Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

পানি দ্বারা বেষ্টিত অসাধারণ দৃষ্টিনন্দন কিছু মসজিদ

যেকোনো স্থাপনা এমনিতে যতটুকু সুন্দর, তার সামনে যদি স্রোতবিহীন স্থির নদী, সমুদ্র কিংবা স্বচ্ছ পানির লেক থাকে, তাহলে সেই পানিতে প্রতিফলনের ফলে সৃষ্ট প্রতিবিম্ব মূল স্থাপনাটিকে আরো চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলে। বিশ্বের অনেক প্রাসাদ, ভিলা, কিংবা গুরুত্বপূর্ণ সরকারী ভবনের সামনেই তাই কৃত্রিম লেক নির্মাণ করা হয়। মুসলমানদের উপাসনালয় মসজিদও এর ব্যতিক্রম নয়। মূলত প্রার্থনার স্থান হলেও বিশ্বের সব দেশেই মসজিদকে দৃষ্টিনন্দন, আকর্ষণীয় এবং জাঁকজমকপূর্ণ করে তৈরি করে তোলার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। ইসলামিক স্থাপত্য এবং কারুকার্যের অনেকটাই গড়ে উঠেছে মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করেই। 

বিশ্বের অনেক মসজিদই আছে যাদের চারপাশে কৃত্রিমভাবে তৈরি লেকের পানি এমনভাবে পরিবেষ্টিত, দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন মসজিদটি পানির উপর ভাসমান। তবে শুধু লেকই না, সরাসরি সমুদ্রের পানির উপর পাইলের উপর স্থাপিত মসজিদও আছে, যেগুলোকে আক্ষরিক অর্থেই ভাসমান মসজিদ বলা সম্ভব। চলুন দেখে নিই পানি দ্বারা পরিবেষ্টিত বিশ্বের এমন কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদের ছবি। সেই সাথে জেনে নিই মসজিদগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচয়। 

আল-রাহমা মসজিদ, সৌদি আরব

লোহিত সাগরের তীরে সৌদি আরবের জেদ্দায় অবস্থিত আল-রাহমা মসজিদটির অপর নাম ভাসমান মসজিদ। কারণ যে স্তম্ভগুলোর উপর মসজিদটি দাঁড়িয়ে আছে, সেগুলোর অধিকাংশের ভিত্তিই সমুদ্রের পানির নিচে। জোয়ারের সময় মসজিদটিকে আক্ষরিক অর্থেই পানিতে ভাসমান বলে মনে হয়। ধবধবে সাদা রংয়ের মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল ১৯৮৫ সালে। নামাযের স্থানের পাশাপাশি এটি জেদ্দার অন্যতম প্রধান পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্রও। মসজিদটি ফাতেমাতুজ্‌ জোহরা মসজিদ নামেও পরিচিত।

আল-রাহমা মসজিদ; Image Source: AboutHer.com
Image Source: ummid.com

মলাক্কা প্রণালী মসজিদ, মালয়েশিয়া

আল-রাহমা মসজিদের মতোই মালয়েশিয়ার মলাক্কাতে অবস্থিত মলাক্কা প্রণালী মসজিদটিকেও জোয়ারের সময় সমুদ্রে ভাসমান বলে মনে হয়। কারণ এ মসজিদটিরও স্তম্ভগুলোর ভিত্তি সমুদ্রের নিচে অবস্থিত। ২০০৬ সালে নির্মিত মসজিদটি সুদীর্ঘ মলাক্কা প্রণালীর তীরে অবস্থিত একমাত্র মসজিদ। মসজিদটির অবস্থান পানির উপর কৃত্রিমভাবে নির্মিত ৪০ হেক্টর আয়তনের মলাক্কা দ্বীপের উপর। মসজিদটির নকশায় মধ্যপ্রাচ্য এবং মালয় স্থাপত্যের সংমিশ্রণ লক্ষ্য করা যায়। এর গম্বুজ প্রথাগত মধ্যপ্রাচ্যের গম্বুজের মতো হলেও চার কোণে অবস্থিত মিনার চারটি মালয়েশিয়ান স্থপাত্যের নিদর্শন বহন করে। এর মূল মিনারটির উচ্চতা ৩০ মিটার। মসজিদটি মলাক্কার ভাসমান মসজিদ নামেও পরিচিত।

মলাক্কা প্রণালী মসজিদ; Image Source: DeviantArt
Image Source: LetsGoHolyday.my

সুলতান ওমর আলি সাইফুদ্দিন মসজিদ, ব্রুনেই

ব্রুনেইয়ের রাজধানী বন্দর সেরি বাগওয়ানে অবস্থিত সুলতান ওমর আলি সাইফুদ্দিন মসজিদটি শহরটির সবচেয়ে উঁচু স্থাপত্য। ৫২ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট মসজিদটিকে শহরের যেকোনো স্থান থেকেই দেখা যায়। ১৯৫৮ সালে নির্মিত মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে দেশটির তৎকালীন সুলতান তৃতীয় ওমর আলি সাইফুদ্দিনের নামে। ব্রুনেই নদীর তীরে একটি কৃত্রিম হ্রদের উপর অবস্থিত মসজিদটি নির্মাণে মুঘল এবং মালয় স্থাপত্যের মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়েছে। এর সবচেয়ে বিখ্যাত অংশ হলো এর স্বর্ণের তৈরি গম্বুজটি এবং সামনে অবস্থিত রণতরীটি। মসজিদটি ব্রুনেইয়ের অন্যতম প্রধান পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্র।

সুলতান ওমর আলি সাইফুদ্দিন মসজিদ; Image Source: static.thousandwonders.net
Image Source: perito-burrito.com

পুত্রা মসজিদ, মালয়েশিয়া

পুত্রাজায়া শহরটি হচ্ছে মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক কেন্দ্র। দেশটির রাজধানী কুয়ালালামপুর হলেও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন পরিকল্পিত এ শহরটিতে। আর এ শহরের প্রধান মসজিদটির নাম হচ্ছে পুত্রা মসজিদ। ১৯৯৯ সালে নির্মাণ সম্পন্ন হওয়া মসজিদটি শহরটির কেন্দ্রে একটি কৃত্রিম হ্রদের পাড়ে অবস্থিত। মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে মালয়েশিয়ার প্রথম প্রধানমন্ত্রী আব্দুর রহমান পুত্রা আল-হাজের নামানুসারে। মসজিদটির গম্বুজ এবং মিনার গোলাপী রংয়ের গ্রানাইট পাথর দ্বারা তৈরি। এর মিনারটির উচ্চতা ১১৫ মিটার। মসজিদটিতে একসাথে ১৫,০০০ মুসল্লী নামায আদায় করতে পারে।

পুত্রা মসজিদ; Image Source: Wikimedia Commons
Image Source: raynatours.com

ওরতাকয় মসজিদ, তুরস্ক

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বসফরাস প্রণালীর তীরে, ওরতাকয় জাহাজঘাটার পাড়ে অবস্থিত ওরতাকয় মসজিদটি একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। এর প্রকৃত নাম গ্র্যান্ড ইম্পেরিয়াল মস্ক অফ সুলতান আব্দুল মজিদ। পূর্ববর্তী একটি মসজিদের ধ্বংসাবশেষের উপর অটোমান সুলতান আব্দুল মজিদের শাসনামলে ১৮৫৪ থেকে ১৮৫৬ সালে মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। মসজিদটির নকশা করেছিলেন দুজন আর্মেনিয়ান স্থপতি, যারা নিকটবর্তী রাজপ্রাসাদটিরও নকশা করেছিলেন। মসজিদটির ভেতরে সুসজ্জিত ছাদ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় আজও শোভা পাচ্ছে সুলতান আব্দুল মজিদের হাতে করা অসাধারণ কিছু আরবি ক্যালিগ্রাফি। দুটি মিনার, একটি গম্বুজ এবং বিশালাকৃতির জানালা বিশিষ্ট মসজিদটির মূল নামাযকক্ষ তুলনামূলকভাবে ছোট। মসজিদটির ভেতরে দুই কক্ষবিশিষ্ট একটি ভবন আছে, যা সুলতানের গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

ওরতাকয় মসজিদ; Image Source: Radisson Blu Blog
Image Source: askideas.com

তানজুং বুঙ্গা ভাসমান মসজিদ, মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ার পেনাং প্রদেশে অবস্থিত তানজুং বুঙ্গা ভাসমান মসজিদটি পেনাং ভাসমান মসজিদ নামেও পরিচিত। পুরো মালয়েশিয়া জুড়ে পানি বেষ্টিত মসজিদের ছড়াছড়ি থাকলেও সেগুলোর প্রায় সবগুলোই কৃত্রিম হ্রদের তীরে অবস্থিত। ২০০৪ সালে নির্মিত এই মসজিদটিই মালয়েশিয়ার প্রথম মসজিদ, যা সমুদ্রের পানির উপর নির্মিত। জোয়ারের সময় মসজিদটির পাইলগুলো পানিতে অদৃশ্য হয়ে গেলে একে পানিতে ভাসমান বলে মনে হয়। ১২৯৫ বর্গ মিটার আয়তনের মসজিদটি একই স্থানে সুনামিতে ধ্বংস হয়ে একটি মসজিদকে প্রতিস্থাপিত করে নির্মিত হয়েছে। এর মিনারটির উচ্চতা প্রায় সত্তর তলা ভবনের সমান। সন্ধ্যার সময় যখন মসজিদের লাইটের আলো সমুদ্রের পানিতে প্রতিফলিত হয়, তখন মসজিদটি প্রকৃত রূপ ধরা পড়ে। মসজিদটিতে একসাথে ১,৫০০ মুসল্লী নামায আদায় করতে পারে।

তানজুং বুঙ্গা ভাসমান মসজিদ; Image Source: informationwebsite.blogspot.com
Image Source: islammaps.com

হাসান আল-থানি মসজিদ, মরক্কো

মরক্কোর ক্যাসাব্লাঙ্কায় অবস্থিত হাসান আল-থানি বা দ্বিতীয় হাসান মসজিদ হচ্ছে বিশ্বের সর্বোচ্চ মিনার বিশিষ্ট ধর্মীয় স্থাপনা। এটি একইসাথে বিশ্বের ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উঁচু। এর মিনারটির উচ্চতা ২১০ মিটার। ১৯৯৩ সালে নির্মিত মসজিদটির মুসল্লি ধারণ ক্ষমতা প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার। এর মিনারের চূড়ায় একটি লেজার বিম অবস্থিত, যা থেকে কাবা ঘরের দিক বরাবর সর্বদা একগুচ্ছ আলোকরশ্মি বিচ্ছুরিত হতে থাকে। মসজিদটির অবস্থান মুসলিম বিশ্বের একেবারে পশ্চিম প্রান্তে, ঠিক আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে। মসজিদটির অংশবিশেষ সমুদ্রের পানিতে ভাসমান। এর সমুদ্রের পানিতে ভাসমান অংশের উপর দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া যায়, যদিও সাধারণ মুসল্লিদের জন্য কাঁচের তৈরি স্বচ্ছ মেঝের মধ্য দিয়ে নিচের পানির দৃশ্য উপভোগ করার সুযোগ নেই। মসজিদটির ভেতরে ২৫,০০০ এবং বাইরের চত্বরে আরও ৮০,০০০ মানুষ একসাথে নামাজ আদায় করতে পারে। এই মসজিদটি নিয়ে আমাদের একটি বিস্তারিত প্রবন্ধ আছে, পড়তে চাইলে ক্লিক করুন এখানে

হাসান আল-থানি মসজিদ; Image Source: kingdomofmorroco.blogspot.com
Image Source: egypttoursplus.com

কোটা কিনাবালু সিটি মসজিদ, মালয়েশিয়া

কোটা কিনাবালু সিটি মসজিদ হচ্ছে মালয়েশিয়ার সাবাহ অঙ্গরাজ্যের রাজধানী কোটা কিনাবালুর প্রধান মসজিদ। ২০০০ সালে কোটা কিনাবালুকে শহরের মর্যাদা দেওয়ার মাধ্যমে মসজিদটির উদ্বোধন করা হয়। মসজিদটির নকশা করা হয়েছে মুসলমানদের দ্বিতীয় পবিত্রতম স্থান মদিনার মসজিদে নববির নকশা অবলম্বনে। আরবি স্থাপত্যের মতোই মসজিদটির গম্বুজ সোনালি এবং নীল রংয়ের। মসজিদটি দক্ষিণ চীন সাগরের থেকে উৎপন্ন লিকাস উপসাগরের তীরে একটি কৃত্রিম হ্রদ দ্বারা আংশিক পরিবেষ্টিত হওয়ায় এটি কোটা কিনাবালু ভাসমান মসজিদ নামেও পরিচিত। এতে একসাথে ৯ থেকে ১২ হাজার মুসল্লী নামায আদায় করতে পারে। এটি মালয়েশিয়ার সবচেয়ে সুন্দর মসজিদগুলোর একটি এবং প্রতি বছর এটি বিপুল সংখ্যক পর্যটককে আকৃষ্ট করে। 

কোটা কিনাবালু সিটি মসজিদ; Image Source: thelongestwayhome.com
Image Source: wall.alphacoders.com

ফিচার ইমেজ- rojakdaily.com

Related Articles