Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের প্রথম পরিচয়

বর্তমানে যে কয়েকটি প্রযুক্তির পেছনে বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো মিলিয়ন-মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং তাদের মধ্যে অন্যতম। এখনো প্রায় পরীক্ষণমূলক অবস্থায় থাকলেও, সামনে আমাদের প্রচলিত কম্পিউটিং ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে এ প্রযুক্তিটি। কোয়ান্টাম-কম্পিউটিং শব্দটি ইদানীং বেশ জনপ্রিয় হলেও এর কার্যপ্রণালী বেশ জটিল। তাই আগ্রহী পাঠকের একটু সহজ ভাষায় এর বিভিন্ন দিক সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো এখানে।

কোয়ান্টাম কম্পিউটিং প্রধানত কাজ করে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের  সূত্র ব্যবহার করে। কোয়ান্টাম মেকানিক্স হলো পদার্থবিদ্যাজ্ঞানের বিশেষ একটি শাখা। এখানে বস্তুর ক্ষুদ্রতম কণা, যেমন ইলেকট্রন, প্রোটন ইত্যাদির আচরণ ও গতিবিধি নিয়ে আলোচনা করা হয়। কোয়ান্টামের জগতে শতভাগ নিশ্চিত করে কিছু বলা যায় না। সবকিছুই এখানে সম্ভাব্যতা দিয়ে বিচার করা হয়। একটি ইলেকট্রন নির্দিষ্ট কোনো স্থানে কত গতিবেগে ঘুরছে, সেটা শতভাগ নিশ্চিত করে বলা যাবে না, তবে ইলেকট্রনের অবস্থান আর গতিবেগের সম্ভাব্যতা বলা যাবে। কোয়ান্টাম জগত নিয়ে বিজ্ঞানী শ্রোডিঙ্গারের একটি বিখ্যাত থট এক্সপেরিমেন্ট আছে। এর নাম শ্রোডিঙ্গারস্‌-ক্যাট। এখান থেকে কণাগুলো কীভাবে কাজ করে তার একটা ধারণা পাওয়া যায়।

Schrodinger’s Cat থট এক্সপেরিমেন্টে কণার ধর্ম সম্বন্ধে জানা যায়; Source: Wikimedia Commons

কোয়ান্টাম কম্পিউটার কীভাবে কাজ করে সেটা জানার আগে প্রচলিত কম্পিউটার কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে একটু জানা দরকার। প্রচলিত কম্পিউটিংয়ের মূল ভিত্তি হল বিট। একটি বিট শুধুমাত্র দুই অবস্থায় থাকতে পারে, ০ এবং ১। অর্থাৎ একটা বিট হয় ০ না হয় ১ হতে পারবে। আমরা কম্পিউটারে যা-ই করি না কেন, হোক তা কোনো সিনেমা দেখা কিংবা কোনো গান শোনা অথবা গেম খেলা- এদের সবই ০ আর ১ এর খেলা! আধুনিক কম্পিউটার প্রতি সেকেন্ডে এই ০ আর ১ দিয়ে বিলিয়ন বিলিয়ন সংখ্যক হিসাব করতে পারে। আর কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মূল ভিত্তি হলো কিউবিট (Qubit)।

প্রচলিত বিট বনাম কোয়ান্টাম বিট (কিউবিট); Source: yangfenzi.com

কোয়ান্টাম কম্পিউটার কোয়ান্টাম জগতের দুটি প্রধান সূত্র মেনে চলে- ১) সুপারপজিশন (Superposition) ও ২) এনট্যাংগলমেন্ট (Entanglement)। সুপারপজিশন মানে হলো একই সময়ে কয়েকটি অবস্থার সহাবস্থান। আমাদের আশেপাশে প্রতিনিয়ত শব্দ তরঙ্গ, আলোক তরঙ্গের ইত্যাদির সুপারপজিশনের ঘটনা ঘটে। কিউবিটের সুপারপজিশন হলো একটি কিউবিট একইসাথে একই সময়ে ০ এবং ১ অবস্থায় থাকতে পার! এখানে আবার সেই কোয়ান্টাম জগতের অনিশ্চয়তা। আমরা শুধু একটি কিউবিটের ০ এবং ১ হওয়ার সম্ভাব্যতা মাপতে পারবো।

ধরা যাক, আপনার কাছে ২টি বিট আছে। ২টি বিট দিয়ে মোট চার প্রকার বিন্যাস সম্ভব; ০০, ০১, ১০ ও ১১।  প্রচলিত কম্পিউটিংয়ে এই দুইটি বিট মোট চার অবস্থার যেকোনো এক অবস্থায়  থাকতে পারবে। আর এগুলো যদি কিউবিট হয়, তাহলে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে সেগুলো চার অবস্থা্র সবগুলোতে ‘একইসাথে’ অবস্থান করতে পারবে। অর্থাৎ আপনার কাছে যদি N সংখ্যক বিট থাকে, তাহলে সাধারণ অবস্থায় সেগুলো 2^N এর যেকোনো এক অবস্থায় থাকতে পারবে। কিন্তু কিউবিট হলে তা একই সাথে 2^N অবস্থা্র সুপারপজিশন অবস্থায় থাকতে পারবে। এতে করে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ক্ষমতা প্রচলিত কম্পিউটার থেকে বহু গুণ বেড়ে যাবে।

কোয়ান্টাম সুপারপজিশন; Source: pinterest.com

এনটেংগলমেন্টের বিষয়টি আরো অদ্ভুত। সহজ ভাষায়, যদি দুটি মৌলিক কণা এনট্যাংগল্ড (Entangled) অবস্থায় থাকে, তাহলে যেকোনো একটি কণার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বলে দেয়া যাবে অন্য কণাটি কোন অবস্থায় আছে। এই বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ক্ষমতা বহু গুণে বেড়ে যায় এবং এর দ্বারা কোয়ান্টাম ইনফরমেশন প্রসেসিংয়ের এমন কিছু কাজ করা সম্ভব হয়, যেগুলো চিরায়ত পদার্থবিদ্যা দ্বারা এমনকি ব্যখা করাও সম্ভব না।

কোয়ান্টাম এনটেগলমেন্ট; Source: sciencemag.org

এখন প্রশ্ন হলো কিউবিট কী দিয়ে তৈরি ? যেকোনো দুই-স্তর বিশিষ্ট সিস্টেম (অর্থাৎ যাকে ০ এবং ১ দিয়ে প্রকাশ করা সম্ভব) দিয়ে কিউবিট বানানো যায়। ফলে কিউবিটের নির্দিষ্ট কোনো গাঠনিক উপাদান নেই। ফোটন, ইলেকট্রন, নিউক্লিয়াস, অপটিকাল ল্যাটিস, কোয়ান্টাম ডট প্রভৃতি দিয়ে কিউবিট তৈরি করা হয়।

সাধারণ কম্পিউটারের যেমন বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেম, যেমন Windows, Linux, Mac OS ইত্যাদি আছে, কোয়ান্টাম কম্পিউটারেরও তেমন আছে। অবশ্য সেগুলো এখনো তেমন সমৃদ্ধ নয়। বিশ্বের সর্বপ্রথম কোয়ান্টাম অপারেটিং সিস্টেম বানায় ক্যামব্রিজ কোয়ান্টাম কম্পিউটিং লিমিটেড (CQCL)। এ অপারেটিং সিস্টেমের  নাম t|kit>।  ভুল পড়েননি কিংবা আমিও ভুল লিখিনি, নামটা এমনই। কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের জন্য বিশেষ কিছু এলগরিদম আছে। যেমন- Shor’s Algorithm, Simon’s Algorithm ইত্যাদি।

তবে এটি ভাবলে কিন্তু চলবে না যে, কোয়ান্টাম কম্পিউটার হয়তো সাধারণ কম্পিউটারের জায়গা দখল করে নেবে। কিছু কিছু বিশেষ ক্ষেত্র, যেমন- অপটিমাইজেশন, মেশিন লার্নিং, লার্জ নাম্বার ফ্যাকটোরাইজেশন প্রভৃতি সমস্যায় কোয়ান্টাম কম্পিউটার সাধারণ কম্পিউটারকে বহু গুণে ছাড়িয়ে গেলেও অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রে, যেমন ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের ক্ষেত্রে বরং সাধারণ কম্পিউটারই ভালো কাজ দেয়।

কোয়ান্টাম কম্পিউটার কখনও সাধারণ কম্পিউটারের বিকল্প নয়; Source: Quora.com

এ পর্যায়ে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের ইতিহাস ও ক্রমবিকাশের দিকে আলোকপাত করা দরকার। সর্বপ্রথম ১৯৮০ সালে মার্কিন বিজ্ঞানী পল বেনিয়ফ একটি কম্পিউটারের প্রস্তাব দেন, যা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সূত্র মেনে চলবে। ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মতো অক্সফোর্ডের গবেষকরা ২ কিউবিটের NMR Machine-এ একটি কোয়ান্টাম এলগরিদম চালান। এটি Deutsch’s Problem নামে পরিচিত। ২০০১ সালে আইবিএম আলমাডেন রিসার্চ সেন্টারের গবেষকগণ ৭ কিউবিটের কোয়ান্টাম কম্পিউটারে Shor’s Algorithm ব্যবহার করে ১৫-কে ৩ ও ৫ উৎপাদকে বিশ্লেষণ করেন।

২০১০ সালে ডি-ওয়েভ সিস্টেমস নামে এক কোম্পানি ১২৮ কিউবিটের কম্পিউটার ডি-ওয়েভ ওয়ান-এর ঘোষণা দেন। ২০১৩ সালে কোম্পানিটি ৫১২ কিউবিটের ডি-ওয়েভ টু বাজারে আনে। নাসা, গুগল এবং ইউনিভার্সিটি স্পেস রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন (USCRA) সম্মিলিতভাবে ডি-ওয়েভ টু-এর উপর ভিত্তি করে কোয়ান্টাম আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স নামে একটি গবেষণাগার চালু করে। এটি নাসার Ames Research Center-এ অবস্থিত। ২০১৫ সালে ডি-ওয়েভ সিস্টেম ১০০০+ কিউবিটের ডি-ওয়েভ টু-এক্স আনে। ২০১৭ সালে সর্বশেষ ২০০০ কিউবিটের D-Wave 2000Q কম্পিউটারের ঘোষণা দেয়। সম্প্রতি আইবিএম-ও ৫০ কিউবিটের কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির কথা বলেছে।

D-Wave 2000Q কোয়ান্টাম কম্পিউটার; Source: Youtube

কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির জন্য অত্যন্ত সতর্কতাপূর্ণ পরিবেশ দরকার। কারণ পরিবেশের সামান্য হেরফের হলেও কম্পিউটার বড় ধরনের ভুল উত্তর দেবে। এর পরিবেশের তাপমাত্রা খুবই কম হতে হবে। D-Wave 2000Q কম্পিউটারের প্রসেসরের পরিবেশের তাপমাত্রা প্রায় -২৭৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস, যা পরম শূন্য তাপমাত্রা থেকে মাত্র .০১৫ ডিগ্রী উপরে। এর ভেতরের চৌম্বক-ক্ষেত্র পৃথিবীর চৌম্বক-ক্ষেত্রের ৫০ হাজার ভাগের এক ভাগ এবং বায়ুচাপ আমাদের বায়ুমণ্ডলের চাপের ১০ বিলিয়ন ভাগের এক ভাগ। এ থেকেই বোঝা যায় কতটা স্পর্শকাতর পরিবেশ দরকার।

IBM এর কোয়ান্টাম কম্পিউটার; Source: IBM Research

ফিচার ইমেজ-  wired.com

Related Articles