পাঠক-দর্শকদের ভালোবাসায় সফলতার ৫ বছর পেরিয়ে রোর বাংলা পা রেখেছে অগ্রযাত্রার ৬ বছরে। অর্ধ-দশকের এই যাত্রাকালে ১৩ সহস্রাধিক কন্টেন্ট নিয়ে হাজির হয়েছি আমরা, পেয়েছি সকলের কাছ থেকে ভালবাসা, ও গঠনমূলক নানা সমালোচনা, যেগুলো আমাদের ক্রমোন্নতিতে অবদান রেখেছে নিঃসন্দেহে।
এই উপলক্ষে আমরা রোর বাংলার প্রতিটি বিভাগের সেরা ৫টি করে লেখা প্রকাশ করতে চলেছি পুরো অক্টোবর মাসজুড়েই। আজ থাকছে 'প্রযুক্তি' বিভাগের লেখাগুলো।
১
ডন কর্লিয়নি একচ্ছত্রভাবে জলপাই তেলের ব্যবসা করতে চান। প্রতিযোগিদের কারো ক্ষতি হোক, সেটাও তিনি চান না। সেজন্য তিনি তাদেরকে বোঝান, 'এই ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে মানে মানে কেটে পড়ো! সেটাই তোমার জন্য ভালো।' যারা তার কথা বোঝে, তাদের ব্যবসা তিনি ন্যায্য মূল্যে কিনে নেন। কিন্তু যারা বোঝে না?
ব্রুকলিনের কিছু পাইকারি তেল ব্যবসায়ী কিছুতেই বুঝতে চাচ্ছিল না তার স্বপ্নের কথা। ডন কর্লিয়নি টেসিও নামের একজনকে পাঠালেন এই সমস্যা সমাধানের জন্য। টেসিও সেখানে গিয়ে ঘাঁটি গাড়ল। একের পর পুড়তে শুরু করল ব্রুকলিনের গুদামগুলো। রাস্তার ওপর টন টন জলপাই তেলের পুকুর তৈরি হতে লাগল। তারপর…। তারপর কী হয়েছিল, সেটা বোধ হয় আর লেখার প্রয়োজন নেই। ডন কর্লিয়নি হয়ে উঠেছিলেন জলপাই তেলের একমাত্র ব্যবসায়ী।
গল্পটা মারিয়ো পুজোর গডফাদার বই থেকে নেয়া। এই বইয়ের নাম শোনেনি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ১৯৭২ সালে এই বই থেকে বানানো চলচ্চিত্রটিকে সর্বকালের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে গণ্য করা হয়। ডন ভিটো কর্লিয়নির মাফিয়া সাম্রাজ্যকে ঘিরে গড়ে উঠেছে সেই বইয়ের গল্প।
না, জেফ বেজোস কারো দোকানে আগুন লাগিয়ে দেননি। কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অনলাইন মার্কেট প্লেসের মালিক হওয়ার জন্য তিনি যা করেছেন, তার সাথে ডন কর্লিয়নির দর্শনের খুব বেশি পার্থক্য আসলে নেই। কী, বিশ্বাস হচ্ছে না? চলুন তাহলে, একটা গল্প শুনে আসা যাক:
অ্যামাজন রূপকথার নেপথ্যের অন্ধকার গল্প
২
"হ্যালো! আমরা খুব উচ্চ বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন একজনকে খুঁজছি। কিন্তু তা বের করা খুব সহজ নয়। তাই আমরা একটি ধাঁধার পরীক্ষা নিচ্ছি। এই বার্তার শেষে একটি ছবি জুড়ে দেয়া হয়েছে। এই ছবির ভেতর আরেকটি গোপন বার্তা লুকানো রয়েছে। যদি নিজেকে বুদ্ধিমান মনে করো, তাহলে সেটা বের করো। এই ধাঁধার সমাধান তোমাকে আমাদের কাছে নিয়ে আসবে। আমরা তোমার অপেক্ষায় আছি। শুভ কামনায়, ৩৩০১"
৫ জানুয়ারি, ২০১২ সাল। আজ থেকে মাত্র ৬ বছর পূর্বে 4Chan নামক এক ওয়েবসাইটে একটি রহস্যময় ছবির সাথে এরকম একটি বার্তা জুড়ে দেয়া হয়। ওয়েবসাইটের নীতিমালা অনুযায়ী ছবি প্রকাশকারীর নাম-পরিচয় গোপন রাখা হয়। তাই প্রকাশকারীর পরিচয়ের দিকে কারো নজর ছিল না। হঠাৎ করে যেন ইন্টারনেটের হাওয়া বদল হয়ে গেলো। পৃথিবীর সেরা হ্যাকার এবং কোড সমাধানকারীরা নিজেদের বুদ্ধিমত্তা প্রমাণের এক অদ্ভুত পরীক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়লো। সেদিন থেকে এই রহস্যময় ধাঁধার নাম দেয়া হয় 'সিকাডা ৩৩০১'। এই ধাঁধা সমাধান করা যেন অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়ে এগিয়ে যাওয়া। কারণ, কেউ জানে না এর শেষ গন্তব্য কী! কিংবা কারা অপেক্ষা করছে পর্দার ওপারে। এই ধাঁধাকে বর্তমান ইন্টারনেট জগতের সবচেয়ে বড় রহস্যজট হিসেবে গণ্য করা হয়। চলুন, আমরাও নেমে পড়ি এই রহস্য সমাধানের এক শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে।
বিস্তারিত জানতে এখনই পড়ুন এই লেখাটি:
সিকাডা ৩৩০১: ইন্টারনেট জগতের সবচেয়ে বড় রহস্যজটের ইতিবৃত্ত
৩
যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ-ক্যালিফোর্নিয়ার একটি অঞ্চল, গোটা পৃথিবীর কাছে এর পরিচয় এখন সিলিকন ভ্যালি নামে। নামটি এসেছে সেমিকন্ডাক্টর পদার্থ সিলিকনের নাম থেকে। ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রির মূলে তো এই সেমিকন্ডাক্টরই। তাই এমন নামকরণ। বর্তমান পৃথিবীর প্রযুক্তি জগতের সকল মহীরুহর আবাস এখানে। এখান থেকেই পরিচালিত হয় গুগল, অ্যাপল, ফেইসবুক, মাইক্রোসফট, ইনটেল ও অ্যামাজনের মতো বিশ্ববিখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। গোটা পৃথিবী যে প্রযুক্তির ওপর ভর করে আছে, তার অধিকাংশের জন্মই এ তিনশো বর্গমাইল অঞ্চলে। এই সিলিকন ভ্যালির শুরুটা হয়েছিল কীভাবে? তা জানতে চলুন পড়ে নেয়া যাক এই লেখাটিই:
আট 'বিশ্বাসঘাতকের' প্রযুক্তি বিপ্লব
৪
রাশিয়ার অ্যালেক্সান্ডার আন্দ্রেভিচ পানিন স্পাইআই ভাইরাসের মূল প্রোগ্রামার এবং পরিবেশক হিসেবে কাজ করেছেন। বেনদেলাজ ছিলেন তার ঘনিষ্ঠ একজন সহযোগী। ২০০৯-১১ সাল পর্যন্ত পানিন এবং বেনদেলাজ অনলাইনে এই ভাইরাসটির প্রচার ও উন্নীতকরণের কাজ পরিচালনা করেন। তবে শুধুমাত্র যারা সাইবার-অপরাধী জগতের বাসিন্দা, তাদের কাছেই এই প্রচার ও প্রসার সীমাবদ্ধ ছিল। এসব অনলাইন সাইটের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল রাশিয়া ভিত্তিক ফোরাম, যেগুলোর মধ্যে ডারকোড ডট কম (Darkode.com) অন্যতম। এ সাইবার অপরাধীদের কাছে প্রায় ১০,০০০ ডলারের বিনিময়ে উন্নত মানের স্পাইআই ভাইরাস বিক্রি করা হতো। ধারণা করা হয়, এই ভাইরাসটি বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৫০ জন ক্রেতার কাছে বিক্রি করা হয়েছে। ‘সোলজার’ নামক এক হ্যাকার জানান, তিনি এই ভাইরাসটির মাধ্যমে ৬ মাসের মধ্যেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৩.২ মিলিয়ন ডলার লুট করেছেন।
আদালতে দেয়া তথ্যানুযায়ী, এফবিআই কর্তৃক অবরুদ্ধ হবার পূর্ব পর্যন্ত ২০১০-১২ সালে বৈশ্বিক এক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫০ মিলিয়ন কম্পিউটার স্পাইআই ভাইরাসের আক্রমণের শিকার হয়েছে এবং সংক্রমণ থেকে পরিত্রাণের জন্য মালিকদের মোট খরচ করতে হয়েছে প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার!
বিস্তারিত জানতে পড়ে নিন এই লেখাটিই:
হামযা বেনদেলাজ: হ্যাকার নাকি হিরো?
৫
এক্স-রে এর সাথে কম-বেশি সবাই পরিচিত। অধিকাংশ মানুষকেই কখনো না কখনো যেতে হয় এক্স-রে মেশিনের নিচে। হাড়-ভাঙ্গা, নিউমোনিয়া, হৃদরোগ সহ বহু রোগের চিকিৎসায় এক্স-রে রিপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া এয়ারপোর্টে ব্যাগ স্ক্যানিং করা হয় এ মেশিন দিয়ে। উৎপাদনখাতে বিমান সহ বিভিন্ন যন্ত্রের বডিতে ত্রুটি খুঁজে বের করতেও ব্যবহৃত হয় এটি।
এক্স-রের গুরুত্ব আসলে বলে বোঝানোর প্রয়োজন নেই। জটিল সব রোগের ক্ষেত্রে এর গুরত্ব বর্ণনা না-ই করলাম, স্রেফ একটু ভাবুন- এটি আবিষ্কৃত না হলে, বেশিরভাগ সময় শরীর কাঁটাছেড়া ব্যতীত ডাক্তারদের পক্ষে জানা সম্ভবই হতো না আদৌ কারো কোনো হাড় ভেঙ্গেছে কী না। এক্স-রে আবিষ্কার যেন মানবজাতির জন্যে আক্ষরিক অর্থেই আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। কারণ এ আবিষ্কারটি হয়েছিল অনেকটা সৌভাগ্যবশত, আকস্মিকভাবে। না চাইতেও এটি ধরা দিয়েছে মানুষের কাছে। জানতে চাইলে পড়ুন এই লেখাটি:
দুর্ঘটনায় এক্স-রের আবিষ্কার: রন্টজেন কিংবা মানবজাতির সৌভাগ্য
Language: Bangla
Topic: Top 5 tech articles of Roar Bangla