Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সলিড স্টেট বিমান: ভবিষ্যৎ পৃথিবীর ইঞ্জিনবিহীন প্রথম বিমান

সাই-ফাই মুভির কল্যাণে আমরা অনেকেই হয়তো এমন বিমানের সাথে পরিচিত, যেগুলোর কোনো প্রথাগত টারবাইন বা প্রপেলার নেই এবং একেবারে নিঃশব্দে দাপিয়ে বেড়াতে পারে আকাশে কিংবা মহাকাশে। বাস্তবে এতদিন পর্যন্ত এমন কোনো বিমান ছিল না। অবশেষে, কল্প-বিজ্ঞান বাস্তবে রূপ নিয়েছে এমআইটির একদল প্রকৌশলীর হাত ধরে।

প্রকৌশলী দলটি প্রথমবারের মতো এমন একটি বিমান তৈরি করেছে, যার কোনো ‘মুভিং পার্টস’ বা নড়াচড়া করে এমন অংশ নেই। অর্থাৎ প্রপেলার বা টারবাইন নেই বিমানটির। শুধু তা-ই নয়, বিমানটির নেই কোনো ইঞ্জিনও। ইঞ্জিন নেই যখন, তখন নির্দ্বিধায় বলা যায়, এ ধরনের বিমান বাতাসে একেবারেই কোনো কার্বন নির্গমন করবে না। তাহলে ইঞ্জিন ছাড়া এই বিমান কিভাবে উড়ে?

সলিড স্টেট বিমানের প্রোটোটাইপ; Image Source: news.mit.edu

১০০ বছরেরও বেশি সময় আগে রাইট ভাইয়েরা প্রথমবারের মতো সফলভাবে বিমান উড্ডয়ন করেছিলেন। রাইট ভাইদের সেই বিমান সেদিন ১২ সেকেন্ডেরও কম সময় ধরে আকাশে ছিল। আর পাড়ি দিয়েছিল মাত্র ৩৬.৬ মিটার। কিন্তু দিনটিতে মানুষের আকাশজয়ের স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি রচিত হয়েছিল আমাদের বর্তমান সভ্যতার গতিপ্রকৃতি। ১০০ বছরের বেশি সময় পর, এভিয়েশনের দুনিয়ায় ২০১৮ সালের নভেম্বরে রচিত হয়েছে তেমনই দিন বদলে দেওয়ার উপাখ্যান।

প্রফেসর স্টিভেন বেরেটের নেতৃত্বে এমআইটির প্রকৌশলীরা প্রথমবারের মতো তাদের ‘সলিড স্টেট’ বিমানের প্রথম পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন সম্পন্ন করেছেন। ‘আয়নিক উইন্ড’ প্রযুক্তির উপর তৈরি করা ২.৪৫ কেজির ছোট হালকা বিমানটি ১০ সেকেন্ডে পাড়ি দিয়েছে প্রায় ৬০ মিটার। তুলনামূলকভাবে সময় ও দূরত্ব খুবই অল্প হলেও গবেষক দলের এই অর্জন অদূর ভবিষ্যতে এভিয়েশনের দুনিয়ায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।

রাইট ভাইদ্বয়ের প্রথম ফ্লাইট; Image Source: Ann Ronan Pictures/Print Collector/Getty Images

আয়নিক উইন্ড ধারণার উপর ভিত্তি করে তৈরি বিমানটি সম্প্রতি সফলতা পেলেও, আয়নিক উইন্ড বা ইলেকট্রো-অ্যারোডাইনামিক থ্রাস্টের (Electro-Aerodynamic Thrust) ধারণা প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২০ সালে। অ্যান্টি-গ্র্যাভিটি নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে থমাস ব্রাউন ও পল আলফ্রেড খেয়াল করে দেখেন, উচ্চ ভোল্টেজ ব্যবহার করে আয়ন মেঘ ও আয়নিক উইন্ড (Ionic Wind) তৈরি করা যায়। ১৯৬০ সালের দিকে এটি ব্যবহার করে বিমান ওড়ানোর চেষ্টা করা হলেও, শেষ পর্যন্ত তা সফলতার মুখ দেখনি।

গবেষকরা তখন উপসংহারেও চলে এসেছিলেন যে, এই আইডিয়ার উপর বিমানের জন্য কাজ করবে না। কিন্তু স্টার ট্রেক ভক্ত প্রফেসর বেরেট হাল ছাড়েননি, দীর্ঘ সময় ধরে একদল গ্র্যাজুয়েট ছাত্র নিয়ে চেষ্টা করে গিয়েছেন এবং শেষ পর্যন্ত আয়নিক উইন্ড ব্যবহার করে বিমান ওড়াতে সক্ষম হন। কীভাবে বেরেট এই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হয়েছিলেন, সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনায় তিনি বলেন,

তখন আমি স্টার ট্রেকের খুব ভক্ত ছিলাম। একদিন চিন্তা করেছিলাম, ভবিষ্যতের বিমানগুলোর কোনো মুভিং পার্টস ছাড়া নীরবে চলা উচিত এবং হয়তো নীলাভ আভাও থাকতে পারে সেখানে। সেই থেকে আমি অনুসন্ধান শুরু করি। মুভিং পার্টস ছাড়া বিমান তৈরির ব্যাপারে পদার্থবিজ্ঞানের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। এরপর ১৯২০ সালে উদ্ভাবিত আয়নিক উইন্ড কনসেপ্টের সাথে আমার পরিচয় হয়।

স্টার ট্রেকের স্পেস শাটলক্রাফট, যেখান থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন বেরেট; Image Source: SPORTSPHOTO AGENCY

আয়নিক উইন্ড ও সলিড স্টেট বিমান

সাধারণত বিমানে ‘মুভিং পার্টস’ হিসেবে ইঞ্জিনের সাথে প্রপেলার বা টারবাইন যুক্ত থাকে, যা সামনের বায়ুকে পেছনে ঠেলে দিয়ে বিমানকে উড়তে সহায়তা করে। কিন্তু সলিড স্টেট বিমানে কোনো ইঞ্জিন, প্রপেলার বা টারবাইন কিছুই নেই। আয়নিক উইন্ড ব্যবহার করে যে বিমানটি সফলভাবে উড়তে সক্ষম হয়েছে, সেটি মূলত চালকবিহীন হালকা একটি বিমান।

ছোট বিমানটির এক পাখা থেকে আরেকটি পাখার দূরত্ব ছিল ৫ মিটার এবং পাখার শেষ অংশের সামনের দিকে নিচে অনুভূমিকভাবে যুক্ত করা হয়েছে একগুচ্ছ খুবই সরু পাতলা তার। এই তারগুলো কাজ করবে ধনাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রোড হিসেবে। তারগুলোর ঠিক পেছনে যুক্ত করা হয়েছে আরো একগুচ্ছ তার, যা অনেকটা এরোফয়েলের মতো কাজ করে, যেগুলো অপেক্ষাকৃত পুরু। এগুলো কাজ করবে ঋণাত্মক ইলেকট্রোড হিসেবে।

যেভাবে কাজ করে আয়নিক উইন্ড; Image Source: Guardian graphic, Info Source: Steven Barrett, MIT

বিমানটির শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে লিথিয়াম-পলিমার ব্যাটারি। এই ব্যাটারিগুলো যে শক্তির যোগান দেয় তা একটি বিশেষভাবে তৈরি হালকা পাওয়ার কনভার্টারের মধ্য দিয়ে পরিচালিত করে উচ্চমাত্রার ভোল্টেজ তৈরি করা হয়। প্রোটোটাইপ বিমানটিতে এভাবে প্রায় ৪০,০০০ ভোল্টের যোগান দেওয়া হয়েছিল।

ইলেকট্রো-অ্যারোডাইনামিক (ইএডি) থ্রাস্টারের ছোট ধনাত্মক ইলেকট্রোড উচ্চ ভোল্টেজের বিদ্যুৎ উৎসের সাথে যুক্ত থাকে। বিদ্যুৎ ধনাত্মক ইলেকট্রোডের মধ্যে প্রবাহিত হয়ে বাতাসে থাকা অণুগুলোকে ধনাত্মক আয়নে পরিণত করে। বিপুল পরিমাণের এই ধনাত্মক আয়নকে আকৃষ্ট করে পেছনে থাকা অপেক্ষাকৃত বড় ঋণাত্মক ইলেকট্রোড বা এরোফয়েল। ধনাত্মক আয়নগুলো ঋণাত্মক ইলেকট্রোডের দিকে যাওয়ার সময় বাতাসের অন্যান্য নিরপেক্ষ অণুর সাথে সংঘর্ষের মাধ্যমে আয়নিক উইন্ড বা ইলেকট্রোঅ্যারোডাইনামিক থ্রাস্ট সৃষ্টি করে, যা বিমানকে উড়তে সাহায্য করে।

প্রথাগত বিমানে টারবাইন বা প্রপেলার যে কাজ করে, এখানে ইলেকট্রো-অ্যারোডাইনামিক থ্রাস্টার ঠিক একই কাজ করে ভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে। পুরো প্রক্রিয়াটির মূল শক্তির জোগান দেয় ব্যাটারি। খুব স্বাভাবিকভাবেই বিমানটি পরিবেশ দূষিত না করেই নিঃশব্দে চলতে পারে। ছোট ও হালকা বিমান দিয়ে সলিড স্টেট বিমানের যাত্রা শুরু হলেও বড় ও যাত্রীবাহী বিমানের জন্য এই প্রযুক্তি ব্যবহারোপযোগী করতে আরও গবেষণার প্রয়োজন।

বেরেট মনে করেন, আয়নিক উইন্ড ব্যবহার করে যে বিমান উড্ডয়ন সম্ভব তা তারা প্রমাণ করতে পেরেছেন এবং কার্যকর মিশনে এটি ব্যবহার করতে আরো অনেক সময়ের প্রয়োজন। তাদের তৈরি বিমানটি উড়ানো হয়েছিল এমআইটির একটি ব্যায়ামাগারের বদ্ধ পরিবেশ। কিন্তু বাইরে খোলা আকাশে এটি কার্যকর করতে এবং দীর্ঘ সময় ওড়ানোর জন্য আরও কার্যকর করতে হবে বিমানটিকে। বেরেটের দল অল্প ভোল্টেজে অধিক মাত্রায় কার্যকর আয়নিক উইন্ড তৈরি এবং বিমানটিকে রিমোট নিয়ন্ত্রিত করার ব্যাপারেও কাজ করে যাচ্ছেন।

সামনের চিকন তারগুলো ধনাত্মক ইলেকট্রোড ও অপেক্ষাকৃত চওড়াগুলো ঋণাত্মক ইলেকট্রোড হিসেবে কাজ করে; Image Source: Steven Barrett/MIT/PA

ক্রানফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ভিজিটিং প্রফেসর এবং অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার গ্রেটন বলেছেন,

প্রজেক্টটি এখনও একদম শুরুর দিকে রয়েছে। কিন্তু এমআইটির দলটি আয়নিক গ্যাস ব্যবহার করে একটি বিমান উড়িয়ে এমন কিছু করে দেখিয়েছে, যা কখনো সম্ভব হবে এমনটা আমরা কখনো ভাবিনি।

নতুন এই প্রযুক্তির কার্যকারিতা প্রকাশ হওয়ার পরই বিশ্বজুড়ে প্রকৌশলীরা এটি নিয়ে কাজ করা শুরু করেছেন। বিমান ছাড়াও এই প্রযুক্তির ড্রোন তৈরি করা সম্ভব, যা কোনো শব্দ ছাড়াই চলতে পারবে। ভবিষ্যতের বেসামরিক ও সামরিক বিমান খাতে এই ধরনের বিমান তৈরি অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জ হলেও, নিকট ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তির ব্যবহার জনপ্রিয় হওয়ার ধারণা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিশেষ করে সামরিক খাতে, কারণ যেহেতু ইঞ্জিন ছাড়া এটি কাজ করে, সেক্ষেত্রে বড় রকমের ‘হিট সিগনেচার’ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এক্ষেত্রে এই প্রযুক্তির বিমান রাডার ফাঁকি দিতে পারবে সহজেই।

ইতোমধ্যে, আয়নিক উইন্ড প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে সামরিক খাতের প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিন। বলা বাহুল্য, কার্যকরভাবে সামরিক বিমানে এটি ব্যবহার করা গেলে, আকাশ নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রথাগত ব্যবস্থা হয়তো সম্পূর্ণ ঢেলে সাজাতে হবে। সলিড স্টেট বিমান বা আয়নিক উইন্ড প্রকল্প একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও, ভবিষ্যতে পরিবেশ দূষণ কমাতে এটি বড় রকমের ভূমিকা রাখতে পারবে। জ্বালানী তেলের ব্যবহার কমিয়ে বদলে দিতে পারে ভবিষ্যৎ এভিয়েশনের দুনিয়া।

This article is in Bangla language. It is about first ionic wind plane of the world. Necessary references have been hyperlinked.

Feature Image: Steven Barrett/MIT/PA

Related Articles