আধুনিক যুগের যুদ্ধের অন্যতম প্রধান কৌশলগত অস্ত্র মিসাইল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের ভি-১, ভি-২ মিসাইল শুধুমাত্র যুদ্ধের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেনি। সূচনা করেছিল মহাকাশ গবেষণায় এক যুগের। স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে স্পেস রকেট সায়েন্স ও মিসাইল টেকনোলোজি যেন একে অপরের সাথে পাল্লা দিয়ে উন্নতি করেছিল। ফলে সৃষ্টি হয়েছে নিত্যনতুন ধরনের মিসাইল। এদের প্রয়োগ ও কাজের ধরন আবার একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। সকল ধরনের মিসাইলকে প্রধানত চারটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। এগুলোর আবার একাধিক উপশ্রেণী রয়েছে। পাঠকের সুবিধার্থে সংক্ষেপে এগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে এই লেখায়।
সার্ফেস টু সার্ফেস মিসাইল (SSM)
ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য যত প্রকার মিসাইল আছে তা এই শ্রেণীভুক্ত। এর বেশ কয়েকটি উপশ্রেণী রয়েছে। সকল ক্ষেত্রেই মিসাইলটি ভূমি অথবা অন্য কোনো সারফেস প্লাটফর্ম থেকে উৎক্ষেপিত হয়ে আবার সারফেস টার্গেটেই আঘাত করে।
১) অ্যান্টি ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল (ATGM)
ট্যাংক নামক দানবীয় অস্ত্রটি ধ্বংস করা বেশ কঠিন কাজ। এজন্য ট্যাংক বিধ্বংসী অস্ত্র উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে। আজ ট্যাংক বিধ্বংসী রকেট ও মিসাইল প্রায় সব আধুনিক সেনাবাহিনীতেই রয়েছে। অ্যান্টি ট্যাংক রকেটগুলো আনগাইডেড হওয়ায় এগুলো লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু কাঁধে বহনযোগ্য ATGM-গুলোর ক্ষেত্রে সেই সুযোগ নেই। অ্যাক্টিভ প্রটেকশন সিস্টেম সংবলিত বর্তমান যুগের গুটিকয়েক অত্যাধুনিক ট্যাংক ব্যতীত প্রায় সব ধরনের সাঁজোয়া যান এ ধরনের মিসাইলের বিরুদ্ধে কার্যত অসহায়।
এ ধরনের মিসাইলের অপারেটর কাঁধে লঞ্চার রেখে টার্গেটের দিকে মিসাইল তাক করেন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে Target Lock তথা শত্রুকে মার্ক করা হয়ে গেলেই ফায়ার করা হয়। মিসাইল তখন লঞ্চার থেকে প্রাপ্ত ডাটা অনুযায়ী টার্গেটের দিকে ধেয়ে যায়। কিছু কিছু অ্যান্টি ট্যাংক মিসাইলের পেছনে Wire (তার) লাগানো থাকে যা টার্গেটে হিট করার আগপর্যন্ত লঞ্চার থেকে টার্গেট সম্পর্কে ডাটা সংগ্রহ করতে থাকে। ফলে ট্যাংকের পক্ষে পালানো অসম্ভব। আবার কিছু মিসাইল আছে যারা Fire & Forget শ্রেণীর। এরা ফায়ারিং পর নিজেই নিজের টার্গেট খুঁজে নেয় বিধায় এদের ফাঁকি দেয়া বেশ কঠিন। আবার কিছু কিছু মিসাইলের আক্রমণকৌশল একেবারে ভিন্ন। যেমন- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জ্যাভলিন মিসাইলের একটি মুড অনুযায়ী ফায়ারের পর সোজা আকাশে উঠে যায়। তারপর ট্যাংকের ঠিক মাথার উপরে গিয়ে আছড়ে পড়ে। জানেন নিশ্চয়ই যে, ট্যাংকের চারপাশের তুলনায় উপরের দিকে আর্মারের পরিমাণ কম। এজন্য জ্যাভলিনের সাফল্যের হার অন্যান্য এটিজিএম-এর চেয়ে বেশি। এ ধরনের মিসাইল দিয়ে অল্প উচ্চতা দিয়ে উড়ে যাওয়া হেলিকপ্টারও ভূপাতিত করা সম্ভব।
২) অ্যান্টি-শিপ মিসাইল
মিসাইলের সংজ্ঞায় যুদ্ধজাহাজকেও সারফেস প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ধরা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই সাগরের যুদ্ধে কামান দাগানোর দিন একপ্রকার শেষ হয়ে গেছে। বর্তমান যুগের প্রতিটি বড় বড় যুদ্ধজাহাজে নেভাল গান আছে বটে, কিন্তু সেটি সরাসরি আরেক যুদ্ধজাহাজের সাথে যুদ্ধের জন্য নয়। একাধিক রাডার ও রিয়েল টাইম স্যাটেলাইট ইমাজিনারির কারণে এখন শত্রুজাহাজ কামানের রেঞ্জে আসার আগেই টের পাওয়া সম্ভব। ফলে অ্যান্টিশিপ মিসাইল হয়ে উঠেছে এই যুগের নৌ-যুদ্ধের প্রধান অস্ত্র। জাহাজ বিধ্বংসী এই মিসাইলগুলো সাধারণত ক্রুজ মিসাইলের ন্যায় আচরণ করে। তবে শুধুমাত্র লংরেঞ্জ অ্যান্টিশিপ মিসাইলকেই ক্রুজ মিসাইল বলা হয়। অন্যদিকে, একমাত্র চীনের হাতেই ব্যালাস্টিক শ্রেণীর অ্যান্টিশিপ মিসাইল আছে। দুই ধরনের মিসাইল নিয়েই একটু পরে আমরা জানতে পারব।
এ ধরনের মিসাইল Sea skimming ঘরানার হয়। অর্থাৎ এরা রাডার ফাঁকি দেয়ার সর্বদা ৫০ থেকে ২ মিটার উচ্চতায় উড্ডয়ন করে। একেবারে শেষমুহূর্তে (২৮-৪৬ কি.মি. দূরে থাকতে) এদেরকে শনাক্ত করা যায় বিধায় প্রতিরক্ষামূলক ব্যাবস্থা নিতে খুবই অল্প সময় (২৫-৬০ সেকেন্ড) হাতে থাকে। তাই এন্টিশিপ মিসাইল আজকের যুগের অন্যতম ভয়াবহ মিসাইল। এজন্য এ ধরনের মিসাইলের হাত থেকে শেষ রক্ষা হিসেবে আধুনিক যুদ্ধজাহাজগুলো CIWS নামের একধরনের অটোমেটিক মাল্টিব্যারেল মেশিনগান সিস্টেম ব্যবহার করে যেন একেবারে শেষ মুহূর্তে বৃষ্টির ন্যায় গুলি ছুড়ে একে ধ্বংস করা যায়। মাল্টিরোল যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি গুটিকয়েক মেরিটাইম স্ট্রাইক হেলিকপ্টার, অ্যাটাক সাবমেরিন এবং উপকূলীয় অঞ্চলের ভূমিতে থাকা 'কোস্টাল ডিফেন্স সিস্টেম' থেকেও জাহাজবিধ্বংসী ক্রুজ মিসাইল নিক্ষেপ করা যায়।
৩) ক্রুজ মিসাইল
বিপুল পরিমাণে বিস্ফোরক পদার্থ (ওয়ারহেড) বহনকারী যেসব গাইডেড মিসাইলের ফ্লাইট পাথ বায়ুমন্ডলের নিচের দিকে থাকে, এবং যাত্রাপথে সর্বদা একটি ধ্রুব গতি (ক্রুজ স্পিড) বজায় রাখে, তাকেই ক্রুজ মিসাইল বলে। এ ধরনের মিসাইলকে চালকবিহীন বিমান বললেও ভুল হবে না। কেননা, নিজস্ব ডানা, টার্বোফ্যান ইঞ্জিন, রাডারসহ অন্যান্য সেন্সরের সাহায্যে কোনো কিছুর সাথে সংঘর্ষ এড়িয়ে ক্রুজ মিসাইলগুলো খুবই নিচ দিয়ে (১০-১১০ মিটার উচ্চতায়) উড়ে যেতে সক্ষম। ফলে সহজে রাডারে ধরা পড়ে না।
এগুলো অল্প ফুয়েলে অধিক দূরত্বে নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে পারে। কতটা নিখুঁত সেটা বোঝাতে একটি তথ্য দেয়া যাক। যুক্তরাষ্ট্রের টমাহক ল্যান্ড অ্যাটাক ক্রুজ মিসাইল ২,৪০০ কিলোমিটার দূরের কোনো টার্গেটে আঘাত করার ক্ষেত্রে যদি ভুল করে, তবে বড়জোর টার্গেটের ১০ মিটার ডানে-বামে আঘাত করবে। এতে কোনো সমস্যা হবে না, কেননা ২৫ মিটার ব্লাস্ট রেডিয়াসের উপযোগী বিপুল পরিমাণ ওয়ারহেড (বিস্ফোরক পদার্থ) থাকায় টার্গেট নিশ্চিতভাবেই ধ্বংস হবে। টমাহকের মতো ক্রুজ মিসাইলগুলো গতি সাধারণত ম্যাক ১ এর নিচে, অর্থাৎ সাবসনিক হয়। তবে সুপারসনিক (ম্যাক ১+) ও হাইপারসনিক (ম্যাক ৫+) গতির ল্যান্ড অ্যাটাক ও অ্যান্টিশিপ ক্রুজ মিসাইল কয়েকটি দেশের হাতে আছে যা সামরিক বিশ্লেষকগণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। উদাহরণ হিসেবে ভারত-রাশিয়ার ব্রাম্মস সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইলের কথা বলা যায়।
ভূমিতে হামলার জন্য আলাদা ধরনের ক্রুজ মিসাইল তো আছেই। তারপরও অ্যান্টিশিপ ক্রুজ মিসাইল দিয়ে যুদ্ধজাহাজ ছাড়াও ভূমিতে থাকা টার্গেটেও হামলা করা যায়।
আরো পড়ুন: ক্রুজ মিসাইল দিয়ে চিঠি ডেলিভারির বিচিত্র এক ইতিহাস
৪) ব্যালিস্টিক মিসাইল
মিসাইল সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকলেও বেশিরভাগ পাঠক ব্যালিস্টিক মিসাইলে এসে বুঝতে ভুল করেন। এজন্য এককথায় ব্যাখা দেয়া যাক। যেসব লংরেঞ্জ মিসাইল ফায়ারের পর ballistic trajectory (পরাবৃত্তাকার পথ) অনুসরণ করে, তাদেরকেই ব্যালিস্টিক মিসাইল বলে। এ ধরনের মিসাইল ভূমি থেকে নিক্ষেপ করতে রোড মোবাইল লঞ্চার ভেহিকেল, রেইলরোড ভেহিকেল (মিসাইলবাহী ট্রেন) অথবা ভূগর্ভস্থ ‘মিসাইল সাইলো’ ব্যবহার করা হয়। সাগর থেকে নিক্ষেপ করতে নিউক্লিয়ার ব্যালিস্টিক মিসাইল সাবমেরিনকে কাজে লাগানো হয়। ফলে যেসব দেশের এ ধরনের সাবমেরিন হাতে আছে, তারা প্রথমে পারমাণবিক হামলায় গোটা দেশ ধ্বংস হয়ে গেলেও পাল্টা আঘাত হানতে সক্ষম।
ব্যালিস্টিক মিসাইলকে রেঞ্জের দিক দিয়ে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- Tactical Ballistic Missile (TBMs) গুলোর রেঞ্জ ৩০০ কি.মি.-র মধ্যে, এবং Short-Range Ballistic Missile (SRBMs) গুলোর রেঞ্জ ১,০০০ কি.মি. এর মধ্যে হয়ে থাকে। প্রথাগত যুদ্ধে ক্রুজ মিসাইলের পাশাপাশি এগুলোর ব্যবহার আমরা প্রায়ই দেখে থাকি। অন্যদিকে, ১,০০০-৩,০০০ কি.মি. রেঞ্জেরগুলোকে Medium-Range Ballistic Missiles (MRBMs) এবং ৩,০০০-৫,৫০০ কি.মি. রেঞ্জেরগুলোকে Intermediate-Range Ballistic Missiles (IRBMs) বলে। খুব গুরুত্বপূর্ণ স্ট্র্যাটেজিক টার্গেট না হলে এসব মিসাইলের ব্যবহার হয় না বললেই চলে। এতে কনভেশনাল বা নিউক্লিয়ার– দুই ধরনের বিস্ফোরক পদার্থই ব্যবহার করা যায়। এছাড়া কেমিক্যাল ও বায়োলজিক্যাল ওয়ারহেড (জীবাণু অস্ত্র) এগুলো দিয়ে ডেলিভারি দেয়া সম্ভব।
এরপর চলে আসা যাক সকল মিসাইলের গডফাদার InterContinental Ballistic Missiles (ICBM) এর কাছে। এগুলোর ব্যবহার হলে মানবসভ্যতা যে একেবারে ধ্বংস হয়ে যাবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বর্তমানে আন্ডারগ্রাউন্ড সাইলো বা ভূমিভিত্তিক আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইলের মধ্যে রাশিয়ার ১৮,০০০ কি.মি. রেঞ্জের RS-28 Sarmat সর্বাধিক রেঞ্জের মিসাইল, যা ২০২২ সালে সার্ভিসে এসেছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের LGM-118 Peacekeeper (১৪,০০০ কি.মি.), সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণে সক্ষম মার্কিন-ব্রিটিশ Trident II (১১,৩০০ কি.মি.)। এর বাইরে চীনের DF-41, DF-5A (১২,০০০-১৫,০০০ কি.মি.), ফ্রান্সের M51.2 (৮,০০০-১০,০০০ কি.মি.), ভারতের Agni-V (৫,৫০০-৮,০০০ কি.মি.) উল্লেখযোগ্য। ইসরায়েল ও উত্তর কোরিয়ার আইসিবিএম থাকলেও এর সম্পর্কে পরিষ্কার তথ্য পাওয়া যায় না।
ক্রুজ মিসাইল যেমন ফায়ারের পর রাডার ফাঁকি দিতে খুব নিচু হয়ে সাগর-পাহাড়-পর্বত ঘুরে তারপর টার্গেটের দিকে যায়, ব্যালিস্টিক মিসাইলের ধর্ম ঠিক তার উল্টো। এটি ফায়ারের পর পরাবৃত্তাকার পথে উপরের দিকে উঠে যায়। শর্ট এবং মিডিয়াম রেঞ্জ ট্যাক্টিক্যাল ব্যালিস্টিক মিসাইলগুলোর গতিপথ বায়ুমণ্ডলের ভেতরেই থাকে। অন্যদিকে, আইসিবিএমগুলো ফায়ারের পর বায়ুমণ্ডলের বাইরে চলে যায়। এজন্য এতে একাধিক স্টেজের বুস্টার রকেট ব্যবহার করা হয় বিধায় এর কার্যপ্রণালী অনেকটাই মহাকাশ গবেষণার কাজে ব্যবহৃত স্পেস রকেটের ন্যায়। অতঃপর এক বা একাধিক নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড আলাদা হয়ে টার্গেটের দিকে ধেয়ে যায়। বায়ুমণ্ডলে পুনরায় প্রবেশকে 'রি-এন্ট্রি', এবং ওয়ারহেডকে যে মাধ্যমে সুরক্ষিত রাখা থাকে তাকে ‘রি-এন্ট্রি ভেহিকেল’ বলে। একই মিসাইলে একাধিক ওয়ারহেড থাকার প্রযুক্তি তথা Multiple Independently Targetable Re-Entry Vehicle (MIRV) যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, ও রাশিয়ার হাতে রয়েছে, এবং ভারত, পাকিস্তান, ও উত্তর কোরিয়া বানানোর কাজ করছে। এ সময় মিসাইলের নিজের গতি এবং অভিকর্ষজ ত্বরণের কারণে ওয়ারহেডের বেগ অত্যন্ত বেশি (সেকেন্ডে ৬-৮ কিলোমিটার!) হওয়ায় একে সাধারণ এয়ার ডিফেন্স মিসাইল দিয়ে প্রতিহত করা বেশ কঠিন।
সার্ফেস টু এয়ার মিসাইল (SAM)
নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে যে আকাশে থাকা কোনো টার্গেট ধ্বংস করা এই মিসাইলের কাজ। ভূমিতে থাকা বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত যাবতীয় মিসাইল এই 'স্যাম' সিস্টেমের অন্তর্ভুক্ত।
১) অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট মিসাইল
বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রগুলো শর্ট, মিডিয়াম এবং লংরেঞ্জের হয়ে থাকে। এই মিসাইল ব্যাটালিয়নগুলো একটি কমান্ড সেন্টার, দুই বা ততোধিক রাডার ইউনিট, ও একাধিক লঞ্চার ইউনিট নিয়ে গঠিত। রাডারের সাহায্যে যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার, ড্রোন শনাক্ত করার পর সেই অনুযায়ী কমান্ড ভেহিকেল মিসাইল ফায়ার করতে লঞ্চার ইউনিটকে নির্দেশ দেয়। ফায়ারের পর এসব মিসাইল রাডারের দেয়া তথ্যানুযায়ী টার্গেটের দিকে তীব্র গতিতে ধেয়ে যায়। শেষমুহূর্তে এরা নিজস্ব গাইডেন্স সিস্টেম ব্যবহার করে বিধায় এদের ফাঁকি দেয়া বেশ কঠিন। তারপরও সারফেস টু এয়ার মিসাইল ফাঁকি দেয়ার বেশ কয়েকটি প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা আধুনিক যুদ্ধবিমানগুলোতে রয়েছে। সেই আলোচনা না হয় আরেকদিনের জন্য তোলা থাক। কিছু কিছু বিশেষায়িত সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল রয়েছে যারা ধেয়ে আসা রকেট, মর্টার, আর্টিলারি শেল প্রতিহত করতে সক্ষম। যেমন- ইসরাইলের আয়রন ডোম মিসাইল সিস্টেম।
বেশ কিছু দেশের শর্ট রেঞ্জ স্যামগুলোর একই ভেহিকেলে রাডার, লঞ্চার, কমান্ড সেন্টার থাকে। আবার অ্যান্টি-ট্যাংক মিসাইলের মতো দেখতে আরেক ধরনের শর্টরেঞ্জ স্যাম (রেঞ্জ ৪-৮ কি.মি.) রয়েছে, যেগুলোর জন্য রাডার প্রয়োজন হয় না। এগুলো একজন সৈনিকের কাঁধে বহনযোগ্য বিধায় একে Man Portable Air Defense System বা সংক্ষেপে MANPAD বলা হয়। এসব মিসাইল খুব নিচু দিয়ে উড়ে যাওয়া এয়ারক্রাফটের বিরুদ্ধে ফায়ার করা যায়। এরা শত্রু এয়ারক্রাফটের ইঞ্জিনের তাপ লক্ষ্য করে টার্গেটের দিকে এগিয়ে যায়। এছাড়া অ্যান্টি ট্যাংক মিসাইল দিয়েও ম্যানপ্যাডের কাজ সীমিত আকারে করা যায়।
২) অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক মিসাইল
আগেই বলা হয়েছে যে, টার্মিনাল স্টেজে প্রচণ্ড গতির কারণে সাধারণ এয়ার ডিফেন্স মিসাইল দিয়ে ট্যাক্টিক্যাল ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রতিহত করা বেশ কঠিন। বিশেষ করে আইসিবিএম ঠেকানো তো প্রায় অসম্ভব। এজন্য বানানো হয়েছে বিশেষ ধরনের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম যা Anti-Ballistic Missile (ABM) নামে পরিচিত।
এগুলো মোটা দাগে দুই শ্রেণীর হয়ে থাকে। কয়েকটি দেশের সাধারণ এয়ার ডিফেন্স মিসাইলগুলো এতটাই আধুনিক হয়েছে যে এরা শর্ট, মিড ও ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জের ব্যালিস্টিক মিসাইল ইন্টারসেপ্ট করতে সক্ষম। উদাহরণ হিসেবে রাশিয়ার S-400, ব্রিটেন-ফ্রান্স-ইতালির Aster 30, চীনের HQ-9 এর নাম নেয়া যায়। কিন্তু টার্মিনাল স্টেজে আইসিবিএম এর গতি থাকে ম্যাক ২০-২৫ যা ঠেকানো প্রায় অসম্ভব। এজন্য বায়ূমন্ডলের বাইরে মিডকোর্সে থাকা অবস্থাতেই একে ধ্বংস করার জন্য বানানো হয়েছে ডেডিকেটেড অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক মিসাইল। মাত্র চারটি দেশের (যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইসরায়েল, ও ভারত) হাতে এ ধরনের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। এ ধরনের মিসাইলগুলোতে বিস্ফোরক পদার্থ থাকে না। এরা ‘kinetic kill’ তথা তীব্র গতিতে ছুটে গিয়ে পড়ন্ত পারমাণবিক ওয়ারহেডের সাথে সংঘর্ষ ঘটিয়ে আকাশেই ধ্বংস করে দিতে সক্ষম। তবে কাজটি খুবই চ্যালেঞ্জিং। কেননা, একেকটি আইসিবিএমে মূল পরমাণু ওয়ারহেডকে সুরক্ষা দিতে একাধিক ডিকয় থাকতে পারে। ফলে অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক মিসাইলের জন্য প্রকৃত টার্গেট কোনটি সেটি আলাদাভাবে নির্ণয় করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এজন্যই শক্তিশালী ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকার পরও উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যাথার শেষ নেই। যদি চারটি এমআরআইভিসহ একটিমাত্র মিসাইল কিম-জং-উন ছোড়েন, তবে শতভাগ সাফল্যের নিশ্চয়তা পেতে ষোলটি এবিএম ছুড়তে হবে! আর পারমাণবিক যুদ্ধ যদি শুরু হয়েই যায়, তবে একাধিক ওয়ারহেড সংবলিত একটিমাত্র মিসাইলই গোটা দেশ ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট!
অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক মিসাইলের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের SM-3 ও THAAD, ভারতের PAD, ইসরায়েলের Arrow 3 ও David's Sling, এবং রাশিয়ার A-135, A-235। এছাড়া চীনের কাছে ডেডিকেটেড অ্যান্টি-ব্যালাস্টিক মিসাইল আছে বলে ধারণা করা হয়।
এয়ার টু গ্রাউন্ড মিসাইল (AGM)
এবার বলা হবে এয়ারক্রাফট থেকে ফায়ার করা যায় এমন কিছু মিসাইলের কথা। বিমান হামলা যেকোনো এয়ারফোর্সের জন্য বেশ খরুচে অপারেশন। আগের যুগের আনগাইডেড বোমাগুলো বর্তমানে জিপিএস, লেজারসহ বিভিন্ন গাইডেন্স কিট ব্যবহারের ফলে মিসাইলের মতোই নিখুঁতভাবে হামলা করতে পারে। ফলে এয়ার টু গ্রাউন্ড মিসাইলের ব্যবহার এখন কিছুটা সীমিত বলা যায়।
১) এয়ার লঞ্চড ক্রুজ মিসাইল
যেখানে যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে বোমা হামলা করে নিরাপদে ফিরে আসা বিপদজনক, এমন গুরুত্বপূর্ণ স্ট্র্যাটেজিক টার্গেটে মিসাইলের ব্যবহার অত্যাবশ্যক। তাই লংরেঞ্জ এয়ার স্ট্রাইকের জন্য বিভিন্ন দেশ বিমান থেকে নিক্ষেপযোগ্য ক্রুজ মিসাইল বানিয়েছে। এগুলোর কাজের ধরন ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্রুজ মিসাইলের ন্যায়। বিমান থেকে নিক্ষেপ করা অ্যান্টিশিপ ও ল্যান্ড অ্যাটাক ক্রুজ মিসাইল, উভয়ের কাজের ধরন প্রায় একই। ভূমি বা সাগরের যুদ্ধজাহাজ যেটাই হোক না কেন, ক্রুজ মিসাইল এত কম উচ্চতা দিয়ে টার্গেটের দিকে ধেয়ে যায় যে এগুলোকে রাডারে সহজে শনাক্ত করা যায় না। কিছু কিছু এয়ার লঞ্চড ক্রুজ মিসাইল সুপারসনিকের পাশাপাশি হাইপারসনিকও হয়ে থাকে।
২) এয়ার-লঞ্চড ব্যালিস্টিক মিসাইল (ALBM)
উপরে বিভিন্ন রেঞ্জের যেসব ব্যালিস্টিক মিসাইলের কথা বলা হলো, তার সবই ভূমিভিত্তিক। ফলে দূরের যুদ্ধক্ষেত্রে মোতায়েন বা ব্যবহার করা বেশ সময়সাপেক্ষ। এজন্য স্নায়ুযুদ্ধের শুরুর দিকে মিডিয়াম রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিসাইল বানানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয় সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে। পরে সোভিয়েতরা ভূমিভিত্তিক আইসিবিএমে এবং মার্কিনীরা সাবমেরিনভিত্তিক আইসিবিএমে মনোযোগ ও উন্নতি করায় এই প্রতিযোগিতা কয়েকটি পরীক্ষণের পর থেমে যায়।
বর্তমান যুগের লংরেঞ্জ ক্রুজ মিসাইল অত্যন্ত নিখুঁতভাবে হামলা করতে পারলেও এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম দিয়ে একে ঠেকিয়ে দেয়ার শঙ্কা কিন্তু থেকেই যায়। কিন্তু এয়ার লঞ্চড ব্যালিস্টিক মিসাইলে সেই ঝুঁকি প্রায় নেই বললেই চলে। এটি এমন একধরনের মিসাইল যার মোকাবেলায় সাধারণ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম তো বটেই, এন্টি ব্যালিস্টিক মিসাইলও হিমশিম খাবে। কেননা অ্যারো-ব্যালিস্টিক বৈশিষ্টের মিসাইলের কাজের ধরন সাধারণ ব্যালিস্টিক মিসাইল থেকে অনেকটাই আলাদা। এটি তার ফ্লাইট কোর্সের পুরোটা জুড়েই ম্যানুভার (ডানে-বায়ে সরে যাওয়া) করতে সক্ষম বিধায় একে ধ্বংস করার জন্য পাল্টা মিসাইল ছোড়ার আগে ইন্টারসেপ্ট পয়েন্ট অনুমান করা যায় না। চিরশত্রু যুক্তরাষ্ট্রকে এক ধাক্কায় পেছনে ফেলে দিতে এমন মিসাইল বানিয়েছে রাশিয়া। সম্প্রতি আলোচিত 'কিনজাল' হাইপারসনিক মিসাইলটি ম্যাক ১০ গতি নিয়ে টার্গেটের দিকে ধেয়ে যায় বিধায় একে প্রতিহত করা সমসাময়িক এয়ার ডিফেন্স মিসাইলগুলোর পক্ষে প্রায় অসম্ভব।
৩) অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল
একটু আগে যে কাঁধে বহনযোগ্য অ্যান্টি-ট্যাংক মিসাইলের কথা বললাম, সেটি এবং এই মিসাইলের কাজের ধরন প্রায় একই। পার্থক্য শুধু এটি এয়ার লঞ্চড মিসাইল। যুদ্ধবিমান থেকে ফেলা মিসাইল-বোমা যতই আধুনিক হোক না কেন, তা দিয়ে ট্যাংক ধ্বংস করা বেশ কষ্টকর। তাই অ্যান্টি ট্যাংক মিসাইলগুলো হেলিকপ্টার গানশিপ ও অ্যাটাক ড্রোন থেকে ফায়ার করা হয়ে থাকে। ট্যাংক ছাড়াও অন্যান্য সাঁজোয়া যান, বাংকার ধ্বংস করাসহ পদাতিক সেনাদের ‘ক্লোজ এয়ার সাপোর্ট’ দেয়ার ক্ষেত্রে এ ধরনের মিসাইলের জুড়ি মেলা ভার।
৪) অ্যান্টি-রেডিয়েশন মিসাইল
এই মিসাইলের নাম শুনে পাঠকের ভ্রু কুঁচকে যাওয়াই স্বাভাবিক। উপরে যেসব সারফেস-টু-সারফেস ও এয়ার-টু-গ্রাউন্ড মিসাইলের কথা বললাম তার সবই শত্রুপক্ষের কোনোপ্রকার প্রতিরোধ ছাড়াই টার্গেটে হামলা করতে পারবে যখন শত্রুপক্ষের রাডার অকেজো হয়ে যাবে। রাডারকে বলা হয় আধুনিক সামরিক বাহিনীর অদৃশ্য চোখ। যেকোনো ধরনের এয়ারক্রাফট থেকে ধেয়ে আসা মিসাইল, সবই শনাক্ত করার জন্য বিভিন্ন প্রকারের রাডার রয়েছে। তবে প্রতিটি রাডারের একটি সাধারণ বিষয় হলো হলো এরা আকাশে রেডিও তরঙ্গ ছুড়ে দেয় (এটিও একপ্রকার রেডিয়েশন), এবং ফিরতি তরঙ্গ কোনো কিছুতে (বিমান, মিসাইল) বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে আসে। ফলে সেটির অবস্থান, গতি, দিক ইত্যাদি তথ্য জেনে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়া যায়। কাজটি যাতে করা সম্ভব না হয় সেজন্যই অ্যান্টি-রেডিয়েশন মিসাইলের আগমন! আধুনিক যুগের যেকোনো যুদ্ধের শুরুতেই শত্রুর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। সামরিক ভাষায় একে বলা হয় Suppression of Enemy Air Defenses (SEAD)। অ্যান্টি-রেডিয়েশন মিসাইলগুলো রাডার তরঙ্গকে অনুসরণ করে রাডারের অবস্থান খুঁজে বের করে হামলা চালায়। প্রথমেই শত্রুকে অন্ধ করে দিতে পারলে পরবর্তীতে অনেকটাই বিনা বাধায় ব্যাপক হারে বিমান হামলা চালানো যায়। ইরাক, সার্বিয়া, এমনকি সাম্প্রতিক ইউক্রেন যুদ্ধেও একই কৌশলের ব্যবহার দেখা গেছে। ইউক্রেনের শক্তিশালী এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম অকেজো করে দিয়ে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।
অ্যান্টি রেডিয়েশন মিসাইলের ব্যবহার নিয়ে পড়ুন: এফ-১১৭ নাইটহক: বিশ্বের প্রথম স্টেলথ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার কাহিনি
এয়ার টু এয়ার মিসাইল (AAM)
আকাশে থাকা যাবতীয় টার্গেট ধ্বংসে এই মিসাইল ব্যবহৃত হয়। তবে সব টার্গেটই যে শত্রুবিমান হবে তা কিন্তু নয়।
১) অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট
যুদ্ধবিমান থেকে আকাশ থেকে আকাশে ফায়ার করে শত্রুবিমান ঘায়েল করতে এই মিসাইল ব্যবহৃত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বোমারু বিমানগুলো শত্রুর বিমান বিধ্বংসী কামান ও ইন্টারসেপ্টর বিমানের মেশিনগানের গুলিবৃষ্টি থেকে বাঁচতে ভারী আর্মার ব্যবহার করা শুরু করে। ফলে মেশিনগানের গুলিতে এদের ভূপাতিত করা বেশ কষ্টকর হয়ে যায়। ফলে আবিষ্কার হয় অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট রকেটের। এগুলোর রেঞ্জ ছিল খুবই কম, আবার আনগাইডেড হওয়ায় লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার সুযোগ বেশি। এরপর ধীরে ধীরে আকাশযুদ্ধের প্রধান অস্ত্র মেশিনগানকে পাশ কাটিয়ে গাইডেড মিসাইল এর জায়গা দখল করতে শুরু করে। বর্তমান যুগ হচ্ছে beyond-visual-range missile (BVR) এর যুগ। অর্থাৎ শত্রুর দৃষ্টিসীমার বাইরে (৩৭ কি.মি.) থেকেই মিসাইল হামলা চালানো যায়। পাইলটদের আকাশে আগের মতো আর শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার প্রয়োজন খুব কমই দেখা দেয়। এজন্য শর্ট, মিডিয়াম রেঞ্জের মিসাইল রয়েছে। লংরেঞ্জ বিভিআর মিসাইল অল্প কিছু দেশের হাতে রয়েছে। আধুনিক এয়ার-টু-এয়ার মিসাইলগুলো হয় রাডার গাইডেড, নাহয় ইনফ্রারেড হোমিং হয়। প্রথম ধরনটি রাডারে টার্গেট লক করে মিসাইল ছোড়া হয়। শেষোক্ত ধরনটি অনেকটাই উপরে বর্ণিত ম্যানপ্যাড মিসাইলের মতো, যা বিমানের ইঞ্জিনের তাপ অনুসরণ করে এগিয়ে যায়। এয়ার-টু-এয়ার মিসাইলের হাত থেকে বাঁচতে আধুনিক যুদ্ধবিমানগুলো জ্যামার, টাওয়েড রাডার ডিকয় ছাড়াও আতশবাজির ন্যায় দেখতে চ্যাফ ও ফ্লেয়ার ব্যবহার করে থাকে।
২) অ্যান্টি-স্যাটেলাইট ওয়েপন্স
আজকের যুগে সামরিক পরাশক্তি হওয়ার অন্যতম উপাদান হলো মিলিটারি স্যাটেলাইট। নিরাপদ কমিউনিকেশনসহ শত্রুর উপর সার্বক্ষণিক নজরদারি করার জন্য সামরিকভাবে উন্নত দেশগুলো আজ একাধিক স্যাটেলাইট ব্যবহার করে থাকে। ফলে আকাশের চোখকে ফাঁকি দেয়া প্রায় অসম্ভব। এজন্য অ্যান্টি-স্যাটেলাইট মিসাইলও বানিয়েছে পরাশক্তিগুলো। উপরে বর্ণিত অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক মিসাইলগুলো অতি উচ্চতায় থাকা টার্গেট ধ্বংসের মতো উপযোগী করে বানানো। ফলে লোয়ার আর্থ অরবিটের অনেক স্যাটেলাইট এদের রেঞ্জের মধ্যে অনায়াসে এসে যায়। এর বাইরে এয়ার লঞ্চড অ্যান্টি স্যাটেলাইট মিসাইল রয়েছে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র (ঘোষিত) ও রাশিয়ার (অঘোষিত)। আধুনিক যুদ্ধবিমানগুলোর মধ্যে গুটিকয়েক বিমান রয়েছে যারা ৬০ হাজার ফুটের বেশি উচ্চতায় উড়তে সক্ষম। অ্যান্টি-স্যাটেলাইট মিসাইলের লঞ্চ প্লাটফর্ম হিসেবে এ ধরনের বিমানকেই বেছে নেয়া হয়। নির্দিষ্ট উচ্চতায় উঠে যাওয়ার পর পাইলট মিসাইল মুক্ত করে দেন। অতঃপর সেটি পূর্বনির্দেশনা অনুযায়ী নিজেই টার্গেটের দিকে ধেয়ে যায়। ধারণা করা হয়, পরমাণু যুদ্ধ যদি শুরু হয়েই যায়, তবে ইন্টারকন্টিনেটাল ব্যালিস্টিক মিসাইল ছোড়ার আগমুহূর্তে শত্রুর স্যাটেলাইট বহর অকেজো করতে এই মিসাইল ব্যবহৃত হতে পারে।
খেয়াল করে দেখুন, মানুষের যুদ্ধাস্ত্রের ব্যাপ্তি পৃথিবী ছাড়িয়ে মহাকাশে চলে গেছে! অ্যান্টি-স্যাটেলাইট মিসাইল পরীক্ষা পরাশক্তিগুলোর সামরিক সক্ষমতার জানান দেয়ার মাধ্যম হলেও মহাকাশ গবেষণায় এটি হুমকিস্বরূপ। সম্প্রতি চীন, ভারত ও রাশিয়ার এ ধরনের মিসাইলের পরীক্ষায় ধ্বংস হওয়া স্যাটেলাইটের ভগ্নাংশ মহাকাশের আবর্জনার (Space debris) পরিমাণ এত বৃদ্ধি করেছে যে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনকে বেশ কয়েকবার উচ্চতা পরিবর্তন করতে হয়েছে। মানবজাতিকে ভয়ানক যুদ্ধের মাধ্যমে সম্পূর্ণ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে বিভিন্ন প্রকারের মিসাইল নিয়ে চলমান গবেষণা বন্ধ করা জরুরি। কিন্তু পরাশক্তিগুলো কি সেটা আদৌ করবে?
This is a Bangla article about different types of missiles
Reference :
4) Worldwide Ballistic Missile Inventories
6) What Is an Intercontinental Ballistic Missile and How Does It Work?