Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে হুমকির মুখে ইন্টারনেট নিরাপত্তা

প্রযুক্তি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, এর উন্নতি স্বয়ং প্রযুক্তিবিদদেরই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে! প্রযুক্তিগত এমন এক উন্নয়নের নাম কোয়ান্টাম কম্পিউটিং। বহু বছর ধরে যে ধরনের গণিত আর অ্যালগরিদম ইন্টারনেট ভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত করে রেখেছিল, কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের ক্রমশ উন্নতি সেসবের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যেসব সমস্যা প্রচলিত সর্বাধুনিক কম্পিউটার দিয়ে সমাধান করতেও বছরের পর বছর লাগতো, কোয়ান্টাম কম্পিউটার দিয়ে সেসব কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সমাধান করা সম্ভব। ফলে কোয়ান্টাম কম্পিউটার যখন মানুষের হাতের নাগালে আসবে, তখন প্রচলিত পদ্ধতিতে ইন্টারনেটে তথ্য আদান-প্রদান ব্যবস্থা আর নিরাপদ থাকবে না। যদি না সম্পূর্ণ নতুন কোনো অ্যালগরিদম আবিষ্কৃত হয়। চলুন জেনে নিই কীভাবে এই কোয়ান্টাম কম্পিউটিং প্রচলিত ইন্টারনেট নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রায় অচল করে দিতে পারে।

শুরুতে কিছু শব্দের সাথে পরিচিত হওয়া দরকার। অনুরোধ থাকবে একটু মনযোগ দিয়ে পড়ার জন্য। এনক্রিপশন (Encryption), এটি হলো একটি বিশেষ প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট তথ্যকে এমন কিছু সাংকেতিক ভাষায় রূপান্তরিত করা হয়, যে সংকেত থেকে মূল তথ্যটি বোঝা প্রায় অসম্ভব। ডিক্রিপশন (Decryption), এটি হলো এনক্রিপশনের ঠিক উল্টো। দুর্বোধ্য সাংকেতিক ভাষা থেকে আসল তথ্যটি বের করে আনার প্রক্রিয়াকে ডিক্রিপ্ট করা বলে। ইন্টারনেটের তথ্য সুরক্ষিত রাখার জন্য বর্তমানে প্রধানত দুই ধরনের এনক্রিপশন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়-

  • সিমেট্রিক কী ক্রিপটোগ্রাফি (Symmetric-key Cryptography)
  • পাবলিক কী ক্রিপটোগ্রাফি (Public-key Cryptography) বা এসিমিট্রিক কী ক্রিপটোগ্রাফি (Asymmetric-key Cryptography)

সিমেট্রিক কী ক্রিপটোগ্রাফি অপেক্ষাকৃত পুরাতন। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, এ পদ্ধতিতে কোনো তথ্য আদান-প্রদানের জন্য প্রেরক এবং প্রাপকের কাছে একই ধরনের কী বা চাবি লাগবে। অর্থাৎ যে তথ্য পাঠাবে, সে যে চাবি দিয়ে তার তথ্যকে এনক্রিপ্ট করবে; যার কাছে পাঠাবে, তাকে সেই এনক্রিপ্টেড (Encrypted) তথ্য থেকে মূল তথ্য বের করে আনার (Decrypted) জন্য একই ধরনের চাবি ব্যবহার করতে হবে। এজন্য প্রেরক এবং প্রাপককে আগে থেকেই তাদের চাবি ঠিক করে রাখতে হবে। ফোনে অথবা সরাসরি সাক্ষাৎ করে, অথবা অন্য কোনো উপায়ে তাদের চাবির বর্ণনা একে অপরকে জানাতে হবে। এভাবে প্রত্যেকবার তথ্য আদান প্রদানের আগে চাবির বর্ণনা জানানো এতটা সহজ নয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে চাবির সহজ বর্ণনা চোরের জন্য সহজ হয়ে যায়। আর চাবি পেয়ে গেলে অনায়াসে এনক্রিপ্টেড তথ্য ডিক্রিপ্ট করা যাবে।

সিমেট্রিক কী ক্রিপ্টোগ্রাফি; Source: chrispia.wordpress.com

এসব সমস্যা দূর করার জন্য সত্তরের দশকে আসে পাবলিক-কী-ক্রিপ্টোগ্রাফি বা এসিমিট্রিক কী ক্রিপটোগ্রাফি। ধরা যাক, মীনা তার ভাই রাজুর কাছে একটি তথ্য পাঠাবে। এজন্য মীনার কাছে দুই ধরনের চাবি থাকতে হবে। একটি হলো পাবলিক কী। আরেকটি হলো প্রাইভেট কী। রাজুর কাছেও এই দুই ধরনের চাবি থাকতে হবে। কিন্তু উভয়ের পাবলিক কী এবং প্রাইভেট কী-গুলো সম্পূর্ণ আলাদা। এখন রাজু তার পাবলিক কী মীনার কাছে পাঠাবে। মীনা রাজুর পাবলিক কী দ্বারা তার তথ্যটি এনক্রিপ্ট করে রাজুর কাছে পাঠাবে।

রাজু তার নিজের প্রাইভেট কী দ্বারা এনক্রিপ্টেড তথ্যটি ডিক্রিপ্ট করবে। এ পদ্ধতিতে কারো প্রাইভেট কী আদান প্রদান করতে হচ্ছে না। যার যার প্রাইভেট কী তার তার কাছে থাকছে। কেউ যদি পাবলিক কী পেয়েও যায়, কোনো লাভ নেই; কারণ তথ্য ডিক্রিপ্ট করার জন্য প্রাইভেট কী লাগবে, যেটা কখনো আদান প্রদান করার প্রয়োজন হবে না। এই পাবলিক কী এবং প্রাইভেট কী কিন্তু সত্যিকারের কোনো চাবি নয়! এগুলো হলো অনেক বড় বড় মৌলিক সংখ্যা (Large Prime Numbers)।

পাবলিক কী এনক্রিপশন সিস্টেম; Source: DZone.net

পাবলিক কী ক্রিপ্টোগ্রাফি বুঝতে হলে আগে কিছু বিষয় জানতে হবে। শুরু করা যাক ট্র্যাপডোর ফাংশন দিয়ে। ট্র্যাপডোর ফাংশন হলো এমন একধরনের ফাংশন, যা দিয়ে একদিকে খুব সহজেই হিসাব করা যায়, কিন্তু বিপরীত দিকে হিসাব করা (Inverse function) খুবই কঠিন, যদি না বিশেষ কোনো তথ্য জানা থাকে।

প্রাইম ফ্যাক্টরাইজেশন হলো কোনো সংখ্যাকে তার মৌলিক উৎপাদকগুলোতে বিশ্লেষণ করা। যেমন ৩৫ এর প্রাইম ফ্যাক্টরাইজেশন করলে ৫ এবং ৭ পাওয়া  যাবে, তেমনই ৩০ এর প্রাইম ফ্যাক্টরাইজেশন ৩, ৫ ও ২।

কম্পিউটার খুব সহজেই সংখ্যা গুণ করতে পারে, কিন্তু কোনো সংখ্যাকে এর উৎপাদকে বিশ্লেষণ করতে এর কিছুটা সময় লাগে। অনেকটা ট্র্যাপডোর ফাংশনের মতো। কোনো বড় সংখ্যার প্রাইম ফ্যাক্টরাইজেশন করতে সাধারণ কম্পিউটারের বছরের পর বছরও লাগতে পারে। বিজ্ঞানীদের ২৩২ অঙ্কের একটি সংখ্যার উৎপাদকে বিশ্লেষণ করতে প্রায় দুই বছর লেগেছিল। এর জন্য তারা শত শত কম্পিউটার একইসাথে সমান্তরালে ব্যবহার করেছিল।

RSA (Rivest–Shamir–Adleman) অ্যালগরিদম অথবা পাবলিক কী এনক্রিপশন অ্যালগরিদম এর উদ্ভাবকগণ; Source: sohabr.net

গাণিতিক ব্যাখায় না গিয়ে সহজ ভাষায় বলতে গেলে, পাবলিক কী ক্রিপ্টোগ্রাফিতে পাবলিক কী এবং প্রাইভেট কী এর গুণফল আর সেই গুণফলের প্রাইম-ফ্যাক্টরাইজেশন, এই দুই জিনিসের উপর ইন্টারনেটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নির্ভর করে। বিষয়গুলো কিছুটা জটিল, তবে আগ্রহী পাঠকগণ এখান থেকে পাবলিক-কী-এনক্রিপশন সম্পর্কে আরো জানতে পারবেন।

এবার কোয়ান্টাম কম্পিউটারের বিষয়ে আসা যাক। প্রচলিত কম্পিউটার গণনা করে বিট (Bit) দিয়ে, যা ০ বা ১-এই দুই অবস্থার যেকোনো একটি অবস্থায় থাকতে পারে। আর কোয়ান্টাম কম্পিউটারের গণনার মূল একক হলো কিউবিট (Qubit = Quantum Bit)। কিউবিট ব্যবহারের ফলে এর গণন ক্ষমতা প্রচলিত কম্পিউটারের তুলনায় বহু গুণ বেড়ে যায়। যেখানে প্রচলিত কম্পিউটার দিয়ে বড় কোনো সংখ্যার উৎপাদকে বিশ্লেষণ করতে বছরের পর বছর লাগতে পারে, সেখানে কোয়ান্টাম কম্পিউটার তা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই করতে পারবে।

১৯৯৪ সালে এমাআইটি (MIT)-র অধ্যাপক পিটার শোর এক ধরনের কোয়ান্টাম অ্যালগরিদমের ধারণা দেন, যা দ্বারা খুব সহজেই বড় বড় সংখ্যাকে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করা সম্ভব। এর ফলে হ্যাকারদের আর প্রাইভেট-কী এর প্রয়োজন হবে না, তারা ইন্টারনেটে বিদ্যমান যেকোনো এনক্রিপটেড তথ্য কোয়ান্টাম কম্পিউটার দিয়ে সহজেই ডিক্রিপ্ট করতে পারবে।

পিটার শোর-এর ফ্যাক্টরাইজেশন অ্যালগরিদম; Source: wikipedia.org

তবে আশার কথা হলো, পিটার শোরের অ্যালগরিদম বাস্তবায়ন করার জন্য অনেক বড় সংখ্যার কিউবিটের কোয়ান্টাম কম্পিউটার লাগবে, যা এখনো তৈরি করা সম্ভব হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে ২০২৫ সালের মধ্যে কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যবহার উপযোগী হবে। তখন প্রকৃতপক্ষেই প্রচলিত ইন্টারনেট নিরাপত্তা ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়বে।

প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো ‘কোয়ান্টাম এনক্রিপশন’ এর উপর ভালো মতো কাজ শুরু করেছে; Source: csmonitor.com

আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্যান্ডার্ড এন্ড টেকনোলোজিতে সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য পোস্ট-কোয়ান্টাম ক্রিপ্টোগ্রাফি নামে একটি প্রোগ্রাম চালু করেছে। বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো এর সাথে যুক্ত আছে। এর কাজ হচ্ছে এমন এনক্রিপশন অ্যালগরিদম তৈরি করা, যা কোয়ান্টাম-রেজিস্ট্যান্ট হবে। অর্থাৎ একে কোয়ান্টাম কম্পিউটার দিয়েও সহজে ভাঙ্গা যাবে না।

ফিচার ইমেজ: military-technologies.net

Related Articles