Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ডিজিটাল মার্কেটিং: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে যেভাবে বদলে যাচ্ছে প্রচারের ধরন

বর্তমানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কিংবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কথা সবার মুখে-মুখে। প্রযুক্তির এক বিস্ময় বলা চলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে, যা সামনের দিনগুলোতে আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হতে চলেছে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো ইতোমধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা চালাচ্ছে। যানবাহন, খাদ্য প্রস্তুতকরণ কিংবা শিল্পে এটার ব্যবহার শুরু হয়ে গিয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। কারণ এই সিস্টেমকে আরও সময় দিতে হবে এই দুনিয়ার হাল-চাল বুঝে নিতে হলে। সেই পর্বটা পার হয়ে গেলেই ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ন্ত্রিত হবে পুরোপুরি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সএর হাত দিয়ে। এর ফলে বহুদিন ধরে চলে আসা মার্কেটিংয়ের ধরনটাই বদলে যাবে। গ্রাহক সেবা বাড়ার পাশাপাশি পণ্যের প্রচারে যে খরচ সেটা অনেকটাই কমে যাবে। এটা কেবল শুরু, চলুন জেনে আসি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কীভাবে আমাদের মার্কেটিংয়ের ধারণাকে বদলে দিয়ে সম্পূর্ণ নতুন একটি ধারণা প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেল এবং ডিজিটাল মার্কেটিং

মার্কেটিংয়ের মূল কনসেপ্ট হলো প্রচারের মাধ্যমে পণ্যের বিক্রি বাড়ানো। এখানে গ্রাহকই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পণ্য বিক্রির উদ্দেশ্যে গ্রাহকের মন বুঝতে পারাটা পণ্য বিক্রির সফলতা নির্ধারণ করে দেয়। তাই একজন গ্রাহককে চেনা এবং তার কাঙ্ক্ষিত সেবা তার দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারলেই একজন সেবাদাতা সফল হতে পারেন। বড় বড় কোম্পানিগুলো প্রতি বছর তাদের আয়ের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ব্যয় করে তাদের পণ্যের প্রসারের জন্য। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের প্রচার ফলপ্রসূ হয় না ভুল গ্রাহকের কাছে ভুলভাবে প্রচারের জন্য। আর এটা ঘটে থাকে গ্রাহকের ব্যাপারে যথেষ্ট না জেনেই প্রচার করার কারণে। গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছানোর যে সীমাবদ্ধতা, এটা দূর করার ধারণা থেকেই মূলত ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অভিষেক।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ডিজিটাল মার্কেটিং এর ধারণাকে বদলে দিচ্ছে; Image Source: thribeglobal.com

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হাজার-হাজার গ্রাহকের রুচির প্যাটার্ন অনুসারে তাদের কাছে সঠিক পণ্যের প্রচার করতে সক্ষম। যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য মজুদ থাকার কারণে গ্রাহক পর্যায়ে সঠিক মাত্রার প্রচার যেমন সম্ভব হবে, তেমনি গ্রাহকের সন্তুষ্টি অর্জনেও সফল হবে এটি। কোম্পানিগুলো প্রচার এবং প্রসারের পেছনে যে ব্যয় করতো, সেটা কমে আসবে বহুগুণ। সময় বাঁচিয়ে তারা গ্রাহকের আরও কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারবে নির্দিষ্ট সেবা নিয়ে। সেবার মান বেড়ে যাওয়ার ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝেও প্রতিযোগীতা তৈরি হবে গ্রাহকসেবা নিশ্চিতকরণে। এতে মূলত উভয়পক্ষই লাভবান হবে বলে মনে করেন অনেক প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ।

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কিছু ঝলক

অনেকের ধারণার বাইরে হলেও ব্যবসার প্রসারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার ইতোমধ্যে বেশ খানিকটা এগিয়েছে। গ্রাহকের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে তাদের সেবা প্রাপ্তির অভিজ্ঞতাকে বদলে দিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বেশ কিছু ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নিই।

চ্যাটবট

গ্রাহক পর্যায়ে চ্যাটবটের অভিজ্ঞতা ইতোমধ্যে অনেকেই পেয়ে গিয়েছেন। এটা এমন একটি যান্ত্রিক ব্যবস্থা, যেটা গ্রাহকের প্রয়োজন অনুসারে নির্দিষ্ট সেবা নিশ্চিত করতে পারে মানুষের সহায়তা ছাড়াই। তবে সেবাভেদে গ্রাহকদের চাহিদাগুলো এতে প্রোগ্রাম করা থাকে। তাই গ্রাহক যদি কোনো অর্ডার করতে চায়, চ্যাটবট সেই অর্ডার গ্রহণ করে নেয় কিংবা কোনো প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়েও গ্রাহককে সহায়তা করতে পারে এই চ্যাটবট। সহজেই ব্যবহার করা যায় বিধায় এই প্রোগ্রামটি ইমেইল, ওয়েবসাইট, মেসেজিং এর সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া যায়। ফলে গ্রাহক তাৎক্ষণিক সেবা গ্রহণে সক্ষম হয় কোনোরূপ মানুষের হাতের স্পর্শ ছাড়াই! মজার ব্যাপার হলো, চ্যাটবটের কথা বলার ধরন মানুষের কথা বলার ধরনের সঙ্গে মানানসই। যার কারণে যান্ত্রিক অনুভূতিটা গ্রাহক টের পান না।

চ্যাটবট তাৎক্ষণিক উত্তর দিতে সক্ষম; Image Source: chatbotslife.com

উদাহরণ হিসেবে স্টারবাকসে্র কথাই ধরা যাক। তাদের অর্ডার গ্রহণের জন্য আগে কর্মী নিয়োগ দিতে হতো। কিন্তু বর্তমানে তাদের অর্ডারের বৃহৎ একটি অংশ আসে চ্যাটবটের মাধ্যমে। তাদের চ্যাটবট সিঙ্গেল অর্ডার থেকে শুরু করে একই গ্রাহকের ভিন্ন ভিন্ন অর্ডার গ্রহণে সক্ষম। এতে স্টারবাকস্ এবং গ্রাহক উভয়েরই সময় সাশ্রয় হচ্ছে। চ্যাটবটকে ভবিষ্যতে আরও জটিল যোগাযোগ গড়ে তোলার জন্য গড়ে তোলা হবে যাতে, বড় সংগঠনগুলোর বিশাল পণ্যের সমাহার থেকে নির্দিষ্ট গ্রাহকের কাছে নির্দিষ্ট সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়।

অনলাইনে পণ্য ক্রয়

বর্তমানে অনলাইনে পণ্য ক্রয়ের ব্যাপকতা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। মানুষ এখন সময় ব্যয় করে পণ্য ক্রয়ের চেয়ে অনলাইনে পছন্দ করে সেটা অর্ডার দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। এর কারণ কোম্পানিগুলো তাদের ওয়েবসাইটকে আকর্ষণীয় আর গ্রাহকের জন্য সহজ করেই তৈরি করছে। একটি সাইটেই গ্রাহক তার প্রয়োজনীয় সব কিছু পেয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সাইটগুলো তাদের গ্রাহকদের থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে। যার ভেতর থাকে গ্রাহকের পরিচয়, কতটুকু সময় সাইটে ব্যয় করছে, কেমন পণ্য খুঁজছে তারা কিংবা তাদের কার্টে কোন পণ্যগুলো সংযুক্ত রয়েছে।

ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন কিংবা আলিবাবা এসব ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপরই ভরসা করে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের কৃত্রিমভাবে বুদ্ধিমান ওয়েবসাইটকে অসংখ্য ডাটা একত্র করে সেগুলো নিজে থেকে অ্যানালাইসিস করার মতো করে গড়ে তোলা হয়েছে। যেখানে এতগুলো তথ্য অসংখ্য মানুষ নিয়োগ দিয়েও নির্ভুলভাবে অ্যানালাইসিস করা সম্ভব নয়।

অনলাইনে পণ্য ক্রয় আমাদের চলার পথে অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠছে; Image Source: toptenrepublic.com

ইংল্যান্ডভিত্তিক ক্লথিং রিটেইলার প্রতিষ্ঠান ‘টপশপ’ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে অন্য এক পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে! মস্কোর একটি আউটলেটে তারা ভার্চুয়াল ট্রায়ালের প্রযুক্তি এনেছে। যেখানে কাউকে আলাদাভাবে কাপড় পরে দেখতে হবে না। বরং ভার্চুয়াল আয়নাতে ক্যামেরা আর স্ক্রিন রয়েছে, যার সামনে দাঁড়ালে যে কেউ নিজের ভার্চুয়াল ভার্সনের দেখা পাবে! কোনো পণ্য ট্রায়াল দিতে হলে তাকে স্ক্রিনে পণ্যটি সিলেক্ট করতে হবে, তারপর ভার্চুয়ালি সেটা পরে দেখা যাবে। তাদের আইডিয়াটি ইতোমধ্যে যথেষ্ট সাড়া ফেলেছে।

সুইডিশ ফার্নিচার জায়ান্ট ‘IKEA’-ও কম যায় না। তারা এমন একটি আইডিয়া নিয়ে এগুচ্ছে, যেখানে কোনো ফার্নিচার ভার্চুয়ালি আপনার ঘরে মানাবে কি না সেটা দেখে নেওয়া যাবে! আপনাকে শুধু আপনার ঘরের মাপ দিতে হবে, ব্যাস! আপনি জেনে যাবেন কোন পণ্যটি আপনার জন্য মানানসই।

মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার আমাদের পণ্য ক্রয়ের অভিজ্ঞতাকেই বদলে দিচ্ছে। এগুলো আরও বুদ্ধিমান হচ্ছে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। ভবিষ্যতে আমাদের জন্য কেমন অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করছে সেটা সময়ই বলে দেবে।

ওয়েবসাইট বিল্ডার

ইউজার এক্সপেরিয়েন্স বাড়াতে ওয়েবসাইট নির্মাতারা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন, যাতে তাদের গ্রাহকরা ফিরে না যান। পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের ভবিষ্যত যখন অনলাইনে তখন এটাকে আরও পরিকল্পিতভাবে গড়ে নিতে হবে। যার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাতেই একটা ওয়েবসাইট তৈরি করার ভার দেওয়া হচ্ছে! ওয়েবসাইট ডিজাইন প্লাটফর্ম ‘দ্য গ্রিড’ বর্তমানে এমন এক সেবা নিয়ে এসেছে, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাই একটি পূর্ণাঙ্গ সাইটের ডিজাইন করবে।

ওয়েবসাইট ডিজাইন করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা; Image Source: techcrunch.com

তাতে মানুষের কোনো ছোঁয়াই থাকবে না এবং পরিকল্পনাও তৈরি করবে ইন্টেল নিজে! এক্ষেত্রে তাদের হাতিয়ার হবে গ্রাহকের তথ্য। বিশাল সংখ্যক গ্রাহকের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ইন্টেল সবসময় সাইটকে গ্রাহকবান্ধব করে গড়ে তুলতে থাকবে। সাইটের কর্তার কাজ হবে কেবল কন্টেন্ট আপলোড করা। বাদবাকি সবগুলো ধাপ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলই সেরে নেবে।

ইমেজ রিকগনিশন

স্যোশাল মিডিয়ার কল্যাণে আমরা জানতে পেরেছি একটি ছবি আইডেন্টিটির জন্য কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। একটা গ্রুপ ছবিতে আপনার সঙ্গে আর কারা রয়েছে, তাদের নাম কিন্তু দেখা যায়। তাই আপনাকে ছবির মানুষগুলোকে আর কষ্ট করে খুঁজতে হয় না ট্যাগ করার জন্য। এটা কিন্তু সম্পূর্ণটাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কীর্তি। ফেস রিকগনিশন কিংবা যেকোনো ছবি অ্যানালাইসিস করে তথ্য দিতে সে দারুণ পটু হয়ে গিয়েছে ইতোমধ্যে। যেন একটি ছবিই হাজার কথা বলে!

পছন্দের জিনিস সম্পর্কে সহজেই জানা যাবে; Image source: hackernoon.com

চলার পথে কখনো যদি কোনো পণ্য ভালো লেগে যায়, তবে সেটার ছবি তুলে ফেলুন ঝটপট। তারপর নির্দিষ্ট একটি প্লাটফর্মে আপলোড দিয়ে পণ্যটি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবেন! পণ্যটির দাম, আনুষঙ্গিক সব তথ্যই নিমেষে পেয়ে যাবেন। তাছাড়াও পণ্যটির ব্যাপারে অন্যরা কী ভাবছে সেটাও জানা যাবে প্লাটফর্ম থেকেই।

এমনই একটি প্লাটফর্ম হচ্ছে ‘ভিভিনো’, ইমেজ রিকগনিশনের প্রযুক্তি সেবা সার্চ ইঞ্জিন গুগল বর্তমানে দিয়ে যাচ্ছে। তার সঙ্গে যুক্ত হতে যাচ্ছে ভয়েস রিকগনিশন। এই প্রযুক্তিগুলোকে এখনো বহুদূর যেতে হবে গ্রাহক সেবার মান বাড়াতে হলে। তবে বলা যায়, এগুলো ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রাণ হয়ে দাঁড়াবে।

প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কোম্পানিগুলোর লক্ষ্যই হলো সময় বাঁচিয়ে কম খরচে সবচেয়ে ভালো মানের সেবা গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়া। তাই ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার আশির্বাদ হয়েই এসেছে। সেই প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা ব্যবসা-বাণিজ্যের এই ধারা অব্যহত থাকবে পৃথিবীর শেষদিন অব্দি। শুধু এর রূপ বদলাবে সময়ে-সময়ে। তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে যত সহযোগীতাপপূর্ণ আচরণ করতে পারবো আমরা, ততই এটাকে আমাদের কাজে লাগাতে পারবো ভালোভাবে। গ্রাহকের তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মিশে যেতে পারবে যুগের সঙ্গে, আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়েই সেটা টিকে যাবে যতদিন না তার চেয়েও শক্তিশালী প্রযুক্তি মানুষ নিয়ে আসছে। বলা যায় না, মানুষ তো সবই পারে ভবিষ্যতের জন্য।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আরও জানতে পড়ুন এই বইগুলো

১) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
২) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: প্রযুক্তি বিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত

This article is about how artificial intelligence is transforming old digital marketing concept and the future of it.

Necessary sources are hyperlinked in the article.

Featured Image: asia.redant.com

Related Articles