Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আইফোন: বিশ্বের সবচেয়ে কুলীন মোবাইল ব্র্যান্ডটির বিবর্তন

পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার আর সকল ক্ষেত্রের মতো, মোবাইল ফোনের দুনিয়ায়ও কৌলিন্য প্রথা বেশ ভালো রকম বিদ্যমান। আর এখানে যে ব্র্যান্ডটির কদর সবচাইতে বেশি, সেটি হলো আইফোন। অনেকের কাছেই যেন আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয় এটি। কার সামাজিক অবস্থান কেমন, তা নিরূপণ করার ক্ষেত্রেও একটি আইফোন পালন করতে পারে বিশেষ ভূমিকা। সেজন্য আইফোন কিনতে এমনকি নিজের শরীরের কিডনি বিক্রির ঘটনারও সাক্ষী হয়েছে বিশ্ববাসী।

প্রথম আইফোন বাজারে আসার এক যুগ পেরিয়ে গেলেও, এবং ইতিমধ্যেই বাজারে আইফোনের চেয়েও গুণে-মানে শ্রেয়তর অনেক মোবাইল ফোনের আবির্ভাব ঘটলেও, আইফোনের প্রতি সর্বসাধারণের আকর্ষণ স্থিতিশীল সেই প্রাথমিক অবস্থায়ই। তবে অর্থনৈতিকভাবে আর খুব বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে নেই আইফোন। বিক্রি কমে যাওয়ায়, সর্বশেষ তিন মাসে আইফোন বিক্রি থেকে এর প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের লাভের পরিমাণ ১৫% হ্রাস পেয়েছে। সেজন্যই কি না, অ্যাপল প্রধান টিম কুক ইঙ্গিত দিয়েছেন অদূর ভবিষ্যতে আইফোনের মূল্য কমানোর

যে উচ্চমূল্যের কারণে আইফোনের প্রতি মানুষের এত অদম্য আগ্রহ, সেই মূল্যই যদি হ্রাস করা হয়, তাহলে কি আর আইফোন তার উচ্চবংশীয় গৌরব ধরে রাখতে পারবে? সেই সম্ভাবনা কম। বরং বাজারে অন্যান্য সুলভ ব্র্যান্ডের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার প্রচেষ্টায়, আইফোনও নিজেকে নিয়ে আসবে তাদের কাতারে। সুতরাং গত প্রায় একযুগ ধরে আইফোন নিয়ে যত উৎসাহ-উচ্ছ্বাস, যত কিংবদন্তীর জন্ম, সেগুলোরও অবসান ঘটতে চলেছে শীঘ্রই। তবে তা বাস্তবে পরিণত হওয়ার আগে, চলুন একবার পেছন ফিরে তাকাই, দেখি কীভাবে সময়ের সাথে সাথে বিবর্তন ঘটেছে বিশ্বের সবচেয়ে ‘সম্মানিত’ মোবাইল ফোন ব্র্যান্ডটির।

সংগ্রাহকদের কাছে এখন বেশ জনপ্রিয় আইফোন টু-জি; Image Source: Getty Images

সূচনা – কিংবা যেটি পরিচিত আইফোন টু-জি হিসেবে

হ্যাঁ, প্রথম বাজারে আসা আইফোনটির নাম ছিল আইফোন টু-জি। সর্বপ্রথম ২০০৭ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আসে এটি। অনেকেই ভাবতে পারেন, প্রথম মডেলের নাম ওয়ান-জি না হয়ে টু-জি হলো কেন। এর কারণ, এখানে জি দ্বারা সেটের জেনারেশন নয়, বোঝানো হয়েছিল ডাটা নেটওয়ার্কের জেনারেশন। অ্যাপল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, এই আইফোনটি দ্রুতগতির থ্রি-জি নয়, কাজ করবে কেবল টু-জি ডাটা নেটওয়ার্কে। দুটি ভিন্ন মডেলে বাজারে এসেছিল এই আইফোনটি। ৪ জিবি মডেলের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪৯৯ ডলার, আর ৮ জিবি মডেলের মূল্য ৫৯৯ ডলার। এখন অবশ্য এটি একটি অ্যান্টিকে পরিণত হয়েছে। ব্যবহারের উদ্দেশে এটি কিনবে, এমন মানুষ বোধহয় পৃথিবীতে আর নেই। তবে সংগ্রহে রাখার জন্য অনেকেই কিনতে চায় এটি। আর ইবে-তে কেউ যখন এটি বিক্রির বিজ্ঞাপন দেয়, মূল বাজারমূল্যের অনেক বেশি দিয়েই সেটি কিনে নেয় আগ্রহীরা।

দ্বিগুণ গতি, অর্ধেক মূল্যে; Image Source: Getty Images

আইফোন থ্রি-জি

২০০৮ সালের জুলাই মাসে “Twice as fast, for half the price” স্লোগান নিয়ে একযোগে ২২টি আলাদা দেশের বাজারে আসে আইফোন থ্রি-জি, এবং প্রথম সপ্তাহান্তেই বিক্রি হয়ে যায় এক মিলিয়ন ইউনিট। এবারের আইফোনটির ছিল দুটি ভিন্ন রং- কালো ও সাদা। দামও অনেক কমানো হয়েছিল। ৮ জিবি মডেলের দাম রাখা হয়েছিল ১৯৯ ডলার, আর ১৬ জিবির দাম ২৯৯ ডলার। এই আইফোনটিতে ছিল আইওস ২.০ সফটওয়্যার, যার ফলে এটি পূর্বাপেক্ষা দ্বিগুণ গতিসম্পন্ন ছিল। এছাড়া আরো বেশ কিছু আপডেট-সক্ষম ফিচার যোগ করা হয়েছিল, যেমন: মাল্টিমিডিয়া মেসেজিং (এমএমএস), কপি-পেস্ট ইত্যাদি। এর এক বছর পর মুক্তি পায় আইফোন থ্রি-জি এস। এখানে এস দ্বারা বোঝানো হয়েছিল স্পিড। আর এর নতুন স্লোগান হয়েছিল, “The fastest, smartest phone yet.”। তবে ২০১০ সালের জুন মাসে অ্যাপল বাজার থেকে আইফোন থ্রি-জি উঠিয়ে নেয়।

যে আইফোন সবকিছু বদলে দিয়েছিল, আবারো; Image Source: Getty Images

আইফোন ৪

২০১০ সালের জুনে, স্যান ফ্রান্সিসকোতে অ্যাপলের ওয়ার্ল্ডওয়াইড ডেভেলপার্স কনফারেন্সে প্রথম উন্মোচিত হয় তাদের চতুর্থ প্রজন্মের আইফোন। অ্যাপলের তৎকালীন সিইও স্টিভ জবস একে অভিহিত করেন ঐ সময় পৃথিবীর সবচেয়ে পাতলা স্মার্টফোন হিসেবে। এবারের স্লোগান ছিল, “This changes everything. Again.”। এই ফোনেই প্রথম ফ্রন্ট-ফেসিং ক্যামেরার প্রবর্তন করা হয়, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা ফেসটাইম ভিডিও চ্যাটের সুবিধা পায়। এভাবে অন্যান্য স্মার্টফোন প্রস্তুতকারী প্রতিযোগীদের চেয়ে একধাপ এগিয়ে যায় অ্যাপল। আইফোন ৪-এর ১৬ জিবি মডেলের দাম ছিল ৫৯৯ ডলার, আর ৩২ জিবি মডেলের ৬৯৯ ডলার। এর এক বছর পরই, ২০১১ সালের অক্টোবরে বাজারে আসে আইফোন ৪ এস, যেখানে প্রথমবারের মতো দেখা পাওয়া যায় ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট সিরির।

আইফোনের ইতিহাসে আইফোন ব্যতীত সবচেয়ে বড় ঘটনার জন্ম দিয়েছিল আইফোন ৫; Image Source: Getty Images

আইফোন ৫

আইফোনের এবারের স্লোগান ছিল,”The biggest thing to happen to iPhone since iPhone.”। আইফোন ৫ বাজারে আসে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে। এর সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হলো, এটিই স্টিভ জবসের তত্ত্বাবধানে নির্মিত শেষ আইফোন। এটি বাজারে আসার আগেই, ২০১১ সালে মারা যান তিনি। অ্যাপল যখন আইফোন ৫-এর জন্য প্রি-অর্ডার গ্রহণ শুরু করে, প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অর্ডারের পরিমাণ দুই মিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়। এর নতুন ফিচারের মধ্যে ছিল ফোর-জি ডাটা নেটওয়ার্ক সমর্থন, এবং পূর্ববর্তী মডেলগুলোর চেয়ে আরো পাতলা, হালকা ও লম্বা স্ক্রিন। আইফোন ৫-এর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬৪৯ ডলার (১৬ জিবি), ৭৪৯ ডলার (৩২ জিবি), ৮৪৯ ডলার (৬৪ জিবি)। ২০১৩ সালে অ্যাপল আইফোন ৫ সি ও ৫ এস বাজারে আনে, এবং অরিজিনাল আইফোন ৫ বাজার থেকে তুলে নেয়।

স্টিভ জবস পরবর্তী যুগের প্রথম দুইটি আইফোন; Image Source: Getty Images

আইফোন ৬

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে আইফোন ৬ ও ৬ প্লাস বাজারে আসে, যার মাধ্যমে অ্যাপল তার ব্যবহারকারীদেরকে প্রথমবারের মতো প্লাস-সাইজ অপশনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। আইফোন ৬ ও ৬ প্লাসের ডিসপ্লে ছিল যথাক্রমে ৪.৭ ও ৫.৫ ইঞ্চি। এই দুটি মডেলে ছিল আপগ্রেডেড ক্যামেরা, দীর্ঘায়িত ব্যাটারি লাইফ এবং অ্যাপল পে সুবিধা। আইফোন ৬ ও ৬ প্লাসের মূল্য শুরু হয় যথাক্রমে ৬৪৯ ও ৭৪৯ ডলার থেকে (১৬ জিবি)। কিন্তু এই দুটি মডেল এক বছরেরও কম সময় বাজারে ছিল। এরপরই অ্যাপল এই দুটির পরিবর্তে বাজারে আনে আইফোন ৬ এস ও ৬ এস প্লাস।

হেডফোন জ্যাকবিহীন প্রথম আইফোন; Image Source: Getty Images

আইফোন ৭

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে বাজারে আসে আইফোন ৭ ও ৭ প্লাস। আইফোন ৭ এর মূল্য ধরা হয় ৩২ জিবি মডেলে ৬৪৯ ডলার এবং ২৫৬ জিবি মডেলে ৮৪৯ ডলার। অপরদিকে আইফোন ৭ প্লাসের মূল্য ধরা হয় ৩২ জিবি মডেলে ৭৬৯ ডলার এবং ২৫৬ জিবি মডেলে ৯৬৯ ডলার। মোট তিনটি রং ছিল মোবাইলগুলোর- ধূসর, কালো ও লাল। এই প্রজন্মের আইফোন থেকে হেডফোন জ্যাক খুলে ফেলা হয়, ওয়াটার রেসিসট্যান্ট প্রযুক্তি যোগ করা হয়, এবং উন্নত ১২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা সন্নিবেশিত হয়।

Image Source: MSN

আইফোন ৮, ৮ প্লাস ও এক্স

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ক্যালিফোর্নিয়ায় অ্যাপলের হেডকোয়ার্টারের স্টিভ জবস থিয়েটারে ঘোষণা দেয়া হয় আইফোন ৮, ৮ প্লাস ও এক্স এর। ওই সেপ্টেম্বরের শেষ দিকেই বাজারে আসে আইফোন ৮ ও ৮ প্লাস, এবং সেগুলো পাওয়া যায় রূপালী, ধূসর ও সোনালী রঙে। আইফোন ৭-এর মতো অ্যালুমিনিয়াম কেসিং না রেখে, আইফোন ৮ ও ৮ প্লাসের জন্য অল-গ্লাস ডিজাইন করে অ্যাপল। আইফোন ৮ (৬৪ জিবি)-র মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৬৯৯ ডলার, আর আইফোন ৮ প্লাস (৬৪ জিবি)-র ৭৯৯ ডলার। এছাড়া আইফোন ৮ (২৫৬ জিবি) ৮৪৯ ডলার এবং আইফোন ৮ প্লাস (২৫৬ জিবি) ৯৪৯ ডলার।

২০১৭ সালের নভেম্বরে, আইফোনের দশ বছরপূর্তি উপলক্ষ্যে বাজারে আসে আইফোন এক্স। এটি থেকে হোম বাটন তুলে ফেলা হয়, ৫.৮ ইঞ্চি স্ক্রিনের উপর ওএলইডি ডিসপ্লে লাগানো হয়, এবং ওয়্যারলেস চার্জিং সুবিধা যোগ করা হয়। আর এই আইফোন এক্স ৬৪ জিবি মডেলের দামই ধরা হয় ৯৯৯ ডলার, এবং ২৫৬ জিবি মডেলের দাম ১,১৪৯ ডলার।

সর্বশেষ তিন আইফোন; Image Source: The Verge

এরপর…

আইফোন এক্স মুক্তির পর অ্যাপল বাজারে এনেছে সেটিরই আরো তিনটি উন্নততর সংস্করণ- আইফোন এক্স আর, এক্স এস এবং এক্স এস ম্যাক্স। এক্স আরের দাম শুরু হয়েছে ৭৪৯ ডলার থেকে। আর এক্স এস ও এক্স এস ম্যাক্সের দাম শুরু হয়েছে যথাক্রমে ৯৯৯ ও ১,০৯৯ ডলার থেকে। তবে টিম কুকের বক্তব্যের পর ধারণা করা হচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতেই দাম কমবে সকল মডেলের আইফোনের। কত কমবে সেটি আমরা জানি না, তবে ধারণা করা যেতে পারে আইফোনের এক যুগ উদযাপন বিষয়ক ক্যাম্পেইনের আওতায়ই হয়তো সকল আইফোনের দাম কমানো হবে। তাই এর আগে বেশি দাম দিয়ে আইফোন না কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/

This article is in Bengali language. It is about how iPhone has changed through the years. Necessary references have been hyperlinked inside.

Featured Image © iMore

Related Articles