Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

নেটফ্লিক্সের জন্ম হয়েছিল যেভাবে

ওয়েব ভিডিও জগতে আধিপত্য বিস্তার করা নেটফ্লিক্সের কথা কে না জানে? সারা পৃথিবীতে ১০০ মিলিয়নের উপরে মানুষ নেটফ্লিক্স ব্যবহার করে। কিন্তু এটা তৈরি করার পেছনে যে গ্রাজুয়েট স্কুলের একটি গাণিতিক সমস্যা দায়ী ছিল সেটা কজনই বা জানে? গত বছরের প্রথমদিকে ফেব্রুয়ারি মাসে স্পেনের বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসের একটি সেশনে নেটফ্লিক্সের সহ-আবিষ্কারক রিড হেসটিংস এ কথা প্রথম সবার সামনে প্রকাশ করেন।

Image Source: Digital Trends

১৯৮০ সালের কথা, তখন হেসটিংস স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়াশোনা করছিলেন। সে সময় আরেক বিখ্যাত কম্পিউটার বিজ্ঞানী এন্ড্রু তানেনবাম তাকে একটি গাণিতিক সমস্যার কথা বলেন। সমস্যাটি ছিল টেপ বহনকারী একটি স্টেশন ওয়াগনের ব্যান্ডউইথ বের করা। এর মানে দাঁড়ায় এমন, সর্বাধিক কতগুলো টেপ স্টেশন ওয়াগনের ভিতর ভরা যাবে, সেই টেপগুলো কতটুকু ডাটা সংরক্ষণ করতে পারবে এবং কত দ্রুত স্টেশন ওয়াগনটি টেপগুলো নিয়ে তার গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। এ সমস্যা দেখে তার মনে হয়েছিল এটা তখনকার সময়ে অনেক দ্রুতগতি সম্পন্ন নেটওয়ার্কের দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এ সমস্যা থেকে হেসটিংসের মাথায় আসে, টেপের বদলে তিনি ডিভিডি ব্যবহার করতে পারেন। তারা মনে করেন, নেটফ্লিক্সের শুরুটা তারা এমন ডিভিডি ব্যবহার করে শুরু করতে পারেন। পরবর্তীতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তারা নেটফ্লিক্সকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেন। মূলত সেই অংকের মাধ্যমেই তাদের নেটফ্লিক্স তৈরির চিন্তা মাথায় আসে। কোম্পানি হিসেবে নেটফ্লিক্স যাত্রা শুরু করে ১৯৯৭ সালে। তখন থেকে ডিভিডি ব্যবহার করেই তাদের যাত্রা শুরু। এরপর ২০০৭ সালে তারা ভিডিও স্ট্রিমিং শুরু করে। দেখতে দেখতে ২০১০ সালের মধ্যে গ্রাহক সংখ্যা ডিভিডি ব্যবহারকারীদেরকেও ছাড়িয়ে যায়। ১০০ মিলিয়ন ভিডিও গ্রাহকদের পাশাপাশি এখন ৫ মিলিয়ন ডিভিডি ব্যবহারকারীও আছে নেটফ্লিক্সের।

Image Source: Business Insider

ইলেকট্রনিক কোনো তথ্যকে কোনো বস্তু, যেমন: পেনড্রাইভ দিয়ে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে পৌঁছে দিয়ে সেখানে পুনরায় ব্যবহার করার এই প্রক্রিয়াকে বলে স্নিকারনেট (Sneakernet)। এন্ড্রু তানেনবাম তার জনপ্রিয় বই “Computer Networks”-এ সমস্যাটির বর্ণনা দেন এভাবে-

এক কম্পিউটার থেকে আরেক কম্পিউটারে ডাটা বা তথ্য স্থানান্তর করার সবচেয়ে সহজ এবং জনপ্রিয় উপায় হচ্ছে প্রথমে তথ্যগুলোকে কোনো ম্যাগনেটিক টেপ বা ডিভিডি বা এরকম কোনো রিমুভাল ডিস্কে লিখে রাখা এবং সেগুলোকে অন্য কম্পিউটারে নিয়ে গিয়ে আবার পড়া। যদিও Geosynchronous Communication Satellite-এর যুগে ব্যবস্থাটি পুরনো মনে হতে পারে, কিন্তু তখন এটা খরচ সাপেক্ষ ছিল। একটি ছোট্ট অংক বিষয়টিকে পরিষ্কারভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।

একটি আলট্রিয়াম টেপ (Ultrium Tape) ৮০০ গিগাবাইট পর্যন্ত ডাটা ধারণ করতে পারে। ৬০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য, ৬০ সেন্টিমিটার প্রস্থ ও ৬০ সেন্টিমিটার উচ্চতার একটি বাক্স এরকম ১ হাজার টেপ ধারণ করতে পারে। মোট ধারণক্ষমতা হয় ৮০০ টেরাবাইট বা ৬৪০০ টেরাবিট, অর্থাৎ প্রায় ৬.৪ পেটাবিট তথ্য ধারণে সক্ষম এই এক বাক্স টেপ। আমেরিকাতে তখন এ ধরনের টেপের বাক্স ফেডারেল এক্সপ্রেস বা অন্য কোনো কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে যেকোনো স্থানে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাঠানো যেতো। ডাটা ট্রান্সমিশনের জন্য যতটুকু ব্যান্ডউইথের প্রয়োজন হতো তা হলো প্রতি সেকেন্ডে ৭০ গিগাবাইট। পথের দূরত্ব যদি ১ ঘণ্টা হয় তাহলে ব্যান্ডউইথ প্রতি সেকেন্ডে ১৭০০ গিগাবাইট পর্যন্ত বেড়ে যায়। এখান থেকে বোঝা যাচ্ছে, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বৃদ্ধির সাথে সাথে টেপ এর পরিমাণ এবং ঘনত্বও বেড়ে যাচ্ছে।

এখন খরচের দিকে আসা যাক। আলট্রিয়াম টেপ একসাথে অনেকখানি করে কিনলে প্রায় ৪০ ডলারের মতো খরচ পড়বে। এ ধরনের টেপ পুনরায় প্রায় ১০ বার পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। তাই টেপের দাম প্রতি বক্সে এবং প্রতি ব্যবহারে ৪,০০০ ডলারের মতো খরচ পড়বে। এর সাথে শিপিং এর জন্য ১,০০০ ডলারের মতো খরচ পড়বে। অর্থাৎ ৮০০ টেরাবাইট তথ্য স্থানান্তরের জন্য ৫,০০০ ডলারের মতো খরচ পড়বে। এটা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, ১ গিগাবাইট তথ্য পাঠাতে মোটামুটি এক সেন্টের অর্ধেকের মতো খরচ পড়ছে।

এন্ড্রু তানেনবাম; Image Source: Alchetron

এন্ড্রু তানেনবামের জনপ্রিয় বই – Computer Networks; Image Source: amazon.com

এ কথাগুলো বইতে ব্যাখ্যা করার পরে নিচে এমন বক্তব্য আছে- “Never underestimate the bandwidth of a station wagon full of tapes hurtling down the highway.”

১৯৯১ সালে রিড হেসটিংস Pure Software নামে তার নিজের প্রথম কোম্পানি চালু করেন। এ কোম্পানি থেকে যে পরিমাণ আয় হয় সেটা দিয়ে খুব সহজেই নতুন প্রজেক্টে হাত দেয়া যেত। আর এই আয় করা লভ্যাংশ থেকেই নেটফ্লিক্সের জন্ম। নেটফ্লিক্সের সাফল্যের সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে এটি নতুন আরেকটি প্রযুক্তির সাথে যুক্ত হয়ে তাদের ব্যবসার আইডিয়া দাঁড় করায়। তখন ভিডিও দেখার জন্য VHS (Video Home System) ব্যবহার করা হতো যেটা দেখতে বড় ছিল। ৯০-এর দশকের শেষ দিকে যারা বাসায় ভিডিও ভাড়া করে এনে দেখতো তাদের কাছে VHS অপরিচিত মনে হবে না। নেটফ্লিক্সের প্রজেক্টে হাত দেবার সময় হেসটিংসের এক বন্ধু তাকে ডিভিডির কথা বলে যেটা দেখতে ছোট, হালকা এবং VHS যা কাজ করে এই ডিভিডিও একই কাজ করে। তাছাড়া VHS ব্যবহারে খরচও পড়তো বেশি। তাই হেসটিংসকে ফি দিতে হতো বেশি।

ভিএইচএস; Image Source: recyclenation

২০০৭ সাল পর্যন্ত নেটফ্লিক্স প্রায় ১ বিলিয়নের মতো ডিভিডি ক্রেতাদের সরবরাহ করে। এরপর যখন ইউটিউব অনেক বেশি জনপ্রিয় হয় তখন হেসটিংস নতুন এই প্রযুক্তিগত ধারণাকেও তাদের ব্যবসার আইডিয়াতে পরিণত করেন এবং কাজে লাগান। এই অংশে তিনি গ্র্যাজুয়েট শ্রেণীতে থাকাকালীন সময়কার সেই অংককে কাজে লাগান।

হেসটিংসকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “When a friend told me about DVDs and I realized, well that’s 5GB of data, and you know you can mail that very inexpensively, I realized that is a digital-distribution network”

নেটফ্লিক্সের হলিউড অফিস; Image Source:tbivision

একটি মজার কথা হচ্ছে, হেসটিংস এবং রেন্ডলফ  দুজনেই নেটফ্লিক্সের আবিষ্কারের পরপর এর সাথে ইন্টারনেটকে যুক্ত করার বিষয়টি মাথায় এনেছিলেন। কিন্তু সে সময়ে ইন্টারনেটের বিপ্লব আজকের মতো শুরু হয়নি। তবে তারা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন নেটফ্লিক্সকে তারবিহীন মাধ্যমের সাহায্যে প্রচার করতে পারলে সবদিক থেকে লাভবান হওয়া যাবে। শুধুমাত্র ডিভিডি নামক বস্তুর সাহায্যে ক্রেতাদের কাছে না গিয়ে নতুন নতুন মাধ্যম ব্যবহার করা যেতে পারে, যেটা ক্রেতাদের নেটফ্লিক্সের সাথে ধরে রাখতে পারবে। কিন্তু তারা জানতেন এ জিনিসটি রাতারাতি সম্ভব হবে না। এর জন্য অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। শেষপর্যন্ত পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং গ্রাজুয়েট স্কুলের একটি অংকের হিসাব তাদেরকে ওয়েব ভিডিও জগতের এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

ফিচার ছবি- Netflix

Related Articles