Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

শিখে নিন চমৎকার এক সাংকেতিক ভাষা ‘মোর্স কোড’

মানব সভ্যতার শুরু থেকে সমাজে টিকে থাকার জন্য ভাবের আদান-প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সেখান থেকেই ভাষার বিবর্তন শুরু এবং  সেই ভাষাকে লিখিত রূপ দেওয়া। ভাষার লিখিত রূপ আসার পরেই  আসে ডাক যোগাযোগ, টেলিগ্রাফ ও টেলিফোনের প্রয়োজনীয়তা।

সেলফোন এবং টেলিফোন উদ্ভাবনের অনেক আগে থেকেই মানুষ মোর্স কোডের মাধ্যমে যোগাযোগ করতো। ১৬০ বছর বয়সী এ প্রযুক্তিটি এখনো অপেশাদার রেডিও ব্যবহারকারীদের মধ্যে, বিমানে এবং কিছু জাহাজেও ব্যবহৃত হয়। স্কাউটগুলিতে এখনো মোর্স কোড বহুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি সাধারণত জরুরি সংকেত পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।

১৮৩৬ স্যামুয়েল এফ বি মোর্স, জোসেফ হেনরি এবং আলফ্রেড ভেলের সাথে, একটি বৈদ্যুতিক টেলিগ্রাফ সিস্টেম আবিষ্কার করেন

মোর্স কোড কী ?

তথ্য আদান-প্রদানের জন্য টেলিগ্রাফে যে সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করা হয়েছিলো, মূলত তা ছিলো মোর্স কোড ।

প্রযুক্তিগত দিক থেকে মোর্স কোড হচ্ছ টেক্সট/মেসেজ ইনফরমেশন প্রেরণ করার একটি পদ্ধতি, যেখানে অক্ষরগুলোকে আলো বা শব্দের লং বা শর্ট সিগনালের কম্বিনেশনে উপস্থাপন  করা হয়েছে ।

অর্থাৎ প্রতিটি অক্ষর কতগুলো ডট এবং ড্যাশের কম্বিনেশন। লিখিত কোড ছাড়াও এটি ডাটা কম্যুনিকেশনে পালস বা শব্দ দিয়ে উপস্থাপন করা যায়। সেক্ষেত্রে একটি ড্যাশ দ্বারা গঠিত শব্দ তিনটি ডটের সমান। সুতরাং এখনে ডট হচ্ছে পরিমাপের একক ।

মোর্স কোড অ্যালফাবেট

মোর্স কোড আবিষ্কার

১৮৩০ সালে মোর্স কোড আবিষ্কার করেন স্যামুয়েল এফ বি মোর্স। তার নামানুসারে এই কোডের নামকরণ করা হয় ‘মোর্স কোড’। তিনি ১৮৩২ সাল থেকে ইলেকট্রিক টেলিগ্রাফ নিয়ে কাজ শুরু করেন, যার বাস্তব রূপ দেখা যায় ১৮৪৪ সালে এবং মোটামুটি ১৮৪৯ সালের মধ্যেই সিস্টেমটি বিস্তার লাভ করে। তার সিস্টেমে যে কোড তিনি ব্যবহার করেছিলেন তা আমরা বর্তমানে যে মোর্স কোড দেখি তা নয়।

প্রথমদিকে মোর্স কোড শুধু নাম্বার ট্রান্সমিট করতো। ট্রান্সমিশন রিসিভার নাম্বারের কম্বিনেশনকে একটি ডিকশনারির মাধ্যমে শব্দে রূপান্তর করে নিতো। যার ফলে সিস্টেমটি বেশ ধীর ছিল। পরবর্তী সময়ে অক্ষর ও বিরাম চিহ্ন মোর্স কোডে সংযোজন করা হয়। যদিও তখন অনেকেই স্যামুয়েল এফ বি মোর্সের এই সিস্টেম নিয়ে খুব একটা আশাবাদী  ছিলেন না।

১৮৪৪ সালে স্যামুয়েল এফ বি মোর্স  কংগ্রেসের সামনে তার সিস্টেমটি প্রদর্শন করেন এবং প্রথম যে মেসেজটি ট্রান্সমিট করা হয় তা হলো-

“What God hath wrought” অর্থাৎ “স্রষ্টা যা সৃষ্টি করেছেন” 

মেসেজটি প্রেরণ করা হয় ৪০ মাইল দূরে।

মোর্স কোড ব্যবহার করে প্রথম তারবার্তা আবিষ্কারের কারণে মার্কিন টেলিভিশন লাইনে তহবিলের জন্য মার্কিন কংগ্রেস তাকে ৩০,০০০ ডলার প্রদান করেছিলেন।

আন্তর্জাতিক মোর্স কোডটি আমেরিকান মোর্স কোড অনুযায়ী ১৮৫১ সালে গৃহীত হয়েছিল। আন্তর্জাতিক মোর্স  কোড সংকেত SOS(· · · – – – · · ·) প্রথম জার্মান সরকার দ্বারা ১৯০৫ সালে ব্যবহৃত হয়  দুর্যোগ বিপর্যস্ত একটি জাহাজের জন্য। পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাপী মাত্র কয়েক বছর পরেই এই সংকেতটি  জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তিনটি ড্যাশ এবং তিনটি ডট এর পুনরাবৃত্তি প্যাটার্নটি সহজ ও সরল প্রকৃতির হওয়ার কারণে সহজেই নির্বাচিত হয়ে যায় ইমার্জেন্সি কেসে ব্যবহারের জন্য। মোর্স কোডে তিনটি ডট অক্ষর S এবং তিনটি ড্যাশ অক্ষর O  তৈরি করে, তাই এসওএস (SOS) কোডের ক্রমটি মনে রাখার জন্য একটি শর্টকাট পথ হয়ে ওঠে। পরে SOS-এর অর্থ ঘটনার ওপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হতে থাকে, যেমন “save our ship” যার অর্থ “আমাদের জাহাজ বাঁচান” অথবা “save our souls” যার অর্থ “বিপদ থেকে রক্ষা কর”। এই ‘SOS’ মোর্স কোড মনে রাখবার ও ব্যবহার করবার সহজ উপায় ছিল।

বেলারুশের আন্দ্রেই বিন্দাসভ দ্রুততম মোর্স কোড স্পিডের রেকর্ড গড়েছেন ২০০৩ সালের ৬ই মে। তিনি এক মিনিটে ২১৬টি মোর্স কোড প্রেরণ করেন। এতে অক্ষর, নাম্বার ও বিরাম চিহ্নের মিশেল রয়েছে । মোর্স কোডকে ভিক্টোরিয়ান ইন্টারনেটও বলা হয়। এটি সারা বিশ্বের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়েছে।

তৎকালীন টেলিগ্রাফ যন্ত্র

মোর্স কোড যেভাবে ব্যবহার করবেন

১। কোডের সঙ্গে পরিচিত হোন

মোর্স কোডে অক্ষরের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয় ডট (.) আর ড্যাশ(-)। অর্থাৎ প্রতিটি অক্ষর হচ্ছে কতগুলো  ডট (.) আর ড্যাশ(-) এর কম্বিনেশন। নিচের চিত্রটি দেখলে এই প্রতীকগুলো সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হবে।

ইন্টারন্যাশনাল মোর্স কোড

২। মোর্স কোড শোনা শুরু করুন

মোর্স কোড লিখিত আকার ছাড়াও অডিও সিগনাল রূপে প্রেরণ করা সম্ভব। আর এজন্যই টেলিফোন আবিষ্কারের পূর্বে টেলিগ্রাফের মাধ্যমে মেসেজ আদান-প্রদানের জন্য এই কোডিং সিস্টেম ব্যবহৃত হতো। এজন্য প্রতিটি ‘ডট’-কে একটি ছোট ‘বিপ সাউন্ড’ দিয়ে আর প্রতিটি ‘ড্যাশ’কে ডটের চেয়ে তিন গুণ বড় বিপ সাউন্ড দিয়েপ্রকাশ করা হতো।

৩। নিফটি চার্ট ব্যবহার করুন

মোর্স কোড ডিসাইফার করার জন্য নিফটি চার্ট খুবই সহায়ক। ডিসাইফারিং এর ক্ষেত্রে এই চার্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

নিফটি চার্ট

নিফটি চার্ট ব্যবহারের পদ্ধতি

প্রতিটি সময় আপনি একটি ডট (.)  শুনলে  নিচে এবং বাম দিকে মার্ক করবেন। আর যখন আপনি ড্যাশ (-) শুনতে পাবেন, তখন নিচে ডান দিকে মার্ক করবেন।

উদাহরণ:

আপনি ড্যাশ(-) ডট(.) ডট(.)  ডিসাইফার করবেন  যার কোডেড সাইন হবে  -..

১। আপনি START থেকে শুরু করুন এবং একটি ড্যাশ (-) এর জন্য নিচে ডান দিকে যান এবং T মার্ক করুন

২। তারপর আপনি একটি ডট (.) এর জন্য নিচে বাম দিকে যান এবং N মার্ক করুন

৩। পরবর্তী ডট (.) এর জন্য আবার বাম দিকে D মার্ক করুন ।

সুতরাং -.. এই মোর্স কোড ডিসাইফার করলে হচ্ছে D

মোর্স  কোড সহজে মনে রাখার কিছু  টিপস

১। প্রতিটি অক্ষরে ক্যারেক্টার গণনা

প্রতিটি  অক্ষরে  কতটি মোর্স কোড ক্যারেক্টার আছে তা মুখস্থ করে  রাখা যেতে পারে। ফলে যখনই কোনো কোডেড মেসেজ ডিসাইফার করতে হবে, তার দীর্ঘতা সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যাবে।

T, E= ১টি করে মোর্স কোড কারেক্টার

A, I, M, N= ২টি করে মোর্স কোড কারেক্টার

D, G, K, O, R, S, U, W= ৩টি করে মোর্স কোড কারেক্টার

B, C, F, H, J, L, P, Q, V, X, Y, Z= ৪টি করে মোর্স কোড কারেক্টার

২। বিপরীত অক্ষর

মোর্সে কোডে কিছু কিছু অক্ষরের কোড একে অপরের প্রতিবিম্ব।

উদাহরণস্বরূপ “A” যা কিনা মোর্স কোডে “._” এবং  “N” হচ্ছে  “_.”

একে অপরের বিপরীত প্রতিবিম্ব অক্ষরগুলো হলো- A এবং N, D এবং U, G এবং  W, B এবং V, F এবং  L, Q এবং Y ।

 

Featured Image: Pinterest.com

References:

1. history.comtopicsinventionstelegraph

2. nrich.maths.org/2198

3. wonderopolis.org/wonder/why-was-morse-code-invented

4. myinterestingfacts.com/morse-code-facts/

5. Future not dashed for morse code as former postal clerk helps bring it to a new generation

6. en.wikipedia.org/wiki/Morse_code

7. artofmanliness.com/2008/10/09/morse-code/

8. learnmorsecode.com/

 

Description: This article is in Bangla language and it's an interesting topic on Morse Code.

Related Articles