Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মোবাইলে আসক্তির নতুন নাম নোমোফোবিয়া

আর দশটা মানুষের মত বর্তমান সময়ে আপনার হাতেও একটি মোবাইল ফোন থাকাটা স্বাভাবিক। তবে আপনার মোবাইল ফোনের সাথে যদি নিজেকে মানসিকভাবে জড়িয়ে ফেলেন তাহলে ব্যাপারটা আর স্বাভাবিক থাকে না। মোবাইল ফোনের সাথে এর ব্যবহারকারীর এই যে অতিমাত্রায় মানসিক সংযোগ, মানসিক চিকিৎসকেরা এর নাম দিয়েছেন ‘নোমোফোবিয়া’

মোবাইলে আসক্তির আরেক নাম নোমোফোবিয়া; Source: theodysseyonline.com

নোমোফোবিয়া শব্দটি এসেছে নো (NO), মো (MOBILE) এবং ফোবিয়া (PHOBIA) থেকে। যেটাকে একসাথে করলে হয় মোবাইল ফোন নেই- এমন ফোবিয়া। বর্তমানে পৃথিবীতে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। সাধারণ মোবাইল ফোনের পাশাপাশি বেড়ে চলেছে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যাও। পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক গবেষণানুসারে, বর্তমানে শুধু আমেরিকার মোট জনসংখ্যারই ৯০ শতাংশ মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে, যাদের ৫০ শতাংশ হল স্মার্টফোন ব্যবহারকারী। এছাড়া পৃথিবীতে প্রায় ৬.৮ বিলিয়ন মোবাইল ফোন গ্রাহক রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক তো খুব সাধারণ একটি অ্যাপ। আর দশটা অ্যাপের মত। কিন্তু বর্তমানে ফেসবুক ছাড়া আমাদের একটা মিনিটও চলে না। কোনো অ্যাপ নয়, এটি যেন আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গিয়েছে। ঠিক একইভাবে, মোবাইল ছাড়াও বর্তমানে মানুষ নিজের জীবনকে ভাবতে পারে না। মোবাইল কাছে নেই বা মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছে- এটাও অনেকের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করে।

নোমোফোবিয়ায় আক্রান্তদের কাছে মোবাইল না থাকলেই তারা অস্থির ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন; Source: Phobia Wiki – Fandom

মোবাইল ফোন অত্যন্ত দরকারি একটি জিনিস। সেটি নষ্ট হলে বা না থাকলে মানসিকভাবে একটু চিন্তায় পড়তেই পারেন আপনি। কিন্তু তাই বলে সেটা মাত্রা ছাড়াবে এমন তো নয়। তবে কারো ক্ষেত্রে যদি ব্যাপারটি গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করে, সেটাকে আর স্বাভাবিক বলা যায় না। তখন এই মানসিক সমস্যাকে নোমোফোবিয়া বলে। বিজ্ঞানীদের মতে, বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই ফোবিয়া বা ভীতি বেশি দেখতে পাওয়া যায়। ফোন না থাকার ভীতি বা নোমোফোবিয়ায় এমন অনেক কিছু ঘটে যা খুব বেশি বড় আর চোখে পড়ার মত না হলেও, একটু একটু করে মানসিক নানাবিধ সমস্যা তৈরি করে।

নোমোফোবিয়ার উপসর্গ

নোমোফোবিয়ার উপসর্গগুলো খুব সাধারণ। বিশেষ করে, বর্তমানে আমাদের মধ্যে ব্যাপারগুলো এত সহজভাবে মিশে গিয়েছে যে, এগুলোকে আর আলাদা করে কিছু মনে হয় না। বরং অনেক বেশি স্বাভাবিক মনে হয়। এই যেমন ধরুন, আপনি খাচ্ছেন বা রাস্তায় হাঁটছেন। হঠাৎ আপনার মনে হল পকেটের ফোনটা হয়তো বেজে উঠেছে। কিন্তু ফোন হাতে নিয়ে দেখলেন, না! কেউই ফোন করেনি আপনাকে। এই যে ছোট্ট আর অতি সামান্য ঘটনাটি ঘটে গেল আপনার সাথে এটিও কিন্তু নোমোফোবিয়ারই অংশ!

মোবাইল এর ব্যবহারকারীর মস্তিষ্কের ডোপামিনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়; Source: amzwold

এছাড়াও নোমোফোবিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে বেশ কিছু উপসর্গ দেখতে পাওয়া যায়। সেগুলো হলো-

১। মোবাইলের কাছ থেকে দূরে থাকলে চিন্তিত হয়ে পড়া, অস্থিরতায় ভোগা।

২। কোনো কাজে বা কারো কথায় মন না দিতে পারা। একটু পরপর ফোন হাতে নিয়ে দেখা কেউ কল দিল কিনা বা বার্তা পাঠালো কিনা।

৩। সেলফোন ভাইব্রেশন সিনড্রোম বা মোবাইলের কম্পন বারবার অনুভব করা।

৪। ফোন না থাকলে নিজেকে একা মনে হওয়া, হতাশ হয়ে পড়া।

ইউনিভার্সিটি অব কানেক্টিকাট স্কুল অব মেডিসিনের মনোরোগবিদ্যার সহকারী অধ্যাপক ডক্টর ডেভিড গ্রিনফিল্ডের মতে, মোবাইল ব্যবহারকারীদের মস্তিষ্কে ডোপামিনের স্বাভাবিক পরিমাণ কমে যায়। ডোপামিন মানুষকে নতুন কোনো কাজ করতে উৎসাহ প্রদান করে। মোবাইল যেহেতু সেটাকে কমিয়ে দেয়, ফলে অন্য কোনো কাজে তারা আর উৎসাহ খুঁজে পায় না। মোবাইলের প্রতিই আসক্ত হয়ে পড়ে। প্রত্যেকবার একেকটি নোটিফিকেশন বা বার্তা পাওয়ার সাথে সাথে আমাদের মস্তিষ্কে একটু করে ডোপামিনের সরবরাহ ব্যাহত হয়। মস্তিষ্ক দ্বিধায় পড়ে যায় এটা ভাবতে গিয়ে যে, কখন নতুন কোনো বার্তা বা নোটিফিকেশন আসবে ফোনে। আমাদের পুরো চিন্তাভাবনা আর মস্তিষ্কের সমস্ত কাজেই প্রভাব পড়ে যায়। মজার ব্যাপার হলো, আমরা একটা সময় এই মানসিক অবস্থাটির সাথে অভ্যস্ত হয়ে যাই। এই যে অস্বস্তিতে থাকা, মোবাইলের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়া, ডোপামিনের একটু কম সরবরাহ- এতে এত বেশি অভ্যস্ত হয়ে যাই যে, এই ব্যাপারগুলো না থাকলে নতুন পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে পারে না আমাদের মস্তিষ্ক; নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি হয়, নোমোফোবিয়া জন্ম নেয়।

মোবাইল ব্যবহারকারীদের মধ্যে অন্তত ৯ শতাংশ মানুষ প্রতি পাঁচ মিনিট পরপর নিজেদের মোবাইল দেখেন; Source: Mashable

২০১৩ সালে করা একটি পরীক্ষায় দেখা যায় যে, মোবাইল ব্যবহারকারীদের মধ্যে অন্তত ৯ শতাংশ মানুষ প্রতি পাঁচ মিনিট পরপর নিজেদের মোবাইল দেখেন। বাকিরাও যে খুব একটা পিছিয়ে আছেন এদিক দিয়ে তা কিন্তু নয়। এছাড়াও এই পরীক্ষাটিতে আরো জানা যায় যে, বাড়িতে ফোন ফেলে আসা মোবাইল ব্যবহারকারীদের মধ্যে শতকরা ৬৩ শতাংশ মানুষ ঐ দিনের পুরোটা সময় হতাশাগ্রস্থ অবস্থায় থাকেন। ইউগভ এবং হাফিংটন পোস্টের একটি পরিসংখ্যান অনুসারে, অধিকাংশ মানুষই রাতে ঘুমানোর সময় সাথে মোবাইল ফোন না থাকলে অস্বস্তি বোধ করেন এবং ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে শতকরা ৬৪ শতাংশ মানুষ মোবাইল ব্যবহার করতে করতেই ঘুমিয়ে পড়েন।

নোমোফোবিয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের বেশি আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। নারী নয়, পুরুষরাই নোমোফোবিয়ার বেশি ভুক্তভোগী হয়ে থাকে। অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার করার ফলে নোমোফোবিয়া সৃষ্টি হয় এবং সেটি কেবল মানসিক নয়, আমাদেরকে শারীরিকভাবেও প্রভাবিত করে। তাই আপনিও যদি নোমোফোবিয়ায় আক্রান্ত হন, কিংবা আসক্ত যদি হয় আপনার সন্তান বা আশেপাশের মানুষ, তাহলে নিচের পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করুন।

১। দিনের নির্দিষ্ট একটি সময় মোবাইলকে নিজের কাছ থেকে দূরে রাখুন। তার মানে এই নয় যে, সেই সময় আপনাকে ফোন করলে কেউ পাবে না। তবে মোবাইলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ রেখে, সেটাকে একটু দূরে রেখে দিন যাতে করে কেউ আপনাকে ফোন করলে খুঁজে পায়। কিন্তু এর বেশি কিছু নয়। অন্যথায়, চোখের সামনে ফোন থাকলে বা ফেসবুক এবং অন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে বারবার নোটিফিকেশন আসলে আপনি মোবাইল ব্যবহার করতে বাধ্য হবেন।

ঘুমানোর সময় মোবাইল দূরে সরিয়ে রাখুন; Source: Huffington Post

২। ঘুমানোর সময় মোবাইল দূরে রাখুন। সম্ভব হলে বন্ধ কিংবা সাইলেন্ট করে রাখুন। কিছুদিন এই পদ্ধতি মেনে চললে আপনার চারপাশের মানুষ ব্যাপারটি বুঝতে পারবে এবং রাতের নির্দিষ্ট একটি সময়ের পর আপনাকে আর কল করবে না। ঘুমের ক্ষেত্রেও একটি নির্দিষ্ট সময় মেনে চলুন। অনেকেই রাতে ঘুম না আসার কারণে মোবাইল ব্যবহার করেন এবং খানিক পর ঘুম আসলেও আর মোবাইলের কারণে ঘুমাতে পারেন না। তাই ঠিক সময়ে প্রতিদিন ঘুমিয়ে পড়ুন। অনেকগুলো সমস্যার সমাধান হবে।

৩। কারো সাথে কথা বলতে ভালো লাগে? কোনো কাজ করতে গেলে সময় কেটে যায়? এই মানুষ এবং কাজগুলোকে চিহ্নিত করুন এবং এই ব্যাপারগুলো নিয়েই নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। বিনা কারণে ফোনের দিকে মনোযোগ চলে যাওয়ার সমস্যা একটু হলেও কমে যাবে।

৪। মোবাইলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করুন। চেষ্টা করুন ল্যাপটপ কিংবা ডেস্কটপে এই মাধ্যমগুলো ব্যবহারের। বর্তমানে আমাদের মোবাইলের আসক্তি এবং নোমোফোবিয়া নামক মানসিক সমস্যা তৈরি হওয়ার অন্যতম একটি কারণ এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। তাই এর ব্যবহার কমিয়ে ফেলুন। এতে করে সমস্যা একটু হলেও দূর হবে।

ফিচার ইমেজ- theodysseyonline.com

Related Articles