Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

এখন থেকে আমরা কেন মেটা: মার্ক জাকারবার্গ

প্রতিষ্ঠাতার চিঠি, ২০২১

আমরা ইন্টারনেটের পরবর্তী অধ্যায়ের শুরুতে রয়েছি, এবং আমাদের কোম্পানির জন্যও এটা হতে চলেছে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।

সাম্প্রতিক দশকগুলোতে, প্রযুক্তি মানুষকে দিয়েছে একে অন্যের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার এবং সহজাতভাবে নিজেদের মনের ভাব প্রকাশের ক্ষমতা। আমি যখন ফেসবুক শুরু করলাম, তখন আমরা প্রধানত বিভিন্ন ওয়েবসাইটে টেক্সট টাইপ করতাম। তারপর যখন আমরা ক্যামেরাওয়ালা ফোন পেলাম, ইন্টারনেট হয়ে উঠল আরো বেশি চাক্ষুষ ও গতিময়। সংযোগ যখন দ্রুততর হলো, ভিডিও হয়ে উঠল নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সমৃদ্ধতর পথ। আমরা ডেক্সটপ থেকে ওয়েব হয়ে মোবাইলে এসেছি; টেক্সট থেকে ফটো হয়ে এসেছি ভিডিওতে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়।

পরবর্তী প্ল্যাটফর্ম হতে চলেছে এমনকি আরো বহুমাত্রিক- এমন মূর্ত ও শরীরী ইন্টারনেট, যেখানে আপনি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবেন না, নিজেও ঢুকে পড়বেন যাবতীয় অভিজ্ঞতার কেন্দ্রবিন্দুতে। আমরা একে বলছি মেটাভার্স। আমাদের নির্মিত সকল পরিষেবাকেই এটি স্পর্শ করবে।

মেটাভার্সের সবচেয়ে বড় গুণ, যেটি একে সংজ্ঞায়িত করবে, তা হলো এর উপস্থিতির অনুভূতি; মানে অন্য কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো জায়গায় অবস্থান করলেও, আপনি নিজেকে ঠিক তার সাথে, তার পাশেই মনে করবেন। সামাজিক প্রযুক্তির এটিই তো চূড়ান্ত স্বপ্ন যে সত্যি সত্যিই অন্য কোনো মানুষের সঙ্গে যেকোনো সময় থাকতে পারা। সেজন্যই আমরা বর্তমানে মনোনিবেশ করছি এমন কিছু তৈরিতে।

মেটাভার্সে আপনি আপনার কল্পনার প্রায় সবকিছুই করতে পারবেন- বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়া, কাজ করা, শেখা, খেলা, কেনাকাটা, নির্মাণ সবই। এর পাশাপাশি সম্পূর্ণরূপে এমন অনেক অভিজ্ঞতাও, আজ কম্পিউটার বা ফোনের কথা ভাবতে গিয়ে যেগুলো আমরা কল্পনাও করতে পারি না। আমরা একটি ফিল্ম নির্মাণ করেছি যেখানে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে, কীভাবে আপনি একদিন মেটাভার্স ব্যবহার করতে পারবেন।

রিব্র্যান্ডিংয়ের পর ফেসবুক ইনকরপোরেটেডের নাম হচ্ছে মেটা প্ল্যাটফর্মস ইনকরপোরেটেড; Image Source: Facebook

এই নতুন ভবিষ্যতে, কোনো ধরনের যানবাহন ব্যবহার না করেই আপনি চোখের পলকে একটি হলোগ্রাম হিসেবে টেলিপোর্ট করতে পারবেন আপনার অফিসে, বন্ধুদের সঙ্গে কোনো কনসার্টে, কিংবা আপনার বাবা-মায়ের লিভিং রুমে। এর মাধ্যমে আপনার সামনে খুলে যাবে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার, সে আপনি শারীরিকভাবে যেখানেই অবস্থান করুন না কেন। আপনি আরো বেশি সময় ব্যয় করতে পারবেন আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে। ট্রাফিকে আটকে থাকার সময় অনেক কমিয়ে আনতে পারবেন আপনি। সেই সঙ্গে হ্রাস ঘটাতে পারবেন আপনার কার্বন ফুটপ্রিন্টেও।

চিন্তা করে দেখুন, আজকে আপনার কাছে মূর্তমান অবস্থায় রয়েছে এমন কত জিনিসই ভবিষ্যতে পরিণত হবে নিছক হলোগ্রামে। আপনার টিভি, একাধিক মনিটর সহযোগে আপনার পারফেক্ট ওয়ার্ক সেটআপ, আপনার বোর্ড গেম এবং আরো কত কিছু- কারখানায় সেসব জিনিসের প্রতিটি অংশ জোড়া লাগানোর বদলে, সেগুলো কেবল হলোগ্রাম হয়েই থাকবে, আর সেগুলো তৈরি করবে পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নির্মাতারা।

আপনি বিভিন্ন ডিভাইস ঘুরে ঘুরে এসব অভিজ্ঞতা লাভ করবেন- অগমেন্টেড রিয়েলিটি গ্লাসের মাধ্যমে শারীরিক পৃথিবীতে উপস্থিত থাকবেন, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি দিয়ে নিমজ্জিত হবেন অন্য আরেক পৃথিবীতে, এবং ফোন ও কম্পিউটার দিয়ে প্রবেশ করবেন ইতোমধ্যেই বিদ্যমান প্ল্যাটফর্মগুলোতে। তবে এর মানে কিন্তু আরো বেশি সময় স্ক্রিনে কাটানো নয়; এটি হলো আমরা ইতোমধ্যেই যেসব সময় কাজে ব্যয় করি, সেগুলোর আরো ভালোভাবে ব্যবহার।

ফেসবুকের মালিকানাধীন সকল পণ্য ও পরিষেবা নিয়ে তৈরি হচ্ছে মেটাভার্স; Image Source: Jakub Porzycki/NurPhoto via Shutterstock

আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য

মেটাভার্সটি কেবল একটি কোম্পানিই তৈরি করবে না। এটি তৈরি হবে সেসব নির্মাতা ও ডেভেলপারদের হাত ধরে, যারা ইন্টারঅপারেবল (আন্তঃব্যবহারযোগ্য) নতুন নতুন অভিজ্ঞতা ও ডিজিটাল আইটেম তৈরি করছে। এর মাধ্যমে আজকের প্ল্যাটফর্ম ও তাদের নীতিমালার চেয়েও অনেক বড় সৃজনশীল অর্থনীতির দরজা খোলা সম্ভব হবে।

এই যাত্রায় আমাদের ভূমিকা হলো মৌলিক প্রযুক্তি, সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এবং সৃজনশীল টুলসমূহের উন্নতিকে আরো ত্বরান্বিত করা, যেন প্রাণ প্রতিষ্ঠিত হয় মেটাভার্সে, এবং আমাদের সামাজিক মাধ্যম অ্যাপগুলোর মাধ্যমে এসব প্রযুক্তি ছড়িয়ে পড়ে। আমরা বিশ্বাস করি, মেটাভার্স এখনকার চেয়ে শ্রেয়তর সামাজিক অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে পারবে। আমরা আমাদের শ্রমশক্তিকে উৎসর্গ করব এসব সম্ভাবনাকেই অর্জন করার লক্ষ্যে।

যেমনটি আমি লিখেছিলাম আমাদের প্রথম প্রতিষ্ঠাতার চিঠিতে: “আমরা অর্থ আয়ের জন্য পরিষেবা তৈরি করি না; আমরা অর্থ আয় করি শ্রেয়তর পরিষেবা তৈরির জন্য।”

এই মানসিকতার সুফল আমরা পেয়েছি। আমরা আমাদের ব্যবসা তৈরি করেছি যাতে করে খুবই বড় ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের মাধ্যমে শ্রেয়তর পরিষেবা নির্মাণে সাহায্য করতে পারি। এবারও আমরা তেমন কিছু করারই পরিকল্পনা করেছি।

গত পাঁচ বছর আমার ও আমার কোম্পানির জন্য নানা কারণেই ছিল চ্যালেঞ্জিং। আমি অনেক নতুন নতুন শিক্ষা অর্জন করেছি, যার মধ্যে একটি হলো এই যে, মানুষ ভালোবাসে এমন পণ্য বা পরিষেবা তৈরি করাই যথেষ্ট নয়।

আমি এখন আগের চেয়েও বেশি উপলব্ধি করতে পারি যে ইন্টারনেটের কাহিনি সোজাসাপ্টা নয়। প্রতিটি নতুন অধ্যায়ই নিয়ে আসে নতুন নতুন কণ্ঠস্বর, নতুন নতুন আইডিয়া। কিন্তু এর সঙ্গে আসে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ, ঝুঁকি আর প্রতিষ্ঠিত স্বার্থের ভাঙন। আমাদের একসঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন, একদম শুরু থেকে, যেন আমরা এই ভবিষ্যতের সম্ভাব্য শ্রেষ্ঠ সংস্করণ বাস্তবায়িত করতে পারি।

২০১৯ সালে মেনলো পার্ক, ক্যালিফোর্নিয়ায় ফেসবুকের হেডকোয়ার্টার; Image Source: Josh Edelson/AFP/Getty Images

প্রথম দিন থেকেই মেটাভার্সে গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আরো প্রতিষ্ঠা করতে হবে ওপেন স্ট্যান্ডার্ড ও ইন্টারঅপারেবিলিটি। এর জন্য শুধু নতুন ধরনের টেকনিক্যাল কাজই, যেমন- ক্রিপ্টো বা এনএফটি প্রজেক্টের সমর্থন, যথেষ্ট হবে না। প্রয়োজন হবে নতুন আঙ্গিকের শাসনব্যবস্থাও। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমাদের প্রয়োজন হবে এমন এক ইকোসিস্টেম তৈরিতে সাহায্য করা, যাতে আরো বেশি সংখ্যক মানুষ ভবিষ্যতে লাভবান হতে পারে, এবং সেই ভবিষ্যতের উপকারিতা কেবল ভোক্তাদের মাঝেই সীমাবদ্ধ না থেকে ছড়িয়ে পড়ে নির্মাতাদের মাঝেও।

এই সময়টা (গত পাঁচ বছর) আমাদের জন্য এ কারণেও চ্যালেঞ্জিং ছিল যে, আমরা যত বড় কোম্পানিই হই না কেন, আমরা শিখেছি যে অন্য কোনো প্ল্যাটফর্ম নিয়ে কাজ করাটা কেমন হতে পারে। সেসব প্ল্যাটফর্মের নিয়মের মাঝে থেকে কাজ করতে গিয়ে প্রযুক্তি ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি নতুন কাঠামো লাভ করেছে। আমি বিশ্বাস করতে শুরু করেছি যে ভোক্তাদের জন্য পছন্দ করার অপশনের অভাব এবং ডেভেলপারদের জন্য উচ্চ ফি-ই নতুন নতুন উদ্ভাবনের গলা টিপে ধরছে, ইন্টারনেট অর্থনীতিকে সামনে এগোতে দিচ্ছে না।

আমরা চেষ্টা করেছি ভিন্ন রাস্তায় হাঁটার। আমরা চাই যেন আমাদের পরিষেবা যত বেশি সম্ভব মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। এর অর্থ হলো, আমাদের কাজ করতে হবে মানুষের খরচের পরিমাণ কমানোর ব্যাপারে, বাড়ানো নিয়ে নয়। আমাদের মোবাইল অ্যাপগুলো সবই ফ্রি। আমাদের বিজ্ঞাপন মডেলও এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে করে ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে কম খরচ হয়। আমাদের কমার্স টুলগুলোও অলাভজনক মূল্যে বা খুব কম ফিতে পাওয়া যায়। ফলাফলস্বরূপ, কোটি কোটি মানুষ আমাদের পরিষেবাকে ভালোভাবে, আরো লাখ লাখ ব্যবসা নির্ভর করে আমাদের টুলের উপর।

মেটাভার্স তৈরির ক্ষেত্রেও আমরা একই পথই অনুসরণ করতে চাই। আমরা আমাদের ডিভাইসগুলোও অলাভজনক মূল্যে বা ভর্তুকির মাধ্যমে আরো বেশি সংখ্যক মানুষের হাতের নাগালে নিয়ে আসতে চাই। আমরা পিসি থেকে সাইড-লোডিং এবং স্ট্রিমিং সমর্থনও অব্যাহত রাখব, যাতে মানুষের কাছে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ থাকে, তাদের যেন কোয়েস্ট স্টোরে গিয়ে অ্যাপ খুঁজতে বা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতে বাধ্য হতে না হয়। পাশাপাশি আমরা ডেভেলপার ও ক্রিয়েটর সার্ভিসও খুবই স্বল্প ফিতে প্রদানের ব্যবস্থা করব, যেন সামগ্রিকভাবে আমরা সৃজনশীল অর্থনীতির প্রসারণ ঘটাতে পারি। তবে এক্ষেত্রে আমাদের এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে এত কিছু করতে গিয়ে যেন আমরা খুব বেশি অর্থের লোকসান না করি।

আমাদের আশা- আগামী দশকের মধ্যে আমাদের মেটাভার্স এক বিলিয়ন মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে, শত শত বিলিয়ন ডলারের ডিজিটাল কমার্সের হোস্ট করবে, এবং কয়েক মিলিয়ন নির্মাতা ও ডেভেলপারের চাকরির সুযোগ তৈরি হবে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বারবার বিতর্কে জড়িয়েছেন মার্ক জাকারবার্গ; Image Source: Bloomberg

আমরা কারা

যেহেতু আমরা এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটাতে চলেছি, তাই আমি প্রচুর ভেবেছি যে এটি আমাদের কোম্পানি এবং আমাদের পরিচয়ের জন্য কী অর্থ বহন করে।

আমরা এমন একটি কোম্পানি যার প্রধান লক্ষ্য হলো মানুষে মানুষে সংযোগ সৃষ্টি করা। যেখানে অন্য অধিকাংশ প্রযুক্তি কোম্পানির লক্ষ্য থাকে প্রযুক্তির সঙ্গে মানুষের সংযোগ স্থাপন করার, সেখানে আমরা সবসময়ই আমাদের মনোযোগ বিনিয়োগ করেছি এমন প্রযুক্তি তৈরি করতে, যা মানুষের নিজেদের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে সাহায্য করবে।

আজ আমাদের দেখা হয় একটি সামাজিক মাধ্যম কোম্পানি হিসেবে। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত প্রযুক্তি পণ্যের একটি হলো ফেসবুক। এটি একটি আইকনিক সামাজিক মাধ্যম ব্র্যান্ড।

সামাজিক অ্যাপ তৈরি করা সবসময়ই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ থাকবে, এবং এমন আরো অনেক অ্যাপ বানাতে হবে। তবে বলাই বাহুল্য, আসন্ন ভবিষ্যতে আমরা শুধু এই কাজই করব না। আমরা মানুষকে কাছাকাছি নিয়ে আসার জন্য প্রযুক্তি তৈরি করি। মেটাভার্স হবে মানুষের মধ্যকার আন্তঃযোগাযোগের পরবর্তী অধ্যায়, ঠিক যেমনটি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ছিল আমাদের প্রথম যাত্রা শুরুর সময়ে।

বর্তমানে আমাদের ব্র্যান্ডটি একটি পণ্যের সঙ্গে এতটাই আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে যে, আজ আমরা ঠিক কী করছি তার যথাযথ প্রতিনিধিত্ব ওই একটি ব্র্যান্ডের মাধ্যমে ঘটছে না। আর ভবিষ্যতে কী করতে চলেছি, তার প্রতিনিধিত্ব করার তো প্রশ্নই আসে না। কিন্তু আমি চাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেখা হোক একটি মেটাভার্স কোম্পানি হিসেবে। এবং আমি চাই ভবিষ্যতে আমরা কী কী তৈরি করছি, তার মাধ্যমেই ফুটে উঠুক আমাদের কাজ ও আমাদের পরিচয়।

আমরা মাত্রই ঘোষণা দিয়েছি যে আমাদের কোম্পানিতে একটি মৌলিক পরিবর্তন আনতে চলেছি। আমরা বর্তমানে আমাদের ব্যবসাকে দুটি ভিন্ন অংশে দেখছি ও প্রতিবেদন সাজাচ্ছি: একটি হলো আমাদের অ্যাপগুলোর জন্য, অন্যটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্ল্যাটফর্মগুলোর কাজের জন্য। মেটাভার্সের মাঝেই সামাজিক অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যেহেতু আমরা আমাদের ভিশনকে বিস্তৃত করছি, তাই এটাই সময় এক নতুন ব্র্যান্ড গ্রহণ করার।

আমরা কে এবং কোন ভবিষ্যৎ নির্মাণের আশা আমরা করি, তার প্রতিফলন ঘটাতে আমি গর্বের সঙ্গে জানাচ্ছি যে বর্তমানে আমাদের কোম্পানি হলো মেটা।

আমাদের মিশন এখনো আগের মতোই রয়ে গেছে- আমরা এখনো চাই মানুষকে পরস্পরের কাছাকাছি নিয়ে আসতে। আমাদের অ্যাপ এবং তাদের ব্র্যান্ডগুলোতেও কোনো বদল আসছে না। আমরা এখনো সেই কোম্পানি, যেটি মানুষকে কেন্দ্র করেই তাদের প্রযুক্তির নকশা সাজায়।

কিন্তু আমাদের অ্যাপসহ সকল পণ্য বা পরিষেবারই এখন একটি নতুন ভিশনও রয়েছে: মেটাভার্সে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা। এবং এখন আমাদের এমন একটি নামও রয়েছে, যেটি আমাদের কাজের বিস্তৃতিকে ধারণ করতে সক্ষম।

এখন থেকে আমরা আর ফেসবুক-ফার্স্ট নই, আমরা হবো মেটাভার্স-ফার্স্ট। এর অর্থ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের আর আমাদের অন্যান্য পরিষেবা গ্রহণ করতে হলে আগে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থাকার প্রয়োজন হবে না। যেহেতু আমাদের সকল পণ্যে আমাদের নতুন ব্র্যান্ডটি দেখা দিতে শুরু করেছে, আমি আশা করছি বিশ্বব্যাপী মানুষ খুব শীঘ্রই জেনে যাবে মেটা ব্র্যান্ড কী, আর ভবিষ্যতেই বা কী অপেক্ষা করছে।

মাত্র কিছুদিন আগেই ফেসবুকের বিরুদ্ধে উঠেছে ভারতে ধর্মীয় বিদ্বেষ উসকে দেওয়ার অভিযোগ; Image Source: PTI

আমি ক্লাসিকস নিয়ে পড়াশোনা করতাম, এবং ‘মেটা’ শব্দটি এসেছে একটি গ্রিক শব্দ থেকে যার ইংরেজি অর্থ ‘বিয়ন্ড’ (বাংলায় বলা যেতে পারে এমন কিছু, আপাত দৃশ্যমান নির্দিষ্ট সমাপ্তির পরও যার আরো অস্তিত্ব রয়ে যায়)। আমার জন্য এটি এমন একটি প্রতীক যা বলে যে সবসময়ই নতুন কিছু না কিছু নির্মাণের থাকে, এবং সবসময়ই কাহিনির একটি পরবর্তী অধ্যায় বলার থাকে। আমাদের কাহিনিটি এমন যা শুরু হয়েছিল একটি ডর্ম রুম থেকে, এবং যা একপর্যায়ে আমাদের কল্পনাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এটি এখন পরিণত হয়েছে এমন কিছু অ্যাপের পরিবারে, যেসব অ্যাপ মানুষ ব্যবহার করে থাকে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য, নিজেদের কণ্ঠস্বর খুঁজে পাওয়ার জন্য, পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার মতো ব্যবসা, গোষ্ঠী ও আন্দোলন শুরু করার জন্য।

এতদিন আমরা যা কিছু তৈরি করেছি তা নিয়ে আমি গর্বিত, এবং আমি উত্তেজিত ভবিষ্যতে যা আসতে চলেছে সেগুলো নিয়ে। আমরা সেভাবেই এগোচ্ছি যাতে আজ যা সম্ভব তাকে অতিক্রম করতে পারব, পেরিয়ে যাব স্ক্রিনের গণ্ডিকে, ছাড়িয়ে যাব দূরত্ব ও শরীরের সীমাবদ্ধতাকে, এবং ধাবিত হবো এমন এক ভবিষ্যৎ অভিমুখে যেখানে প্রত্যেকে প্রত্যেকের সঙ্গে সকল মুহূর্তে উপস্থিত থাকতে পারবে। এটি এমন একটি ভবিষ্যৎ যা কোনো একটি নির্দিষ্ট একটি কোম্পানিতে আটকে থাকবে না। আমরা সকলে মিলে এটি তৈরি করব।

আমরা এমন সব জিনিস তৈরি করেছি যা নানাভাবে মানুষকে কাছাকাছি নিয়ে আসে। আমরা বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সঙ্গে লড়াই করে এবং বদ্ধ প্ল্যাটফর্মের গণ্ডির ভেতর থেকে শিখেছি। এখন সময় আমাদের এতদিনকার সকল শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তী অধ্যায় সৃষ্টি করার।

আমি আমাদের শক্তিকে উৎসর্গ করছি এই লক্ষ্যে- সেটি বিশ্বের অন্য যেকোনো কোম্পানির চেয়েই বেশি। যদি আপনারাও চান এমনই একটি ভবিষ্যৎ দেখতে, তবে আমি আশা করব আপনারা আমাদের সঙ্গে যোগ দেবেন। সামনের ভবিষ্যৎ হতে চলেছে আমাদের যেকোনো কল্পনার অতীত।

মার্ক জাকারবার্গ
২৮.১০.২০২১ 

This article is in Bengali language. It is the translation of Mark Zuckerberg's Founder's Letter, 2021 published on October 28, where he described the reasons behind rebranding Facebook as Meta. Necessary references have been hyperlinked inside. 

Featured Image © The Verge

Related Articles