ছয় ম্যাচে দু'টি অর্ধশতকের সাহায্যে ২৬.৩৩ ব্যাটিং গড়ে ১৫৮ রান করেছিলেন তিনি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার অভিষেক ঘটে ২০১৭ সালের এপ্রিলে। অভিষেকের পর থেকেই দুর্দান্ত ব্যাটিং করতে থাকেন তিনি। বিশেষ করে ওয়ানডে ফরম্যাটে তার রান তোলার হার বেশি ছিল। ২৫ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ইতঃমধ্যে চারটি শতক হাঁকিয়েছেন তিনি। ১১০.৩০ স্ট্রাইকরেটে এবং ৪০.৮৬ ব্যাটিং গড়ে রান করে তারকাখ্যাতি অর্জন করে ফেলেছেন হেটমায়ার। দ্রুত রান তোলার সামর্থ্য থাকার দরুন আইপিএলেও চড়া দামে বিক্রি হন তিনি।
সাম্প্রতিক সময়ে হেটমায়ার খুব একটা ছন্দে নেই। সর্বশেষ দশটি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে তার সর্বোচ্চ ইনিংস মাত্র ১৪ রানের। আইপিএলেও নিজের নাম এবং দামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। তবে গত কয়েক বছর ধরে রঙিন পোশাকে নিয়মিত রানের দেখা পাওয়ার কারণে উইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড তাকে বিশ্বকাপের স্কোয়াডে রাখে। এমন আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান যেদিন উইকেটে থিতু হতে পারবেন, ঐদিন একাই দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছানোর ক্ষমতা রাখেন।
রাশিদ খান
রাশিদ খান ইতিমধ্যে তারকা খ্যাতি অর্জন করে ফেলেছেন। যেকোনো দলে অনায়াসে জায়গা করে নেওয়ার সামর্থ্য রয়েছে তার। টি-টোয়েন্টিতে বর্তমানে তিনি বিশ্বসেরা স্পিনার, বিশ্বসেরা বোলার বললেও ভুল হবেনা। ২০১৫ সালের অক্টোবরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক ঘটার পর এখন পর্যন্ত খেলেছেন ১৬৭ ম্যাচ, উইকেটসংখ্যা ২৫১টি। বিশ্বের নানাপ্রান্তে খেলে বেড়ান তিনি। এই লেগস্পিনারের ঘূর্ণিতে কুপোকাত হয়েছে বিশ্বের নামীদামী সব ব্যাটসম্যান। আসন্ন বিশ্বকাপে আফগানিস্তান কত দূর যাবে, তার অনেকটাই নির্ভর করছে রাশিদ খানের উপর।
রশিদ খানের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছিল ২০১৫ সালের অক্টোবরে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ম্যাচ খেলার পর ২০১৬ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলেন তিনি। আসরে মোট ছয় ম্যাচ খেলে ১৭.১০ বোলিং গড়ে দশ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। সেরা বোলিং বিশ্লেষণ ১৬ রানের বিনিময়ে তিন উইকেট।
রাশিদ খান বর্তমানে ওয়ানডেতে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। বল হাতে মাত্র ৫৭ ম্যাচে ১২৩ উইকেট শিকার করার পাশাপাশি ব্যাট হাতে ৭৮২ রান সংগ্রহ করেছেন ১০০.৭৭ স্ট্রাইকরেটে। একাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য রয়েছে তার। ওয়ানডে ফরম্যাটের পাশাপাশি টি-টোয়েন্টিতেও আফগানিস্তানের সেরা বোলার তিনি। আফগানদের মাত্র ৩৮ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৭৫ উইকেট শিকার করেছেন তিনি।
মুজিব-উর রহমান
আফগানিস্তানের রহস্যময় স্পিনার মুজিব-উর রহমান নিউ জিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ২০১৮ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলেন। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে নিউ জিল্যান্ডকে শেষ চারে জায়গা করে নিতে বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। ম্যাচে মাত্র ১৪ রানের বিনিময়ে চার উইকেট শিকার করেছিলেন মুজিব। এছাড়া ঐ আসরে খুব একটা সফল ছিলেন না তিনি। এই ম্যাচ বাদে চার ম্যাচে দুই উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলার আগে আফগানিস্তানের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে মুজিব-উর রহমানের। এরপর আইপিএলে তাকে চার কোটি রুপিতে দলে ভেড়ায় কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। স্পিনার হলেও নতুন বলে বোলিং করে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি। এখন পর্যন্ত ২৮টি ওয়ানডেতে মাত্র ১৮.৮০ বোলিং গড়ে এবং ওভারপ্রতি ৩.৭৪ রান খরচায় ৫১ উইকেট শিকার করেছেন। টি-টোয়েন্টিতে নয় ম্যাচে ১১ উইকেট শিকার করেছেন। উইকেটসংখ্যা খুব বেশি না হলেও রান দেওয়ার দিক থেকে বেশ কৃপণ ছিলেন, ওভারপ্রতি গড়ে ৫.৩৪ রান খরচ করেছেন।
২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে আফগানিস্তানের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা মুজিব-উর রহমান ২০১৯ সালে আফগানিস্তানের হয়ে বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলবেন। তিনি এবং রাশিদ খান নিজেদের দিনে যেকোনো ব্যাটিং লাইনআপ তছনছ করে দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন। দল হিসাবে খুব দ্রুত উন্নতি করা আফগানিস্তানকে বিশ্বকাপে ফেভারিট হিসাবে বিবেচনা করা না হলেও নিজেদের দিনে যেকোনো দলকে হারানোর ক্ষমতা রাখে তারা।
This article is in Bangla language. It is about Some Young Guns Who Played Recent Two Under-19 World Cup And Now Named World Cup Squad. Please click on the hyperlinks to check the references.
Featured Image: Getty Images