Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অ্যান্ড্রয়েড গো: স্বল্প বাজেট স্মার্টফোনে এবার গুগলের অফিসিয়াল অ্যান্ড্রয়েড

সফটওয়্যার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান গুগলের ‘অ্যান্ড্রয়েড গো‘ হচ্ছে এমন একটি অ্যান্ড্রয়েডভিত্তিক প্লাটফর্ম, যার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে সব শ্রেণীর মানুষের জন্য স্বল্প দামে অ্যান্ড্রয়েড চালিত স্মার্টফোন নিশ্চিত করা। অ্যান্ড্রয়েড গো মূলত সাম্প্রতিক সময়ের অত্যন্ত জনপ্রিয় অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ অরিওর একটি হালকা সংস্করণ (Lite version), যা পরিচালিত হতে মূল অ্যান্ড্রয়েড থেকে অপেক্ষাকৃত কম শক্তিসম্পন্ন হার্ডওয়্যারের প্রয়োজন। অপেক্ষাকৃত স্বল্পোন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে সব ধরণের গুগল সেবার সাথে সম্পৃক্ত করতেই গুগলের এই প্রচেষ্টা। অ্যান্ড্রয়েড গো সংস্করণে গুগল মূলত তিনটি বিষয়ে প্রাধান্য দিয়েছে- অপারেটিং সিস্টেম, প্লে স্টোর এবং গুগল অ্যাপ।

এই তিনটি স্তরে পরিমার্জনের মধ্য দিয়ে অপেক্ষাকৃত হালকা হার্ডওয়্যারের নিম্ন বাজেটের স্মার্টফোনের জন্য কম র‍্যামের উপযোগী অ্যাপ পরিচালনা করাই এই প্রজেক্টের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য।

‘অ্যান্ড্রয়েড গো’ একটি অ্যান্ড্রয়েড ভিত্তিক প্লাটফর্ম; Image Source: Ars Technica

অপারেটিং সিস্টেম

অ্যান্ড্রয়েড গো প্রজেক্টে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে অ্যান্ড্রয়েড অরিও সংস্করণকে ৫১২ মেগাবাইট এবং ১ গিগাবাইট র‍্যামের স্মার্টফোনে পরিচালনা করার জন্য বিশেষভাবে পরিমার্জন করা হয়েছে। ফলে অপেক্ষাকৃত কম রমের ফোনগুলোতে একদমই কম জায়গায় এই বিশেষ অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়াই কাজ করে। গুগল থেকে বলা হচ্ছে,

বিশেষ এই ‘অ্যান্ড্রয়েড গো’ সংস্করণে অ্যান্ড্রয়েড নওগ্যাট সংস্করণের ঠিক অর্ধেক অভ্যন্তরীণ জায়গার প্রয়োজন। কাজেই, একটি ৮ অথবা ১৬ গিগাবাইট অভ্যন্তরীণ রম এবং ৫১২ মেগাবাইট অথবা ১ গিগাবাইট র‍্যামের কোনো বাজেট স্মার্টফোনে গুগলের ফ্লাগশিপ স্মার্টফোন সিরিজ পিক্সেলের মতোই স্টক অ্যান্ড্রয়েড উপভোগ করা সম্ভব হবে।

‘অ্যান্ড্রয়েড গো’ পরিচালিত স্মার্টফোনগুলো অপেক্ষাকৃত কম রম এবং র‍্যামসম্পন্ন হলেও চিন্তার কোনো কারণ নেই। কেননা, ঠিক অ্যান্ড্রয়েড অরিওর মতো এই অ্যান্ড্রয়েড প্লাটফর্ম আগের যেকোনো অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ থেকে অন্ততপক্ষে ১৫ শতাংশ দ্রুত যেকোনো অ্যাপ পরিচালনা করতে পারবে। এছাড়া এই ফোনের সম্ভাব্য ব্যবহারকারীদের কথা চিন্তা করে গুগল এই অ্যান্ড্রয়েড প্লাটফর্মের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে ‘ডাটা সেভার’ অপশনটি চালু রেখেছে। ফলাফল হিসেবে ব্যবহারকারীরা অপেক্ষাকৃত কম ডাটাতে সর্বাধিক ইন্টারনেট সুবিধা পাবেন।

এই প্লাটফর্মের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে থাকছে ‘ডাটা সেভার’; Image Source: Android Authority

অ্যাপ সুবিধা

আগেই বলা হয়েছে, অ্যান্ড্রয়েড গো প্লাটফর্মটি অপেক্ষাকৃত কম র‍্যাম এবং অভ্যন্তরীণ স্থানসম্পন্ন স্মার্টফোনগুলোকে উদ্দেশ্য করে তৈরি করা হয়েছে। কাজেই এক্ষেত্রে গুগল তাদের নিজস্ব অ্যাপগুলোর সাধারণ আকারের বদলে অ্যান্ড্রয়েড গো প্লাটফর্মের জন্য অপেক্ষাকৃত ছোট ছোট অ্যাপ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গুগলের তরফ থেকে নতুন  অ্যান্ড্রয়েড গো স্মার্টফোনগুলোতে শুধুমাত্র ৯টি গুগল অ্যাপ সন্নিবেশিত থাকছে- গুগল গো, গুগল এসিস্ট্যান্ট গো, ইউটিউব গো, গুগল ম্যাপস গো, জিমেইল গো, জিবোর্ড গো, গুগল প্লে গো, ক্রোম এবং ফাইলস গো।

এই অ্যাপগুলোতে নতুনত্ব আনার কারণে দু-একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য ক্ষেত্রবিশেষে থাকছে না। যেমন- সাধারণ অ্যান্ড্রয়েড  গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাপের মাধ্যমে  যেকোনো ধরনের রিমাইন্ডার অথবা স্মার্ট হোম ডিভাইস নিয়ন্ত্রণের সুযোগ থাকলেও অ্যাসিস্ট্যান্ট গো অ্যাপের ক্ষেত্রে এই ধরনের সুযোগ থাকছে না। কিন্তু অধিকাংশ দরকারি সেবার ক্ষেত্রে এই প্লাটফর্মে গুগল অ্যাপগুলো ঠিক সমান কাজ করবে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গুগল প্রাথমিকভাবে এই ৯টি অ্যাপ নিয়ে অ্যান্ড্রয়েড গো প্লাটফর্মের যাত্রা শুরু করলেও অদূর ভবিষ্যতেই আরও নতুন নতুন অ্যাপ এই প্লাটফর্মের উপযোগী করে বের করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এছাড়া ডেভেলপাররা চাইলেই এই প্লাটফর্মের উপযোগী অ্যাপ তৈরি করতে পারবেন। সাধারণ অ্যান্ড্রয়েডের অধিকাংশ অ্যাপই অ্যান্ড্রয়েড গো প্লাটফর্ম সমর্থন করবে। কাজেই ভোক্তা বা ব্যবহারকারীদের জন্য চিন্তিত হবার কোনো কারণ নেই।

প্লে স্টোর

‘অ্যান্ড্রয়েড গো’ প্লাটফর্মে স্মার্টফোনগুলোতে শুধু কয়েকটি গুগল অ্যাপে নয়, বরং গুগল প্লে স্টোরেও একটি নতুনত্ব থাকছে। কম র‍্যাম এবং রমবিশিষ্ট অ্যান্ড্রয়েড গো স্মার্টফোনগুলো ঠিক যে অ্যাপগুলো পরিচালনা করতে সক্ষম, গুগল প্লে স্টোরের একটি অপশন ব্যবহারকারীদের জন্য ঠিক সেই বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অ্যাপগুলোই প্রদর্শন করবে। সাধারণ অ্যাপের পরিবর্তে ব্যবহারকারীরা এক্ষেত্রে চাইলে গুগলের রিকমেন্ড অ্যাপগুলো ব্যবহার করে তাদের স্মার্টফোনগুলো ‘অ্যাপজনিত ল্যাগ’ থেকে মুক্ত রাখতে পারবেন।   

গুগল প্লে স্টোরে থাকছে একটি নতুন ফিচার; Image Source: Android Authority

‘অ্যান্ড্রয়েড গো’ প্লাটফর্মের উপযোগিতা

ব্রাজিল, ভারত, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্মার্টফোনের উপযোগিতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গুগলের এক জরিপ থেকে পাওয়া তথ্যমতে-

উন্নয়নশীল অঞ্চলগুলোতে অধিকাংশ মানুষ প্রতিনিয়ত দারিদ্রের সাথে পাল্লা দিয়ে তাদের জীবন পরিচালনা করে। এই অঞ্চলের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা উন্নত দেশগুলোর থেকে অনেকটাই কম। এই অঞ্চলের মানুষ প্রযুক্তিকে ভালবাসে এবং এদের জীবনের মানোন্নয়নে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রযুক্তি আসলেই এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। যেহেতু এই পরিবর্তন উন্নতির পরিবর্তন, সেহেতু এই পরিবর্তন আসলেই জরুরি।

ঠিক এই কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোর কোটি কোটি মানুষের জন্য অপেক্ষাকৃত সুলভ দামে গুগল অ্যান্ড্রয়েড সেবা সবার হাতে হাতে পৌঁছে দিতেই গুগলের তরফ থেকে এই প্রচেষ্টা। গুগল আশা করছে, এসব মানুষের হাতে সাম্প্রতিক প্রযুক্তির  অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস পৌঁছে দিতে পারলে আরও অন্তত প্রায় ১ বিলিয়ন ব্যবহারকারী সরাসরি গুগল থেকে জীবনের নানা ক্ষেত্রে সুবিধা নিতে পারবেন। ঠিক এই কারণেই ১০০ ডলারের কম দামে সবার হাতে স্মার্টফোন পৌঁছে দিতেই গুগলের এই ‘অ্যান্ড্রয়েড গো’ প্লাটফর্মের যাত্রা।

‘অ্যান্ড্রয়েড গো’ সবার জন্য; Image Source: Android Authority

প্রতিবন্ধকতা

সব শ্রেণীর মানুষকে গুগলের সাথে সম্পৃক্ত করার বিষয়টি গুগলের একটি চমৎকার উদ্যোগ হলেও এক্ষেত্রে আসলে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। ‘অ্যান্ড্রয়েড গো’ প্লাটফর্মকে এখনো একটি প্রাথমিক উদ্যোগ হিসেবে অভিহিত করা যায়। গুগলের পক্ষ থেকে কয়েকটি অ্যাপ নিয়ে এই প্লাটফর্ম যাত্রা শুরু করলেও এখনো পর্যাপ্ত অ্যাপ এই প্লাটফর্মের ব্যবহারকারীদের জন্য তৈরি হয়নি। গুগল এ নিয়ে কাজ করলেও ডেভেলপারদের থেকে এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণ সাড়া পাওয়া যায়নি। বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েড ডেভেলপাররা মূলত গো প্লাটফর্মের থেকে মূল অ্যান্ড্রয়েড প্লাটফর্মের জন্যই অ্যাপ তৈরিতে বেশি সাড়া দিচ্ছেন। তবে আশার কথা হচ্ছে, সময়ের সাথে সাথে এই অ্যান্ড্রয়েড প্লাটফর্মের ব্যবহারকারী দিন দিন বাড়ছে। কাজেই বর্তমান সময়ে এই প্লাটফর্ম উপযোগী অ্যাপ তৈরিতে ডেভেলপাররা বেশ ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছেন।

নকিয়ার প্রথম ‘অ্যান্ড্রয়েড গো’ পরিচালিত স্মার্টফোন; Image Source: Android Authority

গুগলের প্রচেষ্টা

সাম্প্রতিক সময়ে এই প্লাটফর্মকে আরও উন্নত করতে গুগল বেশ কিছু পার্টনার প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ শুরু করেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অ্যালকাটেল, নকিয়া, জেনারেল মোবাইল, লাভা, মাইক্রোমাক্স, অ্যাসুস, হুয়াওয়ে ইত্যাদি। এছাড়া রয়েছে কয়েকটি মোবাইল প্রসেসর এবং গ্রাফিক্স কোম্পানি। বিভিন্ন দেশে সহজেই এই প্লাটফর্মের স্মার্টফোন চালু করতেই পার্টনার প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে গুগলের এই সমন্বয়। গুগল যেভাবে কাজ কাজ করছে তাতে অল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের দেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সবার হাতে হাতে ‘অ্যান্ড্রয়েড গো ডিভাইস’ পৌঁছে যাওয়া অসম্ভব নয়। অদূর ভবিষ্যতে একদিন আমাদের রিকশার কোনো চালক অথবা কোনো গার্মেন্টস কর্মীর হাতে স্টক অ্যান্ড্রয়েড পরিচালিত ‘অ্যান্ড্রয়েড গো’ স্মার্টফোন দেখলে একটুও অবাক হতে হবে না।

কয়েকটি ‘অ্যান্ড্রয়েড গো’ পরিচালিত স্মার্টফোন- 

· অ্যালকাটেল ১এক্স
· নকিয়া ১
· জেনারেল মোবাইল জি এম ৮গো
· লাভা জেড ৫০
· মাইক্রোমাক্স ভারত গো
· অ্যাসুস জেনফোন লাইভ এল১
· হুয়াওয়ে ওয়াই ৩ (২০১৮)

Featured Image- Ars Technica

Related Articles