Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রব স্পেনস: দ্য আইবর্গ গাই

সাইবর্গ বিপ্লবের কথা মনে আছে? না না, ডিসি কমিকসের সাইবর্গের কথা বলছি না। সাইবর্গের কথা শুনে যারা ব্যাটম্যান ভার্সেস সুপারম্যানের জগতে চলে গেছেন, তারা একটু কষ্ট করে বাস্তব জগতে পা রাখুন। আজ আমরা সাইবর্গ বিপ্লবের একটি অংশ আইবর্গকে জয় করা এক দুঃসাহসীর গল্প শুনব।

যাদের কাছে গোটা ব্যাপারটা খুব খটমটে লাগছে তাদের জন্য শুরু থেকে সংক্ষেপে একটু ভেঙে বলা যাক। শুরুতেই প্রশ্ন আসতে পারে ‘সাইবর্গ’ জিনিসটা আবার কী? সাইবর্গ বা সাইবারনেটিক অর্গানিজম হলো মানুষের শরীরের এমন একটি অবস্থা যখন সেখানে একইসাথে জৈব এবং বায়োমেকাট্রনিক বা এক ধরনের উন্নত কৃত্রিম অঙ্গ অবস্থান করে। ধরা যাক, আপনার একটি পা আর দশজন সাধারণ মানুষের মতো। আর অপর একটি রক্তমাংসের পা কেটে আপনি কৃত্রিম এমন কিছু একটা বেছে নিলেন যাতে করে ঐ পায়ের সাহায্যে বাইকের মতো তীব্র গতিতে চলা যাবে। তাহলে আপনাকে আমরা একজন সাইবর্গ বলতে পারি।

সাইবর্গ বিপ্লবের মূল কথা হলো, আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বেতার তরঙ্গগুলো ব্যবহার করে নিজেদেরকে যেন আমরা সাধারণ মানুষের চেয়ে আরও উন্নত অবস্থায় নিয়ে যেতে পারি। ব্যাপারটা অবশ্য এখনো পর্যন্ত সায়েন্স ফিকশনের চার দেয়াল পার হতে পারেনি। তবে আজ থেকে ২০ বছর আগেও কি মানুষ ভেবেছিল, ঘরে বসে হাজার হাজার মাইল দূরে থাকা প্রিয় মুখটিকে মুহূর্তের মধ্যেই চোখের সামনে দেখতে পারবে? একইভাবে হয়তো সময়ের প্রয়োজনে মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও আসতে পারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।

রব স্পেনস; Source: vice.com

শিরোনামে ছিল আইবর্গের কথা, আর আমরা এতক্ষণ পড়লাম সাইবর্গের কথা। আইবর্গ আসলে সাইবর্গেরই একটি ছোট্ট অংশ। আইবর্গের মাধ্যমে শব্দেরও রঙ দেখা যায়। এটি মূলত এক ধরনের শারীরিক পরিবর্তনে সাহায্যকারী যন্ত্র। বিশেষত যারা বর্ণান্ধ, তাদের জন্য এই প্রযুক্তিটি নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী। এই প্রযুক্তিটিই সম্প্রতি ব্যবহৃত হয়েছে কানাডিয়ান এক ব্যক্তির ক্ষেত্রে। আজ আমরা তার গল্পই শুনবো।

রব স্পেনস, কানাডার একজন ডকুমেন্টারি ফিল্ম নির্মাতা। তার চোখের জায়গায় বসানো হয়েছে এমন একটি কৃত্রিম চোখ, যা একইসাথে সাধারণ চোখ এবং ভিডিও ক্যামেরার কাজ করতে পারে। ৪০ বছর বয়স্ক স্পেনস ছোটবেলায় দাদার বাড়িতে শুটিংকে কেন্দ্র করে এক দুর্ঘটনায় চোখে আঘাত পান। আঘাতটিকে খুব একটা গুরুত্ব না দিয়ে বছরের পর বছর দিব্যি চলছিলেন স্পেনস। টুকটাক সমস্যা তো হতোই, কিন্তু খুব গুরুতর কোনো বিপদে না পড়ায় তিনি টেরই পাননি নিজের কত বড় ক্ষতি তিনি করে চলেছেন। ধীরে ধীরে চোখের অবস্থা এতোটাই খারাপ হয়ে যায় যে, ২০০৭ সালে বাধ্য হয়ে তার চোখের কর্নিয়া অপারেশন করে বাদ দিয়ে দিতে হয়। ঠিক সেই মুহূর্তে এসে স্পেনসের হাতে আর একটি মাত্র উপায় অবশিষ্ট ছিল- কৃত্রিম কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা।

ক্যামেরা চালু করা অবস্থায় স্পেনস; Source: vimeocdn.com

এবার কিন্তু গতানুগতিকতার পথে হাঁটতে চাইলেন না স্পেনস। প্রচলিত কৃত্রিম চোখের পরিবর্তে আরও সুনিপুণ কিছুর কথা ভাবছিলেন তিনি। প্রতিষ্ঠিত বেতার তরঙ্গ প্রকৌশলী এবং ডিজাইনার কস্তা গ্র্যামাটিসের সাথে কথা বলেন তিনি। দুজন মিলে ডিজাইন করে ফেলেন দারুণ একটি ক্যামেরা চোখের। স্পেনসের নকল চোখের পেছনে একটি তারবিহীন ক্যামেরা বসিয়ে দেয়া হয়। এক্ষেত্রে পুরো যন্ত্রটি তৈরির সময় মাইক্রো ট্রান্সমিটার, ছোট্ট একটি ব্যাটারি, ক্ষুদ্র ক্যামেরা এবং একটি ম্যাগনেটিক সুইচ ব্যবহার করা হয়। সুইচের সাহায্যে স্পেনস তার প্রয়োজনমত ক্যামেরাটি পরিচালনা করতে পারবেন। পরবর্তীতে, মার্টিন লিং নামক একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের সাহায্যে একটি ছোট্ট সার্কিট নির্মাণ করা হয়। এই সার্কিটের মাধ্যমে ক্যামেরার সব তথ্য কপি করে একটি বড় পরিসরে, যেমন- ফোন বা কম্পিউটারে নিয়ে নেয়া যাবে। স্পেনসের আইবর্গ প্রজেক্টে এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে। এই চোখের প্রথম সংস্করণটি তৈরি করা হয় ২০০৮ সালে, যদিও স্পেনস এ বছরের জুনের ১০ তারিখে কানাডার ‘ফিউচার ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স’ নামের একটি সম্মেলনে তা প্রথমবারের মতো প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি নিজেকে পরিচয় দেন ‘দ্য আইবর্গ গাই’ হিসেবে।

এখনো পর্যন্ত ক্যামেরাটির সাথে স্পেনসের মস্তিষ্ক কিংবা অপটিক নার্ভের কোনো সম্পর্ক স্থাপন করা হয়নি। কাজেই স্পেনসকে এখনো সত্যিকার অর্থে ‘সাইবর্গ’ বলাটা ঠিক হবে না। ক্যামেরাটি ৩০ মিনিটের ফুটেজ ধারণ করার উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। ৩০ মিনিটের পর এর চার্জ শেষ হয়ে যায়। অর্থাৎ সার্বক্ষণিক সার্ভিস দেয়া তো দূরে থাক, এক ঘণ্টাও এই ক্যামেরার উপর ভরসা করা যাবে না। সাইবর্গরা যেহেতু নিজেদের শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মতোই এই বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন কৃত্রিম অঙ্গগুলো ব্যবহার করতে পারে, সেই প্রেক্ষাপটেই স্পেনস এখন আধা সাইবর্গ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। ক্যামেরার সাথে একটি লাল বর্ণের উজ্জ্বল এলইডি লাইট সংযুক্ত করা হয়েছে। এর মানে হচ্ছে সামনে বসে থাকা যে ব্যক্তির ভিডিও ধারণ করতে চাচ্ছেন আপনি, তিনি অবশ্যই সেই বিষয় সম্পর্কে অবগত থাকবেন। লুকিয়ে ভিডিও করার মতো উপায় এখানে থাকছে না। স্পেনসের মতে এই প্রযুক্তির অন্যতম ভালো একটি দিক এটি। কেননা গুগল গ্লাসের মতো প্রযুক্তিগুলোর সাহায্যে কাউকে না জানিয়ে গোপনে তার ভিডিও রেকর্ড করা যায়। যারা এই প্রযুক্তির অপব্যবহার করতে চায় তাদের জন্য এটি একটি ভালো সংবাদ। কিন্তু আইবর্গ প্রযুক্তি সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

সাইবারনেটিক চোখ; Source: ytimg.com

একজন সিনেমা নির্মাতা হিসেবে স্পেনস এই ক্যামেরাটিকে আর দশটি হাতে ধরা ক্যামেরার মতোই সামনে বসে থাকা লোকজনের কথা এবং কর্মকাণ্ড ধারণ করার জন্য ব্যবহার করতে চান।

“আপনি যখন ক্যামেরা হাতে নিয়ে কারো সামনে গিয়ে দাঁড়াবেন, মানুষের সাধারণ আচরণগুলো তখন পরিবর্তন হয়ে যায়। তাদের আচার-আচরণে এক ধরনের কৃত্রিমতা, আড়ম্বরতা চলে আসে। আমি তাদের কোনোভাবেই ক্যামেরার ভীতিটা দেখাতে চাই না। তাদের সাথে মিশে গিয়ে তাদের কথা শুনতে চাই আমি, তাদের জীবন কাহিনী তুলে ধরতে চাই বাকিদের সামনে”,

এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানান স্পেনস। নিরাপত্তাজনিত ব্যাপার নিয়ে তিনি বলেন,

“ভিডিও ক্যামেরার সাথে আমার নষ্ট চোখ প্রতিস্থাপন করা বনাম অন্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এই দুটো বিষয় নিয়ে বেশ জোর বিতর্ক চলছে, নিজের শরীরে ক্যামেরা স্থাপন করা উচিত হবে কিনা তা নিয়েই আমি এখন সন্দিহান। তবে বিনা অনুমতিতে কারো ভিডিও ধারণ করা হবে না সেই শর্তে ক্যামেরাটি আমি ব্যবহার করতে চাই।”

নীল হার্বিসন; Source: ytimg.com

আমাদের চারপাশে ঘুরে বেড়ানো মানুষগুলোর মধ্যে স্পেনসই প্রথম সাইবর্গ নন। শিল্পী নীল হার্বিসন ছিলেন জন্মগত বর্ণান্ধ। সাইবারনেটিক চোখ ব্যবহার করে এখন তিনি রঙ চিনতে পারেন। সাইবারনেটিক চোখ রঙগুলোকে মিউজিকাল নোটে রূপান্তর করে। ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ রিডিং-এর সাইবারনেটিক প্রফেসর কেভিন ওয়ারউইক তার শরীরে বিভিন্ন ধরনের সাইবর্গ উপাদান ইমপ্ল্যান্ট করেছেন। নিজেকে একজন পূর্ণ সাইবর্গ মানুষ হিসেবে রূপান্তর করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছেন তিনি। তার ইমপ্ল্যান্টগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাহুতে স্থাপন করা একটি মাইক্রোচিপ, যা যেকোনো দরজা খোলা, লাইট জ্বালানো, হিটার চালু করা প্রভৃতি কাজ করতে পারে। প্রজেক্ট সাইবর্গ ২.০ নামক নিজস্ব একটি ওয়েবসাইটে সাইবর্গ সংক্রান্ত তার চিন্তাভাবনা এবং কর্মকাণ্ডে অগ্রগতির ব্যাপারগুলো শেয়ার করেন তিনি।

ফিচার ইমেজ- ontrava.com

Related Articles