Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

প্রজেক্ট মারকিউরি: আমেরিকা-সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিযোগিতা ও নাসার যাত্রা

১৯৫০-এর দশকের শেষদিকের কথা, বৈশ্বিক রাজনৈতিতে তখন বেশ টান-টান উত্তেজনা চলছে। দুই পরাশক্তি আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে চলমান স্নায়ুযুদ্ধ, গোটা পৃথিবীকে মোটামুটি দুই শিবিরে বিভক্ত করে ফেলছে বলা যায়। সরাসরি কোনো যুদ্ধ না হলেও, সব ক্ষেত্রেই চলছিল তাদের তুমুল প্রতিযোগিতা। আর এক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ছিল তাদের অন্যতম হাতিয়ার। বিশেষ করে মহাকাশ জয়ের প্রতিযোগিতায় দুই পক্ষ যেভাবে উঠে পড়ে লেগেছিল, তা বিজ্ঞান-প্রেমীদের জন্যে বেশ আকর্ষণীয় বিষয় হয়ে উঠেছিল।

প্রথম মাইলফলকটি সোভিয়েত-ই অতিক্রম করে। ১৯৫৭ সালের ৪ই অক্টোবর, পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ হিসেবে মহাশূন্যে পাড়ি জমায় স্পুটনিক। এদিকে আমেরিকার কংগ্রেসে এ নিয়ে তুমুল শোরগোল উঠে যায়। সোভিয়েত ইউনিয়ন এভাবে তাদের পেছনে ফেলে দিচ্ছে, এটা কি মেনে নেওয়া যায়? কয়েকজন রাজনীতিবিদ তো এটাকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্যে হুমকিস্বরূপ বলেও প্রচার করেছিলেন। অনেকেই তখন মহাকাশে সামরিক প্রকল্প শুরু করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এমনকি প্রথম দিকে প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার তাতে সম্মতও হয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে কয়েকজন উপদেষ্টা তাকে এ পরিকল্পনা থেকে পিছু হটাতে সক্ষম হন।

স্পুটনিক; Image Source: MARK THIESSEN/nationalgeographic.com

এর পরিবর্তে একটি নতুন বেসামরিক মহাকাশ বিষয়ক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব আনা হয়। সে প্রস্তাব বাস্তবায়িত হয় ১৯৫৮ সালে, প্রতিষ্ঠিত হয় NASA (National Aeronautics and Space Administration)। আগেকার একটি মহাকাশ সংস্থা NACA-এর সাথে আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে একত্রিত করে যাত্রা শুরু করে নাসা।

নাসার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল মহাকাশে মানুষ পাঠানো। এজন্যে প্রজেক্ট মারকিউরি নামের একটি প্রকল্প হাতে নেয় তারা। যদিও স্বাভাবিকভাবে মনে হয়, এ প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল মহাকাশে মানুষের উপর কী ধরনের প্রভাব পড়ে তা পর্যবেক্ষণ করা। কিন্তু আসলে মহাকাশ-দৌড়ে সোভিয়েতকে পেছনে ফেলার প্রচ্ছন্ন উদ্দেশ্যটিই ছিল এর মূল প্রভাবক। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও আমেরিকার সেই হার-জিতের হিসেবের বাইরে এ প্রজেক্টের সবচেয়ে বড় অবদান হচ্ছে পরবর্তীতে অ্যাপোলো, জেমিনির মতো বিখ্যাত প্রোগ্রামগুলোর জন্যে প্রযুক্তিগত ভিত তৈরি করে দেওয়া।

১৯৫৯ সালে সাতজন নভোচারী বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে প্রজেক্ট মারকিউরির কার্যক্রম শুরু হয়। মূলত সে সময়ের সামরিক বৈমানিকদের মধ্যেই এ যাচাই-বাছাই চলে। প্রাথমিক বিবেচনায় আনার জন্যে বেশ কিছু শর্ত নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল- বয়স চল্লিশ বছরের কম হতে হবে, উচ্চতা পাঁচ ফুট এগারো ইঞ্চির চেয়ে কম হতে হবে, শারিরীকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ থাকতে হবে, প্রকৌশলী হিসেবে অভিজ্ঞ হতে হবে, টেস্ট পাইলট স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন থাকতে হবে এবং কমপক্ষে ১৫০০ ঘণ্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে ইত্যাদি।

প্রজেক্ট মারকিউরির জন্যে বাছাইকৃত সাতজন নভোচারী; Image Source: NASA

নাসা প্রায় পাঁচশত জনের নথিপত্র ঘেঁটে এ শর্তাবলী অনুসারে ১১০ জনকে বাছাই করেছিল। এরপর সেখান থেকে শুরু হয় আসল নির্বাচন পক্রিয়া। প্রথমেই বৈমানিকদের তিনটি দলে ভাগ করা হয়। গোপনীয়তা রক্ষার শর্ত দিয়ে তাদের জানানো হয় মহাকাশ প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে। প্রথম দুই দল থেকে এ প্রকল্পে যুক্ত হতে এতজন আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন যে, তৃতীয় দলকে আর সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকাই হয়নি। এরপর অত্যন্ত কঠিন সব শারিরীক ও মানসিক প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে বাছাই করা হয় চূড়ান্ত সাতজনকে।

১৯৫৯ সালের ৯-ই এপ্রিল তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করে নাসা। সঙ্গে সঙ্গেই বিখ্যাত হয়ে উঠেন তারা। তাদের সত্যিকারের নায়ক হিসেবে উপস্থাপন করা হয় পত্র-পত্রিকায়, যারা মহাকাশ প্রকল্পের মাধ্যমে আসলে ‘কম্যুনিজমের বিরুদ্ধে লড়তে’ যাচ্ছেন।

মারকিউরির মূল লক্ষ্য মহাকাশে মানুষ পাঠানোর হলেও, মারকিউরিতে করে প্রথম প্রাণী হিসেবে মহাকাশে যাওয়ার কৃতিত্ব একটি শিম্পাঞ্জির। ১৯৬১ সালের ৩১শে জানুয়ারি মারকিউরি রেডস্টোন রকেটে করে মহাকাশে পাড়ি জমায় হ্যাম নামের শিম্পাঞ্জিটি। মানুষ পাঠানোর আগে পরীক্ষামূলকভাবে নাসা শিম্পাঞ্জিটিকে পাঠিয়ে দেখতে চেয়েছিলেন, কোনো প্রযুক্তিগত সমস্যা হয় কিনা। সমস্যা হয়েছিলও, যে গতিতে যাওয়ার কথা, তার চেয়েও দ্রুতগতিতে ছুটেছিল মহাকাশযানটি। কিছুটা সমস্যা হয়েছিল অবতরণের ক্ষেত্রেও। তবে শেষতক হ্যাম প্রায় সুস্থ-সবলই ছিল।

হ্যাম নামের শিম্পাঞ্জিটি; Image Source: nightflight.com 

এরপরে ২৪শে মার্চ আরেকটি পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন পরিচালনা করা হয়। এটি সফল হলে নাসা মহাকাশে মানুষ নিয়ে যেতে সক্ষম বলে মনে করে মারকিউরিকে। প্রথম আমেরিকান হিসেবে মহাকাশে ওড়ার জন্যে অ্যালান শেফার্ডকে বাছাই করে সংস্থাটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখা শেফার্ড ছিলেন নৌবাহিনীর একজন বৈমানিক।

এদিকে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেও, নাসা তাদের আসল লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়। আরো একবার সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে হেরে যায় আমেরিকা। ১৯৬১ সালের ১২ই এপ্রিল, পৃথিবীর সর্বপ্রথম ব্যক্তি হিসেবে মহাকাশে পাড়ি জমান ইউরি গ্যাগারিন। গ্যাগারিনকে নিয়ে ভস্টক মহাকাশযানটি প্রদক্ষিণ করেছিল পৃথিবীর কক্ষপথও।

তবে আমেরিকাও দেরি করেনি। এর তিন সপ্তাহ পর-ই পৃথিবী ছেড়ে যান অ্যালান শেফার্ড। শেফার্ড সফলভাবে তার মহাকাশ ভ্রমণ সম্পন্ন করলেও, সোভিয়েতের কাছে হেরে যাওয়ার আফসোস কখনো ভুলতে পারেননি তিনি। তাছাড়া তার মহাকাশযান ফ্রিডম-সেভেন পৃথিবীর কক্ষপথে আবর্তনও করেনি, বরং ১৫ মিনিটের সময়কালে মহাশূন্যে ছোট বাঁক নিয়ে ফিরে এসেছিল। তবে প্রযুক্তিগত দিক থেকে এটি নাসার জন্যে বিশাল অগ্রগতি ছিল।

নভোযাত্রী ইউরি গ্যাগারিন; Image Source: aerospaceguide.net

মারকিউরির পরের মহাকাশ-ভ্রমণটি খুব একটা সুখকর হয়নি। একই বছরের ২১শে জুলাই, নভোচারী গাস গ্রিসম, লিবার্টি বেল-সেভেন নামের মহাকাশযানটি নিয়ে যাত্রা করেন মহাশূন্যে। পনের মিনিটের ভ্রমণকালে সবকিছুই ঠিকঠাকভাবে চলছিল। ঝামেলা বাঁধে শেষ মুহূর্তে। সমূদ্রে অবতরণের সময় আকস্মাৎ বিস্ফোরণের সাথে খুলে যায় মহাকাশযানের দরজাটি। গ্রিসম সমূদ্রে গিয়ে পড়েন। তিনি বেঁচে ফিরলেও, লিবার্টি-সেভেনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি সে সময়।

এমনটা কেন ঘটেছিল, তা জানা যায়নি কখনো। কেউ এর জন্যে গ্রিসমের উপর দায় চপিয়েছিলেন। কেউ আবার তাকে নায়ক হিসেবে তুলে ধরে দেখিয়েছেন কীভাবে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছিলেন মহাকাশযানটিকে বাঁচাতে। তবে দায় যারই থাকুক, এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, দুর্ঘটনা গ্রিসমের পিছু ছাড়েনি। এরপর তাকে অ্যাপোলো-ওয়ানের দায়িত্বে দেওয়া হয়েছিল। ১৯৬৭ সালের ২৭শে জানুয়ারি, তিনি ও তার দলের অন্য সদস্যরা একটি মহাকাশযান পরীক্ষা করার সময় অগ্নিকান্ডে মৃত্যুবরণ করেন।

নাসা তো মহাকাশে যেতে সক্ষম হলেও, পৃথিবীর কক্ষপথে আবর্তন করতে পারেনি। ওদিকে সোভিয়েতের মহাকাশযানগুলো ততদিনে পৃথিবীকে বেশ কয়েকবার চক্কর দিয়ে ফেলেছে। প্রযুক্তিগত দিক থেকে তাই অনেকটাই পিছিয়ে ছিল আমেরিকা।

জন গ্লেন; Image Source: cnbc.com

অবশেষে জন গ্লেন তাদের সে স্বপ্ন পূরণ করেন। ১৯৬২ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি, ফ্রেন্ডশিপ-সেভেন মহাকাশযানে চড়ে পৃথিবীকে তিনবার প্রদক্ষিণ করেন তিনি। এ মিশন সফল হওয়ার পর তিনি আমেরিকানদের কাছে মহানায়ক বনে গিয়েছিলেন। তবে কক্ষপথে যাত্রার ক্ষেত্রেও নাসার পরবর্তী ভ্রমণটি সমস্যার সম্মূখীন হয়। পাঁচ ঘণ্টা মহাশূন্য কাটিয়ে এসে অবতরণের সময় জটিলতার সম্মুখীন হন নভোচারী স্কট কারপেন্টার।

এসব প্রযুক্তিগত দুর্বলতা অচিরেই কাটিয়ে ওঠে নাসা। এরপরের ভ্রমণে সিগমা-সেভেন মহাকাশযানটি পৃথিবীকে ছয় বার প্রদক্ষিণ করা শেষে প্রায় অর্ধেক জ্বালানি নিয়েই ফেরত আসতে সক্ষম হয়। এ অর্জনটি সে সময় বেশ প্রসংসা এনে দেয় সংস্থাটিকে। ১৯৬৩ সালের ১৫-১৬ই মে-এর মধ্যে আরো একটি সফল মহাকাশ-ভ্রমণ সম্পন্ন হয় প্রজেক্ট মারকিউরির আওতায়।

প্রজেক্ট জেমিনির আওতায় আমেরিকান নভোচারীর মহাশূন্যে বিচরণ; Image Source: NASA

এ পর্যায়ে এসে নাসা বুঝতে পারে পরবর্তী ধাপে এগিয়ে যেতে প্রযুক্তিগতভাবে প্রস্তুত তারা। সে জন্য জেমিনি নামের নতুন একটি প্রকল্প শুরু করে তারা। এ প্রকল্পের হাত ধরেই পরবর্তীতে এসেছিল চাঁদে মানুষ পাঠানোর প্রকল্প অ্যাপোলো-ওয়ান। যা মহাকাশ দৌড়ের প্রতিযোগিতায় আমেরিকাকে নিরঙ্কুশ বিজয় এনে দিয়েছিল।

বর্তমানে মহাকাশ-ভ্রমণের ইতিহাসে জেমিনি ও অ্যাপোলো-ওয়ান অনেক বিখ্যাত হলেও, মারকিউরি সম্পর্কে খুব বেশি মানুষের ধারণা নেই। অথচ এটিই আমেরিকার মহকাশ-মিশনের ভিত গড়েছিল। মারকিউরির নভোচারীরাই মহাকাশকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল আমেরিকানদের মাঝে। নাসা থেকে অবসর নেওয়ার পরেও এ কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন তারা।

This article is in Bangla language. It's about project mercury, the NASA program that put the first American astronauts in space.

References: for references check hyperlinks inside the article.

Featured Image: NASA

Related Articles