Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

একজন হুয়াওয়ে সিইও এবং হুয়াওয়ে-স্যামসাং রাজত্বের লড়াই

চীনের শহরগুলোতে হেঁটে বেড়ালে একটি বিষয় চোখ এড়িয়ে যাবার কথা নয়, শহরজুড়ে ছড়িয়ে আছে হুয়াওয়ে স্মার্টফোনের অসংখ্য বিক্রয়কেন্দ্র। হুয়াওয়ে এখন চীনের এক নম্বর স্মার্টফোন কোম্পানি, পৃথিবীর অন্যতম বড় স্মার্টফোন বাজার। বিক্রয়ের দিক থেকে শুধুমাত্র চীনের বাজার নয়, স্মার্টফোনের বিশ্ববাজারেও হুয়াওয়ে এখন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্যামসাংকে টপকে ১ম অবস্থানে আসার চেষ্টা করছে।

Image Source: Wikimedia Commons  

চলতি বছরের ২য় ভাগে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলকে টপকে স্মার্টফোন বাজারে হুয়াওয়ে এখন ২য় অবস্থানে। সামনে আছে স্যামসাং। ২০২০ সালের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক এই স্মার্টফোন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে পেছনে ফেলতে চাইছে হুয়াওয়ে। এই প্রতিযোগিতা সম্পর্কে হুয়াওয়ের ভোক্তা পণ্য বিভাগের সিইও রিচার্ড ইয়ু সম্প্রতি সিএনবিসি-তে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন,

২০১৯ সালে, অর্থাৎ আগামী বছরে স্যামসাংয়ের চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে থাকবো না আমরা। হয়তো সেই বছরই এই প্রতিযোগিতা সমান সমান হচ্ছে। কিন্তু ২০২০ সালে স্যামসাংকে টপকে আমাদের ১ম অবস্থানে আসার বেশ ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।

উত্থান

হুয়াওয়ে আজ ভাঁজ করে রাখা যায় এমন ফোন, ফাইভ জি সম্পন্ন ফোন কিংবা অগমেন্টেড রিয়্যালিটি সম্পন্ন চশমার কথা বললেও কয়েক বছর আগেও তাদের কোনো স্মার্টফোন বিভাগ ছিল না। ২০১০ সালে হুয়াওয়ে প্রথম নিজস্ব মোবাইল ফোন বাজানে আনে। প্রায় ৬৮ ডলারে তখনকার ‘আইডিওস’ ফোন বাজারে আনার পরে প্রায় ৯ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। বর্তমানে স্মার্টফোনে আধুনিক সব ফিচার আনতে হুয়াওয়ে যেন অন্যদের চেয়ে একটু বেশিই এগিয়ে।

আইডিওস ফোন; image source: wikimedia commons  

রিচার্ড ইয়ু, সাফল্যের চাবিকাঠি 

যে মানুষটির হাত ধরে নেটওয়ার্ক ব্যবসার পাশাপাশি আজকের স্মার্টফোন প্রতিভূ হুয়াওয়েকে আমরা চিনেছি, তিনি রিচার্ড ইয়ু। ইয়ু ২০১২ সালে বি-টু-বি বিভাগ ছেড়ে হুয়াওয়ের ভোক্তা সেবা বিভাগের সিইও হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার বেশ কয়েকটি সময়োচিত সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠানটির গতি রাতারাতি বদলে দেয়। ফিচারফোনের বদলে স্মার্টফোনের দিকে নজর দেওয়া, ফোর-জি মোবাইল ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে গবেষণাসহ বেশ কিছু বিষয়ে তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে যোগ্য নেতৃত্ব প্রদান করেন।

রিচার্ড ইয়ু; image source: getty image 

রিচার্ড ইয়ু এখন হুয়াওয়ের অত্যন্ত পরিচিত এক নাম। ভোক্তা পণ্য বিভাগের অন্তর্গত নতুন কোনো পণ্যের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখপাত্র হিসেবে প্রায়ই তাকে দেখতে পাওয়া যায়। যোগ্য দিকনির্দেশনার পাশাপাশি ঝুঁকি গ্রহণের সাহস তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। ঠিক এই কারণেই হুয়াওয়ে আজ স্মার্টফোনের জগতে নিজস্ব একটি জায়গা করে নিতে পেরেছে। এই প্রসঙ্গে ইয়ু বলেন,

আমি চালেঞ্জ এবং ঝুঁকি নিতে পছন্দ করি। এবং আমি চাই, আমি আমার টিমের প্রত্যেকেই তাদের নিজের জায়গায় থেকে সেরা চেষ্টাটাই করুক। অনেকেই হয়তো এই কারণে আমাকে পাগল ভেবে থাকেন। কিন্তু আপনাকে সেরা হতে হলে এই কাজটি অবশ্যই করতে হবে।

ভোক্তা পর্যায়ের পণ্যের জন্য হুয়াওয়ে এখন খুবই পরিচিত একটি নাম। বাজেটের মধ্যে নতুন নতুন প্রযুক্তির সন্নিবেশন হুয়াওয়ে মোবাইল বিভাগকে এই অভাবনীয় সাফল্য এনে দিয়েছে। এছাড়া হুয়াওয়ে স্মার্টফোনের নকশা এবং এর বাস্তবায়ন সব সময়েই মুগ্ধ করার মতো। উদাহরণস্বরূপ, এ বছরের প্রথমদিকে বাজারে আসা পি২০প্রো স্মার্টফোনটির কথা বলা যেতে পারে। তিনটি রিয়ার ক্যামেরার সুবিধাসম্পন্ন এই স্মার্টফোনটি এই ধারায় বাজারে প্রথম ছিল।

এআই এবং অন্যান্য পরিসেবা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠানটি বেশ এগিয়ে। হুয়াওয়ে এখন অনেকটা অ্যাপলের পথেই হাঁটছে। তাদের অনেক স্মার্টফোনে বর্তমানে এআইযুক্ত চিপ ব্যবহার করা হচ্ছে। রিচার্ড এই এএই-কে ভবিষ্যতে স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে মনে করছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন,

এআই এসেছে। স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে এই বুদ্ধিমত্তাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আগামীদিনের সমস্ত পরিসেবা এই বুদ্ধিমত্তাকে ঘিরেই হতে চলেছে।

হুয়াওয়ে এখন ফাইভ-জি সমর্থিত ভাঁজ করা স্মার্টফোন নিয়ে বিস্তর গবেষণা করছে। আগামী বছরেই অর্থাৎ ২০১৯ সালেই প্রতিষ্ঠানটি এই স্মার্টফোনটি বাজারে আনতে চাইছে। ইয়ুর তথ্যমতে, হুয়াওয়ে পাশাপাশি অগমেন্টেড রিয়েলিটি সমন্বিত চশমা নিয়েও কাজ করছে। স্মার্টস্পিকার এবং ল্যাপটপ নিয়েও প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা এবং কর্মতৎপরতা থেমে নেই।

হুয়াওয়ের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাযুক্ত চিপ; image source: cnbc

হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারভিত্তিক সেবার জন্যও এই প্রতিষ্ঠানটি সুবিদিত। ক্লাউড সংরক্ষণ, মিউজিক স্ট্রিমিং পরিসেবাসহ হুয়াওয়ের আরও বেশ কয়েকটি পরিসেবা রয়েছে, যা মূলত চীনের বাইরে খুব একটা পরিচিত নয়। চীনকেন্দ্রিক এই পরিসেবাগুলো নিয়ে হুয়াওয়ে বাইরের বিশ্বে খুব একটা বিজ্ঞাপনে বিশ্বাসীও নয়। উদাহরণ হিসেবে চীনের হুয়াওয়ে মিউজিক পরিসেবার কথা বলা যেতে পারে। চীনের জনপ্রিয় এই মিউজিক পরিসেবার মাসিক প্রায় ১০০ মিলিয়ন ব্যবহারকারী রয়েছে।

মার্কিন-চীন বাণিজ্য যুদ্ধ

হুয়াওয়ের এই সমৃদ্ধির পথ সবসময়ে খুব একটা মসৃণ ছিলো না। বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠানটিকে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির শিকার হতে হয়েছে। ২০১২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠানটিকে তথ্য পাচারের জন্য অভিযুক্তও করে। তখন মার্কিন মুলুকে প্রতিষ্ঠানটির নেটওয়ার্ক ব্যবসায় নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়। এমনকি এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব প্রতিষ্ঠানটির স্মার্টফোন বিভাগেও আসে। এই প্রসঙ্গে ইয়ু বলেন,

মার্কিন বাজার আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এই বাজার ছাড়াও আমরা সমৃদ্ধির পথে হাঁটতে পারি। আমাদের বৈশ্বিক বাজারের কথা ভাবতে হবে এবং এখন আমরা ঠিক এটাই করছি। তবে এ কথা ঠিক যে, এই মার্কিন-চীন বাণিজ্য যুদ্ধে আমরাসহ আরও অনেকেই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

হুয়াওয়ে বনাম স্যামসাং 

হুয়াওয়ে এবং স্যামসাং স্মার্টফোন ব্যবসার যুদ্ধে খুব একটা পিছিয়ে না থাকলেও কেউই কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় নিতে নারাজ। এছাড়া হুয়াওয়ে চীনের মধ্যে শাওমি, অপো, ভিভোর মতো জনপ্রিয় স্মার্টফোন প্রতিষ্ঠান থেকেও তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে।

স্মার্টফোনের বিশ্ববাজারে স্যামসাংকে হারিয়ে দেওয়া হুয়াওয়ের জন্য খুব সহজ কোনো কাজ নয়। কেননা, স্যামসাংও তাদের রাজত্ব স্থায়ী করার জন্য বর্তমানে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি বাজেট স্মার্টফোন সিরিজেে নতুন নতুন প্রযুক্তি এবং নকশার স্মার্টফোন বাজারে আনছে। উদাহরণ হিসেবে চার রিয়ার ক্যামেরার নতুন স্যামসাং গালাক্সি এ৯ স্মার্টফোনটির কথা বলা যেতে পারে।

হুয়াওয়ে বনাম স্যামসাং, Image Source: Know Your Mobile 

কাউন্টারপয়েন্টের রিসার্চ ডিরেক্টর নীল শাহ স্যামসাং হুয়াওয়ের এই প্রতিযোগিতা সম্পর্কে বলছেন,

স্যামসাংকে পেছনে ফেলতে হুয়াওয়ের এখনও প্রতি কোয়ার্টারে অন্ততপক্ষে ৩০-৪০ মিলিয়ন ইউনিট স্মার্টফোন বেশি বিক্রি করতে হবে। হুয়াওয়েকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং ভারতের মতো স্মার্টফোনের বাজার জয় করতে হবে। বিষয়টি অত্যন্ত দুরুহ বিষয় হলেও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার বিচারে একেবারেই অসম্ভব কিন্তু নয়!

রিচার্ড ইয়ুর স্বপ্ন কিন্তু আরও বড়! তিনি শুধু স্মার্টফোন বা নেটওয়ার্ক ব্যবসার কোনো প্রতিষ্ঠান হিসেবে হুয়াওয়েকে থেমে থাকতে দেখতে নারাজ। ভবিষ্যতে নতুন নতুন স্মার্টস্পিকার, পরিধানযোগ্য আরও নানা প্রযুক্তি পণ্যের সমারোহে তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে ‘হুয়াওয়ে ইকোসিস্টেম’ হিসেবে প্রথম অবস্থানে দেখতে চাইছেন।

This article is in Bangla language. It's about the rise of Huawei smartphones and the competitive rivalry between Huawei and Samsung. Necessary references have been hyperlinked accordingly. 

Featured Image Source: Know Your Mobile 

Related Articles