Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কেমন হতে পারে মানুষের তৈরি বুদ্ধিমান সত্তা?

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইংরেজি নাম যার আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং সংক্ষেপে এ.আই, হলো এক প্রকার বুদ্ধিমত্তা যা যন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। কম্পিউটার বিজ্ঞানের এই বিশেষ শাখায় কম্পিউটার বা অন্যান্য যন্ত্রের নিজস্ব বুদ্ধিমত্তার বিকাশ নিয়ে চর্চা করা হয়। আপনার কাছে থাকা কোনো একটি যন্ত্র, হোক তা কম্পিউটার কিংবা আপনার সেলফোন অথবা একটি রোবট, সেটি সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে কোনো কাজ করতে সক্ষম থাকলে সেটিকে আপনি কৃত্রিমভাবে বুদ্ধিমান বলতে পারেন। অর্থাৎ যন্ত্রকে মানুষের সমপর্যায়ে কোনো কাজ করার ক্ষমতা দেয়া হলে সেই যন্ত্রটি কৃত্রিমভাবে বুদ্ধিমান বলা চলে।

মানুষের প্রায় সমপর্যায়ের বুদ্ধিমত্তা ধারণ করবে যন্ত্র; source: 3Bplus voor

জটিল এই জিনিসের সহজ রূপ

কেমন হতে পারে আপনার আশেপাশে থাকা একটি কার্যকরী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রূপ? আচ্ছা ভাবুন তো, ঘরের কাজে সাহায্যকারী মানুষটি আসতে না পারলে সারা দিনের কাজে কত ঝামেলা হয়ে যায়! অথচ বারো মাসই এসব কাজে সাহায্য করার জন্য ঘরে থাকতে পারে একটি দারুণ গৃহকর্মী রোবট, যে কিনা ঘরের কাজে সুনিপুণ, একেবারে মনের মতো একজন কর্মী। মেঝেতে ময়লা দেখলেই ঝাঁট দিয়ে পরিস্কার করে ফেলবে সে। কাপড় শুকিয়ে গেলেই বারান্দা থেকে তুলে ঘরে এনে রাখবে। আর তার পিছে কাজ নিয়ে মানুষের চেঁচানো লাগবে না মোটেও! সেটি কিন্তু হবে এ.আই-এর অবদান। প্রোগ্রাম করে রোবটটিকে তেমন ভাবেই বানানো হবে যে, সে সময় ও পরিস্থিতি খেয়াল করে সেই অনুযায়ী নিজের করণীয় নির্ধারণ করতে পারবে।

আবার কোনো কোনো যন্ত্র তার বুদ্ধিমত্তার অতিরিক্ত প্রয়োগও করতে পারে। ঘরের কাজে পটু এমন সুবোধ এক রোবটও ঘটাতে পারে অঘটন। আপনার তৃষ্ণা পেলে সে যদি দিনের বেলা আপনার জন্য ফলের রস বানিয়ে আনে, একই কাজ সে রাতের বেলায়ও করে বসবে। যখন চারদিক শুনশান, পড়শিরা ঘুমিয়ে পড়েছে, আপনার গৃহকর্মী লক্ষ্মী রোবট তখন বিকট শব্দে জুসার চালু করে গোটা বাড়ি মাথায় তুলে ফেলবে! কী ভাবছেন? কেবল সুবিধাটুকুই দেখবেন, ভোগান্তি পোহাবেন না? সবকিছুরই আছে ভালো আর মন্দ, এক মুদ্রার যেমন দু’খানা পিঠ।

গৃহকর্মে সুনিপুণ এমন একটি রোবট হতে পারে আপনার সঙ্গী; source: Technocracy News

শুরুর দিকের গল্প

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের প্রয়োগ শুরু হয়েছিলো কম্পিউটার বিজ্ঞানের অগ্রদূত অ্যালান টিউরিংয়ের হাত ধরে, ১৯৫০ সালে। সাড়া জাগানো টিউরিং টেস্ট নামক একটি পরীক্ষার মাধমে অ্যালান টিউরিং যাচাই করা শুরু করেছিলেন যন্ত্রের বুদ্ধিমত্তা। এই পরীক্ষায় আপনি আড়াল থেকে একজন মানুষ এবং একটি মেশিনের সাথে আলাপচারিতা চালাবেন, সত্তা দু’টি আপনার বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবে এবং আপনি তাদের বুদ্ধিমত্তার মান যাচাই করবেন। কিছু সময় পর আপনাকে সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে হবে, এদের মধ্যে কোন সত্তাটি মেশিন। আপনি যদি মেশিনটি সনাক্ত করতে না পারেন, তবে সেই মেশিন বুদ্ধিমান হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। টিউরিং টেস্টের এই ধারণা কাজে লাগিয়েই সেই যুগে মাপা হতো একটি যন্ত্রের বুদ্ধিমত্তা।

বিজ্ঞানী অ্যালান টিউরিংয়ের প্রতিমূর্তি; source: PBS

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অধিকারীরা সংখ্যায় নারীই বেশি!

গুগল নাউ, সিরি, কর্টানা এগুলো জনপ্রিয় কিছু এ.আই-এর উদাহরণ। মজার বিষয় হচ্ছে, এগুলোর সবাই কিন্তু মেয়ে! অবাক হলেন? আসলে এই প্রোগ্রামগুলোর সবক’টিই নারীকন্ঠ ধারণ করে কিনা, তাই এমনটা বলছিলাম! বিষয়টা বেশ অদ্ভুতও বটে। কেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ধারকরা এমন ফিমেইল আইডেন্টিটি নিয়ে থাকছে? গবেষণা বলে, এই প্রোগ্রামগুলোর নারীকণ্ঠের কারণ তেমন গুরুতর কিছু নয়। মনুষ্য জাতির নারী ও পুরুষ প্রতিনিধি যারা এসব প্রোগ্রাম ব্যবহার করে থাকে, তারা নারীকণ্ঠের প্রতি একটু বিশেষ অনুরক্ত। এই বিষয়ে আরেকটি তথ্য জানা যায় ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি-পারডু ইউনিভার্সিটি ইন্ডিয়ানাপলিসের কম্পিউটার বিজ্ঞানী কার্ল ফ্রেড্রিক ম্যাকডর্ম্যানের কাছ থেকে। তার মতে, এ.আই শাখায় পুরুষরা বেশি সংখ্যক কাজ করছে, যাদের কাছে সম্ভবত কোনো যন্ত্রের বা প্রোগ্রামের গলার স্বর হিসেবে নারীকণ্ঠই অধিক সমাদৃত। স্বভাবতই, এই বক্তব্যের যুক্তি খণ্ডানো কঠিন! আবার সামাজিক নৃতত্ত্ববিদ ক্যাথলিন রিচার্ডসনের মতে, নারী এ.আইরা পুরুষ এ.আইদের চেয়ে কম আশঙ্কাজনক।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নারী সত্তা; source: Twitter

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন পোষা প্রাণী

আদরের পোষা প্রাণীটা আপনার সময় ভালো কাটাতে ভূমিকা রাখে নিশ্চয়ই। সে আপনাকে সঙ্গ দেয়, সময় দেয়, তার আদুরে এবং মজার মজার কাজকর্ম দেখে আপনার দিন দিব্যি হেসেখেলে কাটতে পারে। সময় আপনিও তাকে দিচ্ছেন, তাকে খাওয়ানো বা পরিস্কার রাখা, দেখভাল করা সবকিছুই আপনার করতে হচ্ছে। আর জীবনের পরম সত্য মেনে আপনার আদরের পোষা প্রাণীটি এক সময় মারা যাবে। এ.আই সেই জায়গাটিকেই বেছে নিচ্ছে তার প্রয়োগক্ষেত্র হিসেবে। মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু কল্যাণ গবেষক ডক্টর জিন-লুপ রল্টের মতে, ইতোমধ্যেই এই রোবট পেট, অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পোষ্যদের লালনপালনে আগ্রহী প্রচুর মানুষ রয়েছে এবং এগুলো ২০২৫ সাল নাগাদ ব্যাপকভাবে পাওয়া যাবে। রল্ট আরো বলেন, আগামী ১০-১৫ বছরে এ.আই এবং রোবটিক্স শাখায় এমন সব উন্নয়ন সাধিত হতে যাচ্ছে যে, মানুষের সাথে আবেগী সম্পর্ক স্থাপনে সক্ষম পেট-বটস তৈরি করা সম্ভব হবে। ভেবে রাখুন আগেভাগেই, এই দেশে সহজলভ্য হলে, নিতে চাইবেন কিনা এমন একটি পেট রোবট।

আদরের পোষা প্রাণীটা হতে পারে কোনো পেট-বট; source: Huffington Post

নিজে নিজে শিখছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যন্ত্র

হ্যাঁ, মানুষের তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যন্ত্ররা নিজেরাই নিজেদের বুদ্ধি বাড়াতে সক্ষম থাকবে। এমন একটা কথা প্রচলিত আছে যে, কোনো কম্পিউটার তাকে চালনা করা ব্যক্তির সমান বুদ্ধিদীপ্ত হতে পারে। তবে এআই এর অগ্রগতির সাথে সাথে কম্পিউটার নিজে থেকেই জ্ঞান অর্জন করতে শিখছে। গুগলের একটি এ.আই সিস্টেম আছে, যেটা নিজে থেকে অ্যাটারি 2600 গেমস খেলতে শিখেছে আর তারপর বাঘা বাঘা গেমারদের হারিয়েছে! আরেকটি লার্নিং এআই সিস্টেম আছে, যা ইউনাইটেড স্টেটস আর্মির বানানো, সেটা ইউটিউব ভিডিও দেখে রান্না করতে শিখেছে। উদ্যমী বুদ্ধিমত্তার দল! বিষয়টা দারুণ না?

গুগলের এআই সিস্টেম; source: HitBerry

মানুষের চেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত হবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স

এ.আই এর শিক্ষালাভের সক্ষমতার সাথে সাথে কম্পিউটার জিনিসটা ক্রমেই আরো বুদ্ধিমান হয়ে উঠছে। ২০১৩ সালের কথাই ধরা যাক। কোনো এ.আই-এর বুদ্ধিমত্তার মান তখন চার বছরের একটি বাচ্চার সমমাত্রার ছিলো। ২০১৪ সালে একটি সুপার কম্পিউটার এর্ডোস ডিসক্রিপেন্সি নামে জটিল একটি গাণিতিক সমস্যার সমাধান করেছিলো, যার সমীকরণটি এত বিশাল যে, মানুষ সমাধানটি যাচাই করে দেখতেও আগ্রহ পাবে না! এই ২০১৭ সালে এসে এ.আই সিস্টেম ডালপালা মেলছে আরো ব্যাপকভাবে। কাজেই এই অনুমান অমূলক নয় যে, আগামী দিনে এ.আই হতে পারে মানুষের চেয়েও বেশি বুদ্ধিসম্পন্ন।

এআই টেক্কা দিতে পারে আপনার বুদ্ধিমত্তার মাত্রাকে; source: Computerworld UK

প্রখ্যাত ভবিষ্যৎবাদী রে কুর্জুইলের মতে, ২০২৯ সাল নাগাদ এ.আই এর বুদ্ধিমত্তা একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সমপর্যায়ে পৌঁছুবে। কুর্জুইল বিশ্বাস করেন, কখনো এমন হতে পারে, এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মানব বুদ্ধিমত্তা মিলে একটাই সত্তা তৈরি হবে! চমকপ্রদ এবং একই সাথে ভয়াবহ তথ্য বটে, তাই না?

বিজ্ঞানের এই রোমাঞ্চকর শাখায় আশঙ্কার মাত্রা ঠিক কতটা?

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে আরো বিশদ আলোচনা পরবর্তীতে করা হবে, আজকের লেখায় কেবল এটুকু জানিয়ে রাখি যে, বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এবং কম্পিউটারবিদ বিল গেটসের মত ব্যক্তিরা এ.আই এর ভবিষ্যৎ হুমকি অগ্রাহ্য করতে পারছেন না! কম্পিউটার বিজ্ঞানের এই চমকপ্রদ শাখা হয়ে উঠতে পারে মানব সভ্যতার ইতিহাসে চরম ভীতিকর অধ্যায়। এ.আই এর বিকাশ মানবসত্তার জন্য কালযুগ হয়ে দাঁড়াবে কিনা, এর রাশ কতদিন আর কেবল মানুষের হাতে থাকবে, সেটাই দেখার বিষয়।

ফিচার ইমেজ- Wired

Related Articles