একটা সময় ছিল যখন মডেম দিয়ে আমরা আমাদের অন্ততর্জালের সংযোগ দিতাম আর মডেম নিয়ে মোটামোটি সব খানেই ঘোরা যেত।বাইরে গেলেও আবার বাসার এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়। এরপরে ক্যাবল ইন্টারনেটের সংযোগও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠল। আর এখন সময় ওয়াইফাই আর রাউটারের। ঘরের এ মাথা থেকে সে মাথা, বারান্দা কিংবা রান্নাঘর সাবখানেই ইন্টারনেটের কানেকশন মিলছে।
তবে, দূরত্ব অনুসারে দেখা যাচ্ছে কানেকশন স্লো কিংবা কানেকশন নাই। তাই আজ আমরা এই ইন্টারনেট কানেকশন কিভাবে ঠিক ভাবে ব্যবহার করা যায় কিংবা কি করলে সব খানে সমান ভাবে কানেকশন পাবেন সেটা নিয়েই আলাপ করব। সাথে আপনাদের জানাবো কিভাবে সব সমস্যার সমাধান করতে পারেন।
ইন্টারনেটের কানেকশন এবং রাউটার চেক করুনঃ
প্রোভাইডার আপনাকে ঠিক কতটুকু পরিমান ডাটা সরবরাহ করছে সেটা চেক করুন। সাথে খেয়াল রাখুন আপনার রাউটারের অবস্থা চেক করুন। রাউটারের পিং রেট যদি অনেক বেশি হয়ে যায়, ফার্মওয়ার যদি আপডেটেড না হয় তাহলে রাউটার নিজেও সবখানে সমান ডাটা সরবরাহ করবে না।
তাই যদি প্রয়োজন হয় রাউটার এবং প্রোভাইডার পরিবর্তন করুন। রাউটার ঠিক মত পাওয়ার কিংবা ইন্টারনেট কানেকশন পাচ্ছে কিনা চেক করুন। যে কেবল দিয়ে রাউটার প্রোভাইডার কানেকশনের সাথে যুক্ত সেই কেবল কিংবা পোর্ট ঠিক আছে কিনা চেক করুন।
আজকাল ফাইবার কিংবা অপটিক্যাল ইন্টারনেট প্রোভাইডারের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, চাহিদাও বাড়ছে। সনাতনী পদ্ধতির বাইরে এই ইন্টারনেট কানেকশন তুলনামূলক ঝামেলাহীন ইন্টারনেট সার্ভিস দিয়ে থাকে। বৃষ্টি কিংবা ঝড়েও কানেকশন ড্রপ কম করে। প্রয়োজন হলে এই ধরনের কানেকশন ব্যবহার করুন।
যদি আপনি ভিডিও আপলোড কিংবা অনলাইন গেমিং স্ট্রিমিং করেন, তাহলে ইথারনেট পোর্টের সাহায্যে কেবল কানেকশন ব্যবহার করতে পারেন।
রাউটারের অবস্থানঃ
রাউটার মূলত রাখতে হয় পুরো বাসার মাঝখানে। যাতে এন্টিনার চারদিকে সমান ভাবে সিগন্যাল সরবরাহ করতে পারে। রাউটার মাটি থেকে যত উপরে রাখবেন সিগন্যাল তত বেশি ক্লিয়ার হবে।
এছাড়া খেয়াল রাখুন যাতে রাউটারের আশে পাশে কোন ধরনের মেটাল অবজেক্ট, বড় কোন আসবাবপত্র, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ক্যবল টিভি ইত্যাদি না থাকে। এই ধরনের জিনিসপত্র রাউটারের সিগন্যালে বাঁধা সৃষ্টি করে। তাই চেষ্টা করুন এমন কোন সাথে, একটু উঁচুতে রাউটার রাখার যাতে এর সিগন্যালের আশেপাশে কোন বাঁধা না পড়ে। এতে করে সিগন্যাল লস হবে না। অন্য সিগন্যাল এর সাথে রাউটারের সিগন্যাল মিলে গেলে দুটোরই ট্রান্সমিশনে বাঁধা পড়তে পারে। এছাড়া খেয়াল রাখবেন, রাউটারে সরাসরি ধূলা, সূর্যের সরাসরি আলো, পানি যাতে না পড়ে। এগুলো ডিভাইসের ক্ষতি করে।
রাউটার রিপিটার এবং বুস্টারঃ
রাউটারের সিগন্যাল একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত সিগন্যাল সরবরাহ করে। যদি আপনার রাউটারের সিগন্যাল নিতান্তই বাড়ির নানা প্রান্তে প্রয়োজন হয়, অবশ্যই রাউটার রিপিটার ব্যবহার করেন। রাউটার রিপিটার মূল সিগন্যাল কে রিপিট করে। মূল রাউটারের সিগন্যালকে ঠিক ডাবল এরিয়াতে সিগন্যাল সরবরাহ করে এই মিনি ডিভাইস। মূল রাউটারের সিগন্যাল ঠিক যে এরিয়া তে অর্ধেক পৌছায়, সেই স্থানে একটি রিপিটার স্থাপন করলে, প্রায় দু’গুন এরিয়া আবার কভার করবে এই নতুন সিগন্যাল।
মোটামোটি একটি বাসার এক প্রান্তে রাউটার রেখে, মাঝামাঝি রিপিটার রাখলে সেটি পুরো বাসা কভার করবে। এই রিপিটার মূল সিগন্যালকে রিপিট করে। এদিকে বুস্টার মূল সিগন্যালকে বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু এরিয়া কভারেজ বাড়ায় না। মূল সিগন্যালকে কিছুটা বাড়িয়ে দেয়। রিপিটারে অধিকাংশ সময় একই নাম আর পাসওয়ার্ড দেয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞ রা। এছাড়া মেশ সিস্টেম তৈরি করতে পারেন। এই সিস্টেমে মূল রাউটারের সাথেই রিপিটার, বুস্টার, এক্সেস পয়েন্ট সহ কয়েক ধরনের ডিভাইস থাকে। যেটি একটি ২-৩ তলা বিল্ডিং কিংবা একটি বড় এরিয়া পুরো কভার করতে সাহায্য করে। এই রাউটার এবং রিপিটার চেষ্টা করবেন সমান্তরালে রাখার জন্য। কিছুটা বৃত্তের মত, কেন্দ্রে থাকবে রাউটার, পরিধির উপরে, ব্যসার্ধ বরাবর থাকবে রিপিটার।
রিসার্ট এবং আপগ্রেডঃ
মাঝে মধ্যে রাউটার এবং রিপিটার রিসার্ট দিলে পুরো সিস্টেম নতুন করে ফ্রেশ ভাবে কাজ শুরু করে। আর সব অপারেটিং সিস্টেমের মতই দীর্ঘদিন চলাচলের ফলে রাউটারটি ল্যাগ করে। তাই রাউটারের ফার্মওয়ার আপগ্রেড করুন। মাঝে মধ্যে রাউটার রি স্টার্ট দিলে রাউটারটি বেশ ভালো চলবে। প্রতিদিন অন্তত একবার রাউটার রি সার্ট করুন।
ডিভাইসঃ
একটি রাউটারে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ডিভাইসে কানেক্ট করতে পারে। অতিরিক্ত ডিভাইস কানেক্ট করে রাউটারের সিগন্যাল সরবরাহে বাঁধা সৃষ্টি করবেন না। যদি কোন ডিভাইস থাকে, যেটা কাজে লাগবে না সেই ডিভাইসটির কানেকশন বন্ধ করে রাখুন। চেক করুন কেউ অবৈধ উপায়ে আপনার ডাটা ব্যবহার করছে কিনা।
পাসওয়ার্ডঃ
রাউটার আর রিপিটারের পাসওয়ার্ড এক রাখুন, তবে বাইরের কারো সাথে শেয়ার না করায় ভালো। এতে করে ডাটা সিগন্যাল চুরি হবার আশঙ্কা আছে।
ডুয়েল ব্যান্ডঃ
বর্তমান সময়ের রাউটারে ২.৪ গিগা এবং ৫ গিগা ফ্রিক্যেন্সি কানেকশন থাকে। দুটো চালু রাখলে আপনার সব ধরনের ডিভাইস কানেক্ট করতে পারবেন। তবে ৫ গিগা হার্জ ফ্রিক্যেন্সি মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ট্যাব, টিভি এইগুলো তে কানেক্ট করে সহজে। অন্যদিকে ২.৪ গিগা ফ্রিক্যেন্সি কানেক্ট করে স্মার্ট হোম সিস্টেম।
রাউটার এবং রিপিটারঃ
রাউটার কেনার আগে সেটির এন্টিনা কয়টি, ইথারনেট পোর্ট আছে কিনা, কয়টি এন্টিনা রয়েছে, কত দূরত্ব কভার করে এই বিষয়গুলো খুব ভালোভাবে খোঁজ করবেন। কমপক্ষে ৪টি এন্টিনাওয়ালা রাউটার একটি ১০০০-১৪০০ স্কয়ার ফিটের এরিয়া বেশ ভালো ভাবে কভার করতে পারে, যদি সেটি বাসার মাঝামাঝি স্থানে রাখা হয়।
এতক্ষন যা যা আলোচনা করলাম সবকিছু না পারলেও কিছু কিছু পদ্ধতির মাধ্যমে আপনাকে ইন্টারনেটের কানেকশন ড্রপ, স্লো কানেকশন, ল্যগিং কানেকশন, হাই পিং রেটিং ইত্যাদি সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। আপনার হাতের স্মার্ট ডিভাইসগুলোও আপনার কানেকশন স্লো করে দিতে পারে। যেমন ডিভাইসের ক্যাস-কুকিজ বেশি হয়ে গেলে ডিভাইস স্লো হয়ে যায়। আবার একটি ডিভাইসে এক সাথে অনেক ভারি কাজ করলেও ডিভাইস স্লো হয়ে যেতে পারে। একসাথে একাধিক ফাইল ডাউনলোড করবেন না। হিস্টোরি, কুকিজ রেগুলার ক্লিন করুন। অপারেটিং সিস্টেম আপডেট করুন। আশা করি সমস্যার সমাধান হবেই।
গত প্রায় ৩ বছর ধরে একদিকে করোনা ছেকে ধরেছে, অন্যদিকে হোম অফিস, রিমোট অফিস আর ফ্রিল্যান্সিং কাজের চাহিদা বাড়ছে। তাই ইন্টারনেট এর একটা স্ট্যাবল, ল্যাগ ফ্রি , ড্রপলেস কানেকশন এর প্রয়োজন পড়ছে। এছাড়াও ইদানিং কালে বাড়ছে ভিডিও স্ট্রিমার, অনলাইন ই গেমারদের কাজ। এছাড়া বিশাল একটা অংশের ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস চলছে অনলাইনে। সবার জন্যই প্রয়োজন অন্তর্জালের। সেই অনুযায়ী রাউটার আর রিপিটারের চাহিদাও বাড়ছে।
সাথে সাথে বাড়ছে নানাবিধ সমস্যা। এই সমস্যা যেমন আছে, সমাধানের উপায় ও আছে। আমরা চেষ্টা করছি কী কী সমস্যা হতে পারে, আর সেই সমস্যার সমাধানের কিছু উপায়। প্রতিটি গ্রাহককে নিজের ইন্টারনেটের কানেকশনের সমস্যা কোথায়, কিভাবে সমাধান করতে হবে সেটা বুঝতে হবে। বুঝতে পারলেই সেই সমাধান হবে সকল সমস্যার। আশা করি এই আর্টিকেলের আপনাদের সাহায্য করবে।
An article based on internet solving issues
Feature image: Freepik