Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

হার্ভার্ডে জাকারবার্গ: ফেসবুকের আগের গল্প

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, পৃথিবীর সেরা শিক্ষায়তনগুলোর একটি। এর ডরমেটরির প্রায় প্রতিটি রুমেই এমন সব ছেলেমেয়ের বসবাস, যাদের সিদ্ধান্তে ঘুরবে ভবিষ্যৎ পৃথিবীর চাকা। হার্ভার্ডের কার্কল্যান্ড হাউজে গেলে আপনার চোখ চলে যাবে এক তরুণের ওপর। ব্যাগি জিন্স আর উদ্ভট ছবিসহ একটি টি-শার্ট পরা ছেলেটি হাতে মার্কার পেন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল হোয়াইট বোর্ডের সামনে। বিভিন্ন সংকেত আর অদ্ভুত ডায়াগ্রামে ভর্তি বোর্ডে যে আসলে কী লেখা আছে, তা বুঝে ওঠা দায়। তবে তিনি বেশ মনোযোগ দিয়ে আঁকিবুঁকি করে যাচ্ছেন বোর্ডে।

এই ছেলেটি আমাদের সবারই পরিচিত, ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। সময়কাল ২০০৩ সাল। মার্ক নিজে তখনও জানতেন না, আর কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি কী বিশাল বিপ্লব নিয়ে হাজির হবেন ইন্টারনেট দুনিয়ায়। জানতো না তার সাথে একই স্যুটে বাস করা অন্য তিন ছাত্রও। মার্কের রুমমেট ছিল হিউজেস। তার পাশের রুমেই থাকতো ডাসটিন মস্কোভিস ও বিলি ওলসন। ফেসবুকের শুরুর গল্পে তাদের ভূমিকাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

হার্ভার্ডে তরুণ জাকারবার্গ‌; Image Source: businessinsider.com

এদের মধ্যে জাকারবার্গ বিশেষ ব্যতিক্রমী ছিলেন কম্পিউটার বিজ্ঞানে তার আগ্রহের দিক দিয়ে। হার্ভার্ডে তার মেজরও ছিল কম্পিউটার বিজ্ঞান। তিনি ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিতেন প্রোগ্রামিং করে। তার বিশেষ আগ্রহ ছিল ইন্টারনেট দুনিয়ার জন্য নিত্যনতুন আইডিয়া খোঁজায়। তার আগ্রহ ধীরে ধীরে অন্য তিনজনের মাঝেও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। কয়েক মাসের মধ্যেই তাদের চারজনের আড্ডার মূল বিষয় হয়ে ওঠে ইন্টারনেট, কম্পিউটার, প্রযুক্তি ইত্যাদি।

মার্ক কিছুটা অন্তর্মুখী ধরনের ছিলেন। তবে আত্মবিশ্বাসে কোনো খামতি ছিল না তার। তাকে দেখলেই মনে হতো, এ ছেলেটি পরিষ্কার জানে সে কী করছে। তার আত্মবিশ্বাস, হিউমার আর সবসময় মুখে লেগে থাকা দুষ্টু হাসি এড়ানো মেয়েদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। বান্ধবীবিহীন অবস্থায় তাই খুব কম সময়ই কাটাতে হয়েছে তাকে। তার করা প্রথম প্রজেক্টের অনুপ্রেরণাও কিছুটা এই ক্ষেত্র থেকে ছিল।  

তার প্রথম প্রজেক্টের নাম ছিল ‘কোর্স ম্যাচ’। এটির সাহায্যে হার্ভার্ডের ছাত্র-ছাত্রীরা দেখতে পারতো কে কোন কোর্সটি নিচ্ছে। ধরুন, কোনো এক কোর্সের ক্লাস করতে গিয়ে পাশের সারিতে বসা সুন্দরী মেয়েটির দিকে চোখ চলে গেল আপনার। ভাবলেন আরো কয়েকটি কোর্সে তার আশেপাশে বসতে পারলে বেশ হতো। কোনো সমস্যা নেই; মার্কের কোর্স ম্যাচ আছে। এটি ব্যবহার করে আপনি বিভিন্ন কোর্সে ক্লিক করে দেখতে পারবেন তালিকায় মেয়েটির নাম আছে কি না! অথবা মেয়েটির প্রোফাইলে ক্লিক করে সহজেই দেখে নিতে পারবেন সে আর কোন কোর্স নিয়েছে।

কম্পিউটারে ব্যস্ত তরুণ জাকারবার্গ‌; Image Source: supermoney.com

বেশ দ্রুতই শত শত ছেলেমেয়ে সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে শুরু করে। নিজেদের স্ট্যাটাস বিষয়ে বেশ সতর্ক হার্ভার্ডের ছেলেমেয়েদের কোনো ক্লাসের বিষয়ে মনোভাব বদলাতো এটি কারা করছে তার ওপর ভর করে। ফলে দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে যায় মার্কের লেখা প্রোগ্রামটি। এটি আসলে তেমন কঠিন কিছু ছিল না। তবে এখান থেকে বেশ ভালোভাবে ফুটে ওঠে জাকারবার্গের আইডিয়ার মাহাত্ম। বোঝা যায়, প্রথম থেকেই জনপ্রিয় আইডিয়া বের করায় বেশ দক্ষতা ছিল তার।

তার দ্বিতীয় প্রজেক্টটির গল্প আরেকটু বিস্তারিত বলা দরকার। এটি নিয়ে তাকে হার্ভার্ড থেকে বের করে দেওয়ার উপক্রম হয়েছিল প্রায়। সে সময়টা খুব ভালো যাচ্ছিল না মার্কের। তার জার্নাল থেকে জানা যায়, কিছুদিন আগেই সম্পর্ক ভেঙেছিল এক বান্ধবীর সাথে। এ নিয়ে কিছুটা বিক্ষিপ্ত ছিলেন তিনি। বেশ রাগও ছিল মেয়েটির ওপর। তাই তিনি এমন কিছু একটা করতে চাইছিলেন যাতে মেয়েটির থেকে তার মনোযোগ সরানো যায়।

একটা উদ্ভট আইডিয়া আসলো তার মাথায়। তিনি ঠিক করলেন, বিভিন্ন মানুষকে বিভিন্ন পশুর সাথে তুলনা করার একটি প্রোগ্রাম তৈরি করবেন। বিলি অলসোন একটু শুধরে দিলেন তাকে। বিলি আইডিয়া দিলেন, মানুষকে বরং অন্য মানুষের সাথে তুলনা করতে। প্রয়োজনে সেখানে মাঝে মাঝে পশুর সাথে তুলনা করা যাবে। টানা আট ঘন্টা কাজ করে মার্ক যখন ওয়েবসাইটটি সম্পন্ন করলেন, তখন পশু আর রইলো না।

যেমন ছিল ফেসম্যাশ; Image Source: twitter.com/@histoftech

মার্ক বিভিন্ন মানুষকে তাদের আকর্ষণীয়তার ভিত্তিতে তুলনা করার একটি ওয়েবসাইট তৈরি করলেন। ফেসম্যাশের উদ্দেশ্য ছিল হার্ভার্ডে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছেলে ও মেয়েকে খুঁজে বের করা। এতে ব্যবহারকারীরা দুজন ছেলে অথবা মেয়ের ছবি পাশাপাশি দেখে ‘হট অর নট’ ভোট দিতে পারতো। এভাবে যার পক্ষে ভোট বাড়তো তাকে আরো আকর্ষণীয় একজনের ছবির সাথে তুলনা করা হতো।

ওয়েবসাইটটির খবর ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি। হার্ভার্ডের ছেলেমেয়েরা আসক্তের মতো বিভিন্ন ছেলেমেয়েদের তুলনা করার কিছুটা অসুস্থ এ বিনোদন নিতে থাকলো। ওয়েবসাইটটির হোম-পেজে লেখা ছিল,

. Were we let in [to Harvard] for our looks? No. Will we be judged by them? Yes.

এতে ব্যবহার করা ছবিগুলো জাকারবার্গ পেয়েছিলেন ফেসবুক থেকে। না, আমাদের পরিচিত ফেসবুক নয়, এর তো তখনো জন্মই হয়নি। এ ‘ফেসবুক’ হলো হার্ভার্ডের প্রত্যেকটি ডরমেটরিতে রাখা ছাত্র-ছাত্রীদের ছবি ও তথ্যাদির একটি তালিকার নাম। এখানের ছবিগুলো ওরিয়েন্টেশনের দিন তোলা হতো। এ ধরনের ছবিগুলো কেমন হয় তা বুঝতেই পারছেন, তাড়াহুড়ো করে কোনোরকমে তোলা, গোবেচারা ধরনের দেখতে এ ছবিগুলো যে কেউ লুকিয়ে রাখতেই পছন্দ করে। জাকারবার্গ এ ছবিগুলো হাতিয়েছিলেন অবৈধ পন্থায়। নানা কৌশলে বিভিন্ন হাউজের ওয়েবসাইটে হ্যাক করে, তাদের ‘ফেসবুকের’ ডিজিটাল সংস্করণগুলো সংগ্রহ করে নিয়েছিলেন। হার্ভার্ডের আইন কানুনের তোয়াক্কা তিনি করেননি।  

জাকারবার্গ‌ ফিরে গিয়েছিলেন তার হার্ভার্ডের ঠিকানায়; Image Source: Getty Images

তবে মার্কের এ আকর্ষণীয় ব্যক্তি খোঁজার কাজে অধিকাংশ ছেলেমেয়ে মজা পেলেও সবাই বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখেনি। খুব দ্রুতই ফেসম্যাশের বিরুদ্ধে রেসিজম ও সেক্সিজমের অভিযোগ আসতে লাগলো। ‘ফুয়েরজা ল্যাটিনা’ ও ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হার্ভার্ড ব্ল্যাক ওমেন’ নামের দুটি সংগঠন এর বিরুদ্ধে বেশ সরব হয়ে উঠলো। খবর চলে গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিভাগের কাছেও। বন্ধ করে দেয়া হলো মার্কের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা।

জাকারবার্গ এ ওয়েবসাইটটি বানানো সম্পন্ন করেছিলেন ভোর চারটার দিকে। এটি সক্রিয় ছিল রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত। এর মধ্যেই ৪৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী সাইটটি ব্যবহার করেছিল, তুলনা করেছিল প্রায় ২২,০০০ ছবিকে। এর থেকে সাইটটির জনপ্রিয়তা আঁচ করা যায়। কিন্তু এ জনপ্রিয়তা উদযাপন করার মতো সুযোগ পাননি জাকারবার্গ। শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তলব করে তাকে। ওয়েবসাইটটি চালাতে গিয়ে গোপনীয়তা, নিরাপত্তা ও কপিরাইট বিষয়ক আইন লঙ্ঘন করেছেন তিনি। এছাড়া ছেলেমেয়েদের অসুস্থ বিনোদন দেওয়ার জন্য সেক্সিজম ও রেসিজমের অভিযোগ তো ছিলোই।

জাকারবার্গ বুঝতে পেরেছিলেন ভালো রকমের গ্যাঁড়াকলেই ফেঁসে গেছেন তিনি। মোটামুটি ধরেই রেখেছিলেন যে, হার্ভার্ড ছাড়তে হবে তাকে। তার বাবা-মাও চলে এসেছিলেন তার বাক্স-প্যাটরা গুছিয়ে দিতে। তার বন্ধু-বান্ধবরা তার বিদায় উপলক্ষ্যে এক পার্টির আয়োজন করে। এ পার্টিতেই মার্কের জীবনের অসাধারণ একটি ঘটনা ঘটে। মার্ক জাকারবার্গ পরিচিত হন বর্তমানে তার স্ত্রী প্রিসিলা চ্যানের সাথে।

প্রিসিলাও তখন হার্ভার্ডের ছাত্রী। তাদের  দেখা হওয়ার জায়গাটা কিছুটা উদ্ভট ছিল। ওয়াশরুমের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় প্রিসিলার সাথে কথা হয় মার্কের। কিছুক্ষণ কথা হওয়ার পর মার্ক প্রিসিলাকে বলেন, “শোনো আমাকে হয়তো তিনদিন পর হার্ভার্ড থেকে বের করে দেওয়া হবে, তাই ডেটে যাওয়ার জন্যে আমাদের দেরি করা উচিৎ হবে না।” প্রিসিলা আর না করতে পারেননি তাকে।

জাকারবার্গ‌ ও তার স্ত্রী প্রিসিলা চ্যান; Image Source: Today S

তবে সেবার জাকারবার্গকে হার্ভার্ড থেকে বের করে দেওয়া হয়নি। একজন কাউন্সেলরের তত্ত্বাবধানে কিছুদিন থাকার নির্দেশ দিয়ে রেহাই দেওয়া হয়। ক্ষিপ্ত ক্লাবগুলোর কাছেও ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, তিনি এটি স্রেফ একটি কোডিং প্রজেক্ট হিসেবেই করেছিলেন, এটা যে এত জনপ্রিয় হয়ে উঠবে তা ভাবতে পারেননি তিনি। পরে অ্যাসোসিয়েশন অব হার্ভার্ড ব্ল্যাক ওমেনের ওয়েবসাইট তৈরিতেও সাহায্য করেছিলেন তিনি।

ভাগ্যিস শেষতক ফেসম্যাশে কেবল মানুষের ছবিই ছিল, পশুর ছবি থাকলে হয়তো এত সহজে রেহাই পেতেন না মার্ক জাকারবার্গ। হয়তো এ সময় হার্ভার্ড ছাড়তেই হতো তাকে। তখন হার্ভার্ড ছাড়লে আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী ‘ফেসবুক ডট কম’ আলোর মুখ দেখত কি না তা নিয়েও সন্দেহ থেকে যায়। কারণ, ফেসবুক শুরু হয়েছিল হার্ভার্ডের অভ্যন্তরীন চাহিদার কারণেই। ফেসম্যাশ ও কোর্স ম্যাচের মতো ফেসবুকের লক্ষ্যও ছিল হার্ভার্ডের ছাত্র-ছাত্রীরাই। পরবর্তীতে তা ধীরে ধীরে বিকশিত হয়ে পৌঁছায় আজকের অবস্থানে।

সিন্যাপ্স মিডিয়া প্লেয়ার; Image Source: haikudeck.com

কোর্স ম্যাচ ও ফেসম্যাশের মতো প্রজেক্টগুলোকে ফেসবুকের পূর্বসূরি  বলা চলে। এ প্রজেক্টগুলো দিয়ে জাকারবার্গ ইন্টারনেট দুনিয়ায় নিজের আইডিয়ার বাস্তবায়ন শুরু করেছিলেন। জনপ্রিয় আইডিয়া খুঁজে বের করায় তার দক্ষতার প্রমাণও মেলে এ প্রজেক্টগুলোতে। কয়েকজন সিনিয়রের সাথে মিলে এ সময় তিনি আরেকটি সফটওয়্যারও তৈরি করেছিলেন। সিন্যাপ্স মিডিয়া প্লেয়ার নামের এ মিউজিক প্লেয়ারটি ব্যবহারকারীর গানের তালিকে দেখে তাকে গান সাজেস্ট করতে পারতো। ফেসবুকের অনেক কিছুতেই এ ধরনের অ্যালগরিদমের দেখা মেলে এখন। বলা চলে, ফেসবুকে জাকারবার্গের আগের ছোট ছোট প্রজেক্টগুলোর এক মহা সম্মিলন ঘটেছিল। ফেসবুক কীভাবে যাত্রা শুরু করে, কীভাবে বিকশিত হয়, চলতি পথে মুখোমুখি হওয়া সমস্যাগুলো অতিক্রমের সেসব গল্প নিয়ে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হবে পরবর্তীতে।

This article is in Bangla language. It's about harvard days of mark zuckerberg, co-founder of facebook.

References: The Facebook Effect: The Inside Story of the Company That Is Connecting the World by David Kirkpatrick.

For more references check hyperlinks inside the article.

Featured Image: infoginx.com

Related Articles