Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বৈদ্যুতিক বাতি আলো দেয় কীভাবে?

একটা সময় ছিল, সন্ধ্যে হতেই গৃহবধূরা ঘরে বাতি দিতেন। টিমটিম করে জ্বলত মাটির পিদিম, কুপি বাতি বা হারিকেন। বিকেল হলেই খোঁজ পড়তো ঘরে, কেরোসিন তেল আছে তো? না হলে পাত্র নিয়ে দৌড়াতে হতো তেল আনতে। আর দিনের বেলায় আলো জ্বালানো তো ছিলো রীতিমতো বিলাসিতা। এমনই ধারণা থেকে হয়তো কবি লেখেন, “যে জন দিবসে মনে হরষে জ্বালায় মোমের বাতি, আশুগৃহে তার জ্বলিবে না আর নিশীথে প্রদীপ ভাতি”। আধুনিক প্রযুক্তির আবির্ভাবে সে যুগ ফুরিয়ে গেছে। বৈদ্যুতিক বাতির উজ্জ্বলতার কাছে হার মেনেছে হারিকেন, কুপি বাতির টিমটিমে আলো।

লাইট ভাল্ব বা বৈদ্যুতিক বাতির কল্যাণে সম্ভব হয়েছে এ আলোর বিপ্লব। অধিকাংশ মানুষের কাছে এখনো বাতি জ্বালানোই বিদ্যুতের প্রধান ব্যবহার। প্রত্যহ আমরা বৈদ্যুতিক বাতি ব্যবহার করি। অনেকের মনে হয়তো প্রশ্ন জাগে, কীভাবে কী হচ্ছে? এই বৈদ্যুতিক বাতি কাজ করে কীভাবে? এ প্রশ্নের উত্তর নিয়েই আজকের লেখাটি।

হারিকেনের আলোয় পড়াশোনা, হারিয়ে যাচ্ছে সেসব দিন; source: livecities.in

আলো কী?

ধরুন আপনি একটি মাঠে বসে তাকিয়ে আছেন সবুজ ঘাসের দিকে। এখানে যা ঘটছে তা হলো, ঘাস থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে আপনার চোখে এসে পড়ছে। ফলে এই সবুজ ঘাসের ছবি ভেসে উঠছে আপনার মস্তিষ্কে। পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় এ আলো হচ্ছে শক্তির একটি রূপ। আরো একটু নির্দিষ্ট করে বললে, আলো হচ্ছে তড়িৎ-চুম্বকীয় শক্তির একটি রূপ। এ ধরণের শক্তির আরো কয়েকটি রূপ হচ্ছে এক্স-রে, মাইক্রোওয়েভ ইত্যাদি।

জগতের একটি ধ্রুব সত্য হলো, শক্তি সৃষ্টি করা বা ধ্বংস করা যায় না। কেবল এক রূপের শক্তি থেকে অন্য রূপের শক্তিতে রূপান্তর করা যায়। বৈদ্যুতিক বাতি বিদ্যুৎ শক্তিকে আলোক শক্তিতে রূপান্তর করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই আলোক শক্তিতে রূপান্তরের কাজটি কীভাবে করা যায়? এ প্রশ্নের জবাব খোঁজার জন্য আমাদের পরমাণুর জগতে ডুব দিতে হবে।

পরমাণুর অভ্যন্তরে; source: wonderopolis.org

পৃথিবীর সকল পদার্থ অতি ক্ষুদ্র পরমাণু দ্বারা গঠিত। পরমাণুর কেন্দ্রে থাকে নিউক্লিয়াস। আর নিউক্লিয়াসকে ঘিরে বিভিন্ন কক্ষপথে থাকে ইলেকট্রন। বিভিন্ন কক্ষপথ বা শক্তিস্তরের ইলেকট্রনগুলোর শক্তি বিভিন্ন থাকে। যে ইলেকট্রনের শক্তি যত বেশি, সেটি নিউক্লিয়াস থেকে তত দূরের শক্তিস্তরে অবস্থান করে। এখানে ঝামেলাটা হয়, যখন ইলেকট্রন কোনো কারণে কিছু অতিরিক্ত শক্তি পেয়ে যায়।

অতিরিক্ত শক্তি পেয়ে গেলে ইলেকট্রন উত্তেজিত হয়। সেটি আর নিজের জায়গায় ঠিক থাকতে পারে না। সে লাফিয়ে চলে যায় এর চেয়ে উচ্চ শক্তিস্তরে। কিন্তু এ যাত্রা ক্ষণিকের জন্য। এক সেকেন্ডের থেকেও অনেক কম সময়ের মধ্যে ইলেকট্রন আবার ফিরে আসে তার আগের জায়গায়। আর ফিরে আসার সময় অতিরিক্ত শক্তি তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ আকারে বিকিরণ করে দেয়। আর আগেই বলেছি, আলো হচ্ছে এ তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গের একটি রূপ।

তরঙ্গ দৈর্ঘ্য একটি নির্দিষ্ট রেঞ্জ এর মধ্যে হলেই শক্তিটি আলোকশক্তি হয়; source: khanacademy.org

এ তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য একটি নির্দিষ্ট রেঞ্জের মধ্যে হলেই শক্তিটি আলোকশক্তি হয়। নচেৎ অবলাল আলো, রেডিও ওয়েভ, মাইক্রো-ওয়েভ ইত্যাদি ধরনের শক্তি নির্গত হতে পারে, যেগুলো আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না। এখন ইলেকট্রন কোন ধরনের তরঙ্গ নির্গত করবে, তা নির্ভর করে ইলেকট্রন কতটা শক্তি পাচ্ছে, এর ফলে কোন স্তর থেকে কোন স্তরে যাচ্ছে তার ওপর।

অনেক কথা হলো! এতো কথার সারমর্ম হলো, আলো পেতে হলে আমাদের ইলেকট্রনকে একটি নির্দিষ্ট রেঞ্জের শক্তি দ্বারা উত্তেজিত করতে হবে। তাহলে চলুন এবার আমাদের আসল কাজে চলে যাই। দেখি বৈদ্যুতিক বাতি কীভাবে এই কাজটি করে?

বৈদ্যুতিক বাতির গঠন

বেশ কয়েক ধরনের বৈদ্যুতিক বাতি আছে। সাধারণত বৈদ্যুতিক বাতি হিসেবে আমরা যেগুলোকে বুঝি, টেকনিক্যাল ভাষায় সেগুলোর নাম হচ্ছে ইনক্যান্ডেসেন্ট ল্যাম্প। হ্যাঁ, সস্তা দরের, কিছুটা হলুদাভ আলোর সেই বাতিগুলোর কথা বলছি। বর্তমানে অবশ্য ফ্লুরোসেন্ট বাল্ব যেমন, এনার্জি সেভিং বাল্ব বা টিউব ভাল্বের জনপ্রিয়তার কারণে দিনদিন এসব বাতির প্রচলন কমে যাচ্ছে। তবে আমরা আজকে এই ইনক্যান্ডেসেন্ট বাতি নিয়েই আলোচনা করব। অন্য কোনো লেখায় আলোচনা করা যাবে ফ্লুরোসেন্ট বাতির কথা।

এবার চলুন দেখে নেয়া যাক বৈদ্যুতিক বাতির ভেতরে কী কী থাকে?

বৈদ্যুতিক বাতির গঠন; source: slideplayer.com

ইনক্যান্ডেসেন্ট বাতির মূল গঠন একদমই সোজা। বাতির একদম নিচের দিকে দু’টি ধাতব অংশ থাকে। আপনি যখন বাতিকে হোল্ডারে জুড়ে দেন, তখন এই ধাতব অংশ দুটি বৈদ্যুতিক সার্কিটের সাথে যুক্ত হয়। বাতির ভেতরে এই দু’টি ধাতব অংশ থেকে দুটি শক্ত তার বেরিয়ে আসে আর তার দু’টি যুক্ত হয় একটি সরু ধাতব ফিলামেন্টের সাথে। মোটামুটি বলা যায় এ হচ্ছে বাতির একদম মূল গঠন।

এই গঠনটি একটি কাঁচের ভাল্বের ভেতর আবদ্ধ থাকে। গোটা ভাল্বটি পরিপূর্ণ থাকে নিষ্ক্রিয় গ্যাস দ্বারা। এর মধ্যে ফিলামেন্টটিই হচ্ছে বাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাতির আলোটি এই ফিলামেন্ট থেকেই নির্গত হয়। আপনি যখন বাতির সুইচ অন করেন, তখন সার্কিট থেকে কারেন্ট একটি ধাতব অংশের মধ্য দিক দিয়ে বাতিতে প্রবেশ করে এরপর ফিলামেন্ট হয়ে আরেকটি ধাতব অংশ দিয়ে আবার সার্কিটে চলে যায়।

বিদ্যুৎ প্রবাহ হচ্ছে মূলত ইলেকট্রনের প্রবাহ। এখন ইলেকট্রনের প্রবাহ যখন এ ফিলামেন্টের ভেতর দিয়ে যায়, তখন এ সকল ইলেকট্রনগুলো এই ফিলামেন্টের পরমাণুর সাথে অবিরত সংঘর্ষ করতে থাকে। আর ফিলামেন্টকে যতটা সম্ভব সরু করে তৈরি করা হয় (এর পুরুত্ব এক ইঞ্চির প্রায় একশ ভাগের এক ভাগ)। এই সরু করার ফলে পরমাণুর সাথে ইলেকট্রনের সংঘর্ষ আরো বেড়ে যায়।

পুড়ে যাচ্ছে একটি বাতি; source: hiveminer.com

এই লাগাতার সংঘর্ষের ফলে পরমাণুগুলোতে কম্পনের সৃষ্টি হয় এবং ফিলামেন্ট উত্তপ্ত হতে শুরু করে। এই হঠাৎ পাওয়া তাপশক্তি ফিলামেন্টের পরমাণুতে থাকা ইলেকট্রনগুলোকে উত্তেজিত করে তোলে। আর ইলেকট্রন উত্তেজিত হলে কী হয় তা তো আগেই বলেছি। ইলেকট্রন তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ আকারে শক্তি নির্গত করে। এই শক্তি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অবলাল আলো হয়ে থাকে, যা মানুষের পক্ষে খালি চোখে দেখা সম্ভব নয়।

তবে ফিলামেন্টে উৎপন্ন তাপের পরিমাণ ৪,০০০ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা ২,২০০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের আশেপাশে হলে এটি দৃশ্যমান আলো নির্গত করে। এ কাজটিই করা হয় বৈদ্যুতিক বাতির ক্ষেত্রে। এভাবেই আমরা বৈদ্যুতিক বাতি থেকে আলো পাই। সংক্ষেপে বললে, ফিলামেন্টকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যাতে এর মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহের ফলে এতে এই ২,২০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর কাছাকাছি তাপ উৎপন্ন হয়। ফলে এই ফিলামেন্ট থেকে নির্গত হয় দৃশ্যমান আলো।

এখানে একটা বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, আমাদের বিদ্যুৎ শক্তি আসলে মূলত এখানে তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। আলো এ প্রক্রিয়ার একটি উপজাত মাত্র। তবে এত উচ্চ তাপমাত্রায় অধিকাংশ ধাতুই গলে যায়। এজন্য ফিলামেন্ট হিসেবে প্রয়োজন হয় উচ্চ গলনাঙ্ক সম্পন্ন কোনো ধাতুর। সাধারণত এ ক্ষেত্রে টাংস্টেন ব্যবহার করা হয়।

টাংস্টেন ফিলামেন্ট; source: wikipedia

এছাড়া বায়ুর সংস্পর্শে আসলে ধাতু অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করতে শুরু করে। এর ফলে ফিলামেন্ট তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। এটি রোধ করার জন্যেই বৈদ্যুতিক বাতির ভেতরে বায়ুশূন্য করে রাখা হয়। এছাড়াও বাতির অভ্যন্তরে নিষ্ক্রিয় গ্যাসে পূর্ণ করে রাখা হয়। নিষ্ক্রিয় গ্যাস সাধারণত কোনো বিক্রিয়া করে না। তাই ফিলামেন্ট নিয়ে কোনো ঝামেলা হয় না। তবে বাতিতে নিষ্ক্রিয় গ্যাস রাখার মূল কারণ হচ্ছে টাংস্টেনের ক্ষয় কমানো। কারণ এতো উচ্চ তাপমাত্রায় অনেক সময়ই ধাতু থেকে পরমাণু বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর মধ্যে অনেক পরমাণুই নিষ্ক্রিয় গ্যাসের পরমাণুর সাথে সংঘর্ষের ফলে আবার পূর্বের গঠনে ফিরে যায়।

এ গেল মোটামুটি আমাদের চিরচেনা বৈদ্যুতিক বাতির কাজের কৌশল। ইনক্যান্ডেসেন্ট বাল্ব নামক এ অসাধারণ প্রযুক্তিটির কথা এ পর্যন্তই থাক। এমন অন্য কোনো চমকপ্রদ প্রযুক্তি নিয়ে কথা হবে সামনের কোনো লেখায়।

ফিচার ইমেজ: pexels.com

Related Articles