Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আমি স্বপ্নে বাস করছি: ক্রোয়েশিয়া কোচ দালিচ

৫১ বছর বয়স।

বড় কোনো দলে খেলার অভিজ্ঞতা নেই, নেই বড় কোনো দলকে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতাও। মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দলকে কোচিং করিয়েছেন, আর ক্রোয়েশিয়ার যুব দলের দায়িত্বে ছিলেন। এই অভিজ্ঞতা নিয়েই গত বছর হঠাৎ ক্রোয়েশিয়ার সোনালী প্রজন্মের জাতীয় দলের কোচ হয়ে গেছেন জ্লাতকো দালিচ।

এখন অবধি তার চলার পথ রূপকথার মতো। দেখতে দেখতে সেমিফাইনালে চলে গেছে ক্রোয়েশিয়া।

বিশ্বকাপে এই অভিজ্ঞতা, চাপ এবং স্বপ্ন নিয়ে কথা বলেছেন ক্রোয়েশিয়ার কোচ জ্লাতকো দালিচ। তার একান্ত সাক্ষাতকার প্রকাশিত হয়েছে দ্য ন্যাশনাল-এ।

কফি শপটা টিম হোটেল থেকে বেশি দূরে নয়। ফিশত স্টেডিয়াম থেকেও খুব দূরে নয়। এই কফি শপে বসে কথা বলছিলেন জ্লাতকো দালিচ। ক্রোয়েশিয়ার স্বপ্ন যাত্রার অন্যতম কাণ্ডারি জ্লাতকো দালিচ, সোনালী প্রজন্মের এই দলটির কোচ তিনি।।

ভ্রুটা একটু নাচিয়ে দালিচ নিজের অবস্থা বুঝিয়ে বললেন,

আমি আসলে স্বপ্নের মধ্যে বসবাস করছি।

দালিচের পেছন দিকেই একটা টেলিভিশনে ক্রোয়েশিয়ার ম্যাচ দেখাচ্ছিলো তখন। গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে আইসল্যান্ডের বিপক্ষে খেলাটির পুনঃপ্রচার হচ্ছিলো। এই খেলাটিতেই নব্বই মিনিটে এসে ইভান পেরিসিচ গোল করে ২-১ ব্যবধানে জয় নিশ্চিত করেন। ফলে মাত্র তিনটি দলের একটি হিসেবে শতভাগ জয়ের রেকর্ড নিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছিলো ক্রোয়েশিয়া। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল অবধি অন্তত সেই জয়যাত্রা অব্যাহত ছিলো।

আল হিলালে ছিলেন দালিচ; Image Source: Yahoo Sports

এই পথে তারা হারিয়ে এসেছে গত বিশ্বকাপের রানার্সআপ ও দুবারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে। লিওনেল মেসির দলকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়াটা এবার গ্রুপ পর্বে যেকোনো দলের সেরা পারফরম্যান্স ছিলো সম্ভবত।

দালিচ বলছিলেন, 

আমরা অসাধারণ খেলেছিলাম। ওটা আমাকে খুব গর্বিত করেছে।

আবার বিপরীতে শেষ ষোলতে ঢুকতে হয়েছে ক্রোয়েশিয়াকে। সেখানে তাদের লড়াই ছিলো ডেনমার্কের সাথে। এখানে ক্রোয়েশিয়া সহজে জয় পাবে বলে আগে মনে করা হয়েছিলো। কিন্তু তা হয়নি। অতিরিক্ত সময়ে অধিনায়ক ও এই সময়ের বিশ্বসেরা একজন মিডফিল্ডার লুকা মদ্রিচ পেনাল্টি মিস করে বসেন। ফলে পেনাল্টি শুটআউটে গড়ায় খেলা। গোলরক্ষক দানিজেল সুবাসিচ বীরত্ব দেখিয়ে উদ্ধার করেন ক্রোয়েশিয়াকে।

পেনাল্টিতে নিজের দলের দুটি মিস, টানটান উত্তেজনা, ইভান রাকিটিচের শেষ শট নিতে যাওয়া; এই নাটকীয়তা সহ্য করতে পারেননি দালিচ। মাথায় হাত দিয়ে, মুখ ঢেকে একা একা বেঞ্চে বসেছিলেন। শেষ অবধি রাকিটিচ গোল করলেন, উল্লাসে মাতলো ক্রোয়েশিয়া এবং চোখ মেললেন দালিচ। চোখ মেলে গ্যালারিতে বসে থাকা দুই ছেলে আর স্ত্রীর দিকে ফিরে তাকালেন। আবেগে ঝাপসা হয়ে এলো চোখ। সাধারণত দালিচ এই আবেগগুলো লুকিয়ে রাখেন। কিন্তু এই দিনটা নিজেকে লুকানোর ছিলো না।

দালিচ সেই সময়ের কথা বলছিলেন,

আমার অবশ্যই শান্ত থাকা উচিত ছিলো। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে অসম্ভব হয়ে পড়েছিলো।

নিজের সেই সময়ের দৃশ্যটা আরেকবার দেখে একটু বিব্রতই হলেন দালিচ। তারপর বলছিলেন,

ওই মুহূর্তটার ওপর সবকিছু নির্ভর করছিলো। আমরা অবশ্যই আমাদের সেরা খেলাটা খেলিনি সেদিন। তবে আমরা ওই ম্যাচটায় লড়েছি এবং নিজেদের চরিত্র দেখিয়ে দিয়েছি।

এই চারিত্রিক দৃঢ়তা দালিচের দল বাছাইপর্বেও দেখিয়ে এসেছে। সেখানে ক্রোয়েশিয়াকে প্লে অফ খেলে আসতে হয়েছিলো। প্রথম পর্বে আইসল্যান্ডের পেছনে থেকে শেষ করেছিলো তারা বাছাইপর্ব। এরপর গ্রিসের বিপক্ষে প্লে অফ খেলে নিশ্চিত করতে হয়েছে বিশ্বকাপ।

এখন সেই ক্রোয়েশিয়া সেমিফাইনালে চলে গেছে। তাদের স্বপ্নটা আরও বড় হয়েছে। দালিচেরও স্বপ্ন বড় হয়েছে। গত অক্টোবরে আন্তে কেচিসের বদলে ক্রোয়েশিয়ার দায়িত্ব নেওয়া দালিচের জন্য চ্যালেঞ্জটা খুব কঠিন ছিলো। দালিচ সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন।

আল আইনের দায়িত্বে ছিলেন যখন; Image Source: The National

একজন মিডফিল্ডার ছিলেন খেলোয়াড়ি জীবনে। কখনো জাতীয় দলে সুযোগ পাননি। জাতীয় অনূর্ধ্ব-২১ দলকে কোচিং করিয়ে পরিচিতি পেয়েছেন।

২২ জন খেলোয়াড় এবং একগাদা কোচিং স্টাফকে ৪০ দিন ধরে সন্তুষ্ট রাখা সহজ কথা নয়। একটা ধারণা ছিলো যে, দালিচ প্রয়োজনে কঠোর হতে পারবেন না। বিশ্বকাপের শুরুতেই সেই ধারণা বদলে দিয়েছেন। বদলি হিসেবে নামতে রাজি না হওয়াতে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন নিকোলা কালিনিচকে। সেই ঘটনা ভুলে ক্রোয়েশিয়া লড়ে যাচ্ছে। এখন বিশ্বের সেরা দুই মিডফিল্ডার মদ্রিচ ও রাকিটিচের নেতৃত্বে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে ক্রোয়েশিয়া।

শুরুতে অনেকের সন্দেহ ছিলো দালিচকে নিয়ে। সেই সন্দেহ দূর হয়েছে। পাল্টা এখন অনেক অভিনন্দন পাচ্ছেন।

কথা বলতে বলতেই ফোনে ম্যাসেজ আসার শব্দ হচ্ছিলো। সেদিকে চেয়ে বললেন,

আমি অনেক মেসেজ পাচ্ছি। এর সবগুলোর উত্তর আমি দিতে পারছি না। কিন্তু ক্রোয়েশিয়া থেকে তো বটেই, আরব আমিরাত বা সৌদি আরব থেকেও অনেক মেসেজ পাচ্ছি।

এগুলো সত্যিই আমাকে এই দলটা নিয়ে কিছু একটা অর্জন করার শক্তি যোগাচ্ছে। আল আইন (আরব আমিরাতের ফুটবল ক্লাব) থেকে অনেক মেসেজ আসছে। ওখানে আমি আমার জীবনের তিনটে বছর পার করেছি। তারা আমাকে আমার নাম তৈরিতে সহায়তা করেছে।

তারা আমাকে খুব বড় একটা কাজ দিয়েছিলো। তারা আমাকে অভিজ্ঞতা দিয়েছে, সমর্থন দিয়েছে, অবশ্যই আমাকে অনেক টাকাও দিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, আমাকে একটা খ্যাতি এনে দিয়েছে। আমি ওদেরকে আজীবন আমার হৃদয়ে রাখবো। আমি সবসময় আমার পেছনে ওদের সমর্থন টের পাই।

ক্রোয়েশিয়ার ক্যাম্পে; Image Source: EPA

দালিচের জনপ্রিয়তা যে বাড়ছে, সেটা টের পাওয়া গেলো। যে ঘণ্টাখানেক সাক্ষাতকার দিলেন, তার মধ্যেই অনেকবার ফটোগ্রাফারদের ডাকে সাড়া দিয়ে ছবি তুলতে হলো। এমনকি রাশিয়ার সমর্থকরাও তার ছবি তুলছে!

দালিচ এই রাশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটাকে তুলনা করলেন তার আল আইনের অভিজ্ঞতার সাথে। কিন্তু আল আইন বা আল হিলালের অভিজ্ঞতাকে কি বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালের সাথে মেলানো চলে? কিভাবে এটা সম্ভব হয়?

আল আইনে দালিচ জিতেছেন অ্যারাবিয়ান গালফ লিগ এবং প্রেসিডেন্ট কাপ, মাত্র ১ গোলে হেরেছেন এশিয়ান চ্যাম্পিয়নস লিগে। অবশ্যই এখন তার চেয়ে অনেক বড় মঞ্চে খেলছেন। কিন্তু দালিচ আল আইনের অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিলেন,

ঠিক আছে, এখনকার এটা ভিন্ন। কিন্তু ওখানেও এরকম অনেক চাপ ছিলো। বিশেষ করে আমরা যখন এশিয়ান চ্যাম্পিয়নস লিগে অনেকদূর চলে গেলাম, তখন।

তবে আমার একটা ভালো রেকর্ড ছিলো। আমিই ওখানকার একমাত্র কোচ যে, চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে টানা চারবার গ্রুপপর্ব পার করেছি।

আল আইনের সাথে আমরা যে এত কাছে চলে গিয়েছিলাম! লোকজন খুব চাচ্ছিলো, আমরা যাতে শিরোপাটা জিতি। জিওনবাকের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল হারের সেই অভিজ্ঞতাটা আমার এখনও মনে আছে। ওটা আমার সারা জীবন মনে থাকবে।

ডাগ আউটে দালিচ; Image Source: AFP/Getty Images

রাশিয়া বিশ্বকাপ এখন দালিচকে নতুন একটা স্মৃতি তৈরির সুযোগ করে দিচ্ছে। আল আইন এবং যা কিছু দালিচকে আজকের দালিচ তৈরি করেছে, তার সবকিছুর চূড়ান্ত পরীক্ষা নেবে এবার বিশ্বকাপ। এই বিশ্বকাপে নতুন এক দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে আস্তে আস্তে।

দালিচও এটাকে সবার ওপরে রেখেই বলেছেন,

এটা আমার জাতীয় দল। এটা আমার দেশ। এরা আমার দেশের মানুষ। এজন্যই আমি এখানে আমার সবটুকু উজাড় করে দিচ্ছি। আমাকে নিজের সবটুকু এখানে দিয়ে দিতেই হবে।

ফিচার ইমেজ: The National

Related Articles