Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ভিডিও গেম মাধ্যমে যেভাবে গল্প বলা হয়

সত্তরের দশকে ‘আটারি ২৬০০ কনসোল’ বের হওয়ার পরে তা ভিডিও গেমে প্রথমবারের মতো গল্প ও গল্পের বিভিন্ন চরিত্র এনেছিল, যা পরবর্তী গেমগুলোর জন্যে একটি ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়। আজকের দিনের তুলনায় প্রচণ্ড দুর্বল গ্রাফিক্স ও সোজাসাপ্টা প্লট থাকা সত্তেও এই কনসোলের গেমগুলো ভিডিও গেমকে গল্প বলার নতুন মাধ্যম হিসেবে সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। প্রথমদিকের গেমগুলোতে গেমপ্লে আর গল্প আলাদা বিষয় হলেও বর্তমানে তারা একীভূত হয়ে এই মাধ্যমটিকে আরো পরিপূর্ণ করে তুলেছে।

আটারি ২৬০০ কনসোল; Image Source: Wikimedia Commons

ভিডিও গেমের গল্পকথন বুঝতে হলে আগে গতানুগতিক মাধ্যমগুলোর সাথে তার পার্থক্য নিরূপণ করতে হবে। মূল পার্থক্যটি ‘গেমপ্লে’ হলেও অন্যান্য মাধ্যমের সাথে সক্রিয়তা ও নিষ্ক্রিয়তার দিক থেকে ভিডিও গেম কোথায় অবস্থান করে, তা নির্ধারণ করা জরুরি। সেবাস্তিয়ান ডমশ্চ তার ‘স্টোরিটেলিং: এজেন্সি অ্যান্ড ন্যারেটিভ ইন ভিডিও গেমস’ বইয়ে নির্মাতা ও অডিয়েন্সের মধ্যকার সম্পর্ক অনুযায়ী বিভিন্ন মাধ্যমকে বিভক্ত করেছেন। এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ‘নোড’ নিয়ে রয়েছে, যার সংজ্ঞা এভাবে দেওয়া হয়েছে:

A node is a situation that allows for more than one continuation.

অর্থাৎ, গল্পের মধ্যে নোড এমন একটি পরিস্থিতি, যেখান থেকে গল্পের প্রবাহ কয়েকটি দিকে যেতে পারে। সক্রিয় মাধ্যমগুলো অডিয়েন্সকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা দেয়, যাতে গল্পের ফলাফল কী হবে, তার উপর অডিয়েন্স প্রভাব রাখতে পারে। অন্য মাধ্যমগুলো বাইরের কোনো প্রভাব গ্রহণ করে না। বইকে ‘কাজ’ করতে হলে একজন সক্রিয় অডিয়েন্সের দরকার হয়, অন্যদিকে চলচ্চিত্র কোনো দর্শক ছাড়াই চলতে পারে। ভিডিও গেমের ক্ষেত্রে গেমপ্লের সম্পূর্ণ সম্ভাবনাটি উন্মুক্ত করতে হলে সক্রিয় অডিয়েন্সের প্রয়োজন হয়, কিন্তু একইসাথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও নন-প্লেয়েবল ক্যারেকটার (এনপিসি) স্বাধীনভাবে চলতে পারে। এভাবে প্লেয়ারের সাথে গেমের একটি সম্পর্ক তৈরি হয়।

ন্যারেটিভ

গল্পকথন হচ্ছে ভিডিও গেমের ন্যারেটিভ কাঠামো। সাধারণভাবে একটি বই কেনার সময় যে প্রশ্নগুলোর উদ্রেক হয়, গেমের গল্পের ক্ষেত্রেও প্রশ্নগুলো একই। গেমটি কী ধরনের গল্প বলে? চরিত্রগুলো কতটা ভালোভাবে লেখা হয়েছে? গল্পের দুনিয়াটি চিত্তাকর্ষক কি না?

ভিডিও গেমের ন্যারেটিভকে প্রধানত দু’টি অংশে ভাগ করা যায়। একটি হচ্ছে কাঠামো, যা গল্পের অগ্রগতি ও শাখা-প্রশাখাগুলো ধারণ করে এবং এই শাখা-প্রশাখাগুলো কীভাবে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হয়ে প্লট তৈরি করবে, তা নির্ণয় করে। অন্য অংশটি হচ্ছে গল্পের বিবৃতি, অর্থাৎ গেম কীভাবে গল্পটি অডিয়েন্সের সামনে প্রদর্শন করবে। এই সম্পূর্ণ ন্যারেটিভ আবার বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যায়।

সবচেয়ে সরল কাঠামোর নাম হচ্ছে ‘লিনিয়ার’। এটি খুবই পরিচিত একটি কাঠামো। কারণ, অন্যসব মাধ্যম যেমন বই ও চলচ্চিত্রে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই কাঠামোটিই ব্যবহার করা যায়। লিনিয়ার কাঠামোতে গল্পের প্রবাহ সরলরৈখিক হবে। অর্থাৎ, একটিমাত্র ধারাবাহিকতায় এক নোড থেকে আরেক নোডে এগিয়ে যাবে। প্রতিটি নোড থেকে পরবর্তী শুধু একটিমাত্র নোডে যাওয়ার সুযোগ থাকবে। গল্প একটি নির্দিষ্ট ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়েই এগিয়ে যাবে, যেখানে কোনো বিচ্যুতি বা ব্যাকট্র্যাকিং থাকবে না।

দ্বিতীয় একধরনের ন্যারেটিভ কাঠামো রয়েছে, যাকে গেম ডিজাইনের ভাষায় ‘স্ট্রিং অভ পার্লস’ মডেল বলা হয়। এ কাঠামোতে গল্পটি সাধারণ লিনিয়ার কাঠামোতেই বলা হয়ে থাকে, কিন্তু এক নোড থেকে একাধিক নোডে যাওয়ার সুযোগ থাকে। এভাবে মূল গল্পের পাশাপাশি আলাদা ছোট গল্প অন্তর্ভুক্ত করা যায়, যেগুলো গেমের দুনিয়াকে বুঝতে সাহায্য করে। প্লেয়ার স্বাধীনভাবে ভার্চুয়াল দুনিয়াটি নিজের মতো অনুসন্ধান করতে পারে।

আরেকটি কাঠামো রয়েছে, যেখানে প্লেয়ারের সম্পূর্ণ স্বাধীন ইচ্ছার উপরে প্লট এবং চরিত্রগুলো পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়াটি নির্ভর করবে। প্লেয়ারের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে ঘটনাপ্রবাহ বিভিন্ন রকম হতে পারে। একে ব্রাঞ্চিং মডেল বলা হয়। ব্রাঞ্চিংয়ের একটি ধরন রয়েছে, যেখানে গেমের দুনিয়াতে প্লেয়ারের অনুসন্ধানের উপর নির্ভর করে গল্পের নতুন শাখা উন্মুক্ত হয়। এর একটি সাধারণ উদাহরণ হলো: গেমের কোনো এনপিসির সাথে ইন্টার‍্যাকশন গল্পের নতুন একটি শাখা উন্মুক্ত করে। ঐ এনপিসির সাথে দেখা না হলে গল্পের শাখাটি কখনো সামনে আসবে না। এক্ষেত্রে নির্দিষ্টভাবে আগের ও পরের লেভেল বলে কিছু নেই। ওপেন ওয়ার্ল্ড গেমগুলোতে এই মডেলটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করতে দেখা যায়।

ন্যারেটিভের রকমফের; Image Source: Gamasutra

এছাড়া আরো কিছু উপাদান ব্যবহার করতে দেখা যায়। বর্তমান যুগের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হলো কাটসিন, যেখানে ছোট সিনেম্যাটিক দৃশ্যের মাধ্যমে গল্পের নতুন কোনো অংশ প্রকাশ করা হয়। তবে সবচেয়ে অনন্য উপায় হলো এনভায়রনমেন্ট ও ভার্চুয়াল দুনিয়ার মাধ্যমে গল্প বলা। প্লেয়ার গেমের বিভিন্ন অবজেক্ট, জায়গা ও চরিত্রকে অনুবাদ করে প্লট সম্পর্কে ধারণা তৈরি করে। এটি এখনো সবচেয়ে বিরল কাঠামো। একটি ভালো উদাহরণ হচ্ছে ‘ডার্ক সোলস’।

আধুনিক যুগের ন্যারেটিভ উদাহরণ দিতে গেলে একটি জনপ্রিয় গেমের নাম চলে আসে, ‘দ্য এল্ডার স্ক্রলস ৫: স্কাইরিম’। ২০১১ সালে মুক্তির পরপরই সমালোচকদের থেকে প্রচুর প্রশংসা পেয়েছিল এই গেমটি। এখানে একজন ড্রাগনবর্নের গল্প বলা হয়, যে দেখতে মানুষের মতো হলেও তার রয়েছে ড্রাগনের আত্মা ও রক্ত। স্কাইরিমের দুনিয়াতে প্লেয়ার এই ড্রাগনবর্নকে নিয়ন্ত্রণ করে গল্প এগিয়ে নিয়ে যায় এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে ভিলেন ড্রাগন অ্যালডুইনের মুখোমুখি হয়। স্ট্রিং অভ পার্লস ও ব্রাঞ্চিংয়ের একটি সম্মিলিত কাঠামো ব্যবহার করে এখানে নন-লিনিয়ার গেমপ্লে তৈরি করা হয়েছে।

স্কাইরিম গেমে প্লেয়ারকে ড্রাগন অ্যালডুইনের মুখোমুখি হতে হয়; Image Source: Bethesda Softworks

ন্যারেটিভের ভূমিকা সবসময় একই ছিল না, সময়ের সাথে তা বদলেছে। প্রথমদিকে গেমের অ্যাকশনগুলোর প্রাসঙ্গিকতা দেওয়ার জন্যে গল্প ব্যবহার করা হতো। প্লেয়ারকে কোনো লক্ষ্য অর্জন করতে গেলে তার কারণ ব্যাখ্যা করাও ন্যারেটিভের উদ্দেশ্য ছিল। বর্তমান যুগে ডেভেলপাররা গল্প মাথায় রেখে গেম নির্মাণ করেন। এভাবে গেমপ্লে ও ন্যারেটিভ একইরকম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ন্যারেটিভের জন্যে বিখ্যাত নটি ডগস স্টুডিওর গেমগুলোর কথাই ধরা যাক। ‘আনচার্টেড’ গেমের গল্পগুলো অনেকটা গেমের এক লেভেল থেকে আরেক লেভেলে যাওয়ার পেছনের যুক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু ‘দ্য লাস্ট অভ আস’ গেমে এই গল্প ও গেমপ্লে মিলেমিশে এক হয়ে গেছে।

ক্র্যাশ ব্যান্ডিকুট ও ডাংকি কংয়ের মতো গেমগুলোতে গল্প ব্যবহার করা হতো গেমের ভেতরের অ্যাকশনের একটি পটভূমি দেওয়ার জন্যে, প্লেয়ারের ইন্টার‍্যাকশনের একটি অনুষঙ্গ তৈরির জন্যে। কিন্তু বর্তমানের স্কাইরিম ও লাইফ ইজ স্ট্রেঞ্জের মতো গেমগুলোতে প্লেয়ার গেমের দুনিয়াতে সময় কাটাতে গিয়ে ধীরে ধীরে গল্প উন্মুক্ত করে। অর্থাৎ, গল্পের প্রয়োজনীয়তা ‘এমবেডেড’ থেকে ‘ইমার্জেন্ট’-এ রূপান্তরিত হয়েছে। আগে যেখানে ভিডিও গেম প্রদর্শন করতে গল্পের ব্যবহার হতো, সেখানে এখন গল্প বলতে গেম ব্যবহৃত হচ্ছে। দ্য লাস্ট অভ আসের মতো গেমগুলো মাধ্যমটির এ ধরনের পরিণত হওয়াকে নির্দেশ করে।

ইন্টার‍্যাক্টিভিটি

সহজভাবে বললে ইন্টার‍্যাক্টিভিটি হচ্ছে প্লেয়ার যেভাবে গেমের গল্প, পরিবেশ এবং নিয়মগুলো অনুভব করে। ‘আটারি ২৬০০ কনসোল’ আসার পরে ইন্টার‍্যাক্টিভিটি উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। গেমের নতুন ধরনের অভিজ্ঞতার সাথে পরিচয় করাতে গিয়ে ইন্টার‍্যাক্টিভিটির বিভিন্ন পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। তবে তা যদি আকর্ষণীয় না হয়, তাহলে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যাবে। তাই ইন্টার‍্যাক্টিভিটির ব্যাপারে সতর্কভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাছাড়া এটি প্লেয়ারের কাছে গল্পের নিয়ন্ত্রণ প্রদানের প্রধান টুল। প্লেয়ারের নিয়ন্ত্রণ ঠিক কতটুকু হবে, তা নির্ধারণের দায়িত্বও ইন্টার‍্যাক্টিভিটির উপরে বর্তায়।

গেমের মধ্যে প্লেয়ার গেমপ্লে ও ন্যারেটিভের গতি, প্রধান চরিত্রের গতিবিধি ও অ্যাকশন নিয়ন্ত্রণ করে এবং এভাবে গল্পের একজন সহলেখক হয়ে যায়। এই ইন্টার‍্যাকটিভিটি গল্পকে প্রধান চরিত্রের বদলে প্লেয়ারের দৃষ্টিকোণ থেকে বলার স্বাধীনতা দেয়। হ্যানওভার ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, যিনি প্লেয়ারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন, তিনি দর্শকের তুলনায় প্রধান চরিত্রের সাথে অনেক বেশি একাত্ম অনুভব করতে পারেন। চলচ্চিত্রের সাথে ভিডিও গেমের মূল পার্থক্যটি এখানেই। চলচ্চিত্রে মূল চরিত্রকে নিজের মতো ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। অন্যদিকে ভিডিও গেম প্লেয়ারকে সে চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব প্রদান করে।

যেমন, দ্য লাস্ট অভ আস গেমের একেবারে শুরুতে প্লেয়ার একটি বাচ্চা মেয়ের ভূমিকায় খেলে। দশ মিনিটের মতো গেমপ্লে শেষ হওয়ার পরে মেয়েটি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। একই গল্পাংশ যদি কোনো চলচ্চিত্রে দেখানো হতো, তার তুলনায় গেমের অডিয়েন্স এই মৃত্যু অনেক বেশি অনুভব করতে পারে। কারণ, চলচ্চিত্রে মাত্র দশ মিনিটে কোনো চরিত্রের জন্যে সহমর্মিতা তৈরি করা অনেক কঠিন। কিন্তু ভিডিও গেমে ইন্টার‍্যাক্টিভিটির ফলে তা সহজ হয়ে যায়।

এই ইন্টার‍্যাক্টিভিটি ন্যারেটিভের একটি বিশাল সম্ভাবনা তৈরি করেছে, যা এর আগে কখনো সম্ভব হয়নি। সম্ভবত এর সবচেয়ে ভালো উদাহরণ দেওয়া যায় ‘ব্লাডবর্ন’ গেমটি দিয়ে। ডার্ক সোলসের মতোই এখানে এনভায়রনমেন্টাল গল্পকথন ব্যবহার করা হয়েছে। এই গেমে প্লেয়ার একজন শিকারী, যে শহরের পশুতে রূপান্তরিত হওয়া কিছু মানুষ থেকে শহরটি রক্ষার ভূমিকা নেয়। গথিক হরর থেকে দ্রুতই কসমিক হররে রূপান্তরিত হওয়া গেমটিতে প্লেয়ার প্রাথমিকভাবে সরাসরি কোনো গল্প খুঁজে পাবে না।

কিন্তু এটাই ডেভেলপারদের উদ্দেশ্য ছিল। গেমটিতে ব্রাঞ্চিং মডেল দিয়ে একটি জটিল ন্যারেটিভ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে প্লেয়ারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিন ধরনের সমাপ্তি হতে পারে। প্রতিটি সংলাপ, কাটসিন ও গেমের দুনিয়ায় পাওয়া পোশন, অস্ত্র হচ্ছে একেকটি ক্লু যার মাধ্যমে প্লেয়ার সম্পূর্ণ গল্পটি উন্মোচন করতে পারে। সম্পূর্ণ দুনিয়াটি এবং তার চরিত্রগুলোর সাথে ইন্টার‍্যাক্ট করে প্লেয়ার মূল গল্পটি অনুভব করতে পারবে। এ ধরনের গল্পকথন শুধুমাত্র ভিডিও গেমেই দেখা যায়।

‘ব্লাডবর্ন’ গেমে প্লেয়ার একজন শিকারীর ভূমিকায় খেলে; Image Source: Playstation

আমস্টারডাম ইউনিভার্সিটি থেকে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে এরকম ইন্টার‍্যাক্টিভ ন্যারেটিভের আবেদন কতটুকু, তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যেকোনো গল্পকথনেই অডিয়েন্সকে মূল যে প্রশ্নটি সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়, তা হচ্ছে, “এরপর কী হবে?” ভিডিও গেমে এই প্রশ্নটির উদ্রেক অন্যভাবে হয়, “আমি যদি এ কাজ করি, তাহলে কী হবে?” এই কৌতূহলটিই প্লেয়ারকে বিভিন্নভাবে গেমের দুনিয়ার সাথে ইন্টার‍্যাক্ট করতে সাহায্য করে।

ভবিষ্যৎ

যেকোনো কিছুরই ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চিন্তা করা একটি কঠিন ধরনের কাজ। কারণ, ভবিষ্যৎ একটি বিশাল সময়। একসময় মানুষ ধারণাই করতে পারেনি, আজকের যুগে ইন্টারনেট পুরো সভ্যতায় এরকম বিশাল ভূমিকা পালন করবে। তবে ভিডিও গেম ডেভেলপাররা এ মাধ্যমের ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছুটা অনুমান করেছেন। 

মাইক্রোসফট এক্সবক্সের প্রধান ফিল স্পেন্সার গার্ডিয়ান পত্রিকায় দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ভিডিও গেম মাধ্যমে কীভাবে আরো বেশি গল্প নিয়ে আসা যায়, সে ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। নেটফ্লিক্স কিংবা অ্যামাজন প্রাইমের মতো স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলো গল্প বলার ভালো প্ল্যাটফর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় সবধরনের সিনেমা ও টিভি সিরিজ এখানে পাওয়া যায়। ভিডিও গেমের জন্যে এরকম স্ট্রিমিং সার্ভিস তৈরি করা গেলে তা এ মাধ্যমে গল্প বলার ভালো প্ল্যাটফর্ম হয়ে দাঁড়াবে। গুগল অবশ্য তাদের ‘স্টেডিয়া’ সার্ভিসে এরকম স্ট্রিমিং শুরু করেছে। কিন্তু এখনো অনেক ঘাটতি রয়েছে।

২০১৫ সালে স্যান ফ্র্যান্সিসকো শহরে ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বিখ্যাত লেখকরা জড়ো হয়েছিলেন। তাদেরকে গল্পভিত্তিক গেমের ভবিষ্যৎ নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তারা একমত হয়েছিলেন যে, এটিই এ মাধ্যমের প্রধান লক্ষ্য। ‘দ্যাটগেমকোম্পানি’র ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর জেনোভা চেন একধরনের স্ট্রিমিং ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করেন, যেখানে প্লেয়ারের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে একই গল্পের অনেকগুলো ভিন্ন ভিন্ন ভার্সন তৈরি হবে, যেগুলো আজকের দিনের উইচার থ্রি অথবা ব্লাডবর্নের চেয়েও অনেকবেশি বৈচিত্র্যময় হবে। এদের মধ্যে যে প্লেয়ার গল্পের সবচেয়ে সুন্দর ভার্সনটি তৈরি করবে, স্ট্রিমিংয়ে সবাই সেটাই বারবার দেখবে। অর্থাৎ, প্লেয়ারও এক্ষেত্রে পুরোপুরি গল্পকার হয়ে উঠবে।

ভিডিও গেম এখনো নির্বাক চলচ্চিত্রের যুগে রয়েছে। এ মাধ্যমে শব্দ ও সংলাপ হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আমাদেরকে পুরোপুরি বুঝতে পারার ক্ষমতা। চিন্তা করুন, আপনি একটি গেম খেলছেন, যেখানে সত্যিকার অর্থেই গেমের সাথে কথা বলতে পারছেন।

নিঃসন্দেহে, ভবিষ্যতের পরিণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিডিও গেমকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।

অ্যারিস্টটল যখন ন্যারেটিভের প্রাথমিক নিয়ম-কানুন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তিনি কি ভাবতে পেরেছিলেন এই নিয়মগুলো কতযুগ পর্যন্ত অটল থাকবে কিংবা কতগুলো গল্প বলার মাধ্যম ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে তৈরি হবে! একইভাবে আজকের দিনে এই ইন্ডাস্ট্রির পথিকৃতেরাও ধারণা করতে পারেননি, ভিডিও গেম কতদূর অগ্রসর হবে। গত ৩০ বছরে যে গতিতে এই মাধ্যমটি পরিণত হয়েছে, আমরা হয়তো এখন কল্পনাও করতে পারছি না, ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করছে।

Related Articles