Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ইউটিউবাররা যেভাবে টাকা আয় করে থাকেন

ইউটিউব হলো বিশ্বের সবচাইতে বড় ভিডিও কেন্দ্রিক সামাজিক নেটওয়ার্ক। ইউটিউবে যারা বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিডিও তৈরি করে তা আপলোড করে থাকেন তাদেরকে ‘ইউটিউব ক্রিয়েটরস’ বা ‘ইউটিউবারস’ বলা হয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠিত এবং জনপ্রিয় বড় বড় ইউটিউবাররা বছরে মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি আয় করে থাকেন। তাদেরকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রচুর মানুষ এখন ইউটিউবে বিভিন্ন কন্টেন্ট তৈরি করতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। অনেক ছোট ছোট ইউটিউবাররাও তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকছেন মূলত তাদের ইউটিউব চ্যানেল থেকে উপার্জিত অর্থের মাধ্যমে।

ভিডিও তৈরির মাধ্যমে ইউটিউবে টাকা আয়; Source: asianage.com

ইউটিউবাররা বিভিন্নভাবে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ইউটিউব থেকে আয় করে থাকেন। যেমন বিজ্ঞাপন দেখিয়ে, বিভিন্ন ব্র‍্যান্ডের সাথে পার্টনারশিপ করে, নিজস্ব ব্যবসায়ী পণ্য বিক্রি করে ইত্যাদি। চলুন আজকে জানা যাক ইউটিউবকে কেন্দ্র করে ইউটিউবাররা কিভাবে এবং কী কী উপায়ে টাকা উপার্জন করে থাকেন সেই সম্পর্কে।

ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং

ইউটিউবে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হলো এই ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং। ইউটিউবারদের টাকা উপার্জন করার গতানুগতিক ধারাই পাল্টে দিয়েছে এটি।

ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং; Source: digitalmarketingdawgs.com

ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং হলো একটি সামাজিক মাধ্যমের কোনো ব্যক্তি যখন কোনো ব্র‍্যান্ড, পণ্য বা কোনো উল্লেখযোগ্য সেবা তার সেই সামাজিক নেটওয়ার্কের প্রোফাইলে প্রমোট করে থাকেন। ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে সাধারণত চার প্রক্রিয়ায় ইউটিউবাররা টাকা উপার্জন করে থাকেন। সেগুলো হলো:

  • ব্র‍্যান্ডেড ইন্টিগ্রেশন
  • ব্র‍্যান্ড অ্যাম্বাসেডর
  • এফ্লিয়েট মার্কেটিং
  • অন্যান্য সামাজিক প্রচারমাধ্যম

ব্র‍্যান্ডেড ইন্টিগ্রেশন

ইউটিউবে ব্র‍্যান্ডেড ইন্টিগ্রেশন বলতে বোঝায় যখন ইউটিউবের কোনো ভিডিওতে কোনো নির্দিষ্ট একটি ব্র‍্যান্ডের নাম দেখানো বা ব্র‍্যান্ডটি এবং তাদের বিভিন্ন পণ্য বা সেবা সম্পর্কে বলা হয়। একটি ভিডিওতে বিভিন্নভাবে ইউটিউবাররা তাদের প্রমোটকৃত ব্র‍্যান্ডের নামটি নিয়ে আসেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যেটি দেখা যায় তা হলো ‘Brought to you by’ বলে একটি বিশেষ ব্র‍্যান্ডের নাম বলা। দেখা যায় ইউটিউবাররা সাধারণত তাদের ভিডিওর শুরুতে বা শেষে ‘This video is brought to you by Brand X’ বলে থাকেন। এই উল্লেখকৃত নির্দিষ্ট ব্র‍্যান্ডটিই তাদের নাম সেখানে উল্লেখ করার জন্য ইউটিউবারকে টাকা দিয়ে থাকে।

জনপ্রিয় আনবক্সিং ইউটিউবার ল্যু; Source: youtube.com

ইনফ্লুয়েন্সিং মার্কেটিংয়ের আরেকটি যে উদাহরণ দেখা যায় তা হলো একটি ব্র‍্যান্ডের কোনো পণ্য সরাসরি ইউটিউবের ভিডিওতে দেখানো। আপনি হয়তো দেখে থাকবেন, অনেক ইউটিউবাররাই মাঝেমাঝে কিছু ব্র‍্যান্ডের বিভিন্ন পণ্য উম্মোচন এবং তার রিভিউ প্রদান করে থাকেন, যা ‘আনবক্সিং’ ভিডিও নামে বেশ প্রচলিত এখন। ‘প্রোডাক্ট প্লেসমেন্ট’ নামক এই মার্কেটিংয়ে ইউটিউবাররা একটি নির্দিষ্ট ব্র‍্যান্ডের কোনো পণ্য তাদের ভিডিওতে দেখান তথা আনবক্সিং করে থাকেন এবং তার পরিপূর্ণ বর্ণনা দিয়ে থাকেন। সাধারণত পণ্যটির ভালো দিকগুলো তুলে ধরে এবং এর সুবিধাগুলো বড় করে দেখানোর মাধ্যমে একজন ইউটিউবার সেই ব্র‍্যান্ডটিকে প্রমোট করে থাকেন। বিনিময়ে ব্র‍্যান্ডটি থেকে তিনি কিছু সম্মানী পেয়ে থাকেন।

পিউডিপাই; Source: youtube.com

আবার মাঝেমাঝেই ইউটিউবাররা কোনো ব্র‍্যান্ডের পণ্যের সাথে সম্পর্কিত পুরো একটি ভিডিও তৈরি করেন যেখানে পণ্যটি সম্পর্কে বর্ণনা করার মাধ্যমে ব্র‍্যান্ডটিকেও প্রমোট করে থাকেন। যেমন, কোনো প্রতিষ্ঠাতা কোম্পানির বের হওয়া নতুন কোনো গেম সম্পর্কে ইউটিউবাররা আলোচনা করে থাকেন তাদের কোনো ভিডিওতে। সেই সাথে গেমটি খেলার মাধ্যমে, বিভিন্ন চুম্বক অংশ দেখানোর মাধ্যমে তিনি গেমটি প্রমোট করে কোম্পানিকে গ্রাহক দিতে সহায়তা করেন। আর এভাবে প্রমোট করার জন্য কোম্পানিটি ইউটিউবারকে টাকা প্রদান করে থাকে।

ব্র‍্যান্ড অ্যাম্বাসেডর

একজন ব্র‍্যান্ড অ্যাম্বাসেডর বা ব্র‍্যান্ডের প্রতিনিধি হলেন সেই ব্যক্তি যিনি একটি ব্র‍্যান্ডের সাথে দীর্ঘদিনের চুক্তিতে আবদ্ধ থেকে জনগণের কাছে মাঝেমধ্যেই ব্র‍্যান্ডটিকে বিভিন্নভাবে তুলে ধরেন এবং প্রমোট করে থাকেন। ব্র‍্যান্ড অ্যাম্বাসেডরকে প্রায়ই বিভিন্ন স্পন্সরকৃত পোস্ট তৈরি করতে হয় যা কোম্পানিটির হয়ে বিজ্ঞাপনের কাজ করে। তাকে ব্র‍্যান্ড কর্তৃক আয়োজিত বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রদর্শনী এবং অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করতে হয়। অনেক বড় বড় ইউটিউবারও বিভিন্ন ব্র‍্যান্ডের অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করেন।

এফ্লিয়েট মার্কেটিং

তৈরিকৃত কন্টেন্টে বা ভিডিও ডিস্ক্রিপশনে লিংক প্রদান করা এবং বিভিন্ন প্রমোশনাল কোড গ্রাহকদের নিবেদন করা হলো আরেকটি জনপ্রিয় উপায় যার মাধ্যমে ইউটিউবাররা প্রচুর আয় করে থাকেন।

এফ্লিয়েট মার্কেটিং; Source: authorityhacker.com

প্রদানকৃত এসব লিংক ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটে নিয়ে যায় যেখানে তারা বিভিন্ন পণ্য বা সেবা ক্রয় করতে পারেন। এধরনের লিংকগুলো ‘এফ্লিয়েট লিংক’ নামে পরিচিত। লিংকগুলোতে একধরনের বিশেষ ট্র‍্যাকিং আইডি থাকে। তাই ইউটিউবারদের দেওয়া লিংক থেকে ভিজিট করে কেউ কোনো পণ্য বা সেবা ক্রয় করলে তার একটি অংশ সেই ইউটিউবার পেয়ে থাকেন।

অন্যান্য সামাজিক প্রচার মাধ্যম

অনেক জনপ্রিয় ইউটিউবারই অন্যান্য প্রচলিত সামাজিক মাধ্যমগুলোতেও ইনফ্লুয়েন্সিং মার্কেটিংয়ের কাজ করে থাকেন। ইউটিউবের পাশাপাশি স্ন্যাপচ্যাট, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, ফেসবুক এবং বিভিন্ন ব্লগের সাথে পার্টনারশিপ করার মাধ্যমে তারা আয় করে থাকেন। তাদের অনলাইন উপস্থিতি অন্যান্য প্রচার মাধ্যমগুলোয় প্রসার করার মাধ্যমে তারা তাদের উপার্জনের মাধ্যমগুলোও বৃদ্ধি করে চলেছেন।

এসবের পাশাপাশি অন্যান্য কিছু উপায়েও ইউটিউবাররা আয় করে থাকেন। যেমন,

ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে

গুগল অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে ইউটিউবাররা তাদের ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য অর্থ উপার্জন করে থাকেন। দেখে থাকবেন, কিছু ইউটিউব ভিডিওতে মূল ভিডিও শুরু হবার পূর্বে কিছুক্ষণের জন্য বিজ্ঞাপনী ভিডিও শুরু হয়। এটি এবং ব্যানার এড দেখানোর মাধ্যমে মূলত সকল ইউটিউবাররা টাকা আয় করে থাকেন। ছোটখাট ইউটিউবারদের টাকা উপার্জনের মূল উপায়ই হলো এটি। ইউটিউবাররা তাদের গুগল অ্যাডসেন্স একাউন্ট অন্যান্য সাইট এবং ব্লগে সংযুক্ত করেও অর্থ উপার্জন করে থাকেন।

সুপার চ্যাট

সুপার চ্যাটকে বলা যেতে পারে গ্রাহকদের সরাসরি ইউটিউবারকে ডোনেট করার একটি উপায়। যখন কোনো ইউটিউবার সরাসরি কোনো ভিডিও স্ট্রিমিং করেন তখন যেকোনো দর্শক চাইলে তার কমেন্টটি সবার উপরে পিন করে রাখতে পারেন একটি বিশেষ পরিমাণ অর্থ ব্যয় করার মাধ্যমে।

সুপার চ্যাট; Source: mediakix.com

বেশি পরিমাণ অর্থ দান করার মাধ্যমে ব্যবহারকারী বেশি সময় ধরে তার মেসেজটি পিন করে রাখতে পারবেন। এধরনের মেসেজ বিভিন্ন রঙে কমেন্টবক্সে উপরের দিকে উঠে থাকে।

ক্রাউডফান্ডিং

সুপারচ্যাট আসার পূর্বে এটিই ছিলো মূলত গ্রাহকদের ইউটিউবারকে ডোনেট করার মূল উপায়। কিছু ডোনেশন সাইট রয়েছে যেখানে বিভিন্ন প্রজেক্টের জন্য টাকা যোগাড় করা হয় ব্যবহারকারীদের দান করা অর্থের মাধ্যমে। উদাহরণস্বরূপ Kickstarter এবং Patreon-এর কথা বলা যেতে পারে। প্যাট্রিয়ন সাইটটি মূলত অনেক ইউটিউবাররা ব্যবহার করে থাকেন তাদের মাসিক আয়ের একটি উৎস হিসেবে। এখানে ব্যবহারকারীরা তাদের পছন্দের ইউটিউবারকে বিভিন্ন পরিমাণে অর্থ দান করে থাকেন।

পণ্যদ্রব্য বিক্রি

অনেক ইউটিউবার বিভিন্ন পোশাক, খাবার, প্রযুক্তিপণ্য ও অন্যান্য জিনিস বিক্রি করে থাকেন যা তাদের পছন্দ, চ্যানেল এবং ব্র‍্যান্ডকে প্রতিফলিত করে। তবে পণ্য বিক্রির এই মাধ্যমের সফলতা অধিকাংশই নির্ভর করে ইউটিউবার ও তার চ্যানেলের জনপ্রিয়তার উপর।

নিজস্ব ব্যবসায়ী উদ্যোগ

অন্যান্য ব্র‍্যান্ডের পোশাক এবং পণ্য বিক্রির পাশাপাশি অনেক ইউটিউবার নিজেরাই এখন নিজস্ব ব্র‍্যান্ডিংয়ে পণ্য বিক্রি শুরু করে দিয়েছেন।

জনপ্রিয় ইউটিউবার MKBHD তার নিজস্ব ব্র‍্যান্ডিংয়ের পণ্যদ্রব্যের সাথে; Source: tubefilter.com

  • বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইউটিউবারদের টি-শার্ট, শার্ট, হুডি, ক্যাপ, রিস্টব্যান্ড এসব বিক্রি করতেই বেশি দেখা যায়। এগুলোর পাশাপাশি তারা বিভিন্ন ডিজিটাল পণ্য, যেমন মোবাইল অ্যাপস, ই-টিউটোরিয়াল, ফটো/ভিডিও প্রিসেট ইত্যাদি বিক্রি করে থাকেন।
  • অনেক জনপ্রিয় ইউটিউবার তাদের যেসব বিষয়ে দক্ষতা রয়েছে সেগুলোর উপর, নিজেদের জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা এবং তাদের সামাজিক এবং অনলাইন জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বই লিখে থাকেন এবং তা প্রকাশ করে থাকেন। এসব বই বিক্রি করেও প্রচুর আয় হয়।

পিউডিপাই তার প্রকাশিত বইয়ের সাথে; Source: dn.no

  • পডকাস্টিং হচ্ছে জনপ্রিয় ইউটিউবারদের আরেকটি আয়ের উৎস। পডকাস্টিং এর অডিওতে বিভিন্ন ব্র‍্যান্ডের পণ্য বা সেবার কথা উল্লেখ করেও তারা সেই ব্র‍্যান্ড থেকে অর্থ পেয়ে থাকেন।
  • পোশাকআশাক থেকে শুরু করে রান্নাঘরের সামগ্রী, পুষ্টিকর খাবার ইত্যাদি প্রায় সকল ক্ষেত্রেই ইউটিউবাররা তাদের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়েছেন নিজস্ব ব্র‍্যান্ডিংয়ে পণ্য বিক্রি করতে।

গতানুগতিক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে

কিছু কিছু ইউটিউবার এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন যে কিছু বিজ্ঞাপনে তাদের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা গিয়েছে। বিভিন্ন ম্যাগাজিন এবং টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে তাদেরকে দেখা গিয়েছে। যেমন জনপ্রিয় সুপার বোল কমার্শিয়ালে অনেক ইউটিউবারকে অংশ নিতে দেখা গিয়েছে।

এধরনের বিজ্ঞাপনী মাধ্যম থেকে তাদেরকে বেশ ভাল অংকের অর্থ প্রদান করা হয়ে থাকে।

পাবলিক স্পিকিং

কিছু কিছু ইউটিউবার বিভিন্ন জনসংযোগে, জনগণের উদ্দেশ্যে তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করার মাধ্যমেও আয় করে থাকেন। যেমন জনপ্রিয় ইউটিউবার ক্যাসি নেস্ট্যাট প্রায়ই বিভিন্ন কলেজ এবং সম্মেলনে বক্তৃতা দেন, যেখানে তাকে প্রায়ই সম্মানী দেওয়া হয়ে থাকে।

ক্যাসি নেস্ট্যাট; Source: tubefilter.com

মিডিয়া জগতে প্রভাবশালী হওয়ার জন্য এবং তাদের প্রচুর অনুসারী থাকার কারণে প্রায়ই বড় বড় ইউটিউবারদের বিভিন্ন ব্র‍্যান্ডের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠানেও অংশ নিতে দেখা যায়। এসব থেকে তাদের আয়টা যে বেশ ভালোই হয় তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

ফিচার ইমেজ: cnsteem.com

Related Articles