Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অনলাইন জগতে যেভাবে হবেন অজ্ঞাতনামা

বর্তমানের তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে পদে পদে আমাদের গোপনীয়তা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। আপনি কখন কোথায় যাচ্ছেন, কী করছেন, ইন্টারনেটে কী কী ব্রাউজ করছেন সবকিছুই আজকাল খুব সহজেই ট্র‍্যাক করা সম্ভব। বহু প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গোপনে তাদের গ্রাহকদের ট্র‍্যাক করছে, বহু তথ্য সংগ্রহ করছে। ফলে প্রায়শই আমরা নানা তথ্য কেলেঙ্কারি ও গোপন তথ্য ফাঁসের ঘটনা দেখতে পাই।

অনেকেই চান নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে; Image Source: nytimes.com

এসব ঘটনা এড়াতে, অনেকেই চান অনলাইনে নিজের পরিচয় গোপন রাখতে। তাই আজকে আমরা দেখবো ঠিক কীভাবে আপনি অনলাইনে আপনার নিজের পরিচয় গোপন রাখতে পারবেন আর কীভাবে হয় উঠবেন অজ্ঞাতনামা! তবে শুরু করার আগে একটি কথা বলাই বাহুল্য, আর সেটি হলো অনলাইনে যদি আপনি নিজের পরিচয় গোপন রাখতে চান তবে কোনো অনলাইন একাউন্টেই নিজের আসল নাম ব্যবহার করা যাবে না, হোক সেটি সোশ্যাল কিংবা অন্য কোনো একাউন্ট।

ধরা যাক, আপনি শর্তটি মানছেন। এবার অনলাইনের জগতে হারিয়ে যেতে আপনাকে অনুসরণ করতে হবে চারটি ধাপ।

১. ইন্টারনেট ব্রাউজ করুন গোপনে

পরিচয় গোপন রাখতে যখনই সম্ভব আপনাকে গোপনে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হবে। আর এজন্য আপনার ব্রাউজারের ইনকগনিটো কিংবা প্রাইভেট ব্রাউজিং ট্যাব ব্যবহার করতে পারেন। এর ফলে আপনার সাধারণ ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের কাজগুলো হবে আরেকটু গোপনে।

Image Source: independent.co.uk

আমরা যখন কোনো ব্রাউজার ব্যবহার করে কোনো ওয়েবসাইটে ঢুকি তখন কিছু ‘কুকিজ’ তৈরি হয়। কুকিজ হলো এমন কিছু ডাটা যা কোনো কিছু ব্রাউজিংয়ের সময় আপনার কম্পিউটার কিংবা মোবাইল ফোনে জমা হয়। আর এই কুকিজ আপনার বর্তমান ব্রাউজিং এক্সপেরিয়েন্সের উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে বিভিন্ন ওয়েবসাইটকে তথ্য দেয়। আপনার নানা পছন্দ-অপছন্দও জমা রাখে এই কুকিজ। যেমন ধরুন, আপনি কিছুক্ষণ আগে গুগলে নতুন একটি মোবাইল সম্পর্কে সার্চ করছেন। একটু পর আপনি ফেসবুকে কিংবা কোনো একটি অ্যাপে ঢুকে সেই মোবাইল ফোনটির বিজ্ঞাপন দেখতে পেলেন। এটি কিন্তু কাকতালীয় কোনো ঘটনা নয়। আপনার পছন্দ অনুসারে বিজ্ঞাপনটি আপনাকে দেখানো হচ্ছে যা সম্ভব হয়েছে কুকিজের মাধ্যমেই। তাই কুকিজ আপনার গোপনীয়তার ক্ষেত্রে অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ।

আর এই ঝুঁকির হাত থেকে বাঁচতে চাইলে আপনাকে ব্যবহার করতে হবে ব্রাউজারের ইনকগনিটো বা প্রাইভেট ব্রাউজিং ট্যাব। বর্তমানে প্রায় সব নামকরা ব্রাউজারেই এই সুবিধাটি ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

২. গুগলকে এড়িয়ে চলুন

বর্তমানে গুগল ছাড়া আমাদের একদিনও চলে না। কিন্তু আপনার সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি তথ্য সংরক্ষণ করে এই গুগলই। গুগল ছাড়া সার্চ ইঞ্জিন বিং ও ইয়াহুর ক্ষেত্রেও একইকথা প্রযোজ্য। গবেষণায় দেখা গেছে, এই তিন সার্চ ইঞ্জিন গ্রাহকের সবচেয়ে বেশি তথ্য জমা করে রাখে। এসব জমা রাখা তথ্য দিয়ে তারা বিভিন্ন ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন ও সার্ভিস দিয়ে থাকে। আপনি যখন এই তিনটির কোনো একটির একাউন্টে লগড ইন অবস্থায় থাকেন তখন এই সার্চ ইঞ্জিনগুলো আপনার নাম, ইমেইল এড্রেস, জন্মদিন, লিঙ্গ, ফোন নাম্বার ইত্যাদি সংগ্রহ করে। শুধু এগুলোই নয়, গুগল এবং বিং আপনার ফোন কিংবা কম্পিউটারটির লোকেশন, এগুলো সম্পর্কে নানা তথ্য, আইপি এড্রেস এবং কুকিজও সংগ্রহ করে। 

Image Source: slashgear.com

তাই এই বিপুল পরিমাণ তথ্য সংগ্রহের হাত থেকে বাঁচতে হলে আপনাকে এসব সার্চ ইঞ্জিন ত্যাগ করতে হবে। এসব সার্চ ইঞ্জিন বাদ দিয়ে আপনি ব্যবহার করতে পারেন DuckDuckGo। গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন এটি। এখানে আপনি কোনো একটি তথ্য সার্চ করলে যে রেজাল্ট আসবে, ভিন্ন দেশের ভিন্ন একজন ব্যক্তি সেই তথ্য সার্চ করলে একই রেজাল্ট আসবে। গুগলের মতো ব্যক্তিগত সার্চ রেজাল্ট দেখাতে পারে না এই সার্চ ইঞ্জিন। কারণ, এটি এর ব্যবহারকারীর কোনো তথ্যই সংরক্ষণ করে না। ফলে আপনি থাকবেন সুরক্ষিত। 

৩. আপনার আইপি এড্রেস গোপন রাখুন

ইন্টারনেট জগতে আইপি এড্রেস হলো আপনার বাসার ঠিকানার মতোই। এই আইপি এড্রেস দিয়ে খুব সহজেই আপনার সকল অনলাইন এক্টিভিটি ট্রাক করা সম্ভব। যদি কেউ আপনার আইপি এড্রেস জানে তবে সে খুব সহজেই আপনার ভৌগলিক অবস্থান বের করে ফেলতে পারবে। তাই পরিচয় গোপন রাখতে নিজের আইপি এড্রেস গোপন রাখা অত্যন্ত জরুরি। এক্ষেত্রে আপনি তিনটি পদ্ধতির সাহায্য নিতে পারেন।

যেভাবে কাজ করে ভিপিএন; Image Source: vivaldi.com

প্রথমটি হলো, কোনো প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার করা। আপনি যদি আপনার সকল অনলাইন এক্টিভিটি গোপন রাখতে চান তবে সবচেয়ে সহজ বুদ্ধি হলো পরিচয় বদলে অন্য কেউ হয়ে যাওয়া! আর ঠিক এই কাজটিই করতে সাহায্য করে প্রক্সি সার্ভার। এটি আপনার সকল অনলাইন এক্টিভিটি ভিন্ন একটি সার্ভারের মধ্য দিয়ে নিয়ে যায়। ফলে আপনার আইপি এড্রেসটি বদলে যায় আর সেই সাথে আপনার লোকেশনও। প্রক্সি সার্ভার ব্যবহারের ফলে আপনি বাংলাদেশে বসে ইন্টারনেট ব্যবহার করলেও আপনার লোকেশন হয়তো দেখাবে পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে! প্রক্সির পাশাপাশি দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হলো ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ভিপিএন (VPN) ব্যবহার করা। ভিপিএন ঠিক প্রক্সির মতোই কাজ করে তবে তা আরেকটু ভালোভাবে। ভিপিএন হলো একটি ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক যা পাব্লিক নেটওয়ার্ককে ব্যবহার করে বিভিন্ন ওয়েবসাইট কিংবা ব্যবহারকারীকে যুক্ত করে।

Image Source: kkomando.com

আর সর্বশেষ পদ্ধতিটি হলো টর (TOR) ব্যবহার করা। টর বা অনিয়ন রাউটার হলো এমন এক ভার্চুয়াল টানেল সিস্টেম যার মাধ্যমে খুব ভালোভাবে নিজের পরিচর গোপন রেখে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। সহজভাবে বলতে হলে, টর হলো এমন এক সিস্টেম যেখানে হাজার হাজার প্রক্সি ব্যবহার করা হয় আর প্রতিনিয়ত সেই প্রক্সিগুলো পরিবর্তিত হতে থাকে। ফলে ব্যবহারকারীর পরিচয় বের করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে।

৪. বেনামী ইমেইল ও যোগাযোগ অ্যাপ ব্যবহার করুন

প্রক্সি, ভিপিএন এবং টর হয়তো আপনার আইপি এড্রেসকে গোপন রাখবে, কিন্তু যখনই আপনি কোনো ইমেইল পাঠাতে যাবেন আপনার গোপনীয়তা হুমকির সম্মুখীন হবে। তাই, মনে করুন আপনি কাউকে একটি ইমেইল পাঠাতে চান, কিন্তু তাকে আপনার পরিচয় জানতে দিতে চান না। সাধারণভাবে এটি করার দুটি পদ্ধতি রয়েছে।

প্রথমত, আপনি চাইলে একটি এলিয়াস বা ছদ্মনামী ইমেইল ব্যবহার করতে পারেন। এলিয়াস ইমেইল হলো একধরনের ফরওয়ার্ডিং এড্রেস। যখন এটি ব্যবহার করে কোনো ইমেইল পাঠাবেন তখন ইমেইলটি আপনার আসল ইমেইল একাউন্ট থেকে ছদ্মনামী ইমেইলের মধ্য দিয়ে প্রাপকের কাছে পৌঁছবে। ফলে প্রাপক আপনার আসল ইমেইলটি দেখতে পাবেন না, বরং তিনি আপনার সেই ছদ্মনামী ইমেইলটি দেখতে পাবেন। এর ফলে আপনার আসল ইমেইলটি গোপন থাকবে।

Image Source: techregar.com

আর দ্বিতীয় পদ্ধতি হলো, কোনো একটি সাময়িক বা টেম্পোরারি ইমেইল এড্রেস ব্যবহার করা। বর্তমানে এমন বহু টেম্পোরারি ইমেইল প্রভাইডার রয়েছে। এই ইমেইলের বৈশিষ্ট্য হলো, এটি খোলার জন্য আপনাকে কোনো তথ্য প্রদান করতে হয় না। আর একটি নির্দিষ্ট সময় পর এই ইমেইল এড্রেসটি নিজে থেকেই মুছে যায়। ফলে আপনি চাইলেই নিজের পরিচয় গোপন রেখে এটি ব্যবহার করে আবার মুছে ফেলতে পারেন।

Image Source: vectorstock.com

এ তো গেলো, ইমেইলের কথা। পরিচয় গোপন রেখে যদি আপনি অনলাইনে চ্যাটিং কিংবা মেসেজ আদান প্রদান করতে চান, সেক্ষেত্রে কিন্তু প্রচলিত সোশ্যাল ম্যাসেজিং অ্যাপগুলো ব্যবহার করা চলবে না। প্রায় প্রতিটি সোশ্যাল ম্যাসেজিং অ্যাপই ব্যবহারকারীর বিপুল পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করে। এক্ষেত্রে আপনি টর চ্যাট কিংবা ক্রিপ্টোচ্যাট ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো বিভিন্ন এনক্রিপশন সার্ভিস ব্যবহার করে যা ভেঙে আপনার পরিচয় বের করা খুবই কঠিন।

এই তো! এই চারটি পদ্ধতি ব্যবহার করে খুব সহজেই আপনি আপনার পরিচয় গোপন রাখতে পারবেন। তবে বলে রাখা ভালো, এগুলো ব্যবহার করা মানেই যে আপনার পরিচয় ১০০% সুরক্ষিত তা কিন্তু নয়। অনলাইন জগতে কোনো কিছুই ১০০% সুরক্ষিত নয়! তাই আপনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও স্পর্শকাতর বিষয়গুলো শেয়ারের ক্ষেত্রে হন আরো বেশি সচেতন। 

Feature Image: consumerreports.org

For references please check the hyperlinks inside the article.

This article is in Bangla. It's about some ways of being anonymous while using Internet.

Related Articles