Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেভাবে আমাদের মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করছে

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের আসক্তি নতুন কিছু নয়। বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেন। এবং বলা বাহুল্য, এই এক তৃতীয়াংশের সিংহভাগই হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। স্বাভাবিকতই আমাদের সমাজ গঠন ও পরিবর্তনে অনেক প্রভাব ফেলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। কিন্তু আমরা কি চিন্তা করে দেখেছি, আমাদের মস্তিষ্কে কতটুকু প্রভাব ফেলছে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম? এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করবো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের মস্তিষ্ককে কীভাবে প্রভাবিত করছে।

Source: Healthy Living Women

১। আসক্তি 

অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারীই আছেন, যারা একবার লগ ইন করলে আর বের হতে পারেন না। কিংবা বের হয়ে পাঁচ মিনিট পর আবার লগ ইন করেন। অনলাইনে কতটা সময় পার করছি, তা প্রায়সময়ই আমাদের আয়ত্তের মধ্যে থাকে না। ঘোর এক আসক্তি তৈরি করে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। যদিও এটি একটি মানসিক আসক্তি, কিন্তু এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্ত ব্যক্তিদের ব্রেন স্ক্যান করে গবেষকরা আশ্চর্যজনক ফলাফল পেয়েছেন। গবেষকরা বলছেন তাদের ব্রেন ওয়েভ এবং মাদকাসক্তদের ব্রেন ওয়েভের মধ্যে রয়েছে সমূহ মিল। বিশেষভাবে, মাদকাসক্তদের মস্তিষ্কে যেমন বোধশক্তি, মনোযোগ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষমতা হ্রাস পায়, তেমনি ফেসবুকে আসক্ত ব্যক্তিরও এই অনুভূতিগুলো হ্রাস পায়। কারণ, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে আমাদের কোনো পরিশ্রম করতে হচ্ছে না। এমনিতে মস্তিষ্ককেও ব্যবহার করতে হচ্ছে না তেমন। সুতরাং বলতে গেলে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কোনো পরিশ্রম ছাড়াই আমাদের মস্তিষ্ককে পুরস্কৃত করছে। যার ফলে আমাদের মস্তিষ্ক এই উদ্দীপনাটুকু পছন্দ করছে, এবং এই স্নায়বিক উত্তেজনাটা যতই পাচ্ছে, আরো বেশি করে তা চাচ্ছে। শুনতে ড্রাগসের মতো শোনাচ্ছে না?

source: Wall Street International Magazine
Source: Wall Street International Magazine

২। অ্যাটেনশন স্প্যাম বা মনোযোগ বলয় হ্রাস

শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীই নয়, যেকোনো ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারই আমাদের অ্যাটেনশন স্প্যাম বা মনোযোগ বলয়কে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যার ফলে, কোনো কাজে কিছুক্ষণ মনোযোগ দেয়ারই পরই আমাদের সেই কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ডিজাইন এমনভাবে করা হয়েছে, যেন আপনি যখনই কোনো পরিস্থিতিতে অস্বচ্ছন্দ অনুভব করবেন, কিংবা একঘেয়ে অনুভব করবেন, তখনই আপনার মস্তিষ্ক আসক্তদের মতো সেই স্টিমুলেশনটা চাইবে। চাইবে ফেসবুক-টুইটারে গিয়ে নিজেকে বিশ্রাম দিতে।

একটি বই পড়া শুরু করেছেন? কয়েক পাতা পড়ার পরই হয়তো মনে হবে, একটু ফেসবুক থেকে একটু ঘুরে আসি।

Source: Odyssey

এছাড়া যখন আপনি অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে থাকবেন কিংবা এমন কোনো পরিস্থিতিতে আছেন, যেখানে মানিয়ে নিতে পারছেন না, তখন আপনার মস্তিষ্ক চাইবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ডুব দিতে, যাতে বাইরের জগত থেকে নিজেকে আলাদা করার জন্য।

ধরুন কোনো পারিবারিক সভায় আছেন, যেখানে কে কী বলছে, কিছুই বুঝতে পারছেন না। কিংবা কোনো একঘেয়ে ক্লাসের পেছনে বসে আছেন, শিক্ষকের লেকচারে মন দিতে পারছেন না। কয়েক মিনিটের মধ্যেই লক্ষ করবেন যে হাতের স্মার্টফোন অন করে ফেসবুকে ঢুকে পড়েছেন। বাস্তব জগতকে উপেক্ষা করার মাধ্যমই হচ্ছে ভার্চুয়াল জগত।

৩। মাল্টি টাস্কিং

সাধারণত আমরা ধারণা করে থাকি, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চালু, তারা মাল্টি-টাস্কিং বা বহুকার্যেও চালু। আমরা ভাবি ,তারা ফেসবুক চালানোর পাশাপাশি অন্যান্য কাজও একসাথে করতে পারে। কিন্তু গবেষকরা বলছেন উল্টো কথা। তারা আসলে কোনো কাজই ঠিকমতো করতে পারে না।

গবেষকরা বলছেন, সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্তি আমাদের অন্যান্য কাজের গতিকে শ্লথ করে দেয়, এমনকি আমাদের স্মৃতিশক্তিও কমিয়ে দেয়। মিডিয়া আসক্ত ব্যক্তিদের দেহের সব ইন্দ্রিয়ের মনোযোগ থাকে ফোনের ভাইব্রেশনের দিকে। যার ফলে আপনার কাজে ব্যাঘাত ঘটে।

ধরুন অফিসের কোনো গুরুত্বপূর্ণ  মিটিংয়ে বসে আছেন। হঠাৎ “টুং” করে কোনো মেসেজ এলো। ব্যস, আপনার মনোযোগ চলে গেলো মেসেজের দিকে এবং মিটিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা মিস করে ফেললেন।

এছাড়া সবসময় ইন্দ্রিয়েরা যেহেতু বাড়তি মনোযোগ ব্যয় করে, ভাইব্রেশন ডিটেক্ট করার জন্য, এর ফলে মস্তিষ্ক তথ্য সঞ্চয় করার পেছনে কম শক্তি ব্যয় করে। তথ্য সঞ্চয় না হওয়া মানে তথ্য স্মৃতিভাণ্ডারে যোগ না হওয়া।

এককথায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের স্মৃতিশক্তিকেও ব্যাহত করছে।

Source: LifeBuzz

৪।  ফ্যান্টম ভাইব্রেশন সিন্ড্রোম

ফোনের ভাইব্রেশন আমাদের মনোযোগকে ব্যাহত করে। কিন্তু আপনি জানেন কি, ফোন ভাইব্রেট না করেও আমাদের মনোযোগকে ব্যাহত করতে পারে? কখনো এমন হয়েছে, যে আপনার কাছে হঠাৎ মনে হলো ফোন ভাইব্রেট করে অফ হয়ে গিয়েছে বা কোনো মেসেজ আসার ভাইব্রেশন টের পেয়েছেন আপনি, কিন্তু ফোন বের করে দেখেন এগুলোর কিছুই হয়নি? আদৌ ভাইব্রেটই করেনি আপনার ফোন!

একে বলে ফ্যান্টম ভাইব্রেশন সিন্ড্রোম (Phantom Vibration Syndrome)। আপনি যদি একজন স্মার্টফোন ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন, তাহলে এই সিন্ড্রোম আপনার পরিচিতই হওয়ার কথা। ফ্যান্টম ভাইব্রেশন সিন্ড্রোম একটি মানসিক প্রক্রিয়া, যার ফলে আপনি মাঝে মাঝে ভাববেন আপনার ফোন ভাইব্রেট করেছে, কিন্তু আসলে করেনি। সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে, ৮৯ শতাংশ স্মার্টফোন ব্যবহারকারীই এই সিন্ড্রোমে ভুগছেন।

এর পেছনে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হচ্ছে, আমাদের মস্তিষ্ক মাঝে মাঝে দেহের কোনো চুলকানি বা আঁচড়ের সাথে ফোনের ভাইব্রেশনের তফাত করতে পারছে না। ফোনের ভাইব্রেশন শোনার জন্য আমাদের ইন্দ্রিয় এতটাই তৎপর হয়ে পড়ে যে ভাইব্রেশন না হলেও মাঝে মাঝে অন্য কিছুকে ভাইব্রেশন ভেবে মস্তিষ্কে সিগনাল পাঠিয়ে দেয়। অর্থাৎ সোজা কথায়, আমাদের নার্ভাস সিস্টেমকে প্রভাবিত করছে এই স্মার্টফোন, যার মূলে রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।

৫। ডোপামিন রিলিজ

ডোপামিন হচ্ছে একটা কেমিক্যাল যা আমাদের ভালোলাগার অনুভূতি দেয়। গবেষকরা বলছেন সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন রিলিজ করে। এখন আপনি ভাবতে পারেন, ভালোলাগার অনুভূতি দেয়াটা তো একটি ইতিবাচক দিক! কিন্তু বিষয়টা হচ্ছে এই ডোপামিন রিলিজের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের অনেক বেশি আত্মকেন্দ্রিক করে দিচ্ছে। বিজ্ঞানীরা মানুষের মস্তিষ্কের MRI স্ক্যান করে দেখেছেন আমাদের মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সেন্টার অনেক বেশি সচল থাকে, যখন আমরা নিজেদেরকে নিয়ে কথা বলি, অন্যেরটা না শুনে। আমরা নিজেকে কথা বলতে ভালোবাসি। এটা তো স্বাভাবিকই, না? কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, আমাদের সামনাসামনি যে যোগাযোগ হয়, তখনকার কথোপকথনের মাত্র ৩০ শতাংশ হয়ে থাকে নিজেকে নিয়ে। কিন্তু আমরা যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা বলছি, তখন? গবেষকরা বলছেন সোশ্যাল মিডিয়ায় হওয়া যোগাযোগের ৮০ শতাংশই আত্মনির্ভর। আমাদের মস্তিষ্কের যে অংশগুলো অর্গাজম, মোটিভেশন, ভালোবাসার সাথে সম্পর্কিত, তার সবই সোশ্যাল মিডিয়া কতৃক সিম্যুলেটেড হয়। বিশেষভাবে যখন আপনি জানেন আপনার পাঠক বা দর্শক রয়েছে। অর্থাৎ আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের শরীরবৃত্তীয়ভাবে পুরস্কৃত করছে আত্মকেন্দ্রিক হওয়ার জন্য।

Source: Page Design Shop

মনে করুন, আপনি ফেসবুকে নিজের একটা ছবি পোস্ট দিয়েছেন। এখন পোস্টে যখন মানুষ লাইক-কমেন্ট করা শুরু করবে, তখন প্রতিটা লাইকের সাথে মস্তিষ্ক অল্প অল্প ডোপামিন মুক্তি দিতে থাকবে। প্রতিটি লাইক আপনাকে অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আনন্দ দিতে থাকবে। আপনি নিজের নতুন আরো ছবি আপলোড দেয়ার জন্য উৎসাহিত হবেন। এই আত্মকেন্দ্রিকতার ভয়ঙ্কর দিক কোনটি জানেন? যখন আপনার ছবি/পোস্ট অন্যদের চেয়ে বেশি লাইক পাওয়া শুরু করবে, তখন আপনি অন্যদের চেয়ে নিজেকে শ্রেষ্ঠতর ভাবা শুরু করবেন। কিংবা যখন অন্যদের তুলনায় কম লাইক পাবেন, তখন হীনমন্যতায় ভুগবেন। মোট কথা, সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি আত্মকেন্দ্রিক করেছে এবং এই আত্মকেন্দ্রিকতার মাধ্যমে আমাদের মধ্যে ভুয়া একটা স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করেছে।   

Featured image- Metro 

Related Articles