Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ব্যবহার্য নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু গ্যাজেট

‘ব্রেইল’ হলো এক ধরনের পদ্ধতি যা দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের স্বাভাবিক কাজ যেমন বই পড়া, লেখা, হিসাব করা, ইন্টারনেট ব্রাউজ করা, গল্প পড়া, পথ চলা ইত্যাদিতে সহায়তা করে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষগুলোর জীবনে ‘ব্রেইল’ একটি আশার নাম। পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক এমন মানুষগুলোকে নিজে থেকেই নিজের অ্যাসাইনমেন্ট করা, ক্লাসের নোট করা এমনকি অনলাইনে ক্লাস বুঝতেও সহায়তা করে এই পদ্ধতি। এভাবেই পথচলা শুরু করে ব্রেইল টেকনোলজি

ব্রেইল রুবিক্স কিউব; Image Source: Scientific Mystery

‘ব্রেইল’ পদ্ধতিতে খুব সহজেই বর্ণমালা শেখার সুযোগ রয়েছে। অনেকটা আমাদের মতোই। প্রতিটি অক্ষর বিভিন্ন বিন্দু দিয়ে গঠিত হয়। প্রতিটি অক্ষর লেখার জন্য তিন থেকে চারটি বিন্দু সমন্বয় করে দুটি কলামে লেখা হয়। সাধারণত একটু মোটা কাগজে ব্রেইল অক্ষরগুলো ছাপানো হয়। হাতের আঙুলের সাহায্যে এই অক্ষরগুলোতে ধরলে সেগুলো বুঝতে পারা যায়। এভাবেই মূলত বর্ণমালা শেখানো হয়।

ব্রেইল পেপারে ছাপা বর্ণমালা; Image Source: Ideaz

ব্রেইল টেকনোলজির আরও কিছু আবিষ্কার আজ এখানে তুলে ধরা হবে।

১. রিফ্রেশেবল ব্রেইল ডিসপ্লে

ব্রেইল ডিসপ্লেতে বেশ কিছু পিন রয়েছে। এগুলো বিভিন্নভাবে ওঠানামা করে কম্পিউটার স্ক্রিনে চলমান দৃশ্য বুঝতে সহায়তা করে। কম্পিউটারের সাথে বিশেষ একটি ক্যাবল দিয়ে ব্রেইল ডিসপ্লে যুক্ত করা হয়। কম্পিউটার স্ক্রিন থেকে চলমান দৃশ্য নিজে থেকে ব্রেইলে পরিবর্তন করে এটি নিজস্ব স্ক্রিনে চালু করে। রিফ্রেশেবল ব্রেইলের একটি লাইন জুড়ে বিদ্যুৎ চালিত পিন থাকে যা স্ক্রিনে সবসময়ই চলমান থাকে। কার্সরের উপরে এবং নিচে চলমান সবকিছুই সহজে বোঝা যায় এবং এই পিনগুলো প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। এই পরিবর্তনের কারণেই এই যন্ত্রটিকে ‘রিফ্রেশেবল’ নাম দেয়া হয়েছে।

রিফ্রেশেবল ব্রেইল ডিসপ্লে; Image Source: GDBlogs

রিফ্রেশেবল ব্রেইলে ২০, ৪০ ও ৮০ অক্ষর এবং বাটনযুক্ত কিবোর্ড রয়েছে। এটি বেশ কিছু বহনযোগ্য ব্রেইল নোটবুকের সাথে ব্যবহার করা যায়। রিফ্রেশেবল ব্রেইল ডিসপ্লে এর সাহায্যে খুব সহজেই লেখার ধরন, ওয়ার্ড ফরম্যাট, স্পেসিং এবং বানান চেক করা যায়।

২. ব্রেইল প্রিন্টার

ব্রেইল প্রিন্টার হলো এক ধরনের বিশেষ প্রিন্টার যা কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত হয়ে যেকোনো লেখার ব্রেইল কপি প্রিন্ট করে। ব্রেইল নোট টেকারের মতো যন্ত্রগুলোতেও এই প্রিন্টার একইভাবে ব্যবহার করা যায়। ব্রেইল প্রিন্টারের মাধ্যমে একজন ছাত্র নিজের লেখা যেকোনো কাজ বা অ্যাসাইনমেন্ট ব্রেইল কপিতে প্রিন্ট করতে পারবে। এই প্রিন্টারের জন্য বিশেষ শক্ত এবং মোটা কাগজের প্রয়োজন হয় যে কাগজের এক পিঠে অক্ষরগুলো প্রিন্ট করা হয়।

ব্রেইল প্রিন্টার; Image Source: Index Braille

কম্পিউটারে লেখা সাধারণ ডকুমেন্টকে ব্রেইলে প্রিন্ট করতে চাইলে ব্রেইল ট্রান্সলেশন প্রোগ্রাম ইনস্টল করে নিতে হবে।

৩. ইলেকট্রনিক ব্রেইল নোট টেকার

এই যন্ত্রটি সাধারণত সেসব দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্রদের সহায়তা করে, যারা ক্লাসে বিভিন্ন নোট টুকে নেন বা শিক্ষকের কথা শুনে নিজে থেকে নোটস টাইপ করে নেন। পরবর্তীতে এটি কম্পিউটারে সংরক্ষণ করে রাখা যায় অথবা চাইলে ব্রেইল কপিতে প্রিন্ট করে নেওয়া যায়। ব্রেইল নোট টেকারের কয়েকটিতে ভয়েস ইনপুট সিস্টেম রয়েছে। এটি কণ্ঠ শুনে সেটি ব্রেইল অ্যালফাবেটে পরিবর্তন করে নেয়। এটি সাধারণত আকারে বইয়ের মতো হয় এবং খুব সহজেই বহনযোগ্য।

ব্রেইল নোট টেকার; Image Source: Humanware

৪. ব্রাউন বেল মগ

চা বা কফি বানাতে গিয়ে কখনও গরমে হাত পুড়ে গিয়েছে? আরেক দিকে তাকিয়ে কথা বলতে গিয়ে কখনও মগ উপচে গরম পানি পড়ে গিয়েছে? একবার তাহলে ভাবুন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী অথবা স্বল্প দৃষ্টি সম্পন্ন মানুষগুলোর কী অবস্থা হয়।

ব্রাউন বেল মগ; Image Source: CyberStyle

এই কথা মাথায় রেখেই বাজারে আসে ব্রাউন বেল মগ। সাং-হুন লি ও ইয়ং-বাম লিমের করা ডিজাইনে এই মগ তৈরি করা হয়। মগটির ভেতরে তিনটি ভিন্ন স্তরের নির্দেশক রয়েছে। মগের তিনটি ভিন্ন উচ্চতায় পানি ভরে গেলে ভিন্ন ভাবে শব্দ করে উঠবে। এছাড়া হাতলেও রয়েছে তিনটি আলাদা সেন্সর যা মগের ভেতরের পানির উচ্চতা নির্দেশক সেন্সরের সাথে যুক্ত।

হাতলের সেন্সরের মাধ্যমে মগের ভেতরে পানির উচ্চতা পরিমাপ করা যায় অর্থাৎ হাতলের প্রতিটি সেন্সর মগের ভেতরে একটি নির্দিষ্ট উচ্চতাকে নির্দেশ করে। এতে মগে পানির পরিমাণ সহজেই বোঝা যাবে এবং হাত পুড়ে যাওয়া বা পরিমাণের চেয়ে কম বেশি চা-কফি বানানোর মতো ঝামেলা থেকেও মুক্তি মিলবে। এখন আর গরম পানির উচ্চতা বোঝার জন্য মগের ভেতরে আঙুল দিতে হবে না, তাই আঙুল পুড়ে যাবারও ভয় একদমই নেই।

৫. ডট ওয়াচ

ব্রেইল ঘড়ির জগতে প্রথম নাম হলো ডট ওয়াচ। এটি চার সেলের ব্রেইল ডিসপ্লে সম্বলিত একটি স্মার্ট ঘড়ি। এই ঘড়িটি স্মার্টফোনের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করে থাকে। এটিতে চৌম্বকীয় মেশ স্ট্র্যাপস রয়েছে। এটি ১২ বা ২৪ ঘণ্টা টানা চলতে পারে। এতে রয়েছে অ্যালার্ম, ক্যালেন্ডার, একটি স্টপ ওয়াচ এবং একটি টাইমার। ডট ওয়াচটি যখন স্মার্ট ফোনের সাথে যুক্ত করা হয় তখন এটিতে বিভিন্ন মেসেজ, কল এবং অন্যান্য নোটিফিকেশন আসে।

ডট ওয়াচ; Image Source: IAPB Standard List

এর ব্যাটারি রিচার্জ করা যায়। একবার চার্জ দিলে এটি প্রায় ৭ দিন পর্যন্ত চলে। ঘড়িটির ডায়াল ১.৭ ইঞ্চি এবং ০.৫ ইঞ্চি পুরু।

৬. ব্রেইন পোর্ট

ব্রেইন পোর্ট হলো ক্যামেরা যুক্ত এক ধরনের সানগ্লাস। এর একটি অংশ ব্যবহারকারীর মুখের ভেতরে স্থাপন করা হয় এবং অন্য অংশটি হচ্ছে ক্যামেরা যা চোখে পরতে হয়। সামনে থাকা কোনো বস্তুর ধরন সরাসরি ক্যামেরায় পৌঁছে জিহ্বায় লেগে থাকা অংশটির মাধ্যমে বিভিন্ন রকম ঘূর্ণনের সৃষ্টি করে। এই ঘূর্ণন দিয়ে ব্যবহারকারী বুঝতে পারেন তার সামনে কী রয়েছে। এরিক ওয়েইহেনমায়ার ব্রেইন পোর্ট ব্যবহার করে মাউন্ট এভারেস্টে চড়েছেন। এই যন্ত্রের মূলনীতি হলো ‘জিহ্বার সাহায্যে দেখা’।

ব্রেইন পোর্ট; Image Source: Discover Magazine Blogs

৭. টকিং লন্ড্রি মডিউল

টকিং লন্ড্রি একটি ছোটো ৫*৫*২.৫ ইঞ্চির বক্স যেটি জিই ওয়াশিং মেশিনের সাথে যুক্ত করতে হয়। এটি নিজে স্পিকারের মাধ্যমে কথা বলে কাপড় ধোয়ার প্রক্রিয়া এবং কতক্ষণ সময় লাগবে সেটি বলে দেয়। এটি শুনে বক্সটির ব্রেইল সুইচের মাধ্যমে ব্যবহারকারী সহজেই কাপড় ধোয়ায় জন্য নির্দেশনা দিতে পারেন। একটি বক্সই ওয়াশার এবং ড্রায়ার দুটোর জন্য কাজ করে। জিই কোম্পানির ওয়াশার মডেল GTW680BSJWS, ড্রায়ার মডেল GTD65EBSJWS এবং গ্যাস মডেল GTD65GBSJWS এর জন্য এই মডিউলটি কাজ করে। এখন শুধুমাত্র কাপড় ভাঁজ করাই বাকি থাকবে।

টকিং লন্ড্রি মডিউল; Image Source: FirstBuild

৮. ট্যাকটাইল টেক্সট-টু-ব্রেইল কনভার্টার

ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলোজির (এমআইটি)  ৬ জন আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ছাত্রছাত্রীর প্রচেষ্টায় প্রথম টেক্সট-টু-ব্রেইল কনভার্টার, ট্যাকটাইল তৈরি হচ্ছে। এর লক্ষ্য হলো দৃষ্টিশক্তিহীন ব্যক্তিদের স্বল্পমূল্যে কোনো কিছু পড়তে সহায়তা করা। এটি এখনও একটি পেটেন্ট। বাজারজাত করা হলে এর খুচরা মূল্য ১০০ ইউএস ডলার দিয়ে শুরু হবে বলে জানানো হয়।

ট্যাকটাইল টেক্সট-টু-ব্রেইল কনভার্টারের পেছনে যে ছাত্রছাত্রীরা কাজ করছেন; Image Source: Smithsonian Magazine

চন্দনী যোসি, গ্রেস লি, জিয়ালিন শি, বনি ইয়াং, চারলেন জিয়া এবং তানিয়া ইউ, এই ৬ জন আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ছাত্র-ছাত্রীর প্রচেষ্টায় একদিন ট্যাকটাইল অন্ধকারের আলো হয়ে উঠবে বলে তারা আশাবাদী। অরবিট রিডার টোয়েন্টি, হলি ব্রেইল!, টকিং বুক প্লেয়ারের মতো আরো অনেক কিছুই বাজারে আসবে খুব শীঘ্রই। এগুলোর সবই এমন এক একটি কনসেপ্ট যেগুলো বাস্তবতায় রূপ নিলে হয়তো আর কেউ নিজেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মনে করবে না। দৃষ্টিশক্তি কমে গেলেও কমবে না মানুষের স্পৃহা। সবার চেষ্টায় আমাদের এই বর্তমান বিশ্ব আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।

এই বিষয়ে আরও জানতে পড়ুন এই বইগুলো

১) মাথায় যত প্রশ্ন ঘোরে
২) একটুখানি বিজ্ঞান সিরিজ

This is a bengali article. This article is about Braille technology which helps visually impaired people to lead a normal life. All the information sources are hyperlinked inside the article.

Feature Image Source: The Independent

Related Articles