Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

নকল বা ক্লোন স্মার্টফোন কীভাবে চিনবেন?

ইন্টারনেটের জগত সম্পর্কে আপনার যদি টুকটাক জ্ঞান থেকে থাকে, তবে আপনি অবশ্যই নকল বা ক্লোন ফোন সম্পর্কে শুনে থাকবেন। আবার অনেকের ক্ষেত্রে এমনও হতে দেখা যায় যে অপেক্ষাকৃত কমদামে লোভনীয় কোনো অফারের ফাঁদে পড়ে ক্লোন বা নকল স্মার্টফোন কিনেছেন! এমনও হতে পারে, বাইরে থেকে একটি স্মার্টফোন দেখতে স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯ স্মার্টফোনটির মতো হুবহু একইরকম; কিন্তু একটু ব্যবহারের পরেই বোঝা গেল যে ফোনটির ভেতরের বৈশিষ্ট্যগুলো একদমই আলাদা। নকল ক্যামেরা, কম গতির প্রসেসর এবং নানা রকমের ভিন্নতা! হ্যাঁ, এক্ষেত্রে ঐ ফোনটি একটি নকল অথবা ক্লোন কপি।

আসল বনাম কপি স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯; Image Source: Android Authority

বর্তমানে নানা দেশে নকল বা ক্লোন স্মার্টফোনের বেশ ভালো বাজার থাকলেও সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে চীনের নকল স্মার্টফোনের বাজার। চীনের প্রযুক্তির বাজারে এখন যেসব ক্লোন স্মার্টফোন বিকিকিনি হচ্ছে, তার মধ্যে সবথেকে এগিয়ে আছে স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক স্যামসাং প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন দামি ফ্লাগশিপ ফোনের ক্লোন কপি। স্মার্টফোন বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অ্যানটুটু’র ২০১৭ সালের স্মার্টফোনভিত্তিক বাৎসরিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে-

স্যামসাং কোম্পানির নামে বিক্রয়কৃত স্মার্টফোনগুলোর মধ্যে অন্তত ৩৬ শতাংশ নকল বা ক্লোন ফোন বিক্রি হয়েছে। অ্যাপলের আইফোনের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটি ৭.৭ ভাগ এবং হুয়াওয়ের ক্ষেত্রে ৩.৪ ভাগ। এই তালিকায় স্যামসাং এস৭’এর ইউরোপিয়ান সংস্করণ সর্বাধিক ‘নকল এবং ক্লোন’ হওয়ার রেকর্ড গড়েছে। গত বছরে অ্যানটুটু’র অ্যাপে চেক করা ১৭৪২৪৭২৬টি স্মার্টফোনের মধ্যে অন্তত ৪৬০০০০টি ফোন ক্লোন বা নকল ফোন হিসেবে ধরা পড়েছে।

অ্যানটুটু বেঞ্চমার্কের পরিসংখ্যান; Image Source: Android Authority

তবে এটি কিন্তু শুধু অ্যানটুটু বেঞ্চমার্কের একটি পরিসংখ্যান। এই হিসাবের বাইরে পৃথিবীতে বর্তমানে কমপক্ষে ১ বিলিয়ন স্মার্টফোন ব্যবহার করা হচ্ছে। স্বনামধন্য এবং পরিচিত কোনো বিক্রয় প্রতিষ্ঠান আসল ফোন কেনার জন্য সবথেকে নিরাপদ ব্যবস্থা হলেও সবার পক্ষে সবসময় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে স্মার্টফোন কেনার কাজটি সম্ভব হয়ে ওঠে না। আর এই বিষয়টি কাজে লাগিয়ে একদিকে যেমন কম দামি ফ্যাক্টরি পরিমার্জিত ফোন সস্তায় আমদানি করে বিক্রি হচ্ছে, আবার লোভনীয় দামে দামি ফ্লাগশিপ ফোনের ক্লোন বা কপি বিক্রি করা হচ্ছে। আমাদের অনেকেই অপেক্ষাকৃত কম দামে এসব ফোন কিনে একদিকে সহজে প্রতারিত হচ্ছি এবং সাথে আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি তো আছেই। লেখার এ পর্যায়ে কীভাবে আসল  এবং নকল স্মার্টফোন সহজে চেনা যায়, এই বিষয়ে নির্দেশিকা থাকছে।

বাহ্যিক ডিজাইন এবং গঠন

একটি নকল বা ক্লোন ফোন চেনার সবথেকে সাধারণ উপায়টি হচ্ছে- ফোনটির বাইরের ডিজাইন বৈশিষ্ট্য এবং গঠনের দিকে সতর্ক নজর দেয়া। একটি নকল বা ক্লোন স্মার্টফোনের বাইরের ডিজাইন বৈশিষ্ট্য কখনোই আসল ফোনের সমমানের হয় না। এক্ষেত্রে বাটনের ভিন্নতা, বেজেলের অসমানুপাতিকতা, ক্যামেরা হাউজিং এবং বাম্পের ক্ষেত্রে ভিন্নতা থাকবেই। অধিকাংশ ক্লোন স্মার্টফোন এভাবে চিনতে পারা গেলেও সাম্প্রতিক অনেক জনপ্রিয় স্মার্টফোনের ক্লোনগুলো বাইরের ডিজাইন বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে হুবহু একইরকম হয়ে থাকে। একমাত্র ব্যবহার না করে এই ক্লোন ফোনগুলো শনাক্ত করা খুবই মুশকিল।

আপনি যদি বাইরের কোনো বিক্রেতার নিকট থেকে ফোন কিনতে চান, সেক্ষেত্রে আসল ফোন চেনার জন্য আপনার প্রথম কাজটি হবে- ফোনটি ঠিকঠাক চালু হচ্ছে কি না সেই বিষয়টি যাচাই করে নেওয়া। আপনি যদি অনলাইনে কোনো বিক্রেতার নিকট থেকে ব্যবহার করা কোনো ফোন কিনতে চান, সেক্ষেত্রে কোনোরকম দামাদামি করার আগেই ফোনের আসল অবস্থা সম্পর্কে ধারণা নিয়ে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এক্ষেত্রে আপনি বিক্রেতার কাছে ফোনের স্ক্রিনশট, ফোনের ছবি, এমনকি ফোনটি নিয়ে ভালো একটি ভিডিও চাইতে পারেন। এক্ষেত্রে স্ক্রিনটি সম্পর্কে বেশ ভালোভাবে যাচাই করা উচিত; ফোনের স্ক্রিনটি কোনোরকম ফাটা কিনা অথবা পিক্সেলগত কোনো ধরনের সমস্যা আছে কিনা, এই বিষয়গুলো সতর্কতার সাথে প্রথমেই যাচাই করা উচিত। এক্ষেত্রে আপনার কাঙ্ক্ষিত ফোনটি সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য পেতে আপনি ইউটিউব ভিডিও দেখতে পারেন। কোনো স্মার্টফোনের বাইরের ডিজাইন বৈশিষ্ট্য, ইউআই (UI) ডিজাইন সম্পর্কে আজকাল ইউটিউব ভিডিও থেকে বেশ ভালো ধারণা পাওয়া সম্ভব।

বিভিন্ন কোম্পানির ফোনের ইউজার ইন্টারফেস; Image Source: Android Authority

আসল ফোন এবং ক্লোন ফোনের মধ্যে পারফর্মেন্স ভিত্তিক বড় ধরনের পার্থক্য থাকে। ভালো স্মার্টফোনগুলোর ক্লোন কপিতে বাজে প্রসেসর, বাজে ক্যামেরা সেন্সর, নিম্নমানের চিপ এবং ভিন্ন হার্ডওয়্যার ব্যবহার করা হয়। আমরা যদি অল্প কিছু সময় ধরে কোনো ক্লোন ফোন ব্যবহার করি, সেক্ষেত্রে খুব সহজেই এই পারফর্মেন্সগত পার্থক্য বুঝতে পারবো। এক্ষেত্রে কোনো অ্যাপ চালু হতে বেশি সময় লাগবে, ফোন ল্যাগ করবে। এছাড়া প্রত্যেক স্মার্টফোন কোম্পানির ইউআই ভিত্তিক নিজস্ব কিছু সাধারণ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য থাকে। যেমন- স্যামসাং কোম্পানির স্মার্টফোনে টাচ ইউজের নিজস্ব কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে। ফোন কেনার সময়ে কোম্পানিটির ইউআই বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আগে থেকে একটু ধারণা থাকলে সহজে প্রতারিত হবার সম্ভাবনা থাকে না।

পুরনো ফোন কেনার ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এছাড়া অনলাইন কোনো শপ থেকে ফোন কেনার ক্ষেত্রে তাদের ‘ক্রেতা সুরক্ষা নীতিমালা’ এবং পেমেন্ট পদ্ধতি সম্পর্কে বেশ ভালোভাবে খেয়াল রাখা জরুরি। এক্ষেত্রে অফিসিয়াল পেমেন্ট পদ্ধতি, ওয়ারেন্টি পলিসি সম্পর্কে উল্লেখ না থাকলে সেই শপগুলো এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। শুধু ফোন নয়, বরং অনলাইন থেকে যেকোনো পণ্য কেনার ক্ষেত্রেই এই বিষয়গুলো মাথায় রাখা জরুরি।

স্মার্টফোনের বিভিন্ন পরীক্ষা

নতুন স্মার্টফোন কেনার ক্ষেত্রে সবসময়ই যাচাই করে নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে প্রথমে বাইরের ডিজাইনগত দিকটি যাচাই করে নেওয়ার পরে ফোনটি চালু করে হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারগত বিষয়গুলো মিলিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু অ্যাপ রয়েছে, যা দিয়ে মূলত স্মার্টফোনে ব্যবহৃত হার্ডওয়্যারগুলো (যেমন- প্রসেসর, জিপিইউ, ক্যামেরা সেন্সর ইত্যাদি) যাচাই করে নেওয়া সম্ভব।

নকল বা ক্লোন ফোনের ইউআই, ক্যামেরা অ্যাপের ফিচারগুলো কখনোই আসল মডেলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না। এছাড়া, ফ্লাগশিপ স্মার্টফোনগুলোতে সাধারণত এনএফসি, ফিংগারপ্রিন্ট সেন্সরসহ নানা রকমের জিপিএস সার্ভিস ব্যবহৃত হয়ে থাকলেও ক্লোন বা কপি ফোনগুলোতে এই প্রিমিয়াম সার্ভিসগুলো থাকে না। এক্ষেত্রে একটু সতর্ক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আসল এবং নকল স্মার্টফোনের পার্থক্য নিরূপণ করা সম্ভব। একটু সচেতনতা এক্ষেত্রে আমাদের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি থেকে বাঁচাতে পারে।  

সিপিইউ-জেড অ্যাপের গুরুত্ব

স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে সহজেই আসল-নকল যাচাই করার জন্য সিপিইউ-জেড অ্যাপটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অফিসিয়াল বৈশিষ্ট্যের সাথে মিলিয়ে নেওয়ার জন্য নতুন ফোনের ক্ষেত্রে ‘সিপিইউ-জেড পরীক্ষা’ করে নেওয়া যেতে পারে। ফোনটিতে ব্যবহৃত প্রসেসর, ক্যামেরাসহ যাবতীয় সবকিছু সম্পর্কে এই সিপিইউ-জেড অ্যাপের মাধ্যমে জেনে নেওয়া সম্ভব। প্লে স্টোর থেকে খুব সহজেই অ্যাপটি ডাউনলোড করে নেওয়া যায়।

সিপিইউ-জেড অ্যাপ; Image Source: Android Authority

বিভিন্ন ধরনের বেঞ্চমার্ক পরীক্ষা

বর্তমানে কম্পিউটারের পাশাপাশি স্মার্টফোনের গতি এবং সক্ষমতা যাচাই করার জন্য বেঞ্চমার্ক পরীক্ষা করে নেওয়ার জন্য নানা ধরনের অ্যাপ রয়েছে। এই সব অ্যাপের মাধ্যমে স্মার্টফোনের প্যারফর্মেন্সগত একটি স্কোর পাওয়া যায়। অফিশিয়াল স্কোরের সাথে ব্যবহৃত ফোনের স্কোর সামঞ্জস্যপূর্ণ হলে ফোনটি নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। তবে এই দুই স্কোরের মধ্যে সামঞ্জস্যবিহীন পার্থক্য থাকলে ফোনের মৌলিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। গুগল প্লে স্টোর থেকে এ ধরনের বেঞ্চমার্ক ভিত্তিক অ্যাপগুলো পাওয়া সম্ভব।

আইএমইআই যাচাই

প্রত্যেক ফোনের একটি নিজস্ব এবং স্বতন্ত্র আইএমইআই (International Mobile Equipment Identity) নম্বর থাকে। এই আইএমইআই নম্বরের মাধ্যমে জরুরি ক্ষেত্রে চুরি হয়ে যাওয়া ফোন লক, ইরেজ এবং ক্ষেত্রবিশেষে শনাক্ত করা সম্ভব। উপরে উল্লেখ করা যাবতীয় পদ্ধতির মাধ্যমে ক্লোন বা নকল ফোন শনাক্ত করা গেলেও একমাত্র আইএমইআই যাচাই করার মাধ্যমে স্মার্টফোনটি ব্ল্যাকলিস্টের অন্তর্ভুক্ত কি না, এই বিষয়টি শনাক্ত করা সম্ভব। বিভিন্ন অনলাইন পেইড সাইটের মাধ্যমে স্মার্টফোনের জন্য আইএমইআই ভিত্তিক নানা সেবা পাওয়া সম্ভব। *#০৬# ডায়াল করে সহজেই স্মার্টফোনগুলোর স্বতন্ত্র এই আইএমইআই নম্বরগুলো আমরা জেনে নিতে পারি।

জেনে নিন আইএমইআই নম্বর; Image Source: IMEI info

Featured Image Source-  Android Authority

Related Articles